সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা পূর্ববর্তী পর্বগুলো দেখুন
পর্ব ৮
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় কাজ করতে করতে সন্ধ্যা হলে বুঝতে পারে, ভোলায় ফিরে যাওয়ার সময় শেষ। সন্ধ্যার পরে এক চায়ের দোকানে বসে ছিল। মসজিদে থাকার ভাবনাও মাথায় এসেছে। দোকানদারকে বলে, থাকার কি ব্যবস্থা করা যায় বলেন তো।
আসাদের পাশে বসা এক হুজুর বলে, কি করেন?
-একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি।
-কত বেতন পান মাসে।
-ত্রিশ হাজার টাকা। ২০ দিনে ২০ হাজার হিসাবে বলেছিল।
হুজুর আঁতকে উঠে, বলেন কি? মাসে ত্রিশ হাজার টাকা বেতন পান! ত্রিশ হাজার টাকা বেতনে চাকুরি করে এমন কাউকে দেখিনি। আমি এই মসজিদের ইমাম।
দুই হাজার টাকা বেতন পাই, ছাত্র পড়িয়ে ৫শ। আমার এক বছরের বেতন। আপনি আমার সাথে চলেন, বাসায় থাকবেন। আসাদ রাজি হয়। বাসায় আসতেই হুজুর তার ছেলেকে ডাকে মেয়েকে ডাকে।
ছেলে সামনে আসলেও মেয়ে ও স্ত্রী পর্দার আড়ালে থাকে। ইমাম সাহেব বলেন, তোমাদের ডেকেছি, মাসে ত্রিশ হাজার টাকা বেতন পায় এমন একজনকে দেখাতে।
আসাদ লজ্জা পায়। এরা কত সাধারণ জীবন যাপন করে। ঘরে আসবাবপত্র নেই বললেই চলে।
কত কম টাকায় চলে। আসাদ অনেক দিন পরে এশার নামাজ পড়তে মসজিদে যায়। সুন্নত পড়তে গিয়ে ভাবে ৪ রাকাত না দুই রাকাত। ফরজতো হুজুরের সাথে সাথেই পড়ে। বেতের মনে হয় তিন রাকাত।
বাবা কত বড় আলেম, কত মানুষ ধর্মীয় বিষয় জানার জন্য তার কাছে আসে, আর আসাদ আজ ভাবছে এশার সুন্নত কত রাকাত। আসাদের মধ্যে কোন অনুসোচনাও হয় না। ওর বাবা বলেছিল, একজন ইমানদার মানুষ এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হবে সেটা ভাবতে পারে না। আর তুমি নামাজ পড় না। কিভাবে পার ! দিলের মধ্যে কাঁপে না।
কিভাবে পার! আসাদ পারে। আসাদ অনেক পড়েছে। সে ডারউইন পড়েছে, আরজ আলী পড়েছে, প্রবীর ঘোষ পড়েছে, মুক্তচিন্তা নিয়ে অনেক পড়েছে। তার মধ্যে কোন আকর্ষণ নেই নামাজ পড়ায়। হঠাৎই মনে হয়, রুকুতে যাওয়ার সময় হয়েছে।
সে রুকু দেয়। সেজদা দেয়। আবার দাঁড়িয়ে ভাবে, মাদ্রাসার ঘটনাগুলো না ঘটলে সে এতো কিছু ভাবতো না। বাবার মতো, ভাইদের মতো সেও ধর্মেই আচ্ছন্ন থাকতো।
রাতে খেতে বসে দেখে, দেশি মুরগীর মাংস রান্না করেছে।
চিতই পিঠা ভেজেছে। আসাদ অবাক হয়। ইমাম সাহেব এটা করলো কেন? ওনি যে বেতন পায় তাতে মাসে একবারও মুরগী খাওয়া সম্ভব নয়। আসাদ বলে, হুজুর আপনি এইসব করালেন কেন?
