আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ
আমাদের দেশের এক শ্রেণীর তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষবাদী বুদ্ধিজীবি, সংস্কৃতি প্রেমী, রবীন্দ্র ভক্ত আছেন যারা প্রায়ই বলেন এপার বাংলা এবং ওপার বাংলা। মানে দুটোই একই বাংলা। তাদের কথা হচ্ছে ১৯৪৭ সালে আমরা আলাদা হলেও মনের দিক থেকে আলাদা নই। তথা আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সামাজিকতা, চালচলন ইত্যাদি নাকি এক! অথচ সেই ৪৭ এর পূর্বেই মাওলানা ভাসানি পশ্চিমবঙ্গবাসী বিশেষ করে নীতি নির্ধারণী কোলকাতার বাবু মহলকে অনুরোধ করেছিলেন যূক্ত বাংলা হিসেবে পাকিস্তান, ভারতের মতই সম্পূর্ণ আলাদা আরেকটি রাষ্ট্র হতে। এই সমন্ধে ইতিহাস একটু তুলে ধরি;
বৃটিশ ভারতের শেষ ভাইস রয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় "‘আমি মি. জিন্নাহকে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলাম পাকিস্তানের বহির্ভূত থেকে যুক্ত বাংলার অবস্থান সম্পর্কে তার কী অভিমত?’ কোনো দ্বিধা না করে তিনি বললেনঃ ‘আমি আনন্দিত হব।
কলকাতা ব্যতীত বাংলার কী মর্যাদা রয়েছে? তাদের (বাঙালিদের) পক্ষে যুক্ত থাকা এবং স্বাধীন থাকাই ভালো হবে। " (মাউন্টবেটেন পেপারস, লর্ড মাউন্টবেটেন ও জিন্নাহর মধ্যে ১৯৪৭ সালের ২৬ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ইন্টারভিউয়ের রেকর্ড, Nicholas Mansergh, The Transfer of Power, 1942-47, vol. X, পৃঃ ৪৫২-৪৫৩ দ্রঃ)
কিন্তু কংগ্রেসের নেহেরু ও হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামা প্রসাদ চায় নি যূক্ত বাংলা স্বাধীন ভাবে সম্পূর্ণ আলাদা আরেকটি রাষ্ট্র হৌক। তারা চেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ অখন্ড ভারতে থাকবে। (মাউন্টবেটেন পেপারস Mansergh, vol. X,পৃঃ ৫৫৭ দ্রঃ)
তাই প্রকৃত সত্য হল ঐ সময়ের পশ্চিমবঙ্গের বাবু মহল এবং সিংহভাগ হিন্দুরা একটি বাংলা স্বাধীন রাষ্ট্রের চেয়ে ভারতে থাকাটাই সঠিক বলে মনে করেছিল। অথচ আমাদের দেশের তথাকথিত সেক্যুলারিষ্ট আওয়ামী-বাকশালী বুদ্ধিজীবিরা অসাম্প্রদায়িকতার ধুয়া তুলে ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগকে কটাক্ষ করে এবং অপবাদ দেয়।
তাদের এখনও দাবী যে পশ্চিমবঙ্গ হল অসাম্প্রদায়িক এবং তারা নাকি বাংলাদেশকে মনে প্রাণে ভালবাসে। তাই আমরা বাংলাদেশের বাঙালীরা পশ্চিমবঙ্গ হতে আলাদা নই। এটা রাজনৈতিক বিভাজন মনের নয়। বাংলাদেশের ৫৪-৫৫ অভিন্ন নদ-নদীর সিংহভাগই পশ্চিমবঙ্গের হয়ে আসছে। আজকে যখন তিস্তা নদীর সুষ্ঠ পানি বন্টন নিয়ে চুক্তি হবে তখন পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বেকে বসলেন যে চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গ নাকি কম পানি পাবে।
তার মানে সে বাংলাদেশের চেয়ে নিজ পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ দেখবে। অবশ্য এর জন্যই সেখানকার অধিবাসীরা তাকে নির্বাচিত করেছে। এমনিতে গঙ্গা সহ বিভিন্ন নদ-নদী নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ক্যাচাল আছে। এটা অবশ্যই ভারতের আভ্যন্তরীন ব্যাপার। আমরা বাংলাদেশ চুক্তি করব ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তথা সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে।
