অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া! [এটি একটি রাগ ও ক্ষোভ মূলক পোস্ট]
আমাদের উদ্ভাবনক্ষমতা, সৃজনশীলতার কোন সীমারেখা নাই। এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে আর কোন জনপদ নেই যেখানে ছোট বেলা থেকে শিক্ষা দেওয়া হয় এক মন চাউলে কত সের কাঁকড় মেশালে ৫০ টাকা লাভ হবে? কিংবা যে গোয়ালা দুধে পানি মেশানোতে সিদ্ধহস্ত সে আসলে কোন অনুপাতে দুধে পানি মেশায়!সম্ভবত আমরাই আবিস্কার করেছি মাছে ফরমালিন মেশানো যায, কলাতে দেওয়া যায় কার্বাইড!
অথচ আমাদের ঐতিহ্য কী এমন? খুজঁতে খুঁজতে আমি দেখলাম আজ থেকে ১২০০ বছর আগে এই বদ্বীপে প্রথম বদনা আবিস্কৃত হয়। অনেকের কাছে বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক মনে হতে পারে কিংবা মনে হতে পারে এ আর এমন কী? আমি কেবল বলি বদনা আবিস্কারের পৌণে বারোশ বছর পর শাদা চামড়ার লোকেরা পুশ শাওয়ার আবিস্কার করেছে!
জন্ম থেকে মানুষ উদ্ভিদ দেকছে কিন্তু তারও যে প্রাণ আছে এটা জানার জন্য মানুষকে একজন জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।
মহাবিশ্বের তাবৎ বস্তুকণা মাত্র দুই দলে বিভক্ত।
তাদের একদলকে বলা হয় বসু কনা। এই বসু হলেন সত্যেন্দ্র নাথ বসু। এখন যেখানে জাতীয় প্রেসক্লাব সেখানে একটা লাল ইটের দোতলা বাড়ি ছিল, চামেলী হাউসের পাশে। সেখানেই বসে সত্যেন বসু এই একদল বস্তু কণার খবর পেয়েছিলেন।
এই গৌরবের উত্তরাধিকার হলাম আমরা।
সারাক্ষণই আমাদের নানান উদ্ভাবনী চিন্তা মাথায় থাকে্। এই আবিস্কারকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দেন আমাদের শিক্ষা-কর্তারা। তাদের মাথা থেকে এমন সব বিষয় বের হয় যা কী না পৃথিবী কেন, এই মহাবিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। আমি নানান হিসাব নিকাশ করে দেখেছি, এই মহাবিশ্বে নিন্মে তৃতীয় মাত্রার বুদ্ধিমাত্রা বিশিষ্ট প্রানী আছে এমন কোন গ্রহ-মহাগ্রহে ১২ বছরের শিক্ষা জীবনে চার-চারখান পাবলিক পরীক্ষা দিতে হয়, সে রকম দেখা যায় না। আমাদের দেশে যায়।
এগুলোর আবার গালভরা নামও আছে- পিএসসি, জেএসসি কতো কী?
এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্ভাবনী হল পিএসসি। এটি দিতে হয় ক্লাশ ফাইভের কোমনমতী শিশুদের। এক আশ্চর্য কারণে আমাদের শিক্ষা-কর্তারা মনে করেন শিক্ষা-মূল্যায়নের একমাত্র হাতিযার হলো মুখস্ত করতে পেরেছে কী না সেটা টেস্ট করার নামে একটা লিখিত পরীক্ষা নেওয়া। অথচ লিখতে পারাটা শিক্ষার অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মাত্র একটি।
একজন শিক্ষার্থী যখন ৫ম শ্রেণি পাশ করে আসে তখন আমরা তার কিছু কম্পিটেন্সী হবে এমন আশা করি।
তার মধ্যে সে লিখতে পারবে একটা। কিন সে টিকমতো শোনে কী না, রবীন্দ্র নাথের গানে আপ্রুত হয় কিনা, স্বাস্থ্য সচেতন কী না, মনের ভাব মুখে প্রকাশ করতে পারে কিনা, গননা করতে পারে কিনা এরকম নানান বিষয় আছে। আমরা সেগুলোর সবিশেষ খোঁজ নিতে যা না। আমার সাম্প্রতিক এক লেখায় মিনি কী করে বিষয়ে শিক্ষার্থীর পর্যবেক্ষণ গুনের জবাব কেটে দেওয়ার কথা লিখেছিলাম। সেটি পড়ে আমার এক পরিচিত যুগ্ম সচিব সেদিন আমাকে ফোন করে একমজার কথা জানিয়েছেন- আমার ক্লাশ সেভেন পড়ুযা ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলাম নৌপথে।
সকালে তাকে নিয়ে গেলাম জাহাজের ছাদে্। চোক বরাবর সূর্য। দুইপাশে গাছ গাছালি। সব কিছু দেখে শুনে তাকে বলতে বললাম – বাবা বলতো দেখি – আমাদের জাহাজ কোনদিকে চলছে। আমার ছেলে বলতে পারলো না!!!
