মুন রিভার ...
সাদা-কালো-তে অধীর সময়...
কত আর বয়স তখন! মোটে থ্রি-তে পড়ি। ছোটো মামার সাথে খুব ভাব। মামা মোহামেডানের কড়া সাপোর্টার, ব্যাস! আমিও না বুঝে ঢুকে গেলাম সাদা-কালোর দলে। আমি এমনিতেই মোটামুটি বাজে রকম ইমোশনাল মানুষ। এখন তাও খানিক নিয়ন্ত্রন করতে পারি একটু-আধটু।
ঐ সময় তো এত কিছু বুঝতাম না, মোহামেডান হেরে গেলে কেঁদে বুক ভাসাতাম। আর জিতে গেলে খুশীর চোটে পুরো হাইকোর্ট এলাকা একা একা দৌড়াতাম। সত্যি সত্যি দৌড়াতাম!
সেই সময়ে আমি ফুটবলের ভক্ত ছিলাম খুব। আর মোহামেডান ছিলো আমার জীবন।
৯০ দশক এবং তারপর...
ক্রীড়াজগত নামে একটা পাক্ষিক ক্রীড়া ম্যাগাজিন বের হত তখন।
কোন ক্লাব এ কোন খেলোয়াড় যাচ্ছে, কোন কোচ ছেড়ে যাচ্ছেন কোন ক্লাব, সোনালী অতীত ক্লাবের পুরোনো দিনের কথা- সব ছিলো আমার মুখস্ত। পাড়ায় ফুটবল পরিসংখ্যান বিষয়ক কোনো ক্যাঁচাল তৈরী হলেই ডাক পড়তো আমার। মাঝে মাঝে কমেন্ট্রি দিতেও আমাকে নিয়ে যাওয়া হতো পাড়ার বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। ( বলাই বাহুল্য তখনও চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত বিখ্যাত হয়ে ওঠে নি!!!)
সাব্বির, কায়সার হামিদ, কানন, ইলিয়াস, গিয়াস, বাবুলসহ মোহামেডানের সবার নাম ছিলো আমার একদমে মুখস্ত। আর আমার ফেভারিট ছিলো মোহামেডানের উইঙ্গার মনু।
পাড়ায় একবার সবার জন্য জার্সি বানানো হলো পাশের কোনো এক পাড়ার সাথে ম্যাচ খেলা কেন্দ্র করে। মনু ১২ নং জার্সি পড়ে রাইট উইং এ খেলে তাই আমারও চাই রাইট উইং পজিশন আর ১২ নং জার্সি!
আহা, সেই সব নির্ভার অপাপবিদ্ধ শৈশব....
বড় হয়ে ওঠার দিন, বড় হয়ে ওঠার ঋন...
বড় হয়ে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাটা কেনো জানি আর আগের মত অনুভূত হতো না। সেই ছোটোবেলায় মোহামেডান ক্লাব এর সামনে দাঁড়িয়ে থেকে খেলোয়ারদের অটোগ্রাফ নেয়া, গ্যালারিতে খেলা দেখতে চলে যাওয়া, আবাহনীর প্রতি তীব্র বিরাগ-কেনো জানি আগের মত আন্দোলিত করতো না আমাকে। কিন্তু ফুটবলের প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা তো ছিলোই।
তারওপর আমি বোহেমিয়ান হয়ে গেলাম।
চোখ ভর্তি শব্দ পাখির দল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম এদিক-ওদিক। ফুটবলের খোঁজ-খবর রাখতাম ঠিকই কিন্তু সেই ছোটোবেলার মত আবেগ অনুভব করতাম না আর।
তারপর অনেক দিন চলে গেলো, চলে গেলো অনেকগুলো ইনসমনিয়া রাত.....
থীম সং, মার ঘুরিয়ে এবং....
