সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা পূর্ববর্তী পর্বগুলো
পর্ব ৯
প্রত্যেক সমাজেই ভালো মানুষদের সাথে মন্দ মানুষদের একটা দ্বন্দ্ব থাকে। এ দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই সমাজ এগিয়ে যায়। এ দ্বন্দ্বটা কখনো প্রকাশ্যে আসে তবে অধিকাংশ সময় থাকে অপ্রকাশ্যে। ভাগ্যকুল গ্রামটির ঐতিহ্য, নদী ভাংগনের আশঙ্কা, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব, কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার দ্বন্দ্ব ছাপিয়ে আলোচিত হয়ে উঠে হুমায়ুন আজাদের ভাগ্যকুলে একটি অনুষ্ঠানে আগমন এবং জুম্মার নামাজের সময় তার অনবরত বক্তৃতা প্রদান এবং আয়োজক হাবিবের কর্মকাণ্ড। এখানে ভাল ও মন্দের বিচারটা যখন নিজেদের হাতে পড়ে তখন তা বিপরীতও হয়ে যেতে পারে।
হুমায়ুন আজাদকে এলাকার; হয়তো সারাদেশের মৌলবাদীরা ঘৃণ্য মানুষ হিসাবেই মনে করছে আর নিজেদের ভাবছে সঠিক পথের মানুষ। আবার ভাগ্যকুলে একটি ক্ষুদ্র স্রোতও আছে যারা মনে করে, হুমায়ুন আজাদই সঠিক, আলোকিত মানুষ, জ্যোতির্ময় আর মৌলবাদীরা অন্ধকারের মানুষ, মন্দ মানুষ। এ দ্বন্দ্বে কিছু মানুষ হাবিবকেও ফেলে দেয় নাস্তিকদের দলে। আসাদের মেঝভাই, ওবায়েদ উল্লাহ যিনি তার বাবার কাজী পেশার হাল ধরেছেন। পাশে দিয়েছেন ইসলামিক কিন্ডারগার্টেন।
বলে, হাবিবের কান্ড দেখছো। সে নাস্তিক হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে কি শুরু করেছে? আরেক নাস্তিক হোসেন স্যারকে সংবর্ধনা দিবো ভাল কথা, তাই বলে প্রধান অতিথি আরেক নাস্তিক। এদেশ থেকে কি ধর্ম উঠে গেছে। সব কিছু নাস্তিকরাই করবে?
আসাদ বড় ভাইদের মুখের উপর কথা বলে অভ্যস্ত নয়। কথা বলতেও চায়নি।
মেঝভাই আসাদের মুখ থেকে কিছু শুনতে চায় বলে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আসাদ বলতে বাধ্য হয়, আমি যতটুকু জানি ওতো সবসময় ভাল কাজেই থাকে। বন্যা হলে সাঁকো দেয়, দরিদ্রদের জন্য টাকা তোলে, ক্লাব করে, খেলাধুলা করে, নিজে খেলে অন্যদের খেলার সুযোগ করে দেয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। এসব কাজ আর কে করে? হুমায়ুন আজাদ স্যারওতো অনেক মূল্যবান বই লিখেছে।
সেই হিসাবে ও এই সমাজের নায়ক।
মেঝোভাই রেগে যায়, ও নায়ক আর আমরা ভিলেন? নাকি?