আমি বললাম তাকে যদি জিজ্ঞাষা করতেন – সূর্য কোন দিকে ওঠে- তাহলে সে ঠিকই বলতে পারতো, পূর্বদিকে।
কিন্তু পূর্বদিকে সূর্য ওঠাটা আসলে কী মিন করে বেচারা সেটা জানে না। সে জানে না এই দিকের তথ্যটা কীভাবে ব্যবহার করতে হয়।
কয়েক বছর আগে, ঢাকার এক নামকরা স্কুলের ক্লাশ সিক্সের এক ছাত্রী অংক পরীক্ষায় আটানম্বই পায়। কেন সে দুই সম্বর পায় নাই, সেটা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম সে একটি ২ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নাই। প্রশ্নটি ছিল- আয়তক্ষেত্রের প্রতিটি কোন কত ডিগ্রী?
আমি তার কাছে জানতে চাইলাম – আয়তক্ষেত্রের কোনগুলো কেমন।
সে জানাল – প্রতিটি কোণ সমকোণ।
আমি অবাক হযে তাকিয়ে তার কাছে জানতে চাইলাম – আর এক সমকোণে কত ডিগ্রী?
“কেন নম্বই ডিগ্রী। ”
তাহলে কী দাড়ালো?
“কিছুই না। এর সঙ্গে আমার প্রশ্নের কী সম্পর্ক?”
আমি তখন বুজেছি যে বেচারির কোন দোষ নাই। জ্যামিতি পড়ানোর সময় তার শিক্ষক কোনদিন ক্লাসে ইউক্লিডের ধারনাগুলো বলে নাই।
দুটো জিনিষ যদি পৃখকভাবে তৃতীয় একটা জিনিষের সমান হয়, তাহলে প্রথম দুইটা জিনিষ যে পরস্পরের সমান এটাতো সে জানে না।
আমি দেখেছি ঐ মেয়ে আমাকে প্রত্যেকটি প্রশ্ন বই-এর কোন চ্যাপ্টার থেকে করা হয়েছে সেটি বলেছে এমন কি একটি প্রশ্ন যে, উদাহরণের শেষে বক্সের মধ্যে দেওয়া সেটিও বলতে পেরেছে। বলিহারি মুখস্ত বিদ্যা।
এই মুখস্ত বিদ্যার সঙ্গে এখন এক নতুন গাঁজাখুরি ব্যাপার যোগ করা হচ্ছে। প্রথম আরোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এখন থেকে প্রাইমারী পরীক্ষায় প্রত্যেক বিষয়ে ২৫ নম্বর থাকবে আনসীন।
মানে সিলেবাসের বাইরে। এজ ইফ এটা করলেই শিক্ষার মান বেড়ে একেবাড়ে আকাশচুম্বী হবে এবং পিএসসিকে আমরা পিএইচডির ইকুইভেলেন্ট হিসাবে ঘোসণা করতে পারবো।
বোজা যাচ্ছে যে, আমাদের শিক্ষা কর্তারা শিক্ষার্থীর ক্রিয়েটিভিটি বাড়াতে চান। কিন্তু তারা হাটছেন ভুল পথে। কেবল আনসীন জিনিষ পরীক্ষার খাতায় লিখতে দিলেই সৃজনশীলতা বাড়ানো যায় না।
সে জন্য শিক্ষাতে নানান রকমউপাদান যোগ করতে হয়।
শুধুমাত্র একটি আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, কৌতুহল এবং জ্ঞানান্বেষন কোন পর্যায়ে যেত পারে তার একটা নমুনা সম্প্রতি আমরা দেখেছি প্রথম জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ক্যাম্পে। ঐ ক্যাম্পের মতো করে কী কোন স্কুল হতে পারে?
