একটা মেয়ের একটু কথা।
বাস থেকে নেমে সোজা ঢুকে গেলাম কাল্লুর দোকানে। সে ফুল ব্যবসায়ী। সে আমাকে দেখে ব্যাস্ত হয়ে উঠলো। আমি নিলাম কয়েকগাছি বেলী ফুলের মালা চৌদ্দটা টকটকে লাল ফুটন্ত গোলাপ।
- একদম তাজা ফুল ছার। এরম তাজা ফুল কোথাও পাবেন না।
- আচ্ছা কাল সকাল পর্যন্ত তাজা থাকবে তো?
- অবশ্যই থাকবো না যদি থাকে তাইলে আমার ফুলের দোকান আপনেরে লেইখ্যা দিবো! এখন শুধু একটু পানিত ভিজায়া রাখবেন। ফিরিজেও রাখতে পারেন।
আমি টাকা দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
কাঁচাবাজারে গিয়ে ঢুকলাম। কুঁচো চিংড়ি পেয়ে গেলাম মুখে হাসি নিযে সেগুলো কিনলাম। কুঁচো চিংড়ি আমি খুব পছন্দ করি এমন নয়। হাঁস কিনলাম। বিরক্তিকর যতগুলো আইটেম আছে সবগুলো কিনে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে।
কিন্তু পরের দিনগুলোর জন্যে ওদের রেখে গেলাম। একদিনে সব গেইম শেষ করলে কি ভাবে হবে? এর আগে অনেক বার বিরক্তিকর জিনিস নিয়ে বাসায় গেছি। শুধু মৃদুকে ইরিটেট করার জন্যে। বাইম মাছ কচুর গোড়া, কলার মোচা, কচু লতি আরো কত কি!
বাসার সামনে দাড়িয়ে কলিংবেলটাতে টিপ দিয়ে ধরে রাখলাম। বিরক্তিকর একটা কাজ এটা।
আমার স্ত্রী মৃদুলা খুললো দরজা। প্রতিদিনের মতোই মুখে পরিমিত হাসি নিয়ে। আমি আসা মাত্রই আমার হাত থেকে সবব্যাগ নিয়ে নেয়ার কোন ব্যতিক্রম হবে না জানি। আমি এটাই চাচ্ছি। সে নিলো কিন্তু ফুলের প্যাকেটটা নিলো না।
আমি জানতাম এটা হবে। আমিও মেপে হাসলাম। গেইম এখনও বাকি আছে তাড়াহুড়োর কিছু নাই।
আমি অনেক সময় নিয়ে গোসল করলাম। ইচ্ছা করেই ফুলগুলো লুকিয়ে রেখেছি।
আমি চাই মৃদু খুঁজুক এগুলো তবে সেই সম্ভাবনা খুবই কম। ওকে আমি দশ বছর ধরে চিনি।
বের হওয়া মাত্র প্রতিদিনের মতোই কফি পেয়ে গেলাম। সে চলে গেলো রান্নাঘরে। আমার ধারনা ঠিক সে ফুল খুঁজেও দেখেনি।
আগে তার কষ্ট হতো সামলাতে কিন্তু এখন অভ্যস্ত। আর আমি ও অভ্যস্ত। ফুল গুলো বের করে বেশ আয়োজন করেই ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলাম। রান্নাঘর ঠিক উল্টোদিকে। দেখতে হলে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে দেখতে হবে।
আমি বেলী ফুলগুলোকে খুব যত্ন করে একত্র করি। এই পর্যায়ে স্ত্রীকে বলি একটু সুতো দিতে সে কুচো চিংড়ি বাছা রেখে সুতো দিয়ে যায়। কিন্তু সে একটু পিছলে যায় কেন জানি। জিজ্ঞেস করলো:
- ফুলগুলো দিয়ে কি করবে?
- ফুল দিয়ে কি করে?
- কাওকে দিবা?
- হু দিবো।
- আচ্ছা।
কাকে?
