জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।
প্রথম পর্বের পরে...
একটা ব্যাপার আমার বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। যদিও আমরা ভাবি মক্কায় কেবল মূর্তিপূজারীরা ছিলেন, মক্কায় স্রষ্টার অস্তিত্বে অস্বীকারকারীরাও ছিলেন, ছিলেন 'হানিফ' বা একেশ্বরবাদীরা, যারা প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেছিলেন একসময় মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে। তাঁরা কোন ধর্মগ্রন্থ অনুসরন করতেন না, অনেকটা যুক্তির ধোপে মূর্তিপূজা টিকার মত ছিল না বলেই একেশ্বরবাদী ছিলেন। ইহুদীরা মদীনায় ছিলেন, কিন্তু নিজেদের মতই থাকতেন।
কারণ তাদের ধর্ম প্রচার প্রসারের সুযোগ নেই, বংশের কেউ হতে হবে।
এতো কেবল শুরু, পুরো বইটাতে মুহাম্মদ (সা) এর একজন 'নবী' হয়ে ওঠা একটু একটু করে তুলে ধরা। লেখকের যুক্তি পড়লেই বুঝা যায়, মুহাম্মদ (সা) এর 'ডিভাইন গাইডেন্সের' ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। তবে এ ব্যাপারে তিনি পাঠকদের 'পুশ' করেন না, শুধু এভাবে শুরু করেন, 'মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী...', এবং তারপরে তুলে ধরেন মুসলিমদের যুক্তিগুলো। কুরআন মুহাম্মদ (সা) এর লেখা নয়, সেটার পক্ষে তিনি মুসলিম মনের যুক্তি দেখান মুহাম্মদ (সা) এর ধীর পরিবর্তন এবং সমসাময়িক কুরআনের আয়াত।
যে কেউ কুরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে বুঝবে কুরআনের মূল দর্শন একটুও বদলায় নি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। অথচ, একজন লেখকের পরিবর্তন ঘটে তাঁর লেখার সাথে সাথে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের ২৩ বছরের ব্যবধানে তাঁর দু'টো কবিতা নিলে একই ধারা, একই বাচনভঙ্গি, একই দৃষ্টভঙ্গি, একই দর্শন পাওয়া যাবে না। এটা অসম্ভব। স্রেফ অসম্ভব।
২৩ বছরে মানুষের জীবন দর্শনে বদল আসবেই। পরিস্থিতির সাথে সাথে লেনিন সহ সব সমাজবিদদের হাইপোথিসিসই পাল্টে গিয়েছে। পরিবর্তিত হয়েছে। মার্জিত হয়েছে। অথচ কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই দর্শন পাবেন, একই বাচনভঙ্গি পাবেন।
আরও দেখুন, মানুষ মুহাম্মদ (সা) এর মনস্তত্ত। প্রথম দিকে মুহাম্মদ (সা) এবং খাদীজা (রা) এর কথাবার্তা শুনে বুঝা যায়, তিনি শঙ্কিত ছিলেন, বিভ্রান্ত ছিলেন, অনিশ্চিত ছিলেন, যেটা ওরকম একটা ঘটনার বিপরীতে চরম মানবিক প্রতিক্রিয়া। আলম নাশরাহ এর মত অনেক সূরায় আল্লাহ প্রথম দিকে তাঁকে শান্তনা দেন, স্থির হওয়ার জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করার উপদেশ দেন। আস্তে আস্তে মুহাম্মদ (সা) এর পরিপক্কতা আসে। শেষের দিকের হাদীসগুলো পরে বুঝা যায় তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত, আত্মবিশ্বাসী।
মক্কার একজন সাধারন মানুষ তিনি পুরো আরবের তার বিরুদ্ধে চলে যাওয়াকেও সামলে নিয়েছেন, রোমান সাম্রাজ্যের সামনেও দাঁড়িয়েছেন। বদলে দিয়েছেন ইতিহাসের পাতা।
এই মেটামরফসিসের অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া পড়ার কথা ছিল তাঁর লেখনীতে। শুধু এতটুকুই প্রমান করে কুরআন তাঁর লেখা নয়। পুরো ২৩ বছর ধরে লেখা কুরআনের বক্তব্য খুবই গোছানো।
যেটা একই সময়ে লেখা একজনের মাথা থেকে না আসলে হবে না। কিন্তু কুরআন পুরোটা এক বসায় লেখা হয় নি। তর্কের খাতিরে ধরে থাকলেও, আমাদের নির্ণয় করতে হবে কোন সময়ে। ২৩ বছরের আগে না পরে? যদি বলেন আগে, তাহলে দেখুন, কোন নতুন আয়াত আসলেই তিনি সমাবেশে সেটা বলতেন। চারজন নির্দিষ্ট লেখক লিখে রাখতেন মুহাম্মদ (সা) এর নির্দেশে সংরক্ষনের জন্য, বাকিরা লিখতেন নিজেদের সংগ্রহের জন্য।
এখন আগে লিখে রাখলে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এক একটা আয়াত বের করলে... এই কাজটা করার জন্য অতি প্রাকৃতিক শক্তি দরকার, কারণ মানুষ জানবে না ভবিষ্যতে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। আর পুরোটা একবারে ২৩ বছরের শেষে লেখা অসম্ভব, কারণ পুরো ঘটনা খুবই ওয়েল ডকুমেন্টেড। তাছাড়া কুরআন পুরোটা আসার পরে বছর না ঘুরতেই মুহাম্মদ (সা) মারা গিয়েছেন। একজন মানুষের যতটুকু সময় দরকার, ততটুকু তিনি পান নি।
মোট কথা, সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতে মুহাম্মদ (সা) এর আশে পাশের পুরো পরিস্থিতির চমৎকার বিশ্লেষন।
একজন বিশ্লেষনী মানুষের জন্য সুখপাঠ্য।
ইয়াহিয়া এমেরিক, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক।
আমেরিকান প্রবাসীরা বইটার ফ্রি কপি অর্ডার দিতে পারেন এখান থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।