গতকাল বিকেলে শিল্পকলা একাডেমী এর দোতলা চত্তরে বসে আছি। সঙ্গে কয়েকজন লেখক বন্ধু আর একজন লেখিকা আপা। সবাই জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় দেখি পাটের ব্যাগ কাধে সিড়ি দিয়ে উঠছেন আমার প্রিয় কবি মহাদেব সাহা। তার পরনে ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী।
মুখে পাতলা দাড়ি বাতাসে উড়ছে। শরীরে অবস্থা তেমন ভাল নয়। মনে হচ্ছে বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যাবে তাকে, এমনি ভংগ্ন স্বাস্থ্য। প্রিয় কবি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। তিনি হয়ত কাউকে খুজছেন।
এত বড় কবির ব্যাপারে চত্তরে বসে আর দাড়িয়ে থাকা কারো কোন আগ্রহ আছে বলে মনে হলনা। তারা সবাই আগ্রহ ভরে দেখছে টিভি মিডিয়ার এক নায়ক নায়িকা যুগলকে। নায়ক সিল্কের টাইট র্শাট পড়ে আছেন। সে জনসম্মুখে সিগারেট খাচ্ছেন। জয় ভাই বললো দেখছেন বেয়াদপটাকে কেমন পাবলিক প্লেসে ধুমপান করছে।
ইচ্ছে থাকা স্বতেও কবির সাথে কথা বলা হলনা। তিনি কোথায় যেন চলে গেলেন।
হটাৎ করেই ভানায় এল বর্তমান তরুণদের সাথে আমাদের তরুণ বয়েসের পাথক্যটা। এরা সবাই মোবাইল কম্পিউটার ইন্টারনেট আর ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া নিয়ে মেতে আছে। বই পড়ার ব্যাপারে তাদের কোন আগ্রহ নেই।
বই মেলা ছাড়া তারা নতুন বইর মলাট ছুয়ে দেখে বলেও মনে হয় না। সব কেমন অস্থির! কোথায় যেন ছুটছে সবাই।
আমার স্ত্রী যিনি অনার্স পাশ করেছেন কিছুদিন আগে। তার ধারণা সাহিত্য হল পাগলদের কর্ম। তিনি বলেন তুমি যে বই লিখছো তা পড়বে কে? আমারতো মনে হয় বর্তমান প্রজন্ম বই পড়ে না।
আমি জুতসই উত্তর না পেয়ে চুপ করে থাকি। কেননা মাসে ৬০০ টাকা নেট বিল দিলেও আমি বই কিনেছি মাত্র ২০০ টাকার! তখনি সিধান্ত নিলাম নেটে আর পড়ে না থেকে দেখি বই নিয়ে পড়ে থাকা যায় কিনা। বই পড়ার খিদে জাগিয়ে তুলতে হবে।
লেখিকা সুফিয়া জামান তার প্রকাশিত গল্পের বই হিমেল অনল গিফট করলো। আক্ষেপ করে সে বললো তার লেখা নাটক দেশ টিভিতে এবার ঈদে প্রচার হয়েছে।
অথচ চ্যানেল বা পরিচালক অনএয়ার হবার সময় টুকু ফোন দিয়ে জানায়নি! টাকা পয়সা দুরে থাক। লেখকদের প্রতি ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার এমন বিমাতা সুলভ আচরন চলছে বহু দিন। নাট্যকার পারভেজ রানা ভাই বললো পরিচালক নাকি নাট্যকারদেও কখনোই সুটিংএ ডাকতে চায়না।
রেডিও টিভিতে অনেক গান প্রচার হয় কিন্তু কখনোই গীতিকারের নাম ভাল করে প্রচার করা হয় না।
কষ্ট পেলাম জেদ্দা থেকে এক আপা যিনি এসবির একজন ভাল ব্লগার তার বই প্রকাশ করার অভিজ্ঞতা শুনে।
ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি মাত্র ১০০ কপি বই পেয়েছেন!
প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরাও অনেক কষ্টে আছেন। দু তিনটা বাদে বেশির ভাগ পত্রিকার সাংবাদিকরা সময় মত বেতন পায় না। অনেক বঞ্চনার গল্প আছে তাদের। নানা খবরের মাঝে তাদের খবর কেউ রাখে না। সাংবাদিক আর লেখক বন্ধুদের জন্য বিষণœতা বোধ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।