Click This Link
কাসিমু তিউতে কে বাইসাইকেলের পেছনের সীটে বসিয়ে নিয়ে এসেছিল তার সবচেয়ে ছোট ছেলে আর বড় ছেলের ঘরের নাতি,যে কিনা আবার কাসিমুর ছোট ছেলের চেয়েও বড়। বাইসাইকেলের পেছনের সীটটা বিশেষভাবে তৈরি করা,বোধহয় কাসিমুর বসবার সুবিধার জন্যই। তাকে সাইকেলে বসিয়ে টেনে নিয়ে তার ছেলে আর নাতি।
কুঁজো হয়ে গেছেন তিনি তবে মুখের চামড়া এখনও লোল চর্ম হয়ে যায়নি। তিনি যখন আমাকে বললেন,আসসালামুআলাইকুম....যে হাসিটা তিনি দিলেন,শিশুর মতো অম্লান।
মুগ্ধ হ'বার মত,রাজ্যের সরলতা যেন ঝড়ে পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন?
আগের চাইতে অনেকটা ভাল, তাহের অনুবাদ করে বলল, আপনার সঙ্গে দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে এসেছেন।
আবারও মুগ্ধ হলাম। এরকমটি সচরাচর ঘটেনা,ভাল হয়ে যাবার পর অনুঘটককে মনে করাটা প্রায় বিরল ভদ্রতার মধ্যেই পড়ে আজকাল। সেদিন অনেক মানুষের ভিড়ে তার সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলা হয়ে উঠেনি।
আজ পারা যাবে। পুরো নাম জিজ্ঞাসা করায় আইডি কার্ড এগিয়ে দিলেন। চমকে উঠলাম। জন্ম সাল লিখা আছে পরিষ্কার ইংরেজীতে "১৯২৬"। তার মানে এই বৃদ্ধ নব্বই ছুঁই ছুঁই! অথচ দেখে বা কথা শুনে মনে হয়না তো।
ছেলেবেলার কথা মনে আছে কিনা জিঞ্জাসা করায় বললেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের কথা তার মনে আছে। আরও মনে আছে ফরাসী উপনিবেশের সময়কালের অত্যাচারের। কথা বলতে বলতৈ আনমনা হয়ে যান কাসিমু। দূরের বাউবাব গাছের দিকে তাকিয়ে কোন সুদুরে হারিয়ে যান....।
১৮৮৭ সালে লেঃ লুই গুস্তাফ বিঙ্গার আইভরিকোষ্টের ভেতরে বছর দুয়েকের অভিযানে আবিষ্কার করেন এদেশটির ফরাসী উপনিবেশ হওয়ার সম্ভাবনা।
বিঙ্গার ৪টি চুক্তি সম্পন্ন করেন। ১৮৯৩ সালের মধ্যে এটি ফরাসী উপনিবেশে পরিণত হয়। ক্যাপ্টেন বিঙ্গার প্রথম গভর্ণর নিযুক্ত হন। স্হানীয় ট্রাইবাল নেতারা বুঝতেই পারেননি সহযোগীতার চুক্তির নামে কিভাবে দেশকে বিকিয়ে দিলেন,কিভাবে তাদের মুক্তজীবন আর জমি ইউরোপীয় শঠতার কাছে হেরে গেল। ফরাসীরা তাদের ব্যাবসার প্রয়োজনে চালু করল 'বাধ্যতামূলক শ্রম প্রথা'যার আওতায় প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক আইভরিয়ানকে বছরে ১০ দিনের জন্য "দেশের প্রতি দায়িত্ব" হিসাবে বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে বাধ্য করা হতো।
ফরাসীরা এদেশ চালাতো দু'নীতির ভিত্তিতে -আত্নীকরণ (assimilation) আর সহযোগীতার(association) নীতিতে। যার মনে হল ভাষা,সংস্কৃতি,প্রতিষ্ঠান,আইন সবকিছুতেই ফরাসী ভাবধারা চালু করা। সহযোগীতার নীতিতে মানা হতো তাই,শুধুমাত্র যা ফরাসী স্বার্থের সাথে সংঘাত হতোনা। ১৯৩০ সালের দিকে পশ্চিমা ভাবধারায় শিক্ষিত কিছু আইভরিয়ানকে ফরাসী নাগরিকত্ব্ব দিয়ে 'ধন্য' করা হল। কিন্তূ সহযোগীতার নীতির আওতায় তারা খনি আর কৃষিতে শ্রম দিতে বাধ্যই থাকলো।
সুবিধাপ্রাপ্ত প্রভাবশালী আইভরিয়ানদেরকে হাতে রখার উদ্দ্যশ্য ছিল "মহৎ"-যাতে তারা মাথাচাড়া দিতে না পারে।
আশ্চর্যের বিষয় হল এখনও অনেক আইভরিয়ানের দেখা পাওয়া যায়,যারা মনে করে assimilation ও association এর নীতিতেই তাদের উন্নতি সম্ভব। তৃতীয় বিশ্বের টিপিকাল চিন্তা !
০৭ আগস্ট ১৯৬০ সালে এইদেশ ফরাসীদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায়। সে অন্য কাহিনী। কিন্ত আদৌ মুক্তি পায়নি কাসিমুরা।
সোনা,কোকো,কফি থেকে পাওয়া আর্থিক সুবিধার সিংহভাগই "নেপোয় মারে দই" হয়ে যায়।
"গুরো" মা আর "কয়াকা" বাবার সন্তান ৯০ ছুঁই ছুঁই কাসিমু তিউতর ঘোলাটে চোখ গুলো বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে উঠে বাধ্যতামূলক শ্রমের আওতায় তাকে ধরে নিয়ে যাবার কথা স্মরণ করে। হয়তো একটু কেঁপেও ওঠেন পিঠে হান্টারের দাগের কথা মনে করে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।