একজন বিতর্কিত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা চলছে। তার নানা বক্তব্য নিয়ে এর মধ্যে বিতর্কেরও ঝড় উঠেছে। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের জেলে পাঠাতে তিনিই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। সুপ্রিমকোর্টের ১৩ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর সুপ্রিমকোর্ট বার সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন সমঝোতা বৈঠকের আহ্বান জানালে অ্যাটর্নি জেনারেল তার মুখের উপর বলেছিলেন; আগে তাদের জেলে পাঠান, তারপর দেখা যাবে কী করা যায়। শেষ পর্যন্ত আইনজীবীদের জেলে পাঠিয়েই সমঝোতা হয়েছে।
আইনজীবীদের জেলে পাঠানোর বিষয়ে তিনি অনড় ছিলেন। তার অনড় অবস্থানের কারণেই হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবীদের জামিন হয়নি। জামিন না হওয়ায় গ্রেফতার হন সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমইউ আহমদ। পুলিশের নির্যাতনে অজ্ঞান হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুর মুখেই ঢলে পড়তে হয়েছে। ২০১০ সালের ৯ জানুয়ারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের এক সেমিনারে দেশবরেণ্য সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘অ্যাটর্নি
জেনারেল আদালতকে ভয় দেখান।
অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়কে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করা হয়েছে। এরকম অ্যাটর্নি জেনারেল বা অ্যাটর্নি জেনারেল গ্রুপ আগে কখনও দেখা যায়নি। তারা গণতন্ত্র আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকারের বিরুদ্ধে। অ্যাটর্নি জেনারেল অভদ্রভাবে আদালতকে ভয় দেখান। ভদ্রলোক বিচারকরাই আর কী করবে? ক্ষমতাসীন সরকারের আইনও মানছেন না তারা।
’ অ্যাটর্নি জেনারেল ও তার অফিস সম্পর্কে এই ছিল ব্যারিস্টার রফিক উল হকের মন্তব্য। যা ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়।
ব্যারিস্টার রফিক উল হকের এই বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর সম্পর্কে যা বলেছিলেন তাই যথেষ্ট। ২০০৯ সালের ২৮ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। এই আদেশ স্থগিত করে বাবরকে পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে নেয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে আবেদন করা হয় আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে।
চেম্বার জজ আদালতে এই আবেদনের শুনানিকালে বাবরের আইনজীবী সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে জানিয়েছিলেন, বাবর গুরুতর অসুস্থ। এই অবস্থায় পুলিশ রিমান্ডে নিলে বাবরের জীবন হানি ঘটতে পারে। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের সামনেই বলেন—‘রিমান্ডে বাবর মইরা গেলে মামলা কইরেন। ’ অ্যাটর্নি জেনারেলের এই বক্তব্যই প্রমাণ করে তিনি মানবাধিকারের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল। বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতন করতে পুলিশকে সহায়তা করাই যেন অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব।
অনুরূপভাবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার আরিফকে পুলিশ হেফাজতে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট বেঞ্চ। এই আদেশও স্থগিত করে কমিশনার আরিফকে পুলিশের হেফাজতে রিমান্ডে দিতে চেম্বার জজ আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে আবেদন জানানো হয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের থাকার বিষয় নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা চলাকালীন গত ৮ মার্চ অ্যাটর্নি জেনারেল মন্তব্য করেন ‘ড. ইউনূস নয়, শেখ হাসিনা ও সন্তু লারমার নোবেল পাওয়া উচিত ছিল। ’
শুধু বক্তব্যই নয়, অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে বিভিন্ন মামলায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে চেম্বার জজ আদালতে স্থগিতাদেশ চাওয়ার নজির রয়েছে অনেক। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে পেশ করা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হয় চেম্বার জজ আদালতে।
গত বছরের ২০ এপ্রিল সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের একটি মামলায় হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করা হয়। অনুরূপভাবে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের একটি মামলায় জামিনের আদেশ স্থগিত করতে গত বছর জুলাই মাসে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর। সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদনটি করা হয়।
বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া, মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালত থেকে আদেশ নেয়াসহ বিভিন্ন কারণে সমালোচিত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সুপিমকোর্টে দলীয় দৃষ্টি বাস্তবায়নেই তিনি বেশি উত্সাহী।
বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের মামলায় তিনি আদালতকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। আইনের যুক্তির চেয়ে তিনি দলীয় রাজনৈতিক চিন্তার বিবেচনায় বক্তব্য রাখতেই বেশি উত্সাহী। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বক্তব্য রাখায় এর মধ্যে আইনজীবীরা তাকে নিয়ে নানা সমাচোলনা করেন।
একজন বিতর্কিত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।