জিয়াউল হক
শেখ সাদীর একটি বিখ্যাত গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। এক ব্যক্তি জুতার দোকানে ঢুকে জুতা দেখছেন। যে জুতা তিনি দেখছেন তার প্রতিটিরই অনেক দাম। ভদ্রলোক মন খারাপ করে ফেললেন, হীনমন্যতায় ভুগলেন। স্রষ্টার প্রতি তার অনেক অভিমান হলো।
তার মনে হচ্ছিল স্রষ্টা তার প্রতি রহম করেননি। তাহলে তার দারিদ্রতা থাকত না, তিনি অনায়াসেই জুতা কিনতে পারতেন। এই অবস্থায় তিনি যখন দোকান থেকে বের হয়ে আসলেন, তখন তিনি লক্ষ্য করলেন, রাস্তার অপরপাশে এক ভিক্ষুক ভিক্ষা করছে, তার দুই পা’ই কাটা পড়েছে। সাথে সাথে তিনি উপলব্ধি করলেন, যদিও তার জুতা নেই, তবুও তিনি ঐ ভিক্ষুকের চেয়ে স্রষ্টার রহমত বেশী পেয়েছেন, কারন দুটি পা’ই রয়েছে।
আসলে এই হীনমন্যতা একটি বড় মাপের নেচিবাচকতা, যাতে নিজের প্রতি অনাস্থাই প্রকাশ পায়।
আর হীনমন্যতা থেকে আসে ভয়।
এই হীনমন্যতা আমাদের মধ্যে শেকড় গাড়ে শিশুকালেই। বর্নমালায় আমরা পরেছি অ-তে অজগরটি ঐ আসছে তেড়ে, আ-তে আমটি আমি খাব পেড়ে, ই-তে ইদুর ছানা ভয়ে মরে, ইত্যাদি। অর্থাৎ সব নেতিবাচক চিন্তা এবং কথা।
এই নেতিবাচকতার কারনে মানুষ কোন প্রতিযোগীর সাথে প্রতিযোগিতা আগেই নিজের কাছে পরাজিত হয়।
সে লড়াই করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে।
আমাদের দৃষ্টি থাকে আমাদের কি নেই তার দিকে। ফলে আমাদের কি আছে সেদিকে আমরা নজর দিতে পারিনা। আমরা নষ্ট করে ফেলি আমাদের অমিত সম্ভাবনাকে।
আবার এটা কখনো কখনো শুরু হয় অন্যের সাথে তুলনা থেকে।
স্কুলে পরীক্ষার ফল প্রতিবেশী কারও থেকে খারাপ হলে মা বাবা অজ্ঞতাবশত বলে বসেন, কি লেখাপড়া কর, যাও অমুকের পা ধোয়া পানি খেয়ে আস। ফলে সন্তান নিজের সক্ষমতার প্রতি আস্থা হারায়, সে হীনমন্যতায় ভোগে।
হীনমন্যতার ফলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের মনোদৈহিক জটিলতার সৃষ্টি হয়, যা তার সাফল্যের পথে অন্তরায় হয়ে দাড়ায়, সাফল্যের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়।
হীনমন্যতা থেকে আসে হতাশা, হতাশা থেকে আসে ব্যর্থতা এবং এই ব্যর্থতা থেকে আবার আসে হীনমন্যতা। এ হচ্ছে হীনমন্যতার দুষ্টচক্র।
মানুষ যেসব বিষয়ে হীনমন্যতায় ভোগে তা হতে পারে শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, বংশগত, আর্থিক ইত্যাদি। কেউ কোন লেখাপড়া বা দক্ষতায় দুর্বল থাকলে সেক্ষেত্রে হীনমন্যতায় ভোগেন।
হীনমন্যতা বহুরূপী। বিভিন্ন মানুষের মাঝে এটি বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পায়।
১।
কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর দেখা উনি দেখেন সবাই ব্যস্ত, তো অনেকে ভাবেন আমাকে পাত্তা বা গুরুত্ব দিচ্ছেনা।
২। কেউ অন্যের প্রতি হিংসা ইর্শাকাতরতায় ভুগেন
৩। কেউ অন্যের গীবত করেন,
৪। কেউ নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যের কাধে চাপান,
৫।
কেউ সবসময় জড়তায় ভুগেন,
৬। আবার অনেকেই অতি প্রশংসায় গদগদ থাকেন, নিজের যোগ্যতার ঘাটতি পুরন করেন তোষামুদি দিয়ে, ফুট ফরমাস খেটে।
৭। কেউ সেন্টিমেন্টাল হন, কথায় কথায় মন খারাপ করেন, সরল বিষয়কে অযথাই জটিল করে ফেলেন।
৮।
অতি কৃপন হন কেউকেউ
৯। কেউ হোন বেশ গুরু গম্ভীর, আবার কেউবা বদমেজাজি।
১০। হামবরা ভাব নিয়ে চলেন, অহেতুক সন্দেহ প্রবনতায় ভুগেন অনেকে।
১১।
কেউ হোন অনুকরন প্রিয়।
এর সবই আসলে হীনমন্যতাবোধের বিভিন্ন বহিঃপ্রকাশ।
হীনমন্যতা নিজের জীবন থেকে দীর্ঘমেয়াদে দূর করতে প্রয়োজন—
১। জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী,
২। নিজের শক্তি সামর্থ্য যোগ্যতা সম্পর্কে সঠিক ধারনা লাভ করা,
৩।
যা আছে তার জন্য স্রষ্টার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা, শোকর গুজার হওয়া।
৪। নিয়মিত মেডিটেশন করা, ফলে-
আপনি আপনার সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনাকে চিহ্নিত করতে পারবেন। ফলে সীমাবদ্ধতা দূর করে সম্ভাবনাকে বিকশিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবেন
৫। আনন্দ ও সাফল্যের অনুভূতি নিজের মধ্যে সঞ্চার করবেন।
ফলে ব্যর্থতার আশংকা ও ভয় কেটে যাবে।
৬। কথায় আছে, সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ । কাজেই সৎ মানুষদের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাবেন, সৎসংঘে সংযুক্ত হয়ে নিজেকে সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত করবেন।
আশা করা যায়, আপনার হীনমন্যতা বোধের কারনগুলো আপনি চিহ্নিত করেছেন তার সমাধানের সূত্র পেয়েছেন।
আপনার জীবন হোক সাফল্যমণ্ডিত এবং প্রাচুর্য্যময়। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।