আসাদ আর কথা বাড়ায় না। চুপ করে থাকে।
হাবিব নাস্তিক হয়ে উঠেছিল শৈশবেই। পিতার ভিন্ন জেলায় চাকরী, মায়ের তাবলীগ জামাত নিয়ে ব্যস্ততা এবং মা-বাবার দ্বন্দ্ব সংঘাত অর্থাৎ পারিবারিক অশান্তি হাবিবকে করে তুলে বহির্মুখী।
বিভিন্ন সংগঠন এবং বহু চরিত্রের মানুষের সান্নিধ্য তাকে বয়সের চেয়ে অভিজ্ঞ করে তুলে। মেধা ও উপস্থিত-বুদ্ধি জনপ্রিয়তাও এনে দেয়। মেধার কারণেই এ অবস্থায় যখন যে কারোরই বখে যাওয়ার কথা সেখানে টেস্ট পরীক্ষার পরে মাত্র কয়েক মাস পড়াশোনা করেই উপজেলার মধ্যে প্রথম স্থান দখল করে তাক লগিয়ে দেয়। ঢাকা সিটি কলেজে ভর্তি হলেও আবার গ্রামের টানে ফিরে আসে। ঢাকায় দমবন্ধ হয়ে আসে।
জোৎস্নারাতগুলোতে রূপালী পদ্মা তীব্রভাবে ডাকে। অন্ধকার রাতগুলোতে নিশাচর প্রাণীর মতো ঘুরে বেড়ানো- প্রিয় কুকুর টমির সাথে, ছাড়াবাড়ির শতশত ডাব পেড়ে বন্ধুদের সাথে উৎসব করা, আড়িয়াল বিলে আকাশের শতসহস্র তারাা ন্যায় ফুটে থাকা শাপলা ছেড়ে নোংরা, দমবন্ধ হয়ে আসা ঢাকায় থাকা সম্ভব হল না হাবিবের। ফিরে তাকে আসতেই হয় ভাগ্যকুলে যেভাবে পর্বতারোহীকে সমতলে ফিরতেই হয়। ভর্তি হয় উপজেলাস্থ সরকারী শ্রীনগর কলেজে। এইচএসসিতেও উপজেলার মধ্যে প্রথম হয়ে, প্রকৃতির কথা চিন্তা করে ভর্তি হয়েছিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এবার ফিরে আসার আরেকটি কারণ হয়ে দাঁড়ায় পিতৃ বিয়োগ। আবারো ফিরে আসতে হয় আগের কলেজে। এই কলেজ থেকেই বি.এ পাশ করে ভর্তি হয় এম.এতে। মাঝে গ্যাপ পড়াতে এখনো শেষ হয়নি মাস্টার্স।
হাবিবের প্রিয় স্যার নূর উল হোসেন।
একমাত্র এই স্যারই তার মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিলেন। বলেছিলেন, তোর মতো মেধাবী ছেলে এই বিদ্যালয়ে আমার ২৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে দেখিনি। রাড়িখাল স্যার জেসি বোস ইন্সটিটিউশনে দেখেছিলাম একজনকে; সে ছিল বিশেষ মেধাবী ছাত্র, ওর নাম হুমায়ুন আজাদ। অনেক আগের কথা এই বিদ্যালয়ের এক ছাত্র প্রধান শিক্ষক সাহেবের পা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, স্যার আমাকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেন, আমি পাশ করবোই। ওকে ৪ মাস কেউ দেখেনি।
এসএসসিতে তৃতীয় বিভাগ, এইচএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগ, বিএ তে প্রথম বিভাগ এবং এমএতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। এরপর ওখানেই অধ্যাপনা করেছেন। তুই ৪ মাস ঘর থেকে বের হবি না, শুধু বই নিয়ে থাক স্ট্যান্ড করবি।
স্যারের কথায় হাবিবের একটি সংকল্প তৈরি হয়। একটি স্বপ্ন, একটি বিশ্বাস এবং একটি প্রত্যয় তৈরি হয়।
সব সম্পর্কের জাল ছিন্ন করে গৃহবন্দি হয়।
এবছরই ওর সেই স্যার অবসরে চলে যায়। এই বিদ্যালয়ে ২৫ বছর শিক্ষকতা করে কোন সংবর্ধনা ছাড়াই নিরবে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেনি। তাই সহপাঠীদের নিয়ে, সিনিয়রদের নিয়ে নিজেই সংবর্ধনার আয়োজন করে। স্যারকে জিজ্ঞাসা করেছিল, প্রধান অতিথি কাকে করবো, স্যার বলেছিল তুই ছাড়া আমার আরেকজন প্রিয় ছাত্র আছে।
সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং লেখক ড. হুমায়ুন আজাদ। কিন্তু এতেই সমাজের একটি শ্রেণী ওকে চিহ্নিত করে একটি দলে ফেলে দেয়, কেউ বলে হুমায়ুন আজাদের সারগেদ, কেউ বলে নাস্তিক। কিন্তু একই কলেজের তুখোর নেতৃত্ব, সততা, প্রতিবাদ আরেকজনের ধারণাতেও ব্যাপক পরিবর্তন এনে দেয় তা হাবিবের জানা ছিল না। ও বসেছিল পোস্ট অফিসের মাঠে, আফগান বোরকা পরিহীতা শাহজাদী সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ থেমে বললো, কি আপনেতো নায়ক হয়ে গেছেন।
-তাই নাকী, কে বললো?
