নিজ ভাবনাটা আজ আমি হারিয়ে দেই...স্বপ্নটা আজ নীল আকাশ ছুঁই... হঠাৎ করেই যেন সুযোগটি এসে গেল! দুই লেগ মিলিয়ে লেবানন কে হারাতে পারলেই হলো! বাংলাদেশ উঠে যাবে এশিয়ার সেরা বিশে! বিশ্বকাপ এর মূলপর্বে খেলা এখনো দূরাশা। অন্তত বাছাই পর্ব ও তো আমরা খেলতে পারি! আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল এর কথা বাদ দিলাম এখন চীন-জাপান-কোরিয়ার মূল দলের সাথে খেলতে পারাটাও আমাদের জন্য প্রাপ্তি!
অথচ কি করলাম আমরা?? জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের একসাথে লম্বা সময় ধরে অনুশীলন এর ব্যবস্থাটাও করে দিতে পারলাম না! পারলাম না খেলোয়াড়দের নূন্যতম কিছু চাহিদা মিটাতে। পারলাম না কয়টা আন্তর্জাতিক অনুশীলন ম্যাচ এর সুযোগ করে দিতে।
-এই কাজগুলো করার দায়িত্ব কি আমার-আপনার নাকি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের? অবশ্যই বাংলাদেশ ফুটবলল ফেডারেশনের।
তাহলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন করলটা কি? কি নিয়ে তারা ব্যাস্ত ছিল? তারা ব্যাস্ত ছিল কোটি টাকার সুপার কাপ নিয়ে! আশ্চর্য!!!!!!!!!
দেশের চাইতে তাদের দায়বদ্ধতা যেন স্পন্সরদের কাছে বেশি!
অবশ্য মাঠে দর্শক আসছে না বলে কিছুদিন এর জন্য সুপার কাপ স্থগিত ও করা হয়।
খেলোয়াড়রা সুযোগ পায় বাড়তি কয়টা দিন অনুশীলন এর।
সুপার কাপ-প্রসঙ্গ যখন আসলই তখন আমার একটা ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা বলি।
আমার আশৈশব প্রিয় দল আবাহনীর 'সুপার কাপ ২০১১' জয়ে আমি আবেগে আপ্লুত হয়েছিলাম। এ কথা মানতেই হবে যে -স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ এর ক্রীড়াঙ্গনে একজন 'শেখ কামাল' এবং আবাহনীর অবদান অনস্বীকার্য। আবার আমার কষ্টের জায়গাটি ও এখানেই।
যথেষ্ট হতাশা নিয়েই আমাকে বলতে হচ্ছে আজকে আবাহনী যদি কোন প্রতিষ্ঠিত শক্তি না হত তাহলে হয়ত কোন কোন চাটুকার, তোষামদকারী বা সুবিধাবাদী ক্লাবটির নাম পরিবর্তন করে 'শেখ কামাল আবাহনী' রাখতে চাইত।
কোন কোন ক্লাব এর নাম পরবর্তন এ আমারা তা দেখতেও পাচ্ছি! আমার কেন যেন সন্দেহ হয় তাদের এই ভালবাসা কোন ব্যক্তির জন্য নয়, দেশের জন্য নয়, ফুটবল এর জন্য নয়। এতটি বছর কোথায় ছিল তাদের এই ভালবাসা!!
যাই হোক আবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। লেবাননে বিশ্বকাপ প্রাক বাছাই পর্বের অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে যাওয়াতেও ছিল অব্যবস্থাপনা। ফ্লাইট শিডিউল এমনি ছিল যে দেখা গেল খেলোয়ারদের আগে পৌছে গেছেন কর্মকর্তারা! খেলোয়াড়দের পর্যাপ্ত বিশ্রাম এর সুযোগ-ই ছিল না! এসেই নেমে পড়তে হয়েছে মাঠে! ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে।
হেরে আসতে হল বাংলাদেশকে!
