আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সুরের সাধকঃ বাউল কবি আব্দুস সত্তার(পর্ব-১)

এসো বন্ধু জীবনের গান গাই / এ গানের চেয়ে সুন্দর গান পৃথিবীতে আর নাই । সুরের সাধনায় যিনি ঘর-সংসার,সমাজ এমন কি বিট্রেনের মত বিত্তশালী দেশের প্রাচুর্যের হাতছানি উপেক্ষা করে এক মনে দীর্ঘ প্রায় ৭৫ বছর যাবত সুরের সাধনা করে যাচ্ছেন তেমনি একজন মানূষ হলেন বাউল কবি মো: আব্দুস সত্তার। প্রচার বিমুখ এ বাউলের জম্ম বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার জগ্ননাথপুর উপজেলার হাছন ফাতেমা পুর গ্রামে আনুমানিক১৯২৯ ইং সনে। পিতা হাবিব উল্ল্যা ও মাতা গোলজান বিবির এই সন্তানটি প্রথাগত নিয়ম ভেঙ্গে খুব ছোট বেলায় ৫ম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় বাউলীপনায় প্রতি আকৃস্ট হন। গ্রামের পাশেই ছিল শ্রী শ্রী গোরাংঙ্গ মহা প্রভুর আখড়া,এ আখড়ায় প্রতিদিনই চলত কৃর্তন,ভাবের গান।

দূর-দূরান্ত থেকে সাধারন শ্রোতা সহ অনেক নামী-দামী জমিদাররাও এখানের ভক্ত ছিলেন। ছোট শিশু আব্দুস ছত্তার ও ছিলেন এ আখড়ার একজন মনোযোগী স্রোতা। এই আখড়ায় সেবায়ীত দীন বন্ধু বৈষ্ণবের হাতে এই পথে প্রথম হাত খড়ি হয়। এর পর সিলেটের বিখ্যাত বাউল ও পীর দুর্ব্বিন শাহের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দুর্ব্বিন শাহের সাথে চষে বেড়িয়েছেন পুরো সিলেট অঞ্চল।

আর বিট্রিশ আমল থেকে সে যে পথ চলা শুরু হয় সে পথের শেষ আজ ৯০ বছর বয়সেও শেষ হয়নি। কৈশরে গান শুনতে শুনতে এক সময় নিজেই গান লেখা শুরু করেন এবং তা পুরু দমে চালিয়ে যান। এই বাউল সৃষ্টিতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব, ভক্তিতত্ত্ব ,মুর্শিদী,কৃষ্ণলীলা,সামাজিক বিষয় নিয়ে গান লিখেন। বাংলা,ইংরেজী ,হিন্দী ও আরবী ভাষায় লিখিত এই গানের সংখ্যা প্রায় ৪৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। এখন ও লিখে যাচ্ছেন নিরন্তন।

বিট্রিশ আমল থেকে গান গেয়েছেন বিখ্যাত সব বাউলদের সাথে, এরা হলেন বাউল শাহ আব্দুল করিম,মান উল্লাহ,আব্দুর রহিম,বাউল কামাল,মীরাজ আলী,ঝাড়ু মিয়া,খালিক দেওয়ান,আব্দুর রহমান বয়াতী প্রমুখ। হাল আমলে গাচ্ছেন এ যুগের বাউলদের সাথে। পেয়েছেন অসংখ্য পুরুস্কার। এখন বয়সের ভারে তেমন গান করতে না পারলেও একবারেই বসে নেই। আছে অসংখ্য শিষ্য, শিষ্যদের কাছ থেকে ডাক পড়লেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যান,ভাবের খেয়ালে গান করেন ও লেখেন।

আমরা যে যাই করিনা কেন আমাদের সর্ব্বপরি আল্লা-রাসুলের প্রতি অনুগত থাকতে হবে,তাইত এ বাউল লেখেন সব সময় ইয়াদ রাখ বান্দা,ইয়া মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ ইয়া মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ,ইয়া মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ........................। । মুর্শিদ ভক্তিতে ও এ বাউল চির অনুগত,তাইত সাধন তত্ত্বে লিখেন ঃ দয়াল মুর্শিদ নামে ছাড়িলাম নৌকা আমার জীবন যৌবন সবই যাবে, মুর্শিদ আমায় দাও দেখা.....................। । এ বাউল কবি বিচ্ছেদ নিয়েও গান লিখেন ঃ বাঁশি বাজায় কালায়,অভাগীনির প্রাণটি উড়ে যায় কেমনে রহিব ঘরে,সখী বল যাই কোথায়....................................।

। মানব জীবনে প্রেম বিচ্ছেদ অবধারিত,তাইত কবি লিখেন ঃ বিষের জ্বালায় জলন্ত, কে করিবে শান্ত প্রেমের বিষে পাগল করিলরে বন্ধু..........................................। । এভাবে শত শত নয়,হাজার হাজার গান আছে এ বাউলের। যা আমাদের বাউল সম্পদের অমুল্য রত্ন।

কিন্তূ দুঃখের বিষয় এ বাউলের এখন পযর্ন্ত রাষ্ট্রীয় ভাবে কোন মূল্যায়ন হয়নি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ট -পোষকতা পেলে এ বাউলের অনেক গান হয়ত কালজয়ী আবেদন রাখতে পারত। কিন্তু এ দেশের সে প্রবাদ “জ্ঞানীরা বেঁচে থাকতে এদেশে কোন দাম পায়না” তেমনি এ বাউল ও হয়ত সবার অগোচরে একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে,আর আমাদের অলক্ষে হায়িয়ে যাবে বাউল সম্পদের অনেক রত্ন। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই রাষ্ট্রীয়,ব্যত্তি,প্রতিষ্ঠান বা যে কেউ এ বাউলের দিকে নজর দিক, রক্ষা করুক বাউল সম্পদের অনেক অমুল্য রত্ন,যথা যথ মুল্যায়ন করা হোক বাউল কবি আব্দুস সত্তারকে।

কারন এ বাউলের বয়স এখন প্রায় ৯০ বছর। জগ্ননাথপুর থানার এক নিভৃত পল্লী অঞ্চলে হাছন ফাতেমাপুর গ্রামে বসবাস। যে কোন সময় সবার অলক্ষে না ফেরার দেশে হারিয়ে যেতে পারে এ অমুল্য প্রতিভা। আসুন আমরা এ বাউলের জন্য কিছু করি। ।

(বাউল আব্দুস সত্তারের সাথে যোগাযোগের ঠিকানাঃগ্রাম+পোঃ-হাছন ফাতেমাপুর। থানাঃজগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ(সিলেট)। মোবাইলঃ০১৭৩২৫২০৪৮৯)। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.