আমি একটু হাসলাম। খানিকটা শব্দ করেই। যেনো সে লজ্জা পায়। কিন্তু একটু পিছলে গেছে পরের বার তার পিছলানো দেখতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। আমি সাবধান হয়ে গেলাম হয়তো এবার আমার টার্ন! আমি আনাড়ি হতে ফুলগুলো বাধঁছি।
আমাকে খানিকটা অবাক করে আমার স্ত্রী এসে বলতে লাগলো কিভাবে বাঁধতে হবে। আমিও মুখে হাসি নিয়ে বললাম একটু আদুরে গলায় বললাম তুমিই বেঁধে দাও তাহলে।
আমার স্ত্রী এই দশ বছরে আমার কোন কথা অমান্য করেনি এবারো করলো না।
ফুল গুলো নিয়ে একটা গেইম ভেবেছিলাম। সেটা আর করবো না।
অন্য খেলা খেলবো। কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি টেবিলে রাখা এশট্রেতে সিগ্রেটের ছাই। আমি সিগ্রেট ছেড়ে দযেছি সেই কবেই। হয়তো আমাকে দেখানোর জন্যে ইচ্ছা করেই রেখে দিয়েছে এগুলো। রমিজকে নিয়ে দুটো বাক্য বললো সে।
সমপরিমান আঘাত তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে তো! দেখলাম সাদা বেলীগুলোকে মাঝখানে রেখে আমার স্ত্রী খুব সুন্দর করে চরিদিকে লাল গোলাপ গুলো গুজে দিয়েছে। আমি মুগ্ধ হলাম। ফুলগুলো নিয়ে নিযে একটি পানিভর্তি বাটিতে করে বেডরুমে রেখে আসলাম। মৃদু অনেক যত্ন নিয়ে রান্না করলো প্রতিদিনের মতোই। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে টেবিলে গিয়ে বসলাম।
গরম ভাত থেকে ধোঁয়া উঠছে। দেখেই স্পর্ষ করতে ইচ্ছা হয়। আমি প্লেটে ভাত নিলাম। সব কিছু রেডি এমন সময়ে মৃদুর দিকে একবার তাকিযে হাসলাম তারপর উঠে চলে গেলাম। সে একবারও ডেকে বললো না খেতে।
বেডরুমে এসে শুয়ে পড়লাম। সাইড টেবিলে রাখা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এগুলো কাকে দেবো ঠিক করে ফেলেছি। রিয়াকে দেবো। আমার কলিগ নতুন এসেছে মেয়েটা।
আজকাল একটা জিনিস মাথায় ঢুকে না। এখকার অনেক তরুণী মেয়েরা তুলনামুলক বেশী বয়েসী বিবাহিতো পুরুষদের পছন্দ করে। কথাবার্তায় এক ধরণের আমন্ত্রনের হাতছানি থাকে আবার অবজ্ঞাও থাকে যে কোন পুরুষকে ক্রাশ খাওয়ানোর জন্যে যথেষ্ট। অবশ্য তাদের উদ্দেশ্য থাকে লাট্টুর মতো ঘুরপাক খাওয়ানোর। নারীজাতি বাঁদর নাচ দেখতে পছন্দ করে।
মাঝে মাঝে ভীষণ প্রেমে পড়ে যাবার অভিনয় করি রিয়ার সাথে। আবার একটু পরেই নিদারুণ অবজ্ঞা। তার অস্ত্র দিয়ে তাকেই ঘায়েল করা আরকি। সে তো আর মৃদু নয় যে ঘায়েল হবে না। রিয়ার কথা অনেকবার বলেছি মৃদুকে।
মৃদু মচুকি হেসেছে শুধু। রিয়ার ছবিও দেখতে চেযেছে। এখানে আমার এককাজে দুইকাজ হয়েছে। রিয়াকে ছবির কথা বলতেই নানা রকমের কথা বলা শুরু করলো রাজি আবার রাজি না এই টাইপের কথা আরকি। যাই হোক অনেক ন্যাকামি করে রাজি হলো।