এখানে প্রশ্ন আসছে খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা দেখার দায়িত্ব কার? আমার-আপনার নাকি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের? অবশ্যই বাংলাদেশ ফুটবলল ফেডারেশনের! তাহলে বলতে হবে এই ক্ষেত্রে ফুটবল ফেডারেশন ব্যর্থ।
এবার আসি ঘরোয়া ফুটবল প্রসঙ্গে। প্রথমেই ঢাকা। বি-লীগ নাম পাল্টে হলো বাংলাদেশ লীগ। এই বছর সুযোগ পেল একটি নতুন ক্লাব- 'শেখ জামাল ধানমন্ডি'! এই তো কিছুদিন হলো 'ধানমন্ডি ক্লাব'-টি নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম নিয়েছে 'শেখ জামাল ধানমন্ডি'।
কোন যোগ্যতা বলে ক্লাবটি বাংলাদেশ লীগ-এ সুযোগ পেল আমার জানা নেই! অনেকের-ই হয়তো জানা নেই! বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং এর সভাপতি-ই হয়তো ভাল বলতে পারবেন! তবে ক্লাবটি যথেষ্ট পরিমাণ টাকা নিয়েই মাঠে নেমেছিল। কিনে নিয়েছিল জাতীয় দলের প্রায় সব খেলোয়াড়কেই। এর ফলাফল কিন্তু হয়েছিল ভয়াবহ! জাতীয়দলের মূল খেলোয়ারদের-ই ম্যাচ এর পর ম্যাচ বসে থাকতে হয়েছিল সাইড লাইনে! ফলশ্রুতিতে অনেকের-ই ফর্ম পড়ে গেল!
তবে প্রথমবার এসেই কিন্তু ক্লাবটি বাজিমাত করে দিল। জিতে নিল বাংলাদেশ লীগ এর শিরোপা! অবশ্য পাতানো খেলার অভিযোগ ও উঠেছিল ক্লাবটির বিরুদ্ধে। তদন্তে প্রমাণিত ও হলো।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সামান্য কিছু আর্থিক জরিমানার সুপারিশ করল। বাংলাদেশ তো আর ইতালী না যে পাতানো খেলার শাস্তি স্বরূপ জুভেন্টাস এর মতো ক্লাব কে নামিয়ে দিবে দ্বিতীয় বিভাগে! আর তার উপর 'শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব'-এই নামের একটা ভার ও তো আছে তাই না!
শুধু এই একটি ক্লাব ই কিন্তু নয়। পাতানো খেলা অনেক ক্লাব ই খেলছে। কই এসবের তো কিছুই বন্ধ করা গেল না!
আবার যেহেতু 'বাংলাদেশ লীগ' একটি প্রথম শ্রেণীর প্রতিযোগিতা এখানে চ্যাম্পিয়নশিপ এর পাশাপাশি রেলিগেশন এর ব্যবস্থা ও নিশ্চয়-ই থাকবে। অবশ্য-ই আছে! তবে যারা রেলিগেটেড টিম তারা তাদের নিজেদের ভবিষ্যত জানে না! জানবেই বা কি করে?? বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন যে বাংলাদেশ লীগের কোনো দ্বিতীয় পর্যায়-ই রাখেনি- যেখানে খেলে তারা আবার উঠে আসবে মূল পর্বে! অবশ্য বাংলাদেশ লীগ এর দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে কথা উঠছে।
তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এখনো তা শুরু করতে পারেনি।
এতো গেল প্রথম শ্রেণীর প্রতিযোগিতার কথা। এবার আসি অন্যান্য প্রতিযোগিতায়। ২০০৮-২০০৯ এ হয়নি ঢাকায় 'সিনিয়র ডিভিশন লীগ'। ২০১০ এ হলো 'সিনিয়র ডিভিশন লীগ'।
আমার প্রথম বিভাগ ফুটবল কই? দ্বিতীয় বিভাগ কই? তৃতীয় বিভাগ কই? পায়োনিয়ার লীগ কই?? ক্লাব কি করে উঠে আসবে? নতুন খেলোয়াড় কি করে উঠে আসবে? বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন করছেটা কি? বর্তমান ফুটবল কমিটি করছেটা কি? সভাপতি ই বা কি উদ্যোগ নিলেন? চারদিকে শুধু হতাশা!
আগে একটি বিভাগীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা হতো 'শের-এ বাংলা কাপ'। সেটি ও আর এখন হয়না!
ঢাকার বাইরের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ২০০৯ এর পরে চট্টগ্রামে প্রথম বিভাগ ফুটবল হয়নি। সিলেট-এ ৩.৫ বছর ধরে প্রথম বিভাগ লীগ হচ্ছে না! বরিশাল এ লীগ হচ্ছে না। রংপুর এ লীগ হচ্ছে না।
দেশের আর কোথাও কোনো লীগ হচ্ছে না! বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন করছেটা কি? বর্তমান কমিটি করছেটা কি? সভাপতি ই বা করছেনটা কি?
