সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা
আগের পর্ব পড়ুন
পর্ব ৫
আসাদের মন ভীষণ খারাপ। দুর্ভাগ্য নাকী একা আসে না। ওর সামনের অপার সম্ভাবনাময় খোলা জানালাগুলো আকস্মাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। আসাদ ম্যানেজম্যান্টএ এবং অসীম কম্পিটার সাইন্সে মাস্টার্স করেছে কোন চাকরর উদ্দেশে নয়। বিক্রমপুরের ছেলে হিসাবে ব্যবসা করবে এই লক্ষ্যই ওরা হেঁটেছিল।
পৌঁছেছিল গন্তব্যেও কাছাকাছি। প্রোগ্রামিং করা, ওয়েব সাইট ডিজাইন এবং কিস্তিতে, মেরামত নিশ্চতাসহ কম্পিউটার ব্যবসা। এজন্য গত ৫ বছরে সঞ্চয় করেছে ব্যাংকে পেনশন স্কীম খোলে। এতিমাসে ৪ হাজার করে রাখতো। এখানে ৪ লক্ষ টাকা জমেছিল।
পুরো টাকাটাই অসীমের হাতে তুলে দিয়েছে ওদেও বিদেশ যাওয়ার জন্য। চাকুরির নজ্য কখনোই কোন পড়া পড়েনি, ইন্টারভিউ দেয়নি। আজ সব কল্পনাই মিথ্যা-ভুল প্রমাণিত হল। তার চেয়ে বড় কষ্ট অসীম নেই এটাই।
এক সপ্তাহের মধ্যে হলও ছেড়ে দিতে হবে।
এখনো ম্যাছ ঠিক করা হয়নি। সব কিছুই স্থবির হয়ে গেছে। মাদ্রাসা পড়া নিয়ে বাড়ির সাথে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তা আজো ঠিক হয়নি। হয়তো অন্য কারণেই এটা হয়েছে। সবভাইয়েরাই আজ বিয়ে করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিভিন্ন জেলায় থাকে। কারো আর আসাদের খবর নেয়ার সময় নেই। আসাদও নেয় না। আসাদের ব্যবসার পরিকল্পনায় কারো সায় নই। ঝুঁকির কথাতো আছেই।
হয়তো কারো কাছে পুঁজির টাকা চাইতে হতে পারে, এটাও কারণ ছিল। অসীমের সাথে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা, অসীম-হোসনে আরার প্রেমও বাড়ির সাথে দূরত্বের কারণ হতে পারে। অসীমের পরিকল্পনায় হোসনে আরা স্থায়ী ছিল না। আসাদ অসীমের মনে হয়েছিল হোসনে আরা ওদের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। হিন্দু ছেলে হিসাবে মুসলিম মেয়ের বিয়েটা কেউ মেনে নেবে না।
এই সম্পর্কে হোসনে আরা যতটা ক্রেজি ছিল অসীম তার কিছুই ছিল না। তবে মেয়েটা সাহসী বটে। ওদের ব্যবসায় তার বিদেশি ফার্মে চাকরি করে অর্জিত সমস্ত পুঁজি বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। হয়তো অসীমকে পাওয়ার জন্য বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। এক সিফিলিস ওদের জীবনকে, চিন্তা ভাবনাকে, পরিকল্পনাকে তছনছ করে দিয়েছে।
অন্য বন্ধুদের যখন আলোচনার বিষয় গুলো হতো চাকুরি, খেলা, রাজনীতি তখন ওরা এসবে মেতে উঠেনি। ওরা সময় পেলেই ছুটেছে মার্কেটে। কিভাবে ব্যবসা হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। টিউশনীগুলো ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল। এতোদূর এগিয়ে।
এতো পরিকল্পনা করে, ম্যানেজম্যান্টের ছাত্র হয়ে লক্ষ্য থেকে পিছু হটবে?
হঠাৎ করে ওর মাথায় আসে অসীমের ডাকাতির মামলার কথা। অসীম যাওয়ার আগে আত্মগোপনেই ছিল। ওর ঠিকানাই বদলে নিয়েছিল। বলে গিয়েছিল ডাকাতি মামলা থেকে উদ্ধার করার জন্য। ওর হাসপাতালে ভর্তির কাগজপত্র দিয়ে গিয়েছিল।
গতকাল হরগোবিন্দর সাথে আলাপ করে এসেছে। জেনেছে ডাকাতি মামলার টার্জশীট এখনো পুিিলশ দেয়নি। আজ যাওয়ার কথা ছিল। পুলিশকে হাজার বিশেক টাকা দিলে নাম কাটানো যায়। হরগোবিন্দ অন্য কথাও বলল যে, তাদের হিন্দু খৃস্টান বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের উকিল আছে।
মামলায় লড়লেও ওর কিছুই হবে না। হরগোবিন্দ অনেক দুঃখ পেল ওকে না জানিয়ে বিদেশ চলে যাওয়াতে।
অসীম বলে গিয়েছিল, ওর সিফিলিস ছিল না। আসলে আসাদের সিফিলিস আছে কিনা সেটা নিয়ে দুজনেরই সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য অসীম অবশ্য মিডফোর্ডেই যেতে বলেছে, ওখানে যৌন ডাক্তর আছে।
আসাদের যাওয়ার কোন ইচ্ছা করছে না। মনের সাথে শরীরটাও ভাল লাগছে না। ও আবারো চাদর মুড়ি দেয়। আর তখনই দরজায় খটখট শব্দ শুনতে পায়। উঠে না, দরজা খোলাই আছে।
আবারও খটখট শব্দ। কোন বেকুবটা বিরক্ত করছে, অথচ দরজা খোলা। আবারো খটখট। এবার আসাদ উঠে, বিরক্ত হয়েই দরজার দিকে এগিয়ে যায়। ও পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে যায়।
অবিশ্বাস্য ওর সামনে সালমা। সেই অবয়ব, এতো বছরে চিনতে একটুকুও ভুল হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।