গান লিখি মনের আনন্দে। কিন্তু শুধু গান লিখে জীবনযাপন রীতিমত কষ্টকর। দেশে ফিরে তাই বাধ্য হয়ে(শুধু শব্দচাষী হয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারলে বেশ হতো কিন্তু!) যোগ দেই একটা আ্যড এজেন্সিতে।
কাজের সুত্র ধরেই আমাদের দেশের বিশ্বকাপ ক্রিকেট এর থীম সং লেখার সুযোগ এসে যায়। সবাই পছন্দও করে। সাহস পাই।
২০১১, জুলাই। গ্রামীণ ফোন সুপার কাপের ক্যাম্পেইন চলছিলো অফিসে।
টিভিসি, আরডিসি, প্রেস আ্যড- নানা কর্মযজ্ঞ। ফুটবলের দর্শক ফিরিয়ে আনতে হবে-নানারকম আইডিয়া শেয়ার হচ্ছে, চলছে নানা মিটিং। আমি ভাবছিলাম ফুটবল নিয়ে একটা দারুন প্রচারনা চলছে আর আমার কোনো অংশগ্রহন থাকবেনা তা কি করে হয়! একটা থীম সং করার অফার দেই অফিসে। লেখাও শুরু করে দেই। শুরুতে লেখাটা জমছিলো না একদমই।
শেষে এসে ঠিকঠাক হয়। ব্রিজ লাইনটাই গানটার প্রাণ হবে, লেখার সময়-ই বুঝেছিলাম।
গানটা কে করবে সেটা নিয়ে অনেক টানাপোড়েন এর পর সুর আর কম্পোজিশন করতে দেয়া হয় ড্যানিয়েল নামে (রেডিও ফুর্তি) একজন তরুন তুর্কিকে।
গানটা শুনে ভালোই লাগে। শুরুতে গ্রামীণ ফোনের গানটা নিয়ে মিউজিক ভিডিও করার কথা থাকলেও (একটা খসড়া লিখেও ফেলি আমি) পরে আগ্রহে ভাটা পড়ায় আর করা হয় না।
কিন্তু গানটা থেকে যায়। ফুটবলের একটা জম্পেশ গান হয়ে যায়।
ফুটবল এর জাগরণ আমাদের দেশে হওয়াটা নিশ্চই সময়সাপেক্ষ একটা ব্যপার, কিন্তু ফুটবলের জন্য , ফুটবলকে ভালোবেসে একটা গান লিখতে পেরে আমার খুব ভালো লাগে। খুব!.....
ফুটবলের গান
গোল...
ছুটে যাই মাঠে
চলো একসাথে
চলো উত্তাল করি গ্যালারী,
সারা দেশ আজ
ফুটবল জ্বরে
উল্লাসে তার জয়গান করি ...
দামাল ছেলে দুরন্ত গতি
ডিফেন্স ভেঙ্গে গোল হবে গোল
ভালোবাসার ফুটবল, ফুটবল
চারিদিকে উঠছে শোরগোল
খেলছে দ্যাখো তরুন যুবার দল
লক্ষ্যে তারা খুবই অবিচল
রুদ্ধশ্বাস মাঠ ছড়িয়ে পরে
জয় ছিনিয়ে আনবে কার ঘরে ...
দামাল ছেলে দুরন্ত গতি
ডিফেন্স ভেঙ্গে গোল হবে গোল
ভালোবাসার ফুটবল, ফুটবল
চারিদিকে উঠছে শোরগোল
মাঝমাঠ থেকে ঠিক পাসে বল
বাড়িয়ে দিলো মিডফিল্ডার
লাইন ঘেষে দুরন্ত দুর্বার গতি
ছুটছে, ছুটছে দ্যাখো উইঙ্গার
কর্নার লাইন থেকে ছুটে এলো চিপ
কি হয়, কি হয় শোরগোল
সব মাথা ছাড়িয়ে, সব বাঁধা পেড়িয়ে
স্ট্রাইকারের হেড গোল, গোল ...
দামাল ছেলে দুরন্ত গতি
ডিফেন্স ভেঙ্গে গোল হবে গোল
ভালোবাসার ফুটবল, ফুটবল
চারিদিকে উঠছে শোরগোল
পুনশ্চঃ বহুদিন পর গ্রামীন সুপার কাপের ফাইনাল দেখতে গেলাম। প্রিয় মোহামেডান টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হেরে গেলো আবাহনীর কাছে!
ধুর, কোনো মানে হয়!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।