দুর্নীতি ধরতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের রাখা অভিযোগ বাক্সের তালার চাবিটিও নকল হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তালাটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। ১৭ই আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পরিদর্শনে যান। এক শিক্ষকের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাতেনাতে এক ঘুষখোর কর্মকর্তাকে ধরেন। ওইদিনই সিদ্ধান্ত নেন মাউশিতে একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপনের।
১৯শে আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী আবারও মাউশিতে গিয়ে তিন ফুট দৈর্ঘ্যের এবং চার ফুট প্রস্থের একটি বিরাট আকারের অভিযোগ বাক্স স্থাপন করেন এবং নিজের হাতেই তাতে তালাবদ্ধ করেন। বাক্সের তিনটি চাবি নিজের কাছেই রাখেন। এ বাক্সের গায়ে লেখা আছে ‘মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট যে কোন অভিযোগ এখানে ফেলুন’। অভিযোগ বাক্সটি স্থাপন করা হয় মাউশি’র মূল ভবনে নিচ তলায় প্রবেশমুখে। ভবনের প্রবেশপথে এ বাক্সটির ১০-১৫ গজ দূরেই কলাপসিবল গেটের বাইরে আনসার ব্যাটালিয়নের দু’জন অস্ত্রধারী সদস্যও সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকেন।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমার দপ্তরের কর্মচারীরা তালাটি খুলে অভিযোগ নিয়ে আসেন। তালার চাবি নকল হয়ে গেছে এ ধরনের খবর আমি জানি না। তিনি বলেন, দুর্নীতি নির্মূলে আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি। রাতারাতি তা করা সম্ভব নয়। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার।
সূত্র জানায়, এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মিলে ওই বাক্সের চাবি নকল করে বাক্স খুলে তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো সরিয়ে ফেলেছে। বাক্সটি স্থাপনের পর এ পর্যন্ত চার দফা খোলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রীর দপ্তরের কর্মচারীরাই এ বাক্সটি খুলেছেন। তারা মোট ৩০টি অভিযোগপত্র পেয়েছেন বাক্সে। বাক্স স্থাপনের পর প্রথম খোলার দিন পান ৮টি অভিযোগ, দ্বিতীয় দফায় ৭টি, তৃতীয় ও ৪র্থ দফায় বাক্সটি খুলে পান ৯টি ও ৬টি অভিযোগপত্র।
এ অভিযোগগুলো কর্মচারীরা সংগ্রহ করে মন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে হস্তান্তর করেন। সর্বশেষ ১১ই সেপ্টেম্বর বাক্সটি খোলার সময় মন্ত্রীর দপ্তরের কর্মচারীরা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, এ বাক্সের চাবি নকল হয়েছে। এ জন্য তালাটিকে ‘সিলগালা’ করা হয়েছে। ওই সময় মন্ত্রীর দপ্তরের কর্মচারীরা তালাটির গায়ে আড়াআড়িভাবে সাদা কাপড় দিয়ে মুড়ে চিকন রশি বেঁধেছেন। এরপর ম্যাচের কাঠিতে আগুন দিয়ে সিলগালার গামসহ তালাটি বন্ধ করেন।
এ বিষয়ে তারা বলেন, ‘ চাবি নকল হয়েছে তাই সিলগালা করা হচ্ছে। ’ এ ছাড়া অভিযোগ বাক্সের মুখটি এতই বড় যে ইচ্ছা করলে যে কেউ একটি কাঠি দিয়ে বাক্সের ভেতরে ফেলা চিঠি তুলে আনতে পারবেন। এক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে বাক্সটিকে আরও নিরাপদ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র জানায়, বাক্সে যেসব অভিযোগ পড়েছে সেগুলোকে বাছাই করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হবে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশও দেয়া হবে।
এ বিষয়ে মাউশি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান-উর-রশিদ বলেন, এ ব্যাপারে আমার বলার ও করার কিছু নেই। তিনি বলেন, এ তালার তিনটি চাবিই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। শিক্ষা সেক্টরের এটি ‘নার্ভ সেন্টার’- তাই অনেক কিছুই এখানে ঘটে যা নিয়ে বলার বা করারও কিছু থাকে না। মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পদোন্নতি, বদলি এবং এমপিওভুক্তিও বাতিল, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মাউশি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষা ভবনে যান।
এ ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে প্রতিনিয়তই নানা হয়রানি আর ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় তাদের। অবৈধ লেনদেন আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকশিশ না দিয়ে এখানে কোন কাজই হয় না। অভিযোগ বাক্সে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষা ভবনের দুর্নীতি, অনিয়ম, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির সব অভিযোগ দেয়ার জন্য বলা হয়। কর্মকর্তারা বলেন, অভিযোগ বাক্সটি সম্পর্কে এখনও সারা দেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা সঠিকভাবে অবগত নন। এ জন্যই অভিযোগ কম পাওয়া যাচ্ছে।
তারা বলেন, এ মুহূর্তে আমরা তালাটি সিলগালা করেছি। এর বাইরে আর কি পদক্ষেপ নেয়া হবে তা বলতে পারবো না। উল্লেখ্য, শিক্ষামন্ত্রী ১৭ই আগস্ট চট্টগ্রামের এক শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাউশি’র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোড পরিবর্তন শাখার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মনিরুল ইসলামকে ঘুষ দাবির দায়ে তাৎক্ষণিকভাবে বদলির নির্দেশ দেন। ওই ঘটনা তদন্তে মাউশি’র পরিচালকের (মাধ্যমিক) নেতৃত্ব তদন্ত কমিটি গঠন এবং পরবর্তী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ১২ই সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন মাউশি’র মহাপরিচালকের কাছে।
কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।