আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিফিলিসের জীবাণু কার কাছ থেকে আসলো? পর্ব চার

সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা পর্ব চার অসীম সকাল ৯টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বুঝে মাথা পরিস্কার। উঠে বসতেই দেখে অঞ্জলী, হাতে নতুন প্যাকিং করা ব্রাস, পেস্ট আর তোয়ালে। বলে, দাদা গোসল করে নেন। অসীম গোসল করে, নাস্তা খায়। অঞ্জলীকে বলে, আমার উপর আস্থা রাখো।

আমি কাউকে বলবো না। তুমি ব্রাহ্মণের মেয়ে আমি তোমাকে ছোঁবও না। -দাদা সেটা সমস্যা না। আমিতো এখন আপনার কাছে অস্পর্শা মেয়ে। -না না স্পর্শা অস্পর্শা বিষয় না।

আমি এসব পছন্দ করি না। তবে তুমি আগের থেকেও সুন্দরী হয়েছো। - অসীম দা আমার এখন এই সুন্দরী হওয়াই পেশা। আজ আপনাকে পেয়ে খুব ভাল লাগছে। একটা কথা বলবো, কিছু মনে করবেন না তো..।

অসীম ইতস্তত করে, ছটফট করে। মুখে বলে, না না বলো, কিছু মনে করবো না। অঞ্জলী বলে আপনার বন্ধু ছিল সুনীল। ওর কাছে যেতাম অংক বুঝতে, ও আসতো আপনার কাছে। আগে বুঝে গিয়েও আমাকে বুঝাতে পারতো না।

আমি ওকে পছন্দ করতাম না। আপনি একদিন ওর জন্য আমার কাছে আসলেন প্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু আমি একটি ছেলেকে ভালবাসতাম, তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। আপনি যখন বললেন, তোমার সাথে কথা আছে, তখন আমার পৃথীবী আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম যে কথা শোনার জন্য এতোকাল অপেক্ষা করছি, সেই কথাই আপনি বলবেন।

কিন্তু অন্ধকার হতেও সময় লাগেনি। আমার সমস্ত ভাবনাকে, প্রত্যাশাকে আপনি গলাটিপে মেরে ফেললেন। আমি এতো কিছু বলছি কেন জানেন, আপনাকে একটি প্রস্তাব দেয়ার ভুমিকা তৈরির জন্য। আপনাকেতো ভালবাসার কোন সুযোগ কখনো পেলাম না, আজ দিনটাও থেকে যান, ভালবাসার সুযোগ দিন। অসীম বলে, আমিতো কখনো এমন আচরণ করিনি যাতে বুঝা যায় আমি তোমাকে ভালবাসী।

থেকে যেতে আমার খারাপ লাগবে না। নিজেকে একদিনের বাদশা বাদশা লাগবে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি একটা ঝামেলায় আছি। আমি শিঘ্রই এসে সারারাত সারাদিন তোমার কাছে থেকে যাবে। অসীম ওখান থেকে বিক্রমপুর চলে আসে।

পরীক্ষা ও অসুস্থতা মিলিয়ে সাত মাস পর বাড়ি আসলো। ওর একটা বিষয় ঢাকা গেলে বাড়ি আসতে মন চায় না, বাড়ি আসলে হলে ফিরতে মন চায় না। তারপরও এতোটা দিন বাড়ি না এসে থাকেনি। ওর এবার ভিন্ন টার্গেট। ঠাকুর মশাইর সিফিলিস ছিল কিনা সেটা খুঁজতে হবে? ওনি কোথায় কোথায় যায় একটু নজর রাখা।

কোন ডাক্টারের সাথে সম্পর্ক সেটা নিশ্চিত হওয়া। ঐ ডাক্তারের সাথে কোন বন্ধুর সম্পর্ক। বের করাটা সমস্যা নয় বলেই মনে হয়। ভোরে বিছানায় থাকতেই একটা শোরগোল শোনে। কানপাতে বোঝার জন্য।

ঠাকুরমশাইর বউ বিষ খেয়েছে শুনতে পায়। নয়টার দিকে পুলিশ চলে আসে। লাশ নিয়ে যায়। সাথে ধরে নিয়ে যায় ঠাকুর মশাইকে। এলাকার ঝামেলার সাথে কখনোই জড়ায়নি অসীম।