এমন কী কোন স্কুল হতে পারে, ছোটদের জন্য, যেখানে সৃজনশীলতা ও নান্দনিকতা অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। সেখানে কোন কিছু শেখানো হয় না। এর শিক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেরা শেখে।
শিক্ষকরা সেখানে ঠিক শিক্ষক নন, বরং ফ্যাসিলিটেটর!!! তাঁরা কেবল পথ বাতলে দেন, দেখিয়ে দেন। শেখান না।
ভাবছেন এটি অলীক কল্পনা। আসলে তা নয়। ঠিক এমন স্কুলের স্বপ্ন দেখতেন মন্টেসরি।
তার শেখানো পথেই মন্টেসরি স্কুলগুলো চালু হয় বিশ্বে। আমাদের দেশেও, শুনেছি, মন্টেসরিকে মাথায় রেখে নাকি কেজি স্কুলের সূচনা হয়েছিল!!! তবে, এখন এ রকম স্কুল হয়তো সারা দেশে হাতে গোনা যাবে। আমি খুব একটা বেশি দেখি না।
মন্টেসরির পর এখন অনেক দিন গেছে। আরো অনকে নতুন নতুন পদ্ধতি এসেছে।
খেলা আর আনন্দের মাধ্যমে শেখার ব্যাপারটা নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। প্রচন্ড চাপে থেকেও আনন্দের সঙ্গে যে পড়ালেখা করা যায় সেটি আমরা আমাদের গণিত ক্যাম্প বা লীলাবতী গণিত ক্যাম্পের দেখেছি। এমনকী বুয়েটে পড়ার সময় প্রিপারেটরি লিভের আনন্দময় দিনগুলোও দেখেছি। !!!
কাজে এগুলো খুবই সম্ভব! মোটেই অসম্ভব নয়।
এরকম স্কুলগুলোতে কীরকম ভাবে দিন যায়?
ধরা যাক ক্লাশ টুর কথা।
আমি যে শাখার কথা বলছি সে শাখার মাস্কট হচ্ছে ছোট ভালুক ছানা। ওদের ক্লাশে একটি ছোট ভালুক ছানা আছে। প্রতি বৃহস্পতিবার সপ্তাহান্তে সেটি নিয়ে যায় ক্লাশের কেও একজন। এ সপ্তাহে সেটি বাসায় নিয়ে এসেছে টুম্পা।
আমি বললাম,” বাহ! ওর নাম কি?”
টুম্পা- ”এর নাম শুভ্র”।
শুভ্র কেন?
দেখোনা, এর গায়ের রং। ও, আচ্ছা।
তারপর দুইদিন দেখলাম শুভ্রকে নিয়ে টুম্পার খুবই ব্যস্ততা। ওর মার সঙ্গে বসে ঠিক করা হল ও কী খাবে, কোথায় থাকবে। টগর আবার এসে যাতে ওরে কোন ডিস্টার্ব করতে না পারে তার জন্যও ব্যবস্থা করা হল।
টুম্পা একটা খাতার মধ্যে লিখে রাখছে শুভ্র-র সব কীর্তির কথা।
যেমন ---
“শুভ্র আজকে আমাদের বাসায় এসেছে। গাড়িতে আসতে আসতে আমি ওকে বাসার সব কথা বলেছি। বলেছি তহুরা আপু আর গোলাপী আপু তাকে ডিস্টার্ব করতে পারে। সে যেন কিছু মনে না করে।
কারণ আপুরা ভাল, খালি নতুন কাউকে পেলে ডিস্টার্ব করে। বাবা অফিস থেকে আসলে আমি তাকে জড়িয়ে ধরি। আজকেও ধরবো। তখন কিন্ত আমি শুভ্রকে কোলে রাখতে পারবো না। ”
---
“শুভ্র আলুভর্তা খেতে চাইলো না।
আমার খুব মন খারাপ হয়েছে। আলুভর্তা আমার খুব প্রিয়। কিন্তু ও কেন খেলো না। ”
---
“রাতে শুভ্র আমার সঙ্গে থাকবে। আমার মনে হচ্ছে ভাইয়া রাতের বেলায় ওকে হ্যাইজ্যাক করার চেষ্টা করতে পারে।
খুব সতর্ক থাকতে হবে। ”
............................