আজকাল মোবাইলে ভালো ছবি উঠানো যায়। ছবি তোলার মুহুর্তে যখন রিয়ার কাঁধে হাত রেখেছিলাম রিয়া হকচকিয়ে গিযেছিলো। আমি শুধু হেসেছি। মনে মনে অবশ্যই।
এই ছবি দেখে আমার কোন সন্দেহ নেই মৃদুও মনে মনে খুব হেসেছে।
হয়তো এখনও হাসে। সে হাসতে থাকুক। এর পর থেকে রিয়ার সাথে কখনও কথা বলি নাই। আমি চেযেছিলাম ওকে দিয়ে মৃদুর সাথে গেইম খেলতে বোকা মেয়েটা সব এলোমেলো করে দিলো। কিন্তু ফুলগুলো রিয়াকেই দিবো।
কয়দিন ধরে আবার ওর সাথে কথা হচ্ছে। মৃদু কি কিছু টের পাচ্ছে না? রিয়াকে নিয়ে অনেক ঘুরেছিও। বলতে গেলে রিয়ার সাথে এই মুহুর্তে প্রেমই করছি। তবে সেটা শারীরিক পর্যায়ে নিবো না কখনও আমি মৃদুর সাথে বিশ্বস্ত থাকতে চাই। আর রিয়া কষ্ট পাবে? পাক! তার সেটা প্রাপ্য।
ফুলগুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম ভাঙ্গলো কেন আমি জানি না। ফুঁপিয়ে কান্না করছে কেউ। কে কাঁদছে? মৃদু? আমি উঠলাম। বাটিতে ফুলগুলো নেই।
দেখলাম ড্রয়িং রুমে মৃদু বসে আছে। ফুলগুলো কুচিকুচি করে ফেলেছে। ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা দেখেই মায়া লাগলো। আমি ওর কাছে গেলাম। আমাকে ধরে ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগলো।
আমিও ওকে ধরে বসে থাকলাম। আমি তো এটাই চাইছিলাম। গেইম খেলে ওকে কাঁদাতে চেয়েছিলাম। সে আজ কেঁদেছে। আমিও কাঁদছি।
আমি খুব ভাল করে জানি এই দৃশ্য আমি ঘুমের ঘোরে দেখছি। এটা স্বপ্ন। এই স্বপ্ন আমি প্রায় প্রতিদিনই দেখি। তাই ঘুমের মধ্যেই আজকাল বুঝতে পারি এইটা স্বপ্ন। কিন্তু কি করব জাগতে ইচ্ছা করে না।
আহা সারাজীবন যদি ঘুমিয়ে এই স্বপ্নটা দেখতে পারতাম!
কিন্তু আমাকে জেগে উঠতে হয় পর দিন সকালে। ফুলগুলো মৃদুই প্যাক করে দেয়। মুখে মৃদু হাসি নিয়ে। এই খেলা চলে আসছে দশ বছর ধরে। সব সম্পর্কের একটা শৃঙ্খল থাকে।
সেটা হতে পারে ভালবাসা বা অন্য কিছু। আমাদের সম্পর্কের শৃঙ্খল হতে পারতো ভালবাসা বা একটা শিশু। দুটোই ঈশ্বর প্রদত্ত জিনিস। কিন্তু কোনটাই হয়নি। তাই বলে কোন শৃঙ্খল তৈরী করতে পারবো না মানুষ হয়েছি বলে? হ্যাঁ সেটা করেছি।
পরষ্পরকে কষ্ট দেয়ার শৃঙ্খল। এই শৃঙ্খল ই তো আমাদের একছাদের নীচে বাস করার প্রেরণা। আমি মুচকি হেসে ঘরে থেকে বেরুলাম। যেই মুচকি হাসি হাসতে হাসতে আমি ক্লান্ত।
(লিওকে ধন্যবাদ সাপোর্ট করার জন্যে।
) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।