আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাঁর গাড়িতে দেশের পতাকা উড়েছে!

খুব বেশি আগের কথা নয়। বছর ছয়েক আগেও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এই দেশের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর গাড়িতে পতাকা উড়েছে, দেশ তাঁর নিরাপত্তা দিয়েছে, তাঁর চলাচলের সময় আমাদের পথ খালি করে দিতে হয়েছে। আমরা সবই মেনে নিয়েছিলাম। কী চরম হাহাকার আর অস্বস্তির মধ্যে সময় পার করেছেন সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন বা আলতাফ মাহমুদের পরিবার! তখন কেউ কি ভেবেছিল, আজকের দিনটি কখনো আসতে পারে বাংলাদেশে! আজ সেই স্বস্তির দিন, শুধু কয়েকটি পরিবারের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য।

গণহত্যা, অপহরণ-নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থেকে মুজাহিদ ও তাঁর সহযোগীরা এবং তাঁর দল জামায়াতে ইসলামী এই দেশটির জন্মের বিরোধিতা করেছিল। বিলম্বিত এই বিচারও আজ আমাদের কাছে এক বড় ন্যায়বিচার হিসেবে হাজির হয়েছে। সিরাজুদ্দীন হোসেন, আলতাফ মাহমুদ বা বদি, রুমী, জুয়েল ও আজাদের মতো তরুণ গেরিলা যোদ্ধারা আজ শান্তিতেই ঘুমোতে পারবেন। রুমির মা জাহানারা ইমাম বা আজাদের মা সাফিয়া বেগমও কী আজ কবরে একটু বেশি শান্তি পাবেন না!
জামায়াতে ইসলামী বা স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ছাড়া আর কেউই মানবতাবিরোধী অপরাধের এই বিচারের প্রকাশ্য ও সরাসরি বিরোধিতা করেনি বা করতে পারেনি। গত জানুয়ারি থেকে একের পর এক রায় আসা শুরু হওয়ার পর এর কোনোটি নিয়ে সন্তুষ্টি আবার কোনোটি নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রবল হয়ে উঠেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যাঁরা সেচ্চার, যাঁরা এই বিচারের পক্ষে আন্দোলন করছেন ও মাঠে রয়েছেন, তাঁদের সবারই দাবি সর্বোচ্চ শাস্তি। আদালতের সব রায়ে এর প্রতিফলন ঘটবে বা রায় সবাইকে সন্তুষ্ট করবে, বিষয়টি এমন নয়। গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় অনেকের মধ্যে বড় অসন্তোষ আমরা লক্ষ করেছি। তাঁর ফাঁসির দাবিতে আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে গণজাগরণ মঞ্চ। আজ মুজাহিদের ফাঁসির রায় সেই একই গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করেছে তাতে সন্দেহ নেই।

এই সন্তুষ্টি আর অসন্তুষ্টির মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধী এবং এই চক্রের বিরুদ্ধে জনমতের একটি প্রতিফলন আমরা টের পাচ্ছি। কিন্তু এই যে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার অব্যাহতভাবে চলছে, একের পর এক রায় হচ্ছে, এটা কি এক বড় সন্তোষের জায়গা নয়?
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যখন আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়, তখনো শেষ পর্যন্ত এর ফলাফল কী হবে তা নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় ছিল। আজ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ মামলার রায়ের পর এ নিয়ে সংশয় নিশ্চয়ই আমাদের কেটে গেছে। ছয় বছর আগে আমরা যাকে মন্ত্রীর মর্যদা দিয়েছিলাম, ‘সমাজকল্যানের’ কাজে লাগিয়েছিলাম তিনি আজ দেশের আদালতের রায়ে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডে তাঁকে দণ্ডিত করা হয়েছে। এটা কি এক বড় পাওনা নয়! স্বাধীনতার ৪০ বছর পর হলেও এই বিচারকাজ শুরু এবং তা অব্যাহত রাখার কৃতিত্ব সরকারকে দিতেই হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় হচ্ছে, এখন আমাদের সংশয় রায় কার্যকর করা নিয়ে। জনগণ যদি এসব রায় কার্যকরের পক্ষে থাকে, তবে সেটাও নিশ্চয়ই হবে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.