আরো অনেক কিছু ওর খাতার মধ্যে পাওয়া যাবে। টুম্পা খুব সতর্ক থাকছে যাতে শুভ্রর সব কথা সে রোববার স্কুলে গিয়ে ঠিকঠাক মতো বলতে পারে।
-------
স্কুলের এটি হলো শিশুর ক্রিয়েটিভিটি বিকাশের একটি পদ্ধতি সঙ্গে দায়িত্ববোধও!
শুভ্র আসলে একটি টেডি বিয়ার!!!!
একইভাবে গণিতের ক্লাশে ওদের ক্লাশ করতে হয় মার্বেল দিয়ে। ক্লাশে ওরা সংখ্যা রেখার ওপর লাফালাফি করে।
ওদের স্কুলে একটি থিয়েটার আছে। সেখানে ওরা নিয়মিত সিনেমা দেখে, ভিডিও দেখে।
নিজেরাই আবার নাটকও করে।
খেলার মাঠ একটা সমস্যা। তাই ওরা নিয়মিত দূরের একটা মাঠে খেলতে যায়।
স্কুলেই ওদের জন্য টিফিন তৈরি হয়। সবাই মজা করে সেটি খায়। টিফিন খাওয়ার পর ক্লাশ টু-এর বড়োদের থালা বাসন ধুয়ে রাখতে হয়।
কোন একদিন যদি ঐ স্কুলে আপনি যান তাহলে দেখবেন একজন হঠাৎ করে দৌড়ে এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিংএ চলে যাচ্ছে, থিয়েটার রুম থেকে হই হই শব্দ। কোন রকমে কোন ক্লাশের সামনে গেলে হয়তো দেখা যাবে ক্লাশের মধ্যে টিচারের চোখে রুমাল বেধে কারামাছি ভো ভো খেলা হচ্ছে!!!
আপনি ততক্ষনে হয়তো নিশ্চিত হবেন যে, এই স্কুলে কোন পড়ালেখা হয় না।
তারপরও আসছেন যখন ভদ্রতা করে প্রিণ্সিপালের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। হয়তো তিনি রুমে নেই।
তখন আপনি সেখানে টাঙ্গানো স্কুলের রেজাল্ট দেখবেন। এবং চমকে গিয়ে জানবেন স্কুলটি হলো এই এলাকার সেরা বিদ্যাপীঠ!!!!
এমন একটা ইশকুল কখনো বানাবো আমরা?
আমাদের উদ্ভাবনক্ষমতা, সৃজনশীলতার কোন সীমারেকা নাই। এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে আর কোন জনপদ নেই যেখানে ছোট বেলা থেকে শিক্ষা দেওয়া হয় এক মন চাউলে কতসের কাঁকড় মেশালে ৫০ টাকা লাভ হবে? কিংবা যে গোয়ালা দুধে পানি মেশানোতে সিদ্ধহস্ত সে আসলে কোন অনুপাতে দুধে পানি মেশায়!সম্ভবত আমরাই আবিস্কার করেছি মাছে ফরমালিন মেশানো যায, কলাতে দেওয়া যায় কার্বাইড!
অথচ আমাদের ঐতিহ্য কী এমন? খুজঁতে খুঁজতে আমি দেখলাম আজ থেকে ১২০০ বছর আগে এই বদ্বীপে প্রথম বদনা আবিস্কৃত হয়।
অনেকের কাছে বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক মনে হতে পারে কিংবা মনে হতে পারে এ আর এমন কী? আমি কেবল বলি বদনা আবিস্কারের পৌণে বারোশ বছর পর শাদা চামড়ার লোকেরা পুশ শাওয়ার আবিস্কার করেছে!