আসাদ সাহেব, আমরাতো মুরগী সাধারণত খাই না। এটা পালের মুরগী।
আপনার উসিলায় সবাই খেলাম। আসাদ একটা হীনমন্নতায় ভোগে। হুজুর আবারো বলে, আসাদ সাহেব আপনাকে এতো সমাদর করছি তাতে আমার একটা উদ্দেশ্য আছে। আমার ছেলেটাকে বুঝানো, মানুষ অনেক বড় হতে পারে। মানুষের সম্ভাবনার কোন শেষ নেই।
ও আপনাকে দেখে বুঝবে।
আসাদ হতভম্ব হয়, এই গন্ডগ্রামে থাকা সাধারণ ইমাম, কত চমৎকারভাবে বলল। বলতে কোন দ্বিধা করলো না। আসাদ হুজুরের কথাটা মনে করার চেষ্টা করে, মানুষ অনেক বড় হতে পারে। মানুষের সম্ভাবনার কোন শেষ নেই।
তখনই মনে হয়, এই কথাগুলো সে অন্য কোথাও পড়েছে। শিক্ষাটা ভুলে গিয়েছিল। অসীম নেই তাতে আসাদকে থেমে থাকলে হবে না, আসাদের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি।
আসাদ হুজুরের সাথে ফজরের নাম পড়ে। হুজুর পোলাপান পড়াবে বলে আসাদকে একাই হুজুরের বাড়িতে আসতে হয়।
একটি খামে ৫শ টাকা ভরে, মুখে স্টাপলার করে হুজুরের ছেলের হাতে দেয়। বলে তোমার আব্বাকে দিবা। তারপরে বেরিয়ে আসে। সকালের গাড়ি ধরবে। এলাকায় ওর বন্ধু হাবিব, অসীম মৌলবাদ নিচ্ছে সোচ্চার।
এই ইমাম কি মৌলবাদী, তার ছেলেটি? তারা কি অর্থহীন মানুষ। এরা যদি শিক্ষার সুযোগ পেত, তথাকথিত বড় মানুষ হওয়ার সুযোগ পেত। তাহলে এই অবস্থায় থাকতো না।
ভোলার এক নারী নেত্রীকে জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা ভোলায় অনেক মাদ্রাসা, আপনাদের কাজ করতে কোন সমস্যা হয় না। নেত্রী জানায় অইটা একটা ভিন্ন জগত, আর এইটা একটা ভিন্ন জগত।
এখানে বাইরে থেকে কেই সমস্যা না বাধালে কোন সমস্যা নাই। সকালে ওরা তসলিমার ফাঁসি চেয়ে মিছিল করেছে। আমাদের অফিসের সামনা দিয়ে গিয়েছে। সমস্যা হয় নাই। খুব সহজেই এনজিওটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শিরিন আফরোজের সাথে ঘণিষ্ট হয়ে যায়।
আপা গ্র“প দেখাতে নিয়ে যায়। খুবই ভাল লাগে। ইলিশা এলাকা ঘুরে বেড়ায় রিক্সায়। কয়েকটি এনজিও দেখলেও শিরিন আপাকে অনেক স্পার্ট মনে হয়। শিরিন আপা ডর্মেটরীতেই থাকে।
তার স্বামী অধ্যাপনা করে বরিশালে। তার পাশের কক্ষেই থাকার ব্যবস্থা। দেখ কক্ষ ভাড়া ৫শ টাকা করে। আপাকে বলতেই বলে, আচ্ছা আপানকে দেওয়া লাগবে না। রাতে খাওয়া দাওয়া করে দোতলার বারান্দায় বসে অনেকক্ষণ গল্প করে।
রাজনীতি, নারী-পুরুষ, সামাজিক অবস্থা অনেক আলাপ হয়। আসাদ নিজেকে নিয়ে অবাক হয়। ভাবে আমি আসাদতো। এভাবে কখনো কারো সাথে মেশা হয়নি। এটা হয়তো শিরিন আপার যোগ্যতার কারণেই হয়েছে।
আসাদ মাদ্রাসাগুলোতে সমকামিতার প্রসঙ্গ উঠায়। বলে, আপনাদের কাছে খবর থাকার কথা, মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্ররা সিনিয়র ছাত্র বা শিক্ষকদের দ্বারা যৌন হয়রানীর শিকার হয়।
এতো হয়ই। ওখানে সব ধরণের বদমায়েশী হয়। হা হা করে হেসে উঠে শিরিন আফরোজ।
আসাদ একটু ভীত হয়। বলে, আপনাদের কাছে কোন তথ্য আছে কিনা বা কোন গবেষণা করেছেন কি না?