তাই ভারতের ভিতর কোন রাজ্যে কি কামড়া-কামড়ি ও ভেজাল সেটা সে দেশের কেন্দ্র সরকার বুঝবে। আমাদের কোন চুক্তির জন্য আলাদা ভাবে তথাকথিত বাঙালীত্বের দোহাই দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মন গলিয়ে ভারতের সাথে চুক্তি করার এত কি ঠেকা পড়ছে? ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও মধ্যপ্রদেশ এক রাজ্য সরকার আরেক রাজ্য সরকারের সাথে দেন দরবার করবে। আর বাংলাদেশ হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র। নিজস্ব দেশ-জাতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, পরিচয় ও পাসপোর্ট আছে। তাই মনমোহন সিং একা আসুক অথবা দিল্লির শিকল পরিহিত কোন রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে আসুক না কেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে কেন্দ্র সরকারের প্রধান।
পশ্চিমবঙ্গে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটার মাথা ব্যাথা ও দায়ভার কেন্দ্র সরকারের। আমাদের রবীন্দ্র, বাঙালীত্ব, ভাষা, সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে একটি দেশের নদ-নদীর পানি যা জীবন মরণ সমস্যা, অর্থনীতি, বাণিজ্যর ন্যায্য প্রাপ্তিকে বাধাগ্রস্থ করা যায় না। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গকে মূল ভারতের সাথে আলাদা করা যায় না। ওপার বাংলা হল একটা মিথ্যা মরিচীকা! এই দেশের ভারত প্রেমিক সেক্যুলারিষ্টরা বাঙালীত্বের এবং ৭১এর ধুয়া তুলে ও কুম্ভীরাশ্রু ফেলে সব সময় বাংলাদেশের স্বার্থের চরম ক্ষতি করে আসছে। হাসিনা ও তার ভারতপন্থী সেক্যুলারিষ্টদের কাছে কোলকাতা হল বাঙালী জাতীয়তাবাদের তীর্থস্থান।
মানে আমাদের বাঙালীত্বের শিকড় নাকি কোলকাতায়। আর সেই কোলকাতাই বাংলাদেশকে কোন ছাড় দিতে নারাজ। আর ভারতের কেন্দ্র সরকারেরও নিজ অঙ্গরাজ্যের স্বার্থের বাইরে যাওয়ার কোন উপায় নেই। দেহের একটি অংশে ব্যাথা হলে যেমন পুরো দেহ তা ভুগে, তেমনি দিল্লীও পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ হানি হতে দিবে না। স্পষ্টতই পশ্চিমবঙ্গের কোন আঘাত হলে তার প্রাণ দিল্লীতে লাগে।
কিন্তু আমাদের হাসিনা ও বাকশালী বুদ্ধিজীবিদের মন-প্রাণ হল পশ্চিমবঙ্গে বন্ধক রাখা আছে। পশ্চিমবঙ্গ যে গোটা ভারতেরই অংশ সেটা তাদের আদর্শে নেই। পশ্চিমবঙ্গকে হিন্দুস্থানের অংশ বলতে এদের প্রচন্ড কষ্ট ও গত্রদাহ হয়। ফলে পুরো স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে সীমাহীন ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের বাংলা ভাষা, বাঙালীত্ব, বাঙালী জাতীয়তাবাদ, সংস্কৃতি-কৃষ্টি হতে পশ্চিমবঙ্গকে স্পষ্ট ভাবে আলাদা ও পার্থক্য করা।
তাদের সাথে এ সব বিষয় এক মনে করলে বাংলাদেশও আর স্বাধীন দেশ থাকে না ভারতেরই অঙ্গরাজ্য হয়ে যায়। অবশ্য হাসিনা প্রেমিকদের কোলকাতায় যেয়ে মূখ্যমন্ত্রী ডাক শুনেও কোন লজ্জা-অনুশোচনাতো দূর এটাকে কোন দোষই মনে করে না
তাই সময় হয়েছে প্রকৃত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং এ দেশের ক্ষতিকারক পশ্চিমবঙ্গ প্রেমিকদের রুখে দাড়ানো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।