জন্ম থেকে মানুষ উদ্ভিদ দেকছে কিন্তু তারও যে প্রাণ আছে এটা জানার জন্য মানুষকে একজন জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। মহাবিশ্বের তাবৎ বস্তুকণা মাত্র দুই দলে বিভক্ত। তাদের একদলকে বলা হয় বসু কনা। এই বসু হলেন সত্যেন্দ্র নাথ বসু। এখন যেখানে জাতীয় প্রেসক্লাব সেখানে একটা লাল ইটের দোতলা বাড়ি ছিল, চামেলী হাউসের পাশে।
সেখানেই বসে সত্যেন বসু এই একদল বস্তু কণার খবর পেয়েছিলেন।
এই গৌরবের উত্তরাধিকার হলাম আমরা। সারাক্ষণই আমাদের নানান উদ্ভাবনী চিন্তা মাথায় থাকে্। এই আবিস্কারকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দেন আমাদের শিক্ষা-কর্তারা। তাদের মাথা থেকে এমন সব বিষয় বের হয় যা কী না পৃথিবী কেন, এই মহাবিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না।
আমি নানান হিসাব নিকাশ করে দেখেছি, এই মহাবিশ্বে নিন্মে তৃতীয় মাত্রার বুদ্ধিমাত্রা বিশিষ্ট প্রানী আছে এমন কোন গ্রহ-মহাগ্রহে ১২ বছরের শিক্ষা জীবনে চার-চারখান পাবলিক পরীক্ষা দিতে হয়, সে রকম দেখা যায় না। আমাদের দেশে যায়। এগুলোর আবার গালভরা নামও আছে- পিএসসি, জেএসসি কতো কী?
এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্ভাবনী হল পিএসসি। এটি দিতে হয় ক্লাশ ফাইভের কোমনমতী শিশুদের। এক আশ্চর্য কারণে আমাদের শিক্ষা-কর্তারা মনে করেন শিক্ষা-মূল্যায়নের একমাত্র হাতিযার হলো মুখস্ত করতে পেরেছে কী না সেটা টেস্ট করার নামে একটা লিকিত পরীক্ষা নেওয়া।
অথচ লিখতে পারাটা শিক্ষার অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মাত্র একটি।
একজন শিক্ষার্থী যখন ৫ম শ্রেণি পাশ করে আসে তখন আমরা তার কিছু কম্পিটেন্সী হবে এমন আশা করি। তার মধ্যে সে লিখতে পারবে একটা। কিন সে টিকমতো শোনে কী না, রবীন্দ্র নাথের গানে আপ্রুত হয় কিনা, স্বাস্থ্য সচেতন কী না, মনের ভাব মুখে প্রকাশ করতে পারে কিনা, গননা করতে পারে কিনা এরকম নানান বিষয় আছে। আমরা সেগুলোর সবিশেষ খোঁজ নিতে যা না।
আমার সাম্প্রতিক এক লেখায় মিনি কী করে বিষয়ে শিক্ষার্থীর পর্যবেক্ষণ গুনের জবাব কেটে দেওয়ার কথা লিখেছিলাম। সেটি পড়ে আমার এক পরিচিত যুগ্ম সচিব সেদিন আমাকে ফোন করে একমজার কথা জানিয়েছেন- আমার ক্লাশ সেভেন পড়ুযা ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলাম নৌপথে। সকালে তাকে নিয়ে গেলাম জাহাজের ছাদে্। চোক বরাবর সূর্য। দুইপাশে গাছ গাছালি।
সব কিছু দেখে শুনে তাকে বলতে বললাম – বাবা বলতো দেখি – আমাদের জাহাজ কোনদিকে চলছে। আমার ছেলে বলতে পারলো না!!!
আমি বললাম তাকে যদি জিজ্ঞাষা করতেন – সূর্য কোন দিকে ওঠে- তাহলে সে ঠিকই বলতে পারতো, পূর্বদিকে।
কিন্তু পূর্বদিকে সূর্য ওঠাটা আসলে কী মিন করে বেচারা সেটা জানে না। সে জানে না এই দিকের তথ্যটা কীভাবে ব্যবহার করতে হয়।
কয়েক বছর আগে, ঢাকার এক নামকরা স্কুলের ক্লাশ সিক্সের এক ছাত্রী অংক পরীক্ষায় আটানম্বই পায়।
কেন সে দুই সম্বর পায় নাই, সেটা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম সে একটি ২ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নাই। প্রশ্নটি ছিল- আয়তক্ষেত্রের প্রতিটি কোন কত ডিগ্রী?
আমি তার কাছে জানতে চাইলাম – আয়তক্ষেত্রের কোনগুরো কেমন।
সে জানাল – প্রতিটি কোণ সমকোণ।
আমি অবাক হযে তাকিয়ে তার কাছে জানতে চাইলাম – আর এক সমকোণে কত ডিগ্রী?