অঞ্জলীর কথা মনে পড়ে। এই প্রথম ও জেনেছে অঞ্চলী ওকে ভালবাসতো। এই মেয়ে ওকে ভালবাসতে পারে এটা ওর ধারণাতেই ছিল না। সে থানায় যায়। মেম্বার হামিদ চোকদারের সাথে দেখা হয়।

নমস্কার দেয়। মেম্বার বলে তুমি আইছো ক্যা? অসীম বলে, দেখতে আসলাম। দেখতে থাকো। বলে মেম্বার অসীমকে ভ্র“ক্ষেপ না করে চলে যায়। হাজত খানায় পায় ঠাকুর মশাইকে।

ঠাকুর মশাই বলে, দেখ বাবা অঞ্জলীর মায় ব্যথায় টিকতে না পেরে বিষ খাইছে। ওসি সাব কয় আমি নাকি আরেকটা বিয়ে করার জন্য মেরে মুখে বিষ ঢেলে দিছি। এক লাখ টাকা চায়। কি করি। ভগবান কি ঝামেলায় ফেললো।

অসীম ওসি সাহেবের কাছে গিয়ে বলে, ওসি সাহেব ঠাকুর মশাইর স্ত্রী দীর্ঘ দিন বাযৎই বিভিন্ন অসুখে ভোগছিল। গরীব মানুষ টাকা পাবে কোথায়? ওসি সাহেব বলে, তুই কই থিকা দালালী করতে আসলি। আমার কাছে সব খবর আছে? ওর মেয়ে অনেক টাকা আয় করে। -আত্মহত্যার জন্য এক লাখ টাকা দিতে হবে? এটা কেমন কথা। -তুই এক মিনিটের মধ্যে ভাগবি।

নইলে তরেও ডাকাতির মামলায় ফেলবো, তোর দুই লক্ষ টাকা দিতে হবে। -এতো সোজা নাকি? দেশে আইন কানুন নাই। অসীম গজরাতে গজরাতে বাড়ি আসে? বিকেলেই শুনতে পায় শ্রীধরপুরের ডাকাতি মামলার এক নম্বর আসামী করা হয়েছে অসীমকে। অসীমের বাবা ও দাদা জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আপাতত পালিয়ে বাঁচ।

পালায় অসীম। ঢাকায় এসে হরগবিন্দকে সব খুলে বলে। হরগোবিন্দ বলে, আমি সব শুনেছি। তুইতো ঝামেলা লাগিয়ে এসেছিস। আমি এমপিকে দিয়ে ওসিকে ফোন করিয়েছিলাম।

ওসি হারামজাদা এমপিকে বলেছে, তুই নাকি তাকে ঘুসি মেরে পালিয়েছিস। হরগোবিন্দ মিডফোর্ডে দুই দিন আগের তারিখ দিয়ে ভর্তি করে দেয়। থাক এখানে, ঠাকুর মশাইর ব্যবস্থা আমি করবো। তার আগে হারামী ঠাকুর জেল খাটুক। হরগোবিন্দ বলে, আরে তোর সিফিলিস এর পরীক্ষার রিপোর্ট কাল পাওয়া যাবে।

কোথা থেকে ডাক্টার দেখিয়েছিস? কি ঔষধ খেয়েছিল। প্রেসক্রিপসন আছে। অসীম বলে, দাদা হাতুড়ে ডাক্তার। সেই বলেছে। ঔষধ সেই দিয়েছে।

- ওরাতো প্রতারক। তোকে ভয় দেখিয়ে হয়তো টাকা নিয়েছে। অসীমের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। হরগোবিন্দ বলে দুই এক দিন থাক হাসপাতালে। তোর সিফিলিস থাক বা না-থাক অসুখের পজিটিভ রিপোর্ট করিয়ে দিচ্ছি।

চিকিৎসাধীন থাক। থানার মামলার কাজে লাগবে। ওসি সাহেবকে ম্যানেজ করার ব্যবস্থা করছি। পর দিন পত্রিকায় নিউজ এসেছে। অসীম কুমার সাহা নামে ডাকাতির মামলার এক নম্বর আসামী থানায় আসলে, পুলিশ তাকে চ্যালেঞ্জ করে।

