আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানসিক রোগঃ ডিসথাইমিয়া (আপনি বাঁচলে বাপের নাম)

ভাল মন ডিসথাইমিক ডিসঅর্ডার বা ডিসথাইমিয়া হচ্ছে এক ধরনের বিষণ্নতা যা কমপক্ষে ২ বছরের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে। ডিসথাইমিয়ার প্রকোপ কিন্তু কম নয়। প্রায় ৩% লোক এই রোগে ভোগে। পারিবারিক ডাক্তারের চেম্বারে আসে এমন রোগীদের মধ্যে ৫-২৫%-এর ক্ষেত্রে ডিসথাইমিয়া রোগটি থাকতে পারে। ডিসথাইমিয়া শৈশব বা যৌবনের যে কোনো সময় শুরু হতে পারে।

সাধারণত বিষণ্নতার মতো এটাও মেয়েদের বেশি হয়। কেউ বলতে পারে না কেন বিষণ্নতা মহিলাদের বেশি হয়। তবে যে কোনো বিষণ্নতা বা ডিসথাইমিয়া পুরুষদেরও হতে পারে। পুরুষরাও কিন্তু এর ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। কিছু কিছু লোক বিষণ্নতায় বছরের পর বছর ধরে ভুগতে পারে।

এই ধরনের বিষণ্নতা সব সময়ই মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়, যা কখনোই মারাত্মক আকার ধারণ করে না। ডিসথাইমিয়াতে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীই সঠিকভাবে বলতে পারে না কবে থেকে তার বিষণ্নতা প্রথম শুরু হয়েছে। ডিসথাইমিয়ার প্রকৃত কারণ কী তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। মস্তিষ্কের ভেতরের কিছু অংশের পরিবর্তন হতে পারে, যা কিনা সেরোটনিন নামক রাসায়নিক পদার্থটিকে ধারণ করে। তাছাড়া- *ব্যক্তিত্বের সমস্যা *শারীরিক অসুস্থতা *অনেক দিনের জমানো মানসিক চাপ ইত্যাদিও প্রভাব রাখতে পারে।

*ডিসথাইমিয়া নামক মানসিক রোগের বিভিন্ন উপসর্গ রয়েছে এগুলো হলো- *ক্ষুধামান্দ্য বা অতিরিক্ত ক্ষুধা *ঘুম না হওয়া বা অতিরিক্ত ঘুম হওয়া *শক্তিহীনতা বা ক্লান্তিবোধ *ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশা হারিয়ে ফেলা বা *আশান্বিত হওয়া ইত্যাদি অবশ্য ডিসথাইমিয়াতে আক্রান্ত রোগী মাঝে মাঝে এমনকি একটানা ২ মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মেজাজে থাকতে পারে। পরিবারবর্গ ও বন্ধু-বান্ধব নাও বুঝতে পারে যে, তাদের ভালোবাসার পাত্রটি ডিসথাইমিয়া নামক একপ্রকার বিষণ্নতায় ভুগছে। যদিও এই ধরনের বিষণ্নতা মৃদু প্রকৃতির তথাপিও এটা পরিবারের স্বাভাবিক কাজকর্মকে বিঘ্নিত করতে পারে। তাই আপনার প্রথম পদক্ষেপ হবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা। এতে আপনি সুস্থ অনুভব করবেন, নিজেকে সুস্থ করার কিছু পথ আছে সেগুলো হলো- **পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা **মদ ও মাদকদ্রব্য থেকে নিজেকে বিরত রাখা **নিজেকে কোনো কাজের মাঝে সংশ্লিষ্ট করা **খেলাধুলা করা **বাগানের কাজ করা **কম্পিউটারে শিক্ষামূলক কিছু করা **হাসি-খুশিতে দিন যাপন করা নিয়মিত ব্যায়াম করা, অন্তত সপ্তাহে ৩ দিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যায়াম করা।

ব্যায়াম আপনার মেজাজের উন্নতিতে সাহায্য করবে। কারণ ব্যায়ামের ফলে কিছু কিছু উপকারী হরমোন নিঃসরণ হয়। ডিসথাইমিক ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস ওষুধ দিয়ে করা যেতে পারে। এই ওষুধগুলো বিষণ্নতা থেকে মুক্তি দেয় এবং ওষুধগুলো মোটামুটি নিরাপদ। এই ওষুধগুলো বেশি উচ্ছলতাও তৈরি করে না এবং আসক্তিও তৈরি করে না।

আপনাকে যদি অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস দেয়া হয় তাহলে আপনি এই ওষুধের উপকার পাচ্ছেন কি না তা বুঝতেও আপনার কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই শুধু ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়া আপনার জরুরি। এই ওষুধে আপনি যদি সুস্থ অনুভব করেন তাহলেও আপনাকে কয়েক বছর পর্যন্ত ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। অন্য কথায় আপনি সুস্থ অনুভব করলেও আপনাকে ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি ওষুধ বন্ধ করেন তাহলে আপনি পুনরায় বিষণ্নতায় আক্রান্ত হবেন।

বিষণ্নতার চিকিৎসায় যে ওষুধগুলো ব্যবহৃত হয় তাদের বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কোনো কোনো সময় প্রকাশ পেতে পারে, বিষণ্নতার ওষুধ বা অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস দুই ধরনের আছে যথা- *ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস এবং *সিলেক্টিভ সেরোটনিন রিআপটেক ইনহিবিটরস যাকে বলা হয় এসএসআরআই। ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেশান্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো- *ঘুম বেশি হওয়া *মুখ শুকিয়ে যাওয়া *অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ *হাঁত কাপা *প্রস্রাবের সমস্যা *দুর্বল মনে হওয়া *কোষ্ঠকাঠিন্য *ওজন বেড়ে যাওয়া *প্যালপিটিশন দেখা দেয়া *দাঁড়ানো অবস্থাতে মাথা ঝিমঝিম করা *মাংসপেশিতে হাল্কা খিঁচুনি অনুভব করা এসএসআরআই বা সিলেক্টিভ সেরোটনিন রিআপটেক ইনহিবিটরস-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া- *ঘুম ঘুম ভাব হওয়া *ঘুম না হওয়া *দুশ্চিন্তা *বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া *শরীর কাঁপা *যৌন সমস্যা *ডায়রিয়া ইত্যাদি যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আপনার উচিত হবে না ঘাবড়িয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া এবং তাকে আপনার সমস্যার কথা জানানো। অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ বাংলাদেশের বিশিষ্ট মনোশিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.