- বললো তো আপনার বন্ধু আসাদ ভাইয়াই।
-তাহলেতো নায়ক মানতেই হয়। কিন্তু নায়িকার কোন সন্ধানইতো পাচ্ছি না।
-আপনি চাইলে কত জনা নায়িকা হওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া আছো।
-তাই নাকী, আমিতো জানতাম না, তবে আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে এক পায়ে খাড়া আছে তো।
শাহজাদী খুশি হল না রাগান্বিত হল বুঝা গেল না বোরকা আবৃত থাকার কারণে।
আর কোন কথা না বাড়িয়ে বাড়ির দিকে চলে গেল।
হাবিব অসীমদের পাড়ায় ঢুকে। অসীম তার সহপাঠী হলেও পাড়ার ছোট বড় সকলের সাথেই ও ঘণিষ্ট। স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যায় কেউ অসীমের চিন্তা করে না, করে হাবিবের। অসীমদের দাওয়ায় প্রতিদিন বিকেলেই ব্রীজ খেলা হয়।
তিনটি গ্র“প খেলতে বসে গেছে। ও ঢুকলেই অসীমের বড় ভাই অজিত ডাকে, আয় এদিক আয়। হাবিব গেলে একজন খেলোয়াড়কে উঠিয়ে ওকে বসায়। বসতে বসতে বলে, অসীমের কি খবর?
এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অজিত বলে, খবর নাই। শুনছি বিদেশে গেছেগা।
তগ কাছে ফোন করে নাই। মনে হয় আসাদরে ফোন দিতে পারে। কিন্তু আসাদওতো আহে না।
হাবীব বলে, আসাদতো বাড়িতে এসেছে সপ্তা খানেক। স্কুলে পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত আছে।
আসবে নে।
অসীমের খবর জানার উদ্দেশ্যে এলেও খেলাতেই মনোযোগী হয়ে উঠে। এখানেও মেধার পরিচয় রেখে সে ইতোমধ্যে ভাল ব্রীজ খেলোয়াড় হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে।
আসাদের চেয়ে অসীমেরই ভাল বন্ধু ছিল লিটু। ওদের পরিবারের সকলেই শিক্ষিত।
ওর ছোট কাকা যতিন্দ্র ঢাকায় পড়াশোনার সময় এক মুসলমান মেয়েকে বিয়ে করে মুসলমান হয়ে যায়। ঘটনাটা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও সে আর কখনোই গ্রামে না আসায় চাপা পড়ে যায়। শুক্রবার জুম্মার ফরজ দুই রাকাত নামাজ শেষে মনাজাতের পরে ইমাম সাহেব বললেন, বিশেষ কারণে সুন্নত পড়ে কেউ যাবেন না। ইসলাম আজ বিপন্ন। এই মুসলিম দেশে কাফেররা এক মুসলীম মেয়েকে হিন্দু বানিয়েছে।
আজ তার বিহিত করা হবে। ঘটনাটা কী আসাদ কিছুই বুঝতে পারে না। অন্যরা হয়তো জানে। সুন্নত শেষ করে বসে। ইমাম সাহেব বলেন, রায় বাড়িতে এক মুসলিম মেয়েকে আটক করে হিন্দু বানানো হয়েছে।
মেয়েটিকে উদ্ধার করতে হবে। আপনার চলেন উদ্ধার করে নিয়ে আসি। মুহুর্তেই হইচই পড়ে যায়। বাঁশ, লাঠি, চলা, রড নিয়ে শতাধীক মুছল্লী নারায়ে তাকবীর বলে ছুটতে থাকে। আসাদ বুঝে উঠার আগেই তারা ছুটে যায় রায় বাড়ি; মানে লিটুদের বাড়ির দিকে।
আসাদ শুধু জানে আজ লিটুর বোনের বিয়ে। মুছল্লীরা রায় বাড়িতে আক্রমন করে। বিয়ে বাড়ির লোকজন দিকবিদিক পালাতে থাকে। আগুনে ৫টি ঘর পুড়ে মাটির সাথে মিশে যায়। কাকে উদ্ধার করা হবে কেউ খুঁজে পায় না।
কাকে হিন্দু বানানো হয়েছে জানা যায় না। বাড়ির ভাত, মাছ, সব্জি ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। লুট হয়ে যায় বাড়ির থালা-বাসন থেকে গয়না-গাটি।
লিটুর বোনের বিয়ে হচ্ছে যে পাত্রের সাথে সে পাত্রের পিতার বন্ধু লিটুর মুসলমান হওয়া কাকা যতীন্দ্র। পাত্র পক্ষের সাথে দীর্ঘ পনের বছর পরে এসেছেন নিজের পৈত্রিক বাড়ি দেখার অভিপ্রায় নিয়ে।