আসামী ডাকাত অসীম ওসি কামরুজ্জামান সাহেবের নাকে ঘুসি মেরে রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায়। খবর পরে অসীমের শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে। ও হাসপাতাল থেকে পালায়। ও বুঝে নেয় দেশ ওকে ছাড়তে হবে? ও হোসনে আরার কাছে চলে যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ ওদের সম্পর্ক।

হোসনে আরা বহুবার বলেছে, ইংল্যান্ড চলে যেতে। টাকা পয়সা ওই দিবে। অসীম গেলে হোসনে আরাও চলে যাবে। হোসনে আরার প্রস্তাব প্রতিবারই প্রত্যাখ্যান করেছিল, এই দেশ ছাড়বে না বলে। জন্মভূমি ত্যাগ করবে না এটা ছিল একটা প্রতিজ্ঞা।

হোসনে আরা অনেক বার বলেছে, এদেশে থেকে হিন্দু ছেলের সাথে মুসলমান মেয়ের বিয়ে সম্ভব নয়। সব টাকা আমি দেব তুমি ইংল্যান্ড চলে যাও আমি একমাসের মধ্যেই চলে আসবো। অসীম ভেবেছে সব ছাড়তে পারবো তবু জন্মভূমি নয়। হোসনে আরাকে ভালবেসে অপদস্তও কম হয়নি। আটমাস আগে যেবার হোসনে আরার বারবার তাগাদায় গ্রামে আসে।

পরিচয় করার আপা বলে, বিক্রমপুর দেখতে এসেছে, পদ্মানদী দেখতে এসেছে, আড়িয়ল বিল দেখতে এসেছে। কিন্তু কিছু উগ্রপন্থী ছেলে ঠিকই বুঝে যায় এই মেয়ে অসীমের প্রেমিকা। ওয়াসিম সর্দারের ছেলে আলীম সর্দার। মুখে নতুন গোফ উঠেছে। দুজনে পথিমধ্যে অসীমকে ধরে।

কিরে মালাউনের বাচ্চা, তুই নাকী মুসলমান মাইয়ার সাথে প্রেম করস? কালকের মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিবি আর প্রেম ছাড়বি। নইলে হাড্ডিগুড্ডি ভাইঙ্গা ইন্ডিয়া পাঠাবো। অসীম হতভম্ব হয়ে পড়ে। বলে তোমরা কি যাতা বলছ? জালাল অসীমের চেয়ে বয়সে ছোট। সামাজিক পরিচয় ছিল না।

এখন সর্দার বাড়ির মেয়ে বিয়ে করে ক্ষমতা দেখাচ্ছে। চড়া গলাতেই বলে, তর বাড়িতে যে মুসলমান মাইয়া বেড়াতে এসেছে তার লগে তুই প্রেম করস না? অসীম বলে, ওনাকে আমি আপা বলি। তোমরা না জেনে এভাবে কথা বলবা না। আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির দিকে ফিরে এবং হোসনে আরাকে নিয়ে ঢাকা ফিরে আসাদের রুমে যায়। ঘটনা শুনে আসাদ বলে, আপাকে নিয়ে তোর গ্রামে যাওয়া ঠিক হয়নি।

-কি করবো ও বাড়ি দেখতে চাইল, মাকে দেখতে চায়। ভাবতেই পারছি না, এমন ঘটনা ঘটা সম্ভব। -সম্ভব না কেন? গ্রামের অশিক্ষিত অসচেতন মানুষদের বর্বর আচরণ অস্বাভাবিক নয়। আর ওরাতো এরকমই। আসাদ প্রসঙ্গ ঘোরাতে হোসনে আরাকে হাত পাততে বলে।

হাত পাতলে ৩টি টিকিট তুলে দিয়ে বলে, আগামী কাল ভারত অষ্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ম্যাচ। একসাথে খেলা দেখবো। আপনি পরটা আর ডিম ভেজে আনবেন। অসীম খাবার পানির বোতল আনবে আর আমি আপনাদের সাথে থাকবো। ওরা তিনজনই খুশি হয়ে উঠে।

পূর্ব গ্যালারীতে সকালটা ভালই কাটবে। ভারত টস হারে লং অফে ফিল্ডিং দিচ্ছিল অনিল কুম্বলে। ওদের খুব কাছে। বাইনাকুলার চোখে লাগিয়ে দেখে বিন্দুবিন্দু ঘাম জমেছে কপালে। বোলার আর মিড-অফের ফিল্ডারের মাঝখান দিয়ে একটি বল আসতে থাকে লং অফে।

