• ধুমপানের বদ অভ্যাসটা সামান্য আছে। ( ঈদে চাঁন্দে আর কি) •মানুষের সাথে মিশতে ভাল লাগে। তবে সবার সাথে না। যাদের মাথায় সামান্য পরিমান হলেও গিলু নামের বস্তুটি আছে তাদের সাথে। • গান শুনতে ভাল লাগে।
প্রিয় শিল্পিঃ প্রিতম আহমেদ। কুমার বিশ্বজিৎ। চন্দনা মজুমদা
পিতা!
________________________________________________
একজন বৃদ্ধ পিতা। বয়সের কারণে যে অচল। চলাফেরা করতে পারেনা।
এই বয়সে তাঁর একজন সাহায্যকারী দরকার। যে তাঁর টুক-টাক বাজার করে দিবে। সেলুনে নিয়ে গিয়ে মাথার চুল কাটিয়ে আনবে। ঔষধের বাক্স খুঁজে দেখবে কোন ঔষধ কমে গেল কিনা। কমে গেলে ফার্মেসী থেকে দৌড়ে গিয়ে নিয়ে আসবে।
মাসে একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।
এইসব কাজের জন্য প্রত্যেক পিতাই চায় তাঁর পুত্র পাশে থাকুক। পরম মমতায় কাধে হাত রেখে বলুক "চিন্তা করোনা, আমি আছিতো বাবা। "
জীবনের শেষ সময়ে প্রত্যেকটি পিতাই চায় পুত্র হোক তাঁর অবলম্বন। আমাদের গল্পের এই পিতাও তাঁর ব্যতিক্রম না।
তাঁর একটাই পুত্র। অতি আদর-যত্নে বড় করা এক বৃদ্ধের শেষ অবলম্বন। মমতা, ভালবাসা ছাড়াও বৃদ্ধ তাঁর পুত্রকে অনেক কিছু দিয়েছেন। অর্থ, সম্পদ, সমাজে খ্যাতি। এখন তাঁর পুত্রকে সবাই চিনে।
রাজনীতি করার কারণে সবাই সন্মানও করে। সে এখন এলাকার পরিচিত মুখ। এলাকার মানুষের সাথে তাঁর সম্পর্ক খুব ভাল। প্রতিদিন একবার এলাকা ঘুরে-ঘুরে জনগণের খোঁজ-খবর নেয়। এখন সে খুব ব্যস্ত।
কিছুদিন পরেই তাদের দলের পিতার জন্মদিন। সেই জন্মদিনের উৎসব পালন হবে।
প্রচণ্ড ব্যস্ততার কারণে ঘরের অসুস্থ পিতার সাথে তাঁর দেখা হচ্ছেনা বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে। সে যখন ঘরে ফিরে তখন অনেক রাত হয়ে যায়। সারাদিনের পরিশ্রমের পর পরিশ্রান্ত শরির নিয়ে পিতার ঘরে যেতে ইচ্ছা করেনা।
ঘরের কাজের ছেলেটা রোজ বলে " আপনেরে খালুজান তাঁর সাথে দেখা করতে বলেছে। "
"আজ না। কাল যাব। "
কালও যাওয়া হয়না। ওদিকে বৃদ্ধ পিতা ছানি পড়া ঝাপসা চোখে পুত্রের অপেক্ষা করে।
পুত্র আসেনা। সে ব্যস্ত তাঁর দলের পিতাকে নিয়ে!
আগামীকাল দলের পিতার জন্মদিন।
বাড়ির পাশের স্কুল মাঠে বিশাল আয়োজন। আগেরদিন থেকেই মাইকে গান বাজা শুরু হয়ে গেছে। বাজছে পিতা-বন্দনা! বিরামহীন মাইকের আওয়াজে অসুস্থ বৃদ্ধ ক্লান্ত, বিরক্ত।
মনে হয় রক্ত চাপও বেড়ে গেছে। অস্থির-অস্থির লাগছে।
রাতের খাওয়া শেষ করে বৃদ্ধ ঘুমাতে গেল। বিছানায় শুয়া মাত্রই তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হল। সাথে অস্থিরতা।
শরির থেকে ঘাম ঝরে গায়ের পাঞ্জাবিটা ভিজে গেছে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হবে। মৃত্যুর আগে ছেলেটাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। পুত্রের হাতে মাথা রেখে মৃত্যু হওয়াও আনন্দের। বৃদ্ধ বিছানায় উঠে বসল।
এখনো অস্থিরতা কমছেনা। একটানে গা থেকে পাঞ্জাবিটা খুলে হাতরে-হাতরে মাইকের শব্দ লক্ষ করে এগিয়ে গেল সে।
বারোটা এক মিনিট থেকে দলের পিতার জন্মদিবসের উৎসব শুরু হবে। মঞ্চে বিরাট একটা বাঁধানো ছবি। সেই ছবিকে ঘিরেই সকল আয়োজন! ছবির গলায় মালা দেওয়া হবে।
পায়ের কাছে রাখা হবে ফুলের তোড়া।
দলের পিতার ছবিটাকে ঘিরে এখন সবাই দাড়িয়ে আছে।
বারোটা বাজলো। মাইকে ঘোষনা দেওয়া হল "পিতার সন্মানে সবাই এখন এক মিনিট নিরবতা পালন করবে। "
সবাই দলের পিতার ছবির দিকে তাকিয়ে নিরবতা পালন শুরু করল।
এমন সময় মঞ্চের পিছন দিক থেকে বৃদ্ধের আগমন। বৃদ্ধ তাঁর ছানি পড়া ঝাপসা চোখে হাজারো মানুষের ভিড়ে তাঁর পুত্রকে খুঁজছে। এদিকে পুত্র তাঁর পিতাকে এখানে দেখে মহা বিরক্ত। সে ভেবে পাচ্ছেনা, তাঁর বাবার বুদ্ধি-সুদ্ধি কি কখনো হবেনা!
আমরা দেখছি একই মঞ্চে দুইজন পিতা পাশা-পাশি দাড়িয়ে। একজন আসল আরেকজন নকল।
একজন বাস্তব, আরেকজন ছবি।
আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করি মিথ্যার বেসাতিতে কিভাবে সত্যের দরপতন ঘটে!
(শাহজাহান আহমেদ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।