স্ত্রী ও একমাত্র পুত্রকেও সাথে করে নিয়ে এসেছেন। এত বছর পরে যতীন্দ্রকে দেখে সকলেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিল। যতীন্ত্রের স্ত্রীকে তারা বরণ করেছিল ধান দূর্বা দিয়ে, হিন্দু রীতিতে। তাতেই কেউ হয়তো ধরে নিয়েছিল যতীন্দ্রের স্ত্রীকে হিন্দু বানানো হয়েছে।
বিকেলে হাবীবের সাথে দেখায় হয় আসাদের।
হাবীবই জানায়, লিটুদের বসতবাড়ির উপর দৃষ্টি ছিল জব্বর গাজীর। সেই একটা মিথ্যা রটনা দিয়ে ইমামকে কাজে লাগিয়ে এই সুযোগে লিটুদের সর্বশান্ত করতে চেয়েছিল। লিটুরা এলাকা ছাড়লে জমিটা তারই হবে। তার থাবার নীচের জমি আর কেউ কিনতে যাবে না।
আসাদ বলল, ওনিতো আমাদের জনপ্রতিনিধি।
হাবিবের চেয়ে জনপ্রতিনিধির অবস্থা বেশি কে জানে। ও বলে, জনপ্রতিনিধিরা হল শিশুর মতো। এতটুকু শুনেই আসাদ অবাক হয়েছিল, জানতে চায় কিভাবে? হাবিব অভিজ্ঞ, সে অনেক বিচার শালিসিতে থাকে। বলে, শিশুরা মিষ্টি হাসি দিয়ে এটা ওটা চায়, না দিলে ঝামেলা করে; কিন্তু তুমি চাইতে যাও, অসম্ভব দিবে না কিছুই। এই সমাজকে বদলানো সহজ নয়।
একটা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন দরকার, এর জন্য ড. হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে এগোতে চাই। তাকে দিয়ে ভাগ্যকুল হাইস্কুলে একটি পাঠাগার গড়ে তুলতে চাই। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পরিবর্তনটা আনা সহজ হবে। তারা ড. আজাদকে কাছে পেলে নতুন কিছু ভাবতে শিখবে। তুমি ঢাকা যাবে কবে?
আসাদ বলে, কালই।
হাবিব বলে, তাহলে চল একসাথেই যাই। হুমায়ুন আজাদ স্যারের ফোলার রোডের বাড়িতে গিয়ে তার সাথে আলোচনা করে আসি।
যদিও আসাদ জানে হাবিব শূন্য থেকেই কাজ করতে পারে তারপরেও বলে, একটি লাইব্রেরি করতে অনেক বই লাগবে, আলমারি লাগবে, কক্ষ লাগবে পাবে কোথায়?
হাবিব বলে, দেখ আলমারিতো বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হরেন্দ্রলালই বানিয়ে রেখে গেছে। একাত্তরে লাইব্রেরির বইগুলো লুট হয়ে যায়। আলমারিগুলো মেরামত করেই ব্যবহার করা যাবে।
বিদ্যালয় আলমারিগুলো রাখার কক্ষটি খুলে দিবে অথবা একটি কক্ষ ছেড়ে দিবে। বই আমাদের জোগাড় করতে হবে। আমার কিছু আছে, তোমরা কিছু দিবা আর হুমায়ুন আজাদ স্যারকে দিয়ে আগামীর প্রকাশক ওসমান গণীর কাছ থেকে কিছু বই আনা যায় কিনা দেখতে হবে। তবে স্যারের বইতো দিবেই। বই সমস্যা না।
হুমায়ুন আজাদের কাছে তার মেয়ে মৌলীর হাতে শ্লিপ পাঠালে, ওদের ভিতরে ডাকে। মিলি বলে, আব্বা এ সময়তো কাউকেই ঢুকতে দেয় না। হাবিব বলে, বুঝলেন তো আমরা তার বিশেষ কেউ। মৌলী হেসে বলে, তাইতো মনে হচ্ছে।
হাবিবকে দেখে স্যার খুব খুশি হয়, অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাবিব নয়।
স্যার বলে, কি অবস্থা বল? হাবিব বলে, স্যার সব ঠিক আছে। হেড মাস্টারতো রাজিই, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিও রাজি। আপনি একটি তারিখ দেন এবং শ্বেতপাথরের ফলকে কি লিখবো লিখে দেন। স্যার বলেন, তুমি লিখ, আমি ঠিক করে দিচ্ছি। হাবিব একটি সাদা কাগজে লিখে দিলে স্যার দেখে বলে ঠিক আছে তবে ড. না লিখে সম্পূর্ণ ডক্টর লিখ।
