অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। টাইটেলই বলে দেয়, পেশায় উনি একজন আইনজীবী। যদিও রাজনীতিই ওনার মূল পেশা। কিন্তু ওনার সবশেষ মন্তব্যে না আছে আইনজীবীসুলভ কথার ফুলঝুরি, না আছে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা।
আজ (সোমবার) সন্ধ্যায় একটি ইফতার মাহফিলে জাতির জনককে নিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে বিদগ্ধজন মাত্রই ধাক্কা খাবেন। সাধারণ মানুষও হোঁচট খাবেন বঙ্গবন্ধুর আজীবনের আদর্শ নিয়ে।
অ্যাডভোকেট সাহেব বললেন, 'বঙ্গবন্ধু সাচ্চা মুসলমান ছিলেন। ' তার এই মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এরপর মাননীয় প্রতিমন্ত্রী যা বললেন, তাতে আক্কেল গুড়ুম না হয়েই যায় না।
তিনি বলেছেন, 'বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণায় ইনশাল্লাহ বলেছেন বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। নয়তোবা নয় মাস কেন, নব্বই বছরেও দেশ স্বাধীন হতো না। '
মাননীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, এ কী বললেন আপনি? যা বলেছেন বুঝে বলেছেনতো? না কি কেবল এ আপনার কেবলই রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি? না কি বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে আপনার জ্ঞানের অভাব থেকে এমন একটি পর্যবেক্ষণ দিলেন?
কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিন্দু মাত্র আগ্রহ আমার নেই। কিন্তু ধর্মকে ব্যবহার করে কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার ভুল বা মনগড়া ব্যাখ্যার প্রতিবাদ করার অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে। বাঙ্গালীর স্বাধিকার, পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামের যে ইতিহাস আমরা জেনেছি তার পুরোটাই অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে।
সেখানে ধর্মের কোনো অপব্যবহার আমরা দেখি না। বঙ্গবন্ধু সাচ্চা মুসলমান হলেও আপাদমস্তক ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। এবং তার ধর্মনিরপেক্ষতার মূল কথা ছিলো, ধর্মহীনতা নয়। অর্থাত সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার।
কিন্তু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যে মনে হচ্ছে, ইসলামের নামেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
কিন্তু আমরা জানি তার উল্টোটা। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা স্বাধীনতা সংগ্রামের বরং বিরোধীতাই করা হয়েছিলো ইসলামের নামে। যার অগ্র সেনা ছিলেন গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহীদ গঙ্গরা। স্বাধীনতার সংগ্রামে সামিল হয়েছিলো মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান- সব ধর্মের মানুষ। কিন্তু শামসুল হক টুকুর পর্যকেক্ষণ আমাদের কি শেখাতে চাইছে? বঙ্গবন্ধু কি সেই ধর্মীয় ব্যবসায়ীদের দলে ছিলেন, যারা ইসলামের নামে আমাদের স্বাধীনতার বিরুধীতা করেছিলো, এখনো করছে? স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কী তবে বঙ্গবন্ধুকে রাজাকারদের কাতারে ফেলতে চাইছেন? এর উত্তর তিনিই ভালো দিতে পারবেন।
তবে একজন প্রতিমন্ত্রীর মুখ থেকে এমন বালখিল মন্তব্য কখনোই আশা করা যায় না। বিশেষ করে তা যখন হয় দেশের ইতিহাস নিয়ে। সেই মন্তব্য যখন আসে জাতির পিতা সম্পর্কে।
তাই মাননীয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের প্রতি করজোরে নিবেদন, আপনাদের স্ববাবসুলভ বালখিল্যতা পরিহার করুন। আপনাদের কথায়-কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় আশা করি আমরা।
আপনারা নিজেরা আবুল হলেও, জনগণকে আর আবুল ভাববেন না। খেসারত আপনাদেরই দিতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।