- না এ ধরণের ডকুমেন্টস নাই। তবে ধারণা করি। অবশ্য এধরণের গবেষণা হওয়া উচিত। একটা প্রজেক্ট প্রোফাইল করে ইউএসএইডে জমা দিলে, সম্ভবত প্রোজেক্ট পাস হয়ে যাবে।
আপনি সহযোগিতা করেন না কেন? আপনি ওখানে কত পান? ওটা কি পার্মানেন্ট জব।
-মাসে ত্রিশ হাজার পাই। পার্মানেন্ট চাকুরি করার ইচ্ছা নাই।
-আপনি মাদ্রাসার যৌন হয়রানীর বিষয়ে একটি পিপি লিখে দেন, আমি প্রোজেক্ট নিয়ে আসতে পারবো। অবশ্য সামদানী ভাইকে বললে সে এখানে বেড়াতে এসে লিখে দিয়ে যাবে।
-সেটাই ভাল হবে। ওনি অনেক অভিজ্ঞ। আসাদ হাফ ছেড়ে বাঁচে। পিপি কিভাবে লিখতে হয় সেটাই আসাদ জানে না। কে সামদানী কে জানে?
-তবে কি কি ধরণের যৌন হয়রাণী হয় তা জানতে হবে।
-যৌন হয়রানীর বাইরে ওখানে আরেকটি বিষয় পাবেন, যৌন রোগ। যেমন সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি। এইডসও থাকতে পারে। মাদ্রাসার কতজন ছাত্র, শিক্ষক এই সব রোগে আক্রান্ত, তারা কি ধরণের চিকিৎসা নেয়। অথবা এই সব চিকিৎসার জন্যও আপনি কাজ করতে পারেন।
-আপনার আইডিয়া অসাধারণ। এইসব নিয়ে অবশ্যই কাজ করতে হবে।
আসাদ বিদায় নিয়ে কক্ষে আসে সাড়ে ১২টার দিকে। ঘুমানোর জন্য প্রস্তুটি নিচ্ছিল, সে সময় আবারো নক হয় দরোজায়। খুলে দেখে শিরিন আপা।
তার ড্রেস পাল্টিয়ে নাইটি পড়ে এসেছেন। খুবই ফিনফিনে। শরিরের সববাক দেখা যায়। বুকের দিকে তাকানো যায় না। নিচে কিছু পড়েননি।
আসাদের খাটে শুয়ে পড়েন। আসাদের বুঝতে পারে না কি করবে। আসাদকে কোনভাবে যৌন আকর্ষণ করে না। বলে আপা আমি রিপোর্টে আপনাকে হাইলাইট করবো। বাকী কথা সকালে বলবো।
না ঘুমালে সকালে কাজ করতে পারবো না। আপা এটা নারে ওটা নারে। এটাচড বাথে ঢুকে, বলে আসাদ দেখলাম সব ঠিক আছে। সে বের হয়ে যায়। আসাদ হাফ ছেড়ে বাঁচে।
আপা চলে গেলে ভাবে, সম্পর্কটা করে ফেললে কি ক্ষতি হতো। সাথে সাথেই সালমার মুখ ভেসে উঠে।
পরবর্তী পর্ব দেখুন আগামীতে... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।