আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। কিস্তি: ৬৭::
মন খারাপ, ঠিক আছে-চল,বান্দরবান যাই। এভাবেই আমরা বান্দরবান ছুটে যেতাম। আমি ও শামীম।
কতবার ও আর আমি হুট হাট বান্দরবান চলে গেছি। তার কোনো ইয়াত্তা নেই। সন্ধ্যায় বাসে উঠে সকালে বান্দরবান নামতাম।
সব কিছুতেই শামীমের একটা আলাদা পছন্দ আছে। আমার ভিন্ন।
যা হাতের কাছে পাই। তাতেই সন্তুষ্ট। যেমন ফর্শা রমণী ছাড়া শামীমের প্রেম করতে নিষেধ। ফিল্টারের পানি ছাড়া খাওয়া চলবে না, হলের রুমে খাবার না এনে খাওয়া যায় না। এমন অনেক রকমের সমস্যা আছে ওর।
তবে কীভাবে যেন আমার সাথে চলতে শুরু করায় অনেক কিছু বদলে ফেলেছে। এখন অবশ্য আসমার সাথে ঘর কন্না করছে। তাই আমাদের আগের মত হুট হাট বান্দরবান ছুটে যাওয়া হচ্ছে না।
২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক সকালে বান্দরবানে নামলাম। নেমে এদিক সেদিক ঘোরঘুরি করে, সকালের নাশতা খেলাম একটা চিপায়, ছোট একটা দোকানে।
৭০ টাকায় গ্রিন হিল হোটেলে একটা টুইন বেড রুম ভাড়া করে ঘুমালাম দুপুর পর্যন্ত। বিকালটা কোথায় কাটানো যায় ভাবছিলাম, হঠাৎ মনে হলো এখন অন্ধকার মিলনছড়িতে গেলে কেমন হয়। যে-ই ভাবা সেই কাজ।
মিলনছড়িতে গাইড ট্যুরসের রেস্টুরেন্টের বারান্দায় বসে কফি মগে চুমুক দিচ্ছি। জোনাকিরা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে।
আলোহীন নিভৃত অন্ধকারের বসে সাঙ্গুর হালকা গর্জন শুনছি। এভাবে কতক্ষণ কাটলো জানিনা। তবে রাত যে বাড়ছে সেটি গাড়ির চালক এসে জানিয়ে গেলো। আমরা বের হলাম। গুটগুটে অন্ধকারের ভেতর বর্ষার নীরব পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে ফিরলাম হোটেলে।
পর দিন সকালে গেলাম মেঘলা। শামীম মেঘলাটা খুব পছন্দ করে। সেখানে নেচারাল লেকের পাড়ে আমরা বসে থেকেছি, কত সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা। তার কোনো হিসাব নেই। সে সময় দড়ি টেনে-লেকের এপার থেকে ওপারে নৌকায় যাওয়া যেতো।
আমরা ইচ্ছে মত এপার ওপার যেতাম।
মেঘলা ঘিরে একটা পরিকল্পনাও ছিল আমাদের। শামীম একবার বললো সিনেমা বানাবে। শুটিং স্পট হিসাবে ঠিক করা হলো মেঘলা। বর্ষা অপরূপ মেঘলা যে কারো ভালো লাগবো।
এখনকার মত কৃত্রিমতা সে সময় ছিল না। এখন অবশ্য কৃত্রিমতায় ভরা।
আমরা সময় করে প্রায় মেঘলা যেতাম। কিছুই না হুদাই সারদিন বসে থাকতাম মেঘলাতে। বর্ষার সময় বেশি যেতাম।
কত দিন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মেঘলার লেকে বর্ষা উপভোগ করেছি। তার হিসেব করা মুশকিল।
বান্দরবানের আনাচে কানাচে আমি অনেক গেছি। কিন্তু সে সময় বান্দরবানে যে বার বার যেতাম তার মত আনন্দ এখন পাই না। তবুও এ কথা সত্যি দেশে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা বান্দরবান।
তিন্দু, বগা লেক কিম্বা সাঙ্গু লেকের নৌভ্রমণের মত আনন্দ আমি আর কোথাও খুঁজে পাই না। আমার অ্যাডভেঞ্চার ভালো লাগে। প্রকৃতির ভেতর আমি আনন্দ খুঁিজ , অপার আনন্দ, সেই আনন্দের সন্ধানে আমি ছুটছি ১৯৯৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত। যতদিন বাঁচি তত দিন এটি অব্যাহত রাখতে চাই।
তবে পাঠকের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি, শামীম ও আমার পরিকল্পনা মত সিনেমা বানানো হয়নি এটা ঠিক।
কিন্তু সে সময় আমি সিনেমা বানানোর জন্য একটা শর্ট কোর্সও করেছিলাম। তানভীর মোকাম্মেল এ কোর্সটি করিয়েছিলেন। তবে সেটি আর কাজে লাগানো হয়নি। ইচ্ছে আছে আরেকবার একটা কোর্স করে কিছু একটা করার। তবে সেটি আদৌ সম্ভব হবে কিনা জানি না।
কারণ বহুদিন ধরে পরিকল্পনা করছি একান্ত আপনজনদের নিয়ে বান্দরবানের তিন্দুতে যাবো। সেখানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকবো আর অপার আনন্দ উপভোগ করবো, কিন্তু বন্ধুরা কেউ সময় করতে পারে না। তাই যাওয়াও হচ্ছে না। আমি আমার পুরনো আনন্দের দিন ফেরৎ চাই। কিন্তু পাই না।
কারণ নাগরিক ব্যস্ততা, টাকা কামানোর ধান্ধা আর মিথ্যে আবেগের সংসার। সেই সংসারে অন্য আনন্দ আছে তবে হারিয়ে যাওয়ার মত অনন্দ নেই। অপেক্ষায় আছি আমার সন্তানের বড় হওয়ার। অন্তত বছর দশেক হলেই আমি ওকে নিয়ে যেতে চাই বান্দরবানে পাহাড়ি দুর্গম পথে।
পিতা পুত্র একসাথে স্নান করতে চাই নাফাখুমে।
তিন্দুতে পাথরের ওপর বসে আনন্দ আড্ডায় মগ্ন হতে চাই। পিতাপতু একসাথে তিন্দুর প্রেমে মগ্ন হতে চাই। সৃষ্টি কর্তার কাছে আমার এটা একটা বড় চাওয়া। আরো কিছু জায়গায় আমি আমার সন্তানকে সাথে নিয়ে উপভোগ করতে চাই, সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপে। সন্ধ্যায় প্রবালের ওপর বসে দেখতে চাই সন্ধ্যার অস্তায়মান সূর্য।
ওকে নিয়ে যেতে চাই সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্টে। যেখানে সাপ আর হরিণের পাল একসাথে ছোট, নিজেদের মত করে। বাঘ বেরিয়ে আসে যখন তখন। এমন আনন্দময় দিন আমি তাকে দিতে চাই যা সে উপভোগ করবে প্রাণ ভরে। আমি তাকে ফার্মের বাচ্চা বানিয়ে রাখতে চাই না ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।