পরের শুক্রবার তারিখ দিলেন। কাজকর্ম সবই করল হাবিব। আসাদ একটু চিন্তিতই ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে ও সাহসী হয়ে উঠে। অনেক লোকজনই এসেছে।
বেশ কয়েকজন মৌলবাদী এসেছে। তারা বসেছে সামনের আসনে। আসাদ হাবিবকে বলে মৌলবাদীদের কথা। হাবীব বলে ওদের সবকটাকেই চিনি। এখানে সবচেয়ে বড় ভয় তোমার মেঝভাইকে নিয়ে।
তুমি আছ ওনি কিছু করবেন না।
হুমায়ুন আজাদ পাঠাগার উদ্ভোধন করে, প্রধান অতিথির বক্তৃতা দিতে উঠে বললেন, এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন সাহেবকে আমি একদা ভয় পেতাম, এখন মনে হচ্ছে তিনিই আমাকে ভয় পাচ্ছেন। .. .. যারা বেহেস্তে যেতে চায় তাদের বেহেস্ত যাওয়ার পথে আমি কোন বাঁধা সৃষ্টি করছি না; আমি নিজে যেতে না চাইলে তাদেরও আপত্তি থাকা উচিত নয়। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জন্মের পর থেকেই শুনে আসছি, তোমরা সীমা লংঘন করো না। সীমা লংঘন করেই আমি প্রথম রাড়িখাল থেকে ঢাকায় গিয়েছিলাম।
বিক্রমপুর থেকে হাজার হাজার যুবক ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া, মধ্যপ্রাচ্য গিয়েছে সীমা লংঘন করেই। তোমাদেরও সীমা লংঘন করতে হবে, সীমা অতিক্রম করতে হবে। তিনি প্রধান শিক্ষকের বক্তৃতার প্রেক্ষিতে বলেন, আপনি বলেছেন কবিরা হয় আত্মভোলা। এটা ঠিক নয়, আত্মভোলা হয়ে কেউ কবি হতে পারে না। কবিদের অত্যন্ত সচেতন হতে হয়।
তিনি পাঠাগারে যাতে শিক্ষার্থীরা পড়তে পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। নিজের শৈশবের স্মৃতি চারণ করেন।
অনুষ্ঠান শেষ হয়। বিকেলে ওয়াপদা রেস্ট হাউজে হুমায়ুন আজাদ থাকবেন। হাবীব ওকে নিয়ে যায়।
আলোচনাটা মাদ্রাসা নিয়েই শুরু হয়। আসাদেও সামননে সুযোগ আসে, মাদ্রাসাগুলোর ভিতরের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করার। আসাদ বলে, স্যার মাদ্রাসার শিক্ষকরা সংসার রেখে আসেন তাদেও জেলায় নোয়াখালী, ভোলা বা বরিশাল-ফরিদপুরে। কিন্তু তাদেরতো যৌন চাহিদা আছে। এটা অনেক স্থানেই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপর দিয়ে চালায় মাদ্রাসার শিক্ষকগণ।
ওখানে সমকামিতাও অনেক।
ন্ডমায়ুন আজাদ আগ্রহী হয়ে উঠে। বলে, তুমি জান কিভাবে?
আসাদ ইতস্তত করলেও বলে, স্যার আমি মাদ্রাসায় কিছুদিন পড়েছি। আমারও ওদেও খপ্পওে পড়ার অভিজ্ঞতা আছে। আমি পালিয়ে বেঁচেছি।
আপনি এসব নিয়ে একটি কিছু লিখলে বহু শিক্ষার্থী বিপদ মুক্ত হতে পারে।
হুমায়ুন আজাদ বলেন, এধরণের একটি উপন্যাস লিখছি। তোমার তথ্য কাজে লাগবে। মাদ্রাসা নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে জেনে নেন হুমায়ুন আজাদ। আসাদ জানার চেষ্টা করে, হুমায়ুন আজাদের কাছে কিছু তথ্য আছে কিনা? স্যার জানান, অপেক্ষা করো, উপন্যাস আসছে, ঈদ সংখ্যায় পড়ে নিও।
রাত এগারোটার দিকে ফিরে আসে আসাদ। হাবীবসহ কয়েকজন থেকে যায় তাঁর সাথে। পরদিনও দেখা হয় হাবিবের সাথে। হাবিব বলে, কতদিন হল এসেছিস। তোর উচিত ছিল অসীমদের বাড়িতে যাওয়া।
আসাদ বলে, অসীম সম্পর্কে আমি এখনও কিছুই জানি না। গিয়ে কি বলব?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।