ঠিক ওদের পেছন থেকে এক দর্শক চেচিয়ে উঠে এই মালাউনের বাচ্চা বল ছাড়, বল ছাড়! অসীমের সামনে আসাদ অসহায় হয়ে পড়ে, বিব্রত বোধ করে হোসনে আরাও। লোকটির দিকে তাকিয়ে মাঠে চোখ ফেরায়। অনিল কুম্বলে বল ফেরত পাঠায়। ভাল ফিল্ডিং হওয়াতে ওরা তিনজন হাত তালি দেয়। আসে পাশে আরো কয়েকজন হাততালি দেয়।

এর মধ্যেই একটি আধ খাওয়া পানির বোতল অনিল কুম্বলের কাছে গিয়ে পড়ে। কুম্বলে হাত দিয়ে বোতলটি তুলে দড়ির বাইরে রাখে। খেলা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সার্ট প্যান্ট পড়া, ক্লীন স্যাভ করা যুবকেরা মাঝে মধ্যেই এই মালাউনের বাচ্চা এই ইন্দুরের বাচ্চা বলে গালি দেয়। হোসনে আরা জানতে চায় ভারত অষ্ট্রেলিয়া খেলায় পার্শ্ববর্তী ভারতের সাপোর্ট না দিয়ে এতো অষ্ট্রেলিয়ার সাপোর্ট দিচ্ছে কেন? আসাদ বলে, এরা সবাই পাকিস্তানের সমর্থক।

ভারতের বিরোধীতা করতে গিয়ে তাদের প্রতিপক্ষকে সমর্থন দিচ্ছে। অষ্ট্রেলিয়ার প্রতি এই সমর্থন দেয়ার ফলও নাকী পাওয়া যায়। কদিন পরেই অসীমের রুমমেট আশুতোষ জানানায়, ভারত অষ্ট্রেলিয়া খেলার পরদিন, অষ্ট্রেলিয়া হাইকমিশনে যারা দাঁড়িয়েছিল ভিসার জন্য সবাইকেই ভিসা দিয়ে দিছে। অসীম হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলে, কোন প্রমাণতো নেই। শুধুই অনুমান, শুধুই গুজব।

হোসনে আরার কথায় কখনো রাজি হয়নি। বলেছে ফেরদৌসী মজুমদারতো দেশেই থাকছে। হোসনে আরা বুঝাতে চেয়েছে ওরা তারকা। ওদের কেউ কিছু বলবে না। আমরা সাধারণ মানুষ।

এদেশে থেকে কি হবে? সন্ত্রাস, অরাজকতা, স্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই.. অসীম কিছুই শুনতে চায় নি। বলেছে, সবাই পালালে দেশ গড়বে কারা। এদেশের পরিবর্তন আমাদেরই আনতে হবে। আমি দেশ ছাড়বো না। সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওকে না পেলেও এদেশ ছাড়বো না।

আজ বাঁচার আর কোন পথ পাচ্ছে না। হোসনে আরার কাছে গিয়েই কি আত্মসমর্পন করবে। পুলিশের হাতে পরলে নিশ্চিত জেল হয়ে যাবে। জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। সবাই ভাববে আমি সত্যিই ডাকাত ছিলাম।

অসীম গুলিস্তান এসে মিরপুর চলে যায়। হোসনে আরাকে বলে আমি ইংল্যান্ড যাবো। তোমাদের মিরপুরের ঠিকানা থেকেই যাবো। যতদিন না যেতে পারবো ততদিন এখানেই থাকবো? হোসনে আরা সবাইকে বলে দেয়, অসীম মুসলমান হবে। সবাই খুশি।

আসাদ যে ছাত্রীকে পড়ায় তার বাবা উকিল। তাকে দিয়ে কোর্ট থেকে বিয়ের কাগজপত্র বের করে দেয়। উকিল সাহেব বিয়ের ব্যবস্থাও করে দেয়। অসীমের ইচ্ছায় কাজের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিয়ে হয় হিন্দু রীতিতে। সেখানে হোসনে আরাকে পরিচয় করানো হয় হিন্দু মেয়ে হিসাবে।

নাম রাখা হয় অনুরাধা সাহা। অসীম স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ইংল্যান্ড চলে যায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.