একটা প্রশংসনীয় কাজ হয়েছে 'স্কুল ফুটবল'। কিন্তু ছেলে-পিলেরা স্বপ্ন দেখবে কতদূর? বেশিদূর তো তারা যেতে পারবে না!
এর মাঝে ঢাকা ঘুরে গেল মেসি বাহিনী। অনেক হাঁকডাঁক আর হই হুল্লোর! বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এর সভাপতি চাইলেন মেসি কে দিয়ে বাংলাদেশ এর ফুটবলে নতুন জ়াগরণ। না মিস্টার প্রেসিডেন্ট এটা হবার নয়। যারা হাজার টাকা খরচ করবার সাধ্য রাখেন, ড্রইং রুম এর সেই সব দর্শকরাই সেদিন মাঠে উপস্থিত ছিল।
তাদের বেশিরভাগ ই হয়তো মাঠে নেমে ফুটবল এ একটা লাথি ও দিবেন না! যারা ফুটবল কে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতো তাদের সেই আর্থিক সামর্থ ছিল না মাঠে বসে ম্যাচ দেখবার! আর মাঠে বসে যদি খেলা দেখেও থাকেন সেটার প্রয়োগ করবেন কোথায়? মাঠে তো খেলাই নেই! আপনি তো মাঠে খেলাটাই ধরে রাখতে পারলেন না/ শুরু করতে পারলেন না!
মেসিদের অনুশীলন এর জন্য যেই কমলাপুর স্টেডিয়াম অনুপযুক্ত, সেই মাঠেই হয় আমাদের প্রথম শ্রেণীর প্রতিযোগিতা 'বাংলাদেশ লীগ' ! মেসিদের জন্য আমরা ড্রেসিং রুম এর সুবিধা বাড়াই। আমাদের খেলোয়াড়রা কি এর নূন্যতম ও কিছু পায়?
বিদেশী কোচ আসে। আবার কাজের অভাবে বসে থাকে। শুধু বেতন গুনে যায়। একসময় ইস্তফা দিয়ে চলেও যায়।
রবার্ট রুবচিচ তো এভাবেই গেলেন! আমরা কোচদের কোনো কাজ ও দিতে পারি না!
আপনি বললেন পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হলে ঢাকার মাঠে আপনি ম্যারাডোনা ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কে নিয়ে আসবেন! এটা কি নির্বাচনী কোনো টোপ ? ফুটবল ফেডারেশন এর সভাপতি না হয়ে আপনি একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কর্ণধার হয়েও তো এই কাজটি করতে পারেন! তাহলে আর পার্থক্য রইল কি?ফুটবল ফেডারেশন এর সভাপতির প্রথম কাজ হবে মাঠে ফুটবল রাখা! তারপর অন্য কিছু। অথচ আমরা দেখছি এখানে অন্য কিছুটাই মুখ্য বাকি সব গৌণ!
আজকেই পত্রিকায় আপনার সাক্ষাতকার প্রকাশিত হল।
'ডিসেম্বরে সাফ ফুটবল'। জাতীয় দল কি অনুশীলন শুরু করেছে? উত্তর 'না'! আপনি ই বলছেন "এবার জাতীয় দলকে প্রস্তুতির জন্য দুই মাস সময় দিয়ে বলব, প্রস্তুতির ঘাটতি রাখেনি। কাজেই ফল দাও”! পত্রিকার রিপোর্টটি তেই আবার সংশয় 'নানা মতের পর মাস খানেক অনুশীলন হবে বলেই মনে হলো'।
না, মিস্টার প্রেসিডেন্ট আপনাকে যেতে হবে। ফুটবল এ গুনগত একটা পরিবর্তন আনতে হলে আপনাকে সরে দাড়াতে হবে! আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ ঢাকায় হোক এটা আমরাও চাই! তবে তার আগে আমার দেশের ফুটবল এর ভিত্তি কে শক্তিশালী করতে হবে। সত্যিকার অর্থেই আমরা চাই বাংলাদেশ এর ফুটবল এর উন্নতি। সে জন্য মাঠে খেলাটা ধরে রাখতে হবে। খেলোয়াড়দের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে!
ঢাকা, বাংলাদেশ-কে আমরা দুবাই বা শারজাহ বানাতে চাই না।
যেখানে জ়াতীয় দলের কোনো খবর থাকবে না অথচ প্রদর্শনী ম্যাচ হবে আর আমরা শুধু বিদেশি দলগুলোকে আতিথেয়তাই দিয়ে যাব!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।