“কেন নম্বই ডিগ্রী। ”
তাহলে কী দাড়ালো?
“কিছুই না।
এর সঙ্গে আমার প্রশ্নের কী সম্পর্ক?”
আমি তখন বুজেছি যে বেচারির কোন দোষ নাই। জ্যামিতি পড়ানোর সময় তার শিক্ষক কোনদিন ক্লাসে ইউক্লিডের ধারনাগুলো বলে নাই। দুটো জিনিষ যদি পৃখকভাবে তৃতীয় একটা জিনিষের সমান হয়, তাহলে প্রথম দুইটা জিনিষ যে পরস্পরের সমান এটাতো সে জানে না।
আমি দেখেছি ঐ মেয়ে আমাকে প্রত্যেকটি প্রশ্ন বই-এর কোন চ্যাপ্টার থেকে করা হয়েছে সেটি বলেছে এমন কি একটি প্রশ্ন যে, উদাহরণের শেষে বক্সের মধ্যে দেওয়া সেটিও বলতে পেরেছে। বলিহারি মুখস্ত বিদ্যা।
এই মুখস্ত বিদ্যার সঙ্গে এখন এক নতুন গাঁজাখুরি ব্যাপার যোগ করা হচ্ছে। প্রথম আরোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এখন থেকে প্রাইমারী পরীক্ষায় প্রত্যেক বিষয়ে ২৫ নম্বর থাকবে আনসীন। মানে সিলেবাসের বাইরে। এজ ইফ এটা করলেই শিক্ষার মান বেড়ে একেবাড়ে আকাশচুম্বী হবে এবং পিএসসিকে আমরা পিএইচডির ইকুইভেলেন্ট হিসাবে ঘোসণা করতে পারবো।
বোজা যাচ্ছে যে, আমাদের শিক্ষা কর্তারা শিক্ষার্থীর ক্রিয়েটিভিটি বাড়াতে চান।
কিন্তু তারা হাটছেন ভুল পথে। কেবল আনসীন জিনিষ পরীক্ষার খাতায় লিখতে দিলেই সৃজনশীলতা বাড়ানো যায় না। সে জন্য শিক্ষাতে নানান রকমউপাদান যোগ করতে হয়।
শুধুমাত্র একটি আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, কৌতুহল এবং জ্ঞানান্বেষন কোন পর্যায়ে যেত পারে তার একটা নমুনা সম্প্রতি আমরা দেখেছি প্রথম জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ক্যাম্পে। ঐ ক্যাম্পের মতো করে কী কোন স্কুল হতে পারে?
এমন কী কোন স্কুল হতে পারে, ছোটদের জন্য, যেখানে সৃজনশীলতা ও নান্দনিকতা অনেক বেশি প্রাধান্য পায়।
সেখানে কোন কিছু শেখানো হয় না। এর শিক্ষার্থীরা নিজেরা নিজেরা শেখে। শিক্ষকরা সেখানে ঠিক শিক্ষক নন, বরং ফ্যাসিলিটেটর!!! তাঁরা কেবল পথ বাতলে দেন, দেখিয়ে দেন। শেখান না।
ভাবছেন এটি অলীক কল্পনা।
আসলে তা নয়। ঠিক এমন স্কুলের স্বপ্ন দেখতেন মন্টেসরি। তার শেখানো পথেই মন্টেসরি স্কুলগুলো চালু হয় বিশ্বে। আমাদের দেশেও, শুনেছি, মন্টেসরিকে মাথায় রেখে নাকি কেজি স্কুলের সূচনা হয়েছিল!!! তবে, এখন এ রকম স্কুল হয়তো সারা দেশে হাতে গোনা যাবে। আমি খুব একটা বেশি দেখি না।
মন্টেসরির পর এখন অনেক দিন গেছে। আরো অনকে নতুন নতুন পদ্ধতি এসেছে। খেলা আর আনন্দের মাধ্যমে শেখার ব্যাপারটা নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। প্রচন্ড চাপে থেকেও আনন্দের সঙ্গে যে পড়ালেখা করা যায় সেটি আমরা আমাদের গণিত ক্যাম্প বা লীলাবতী গণিত ক্যাম্পের দেখেছি। এমনকী বুয়েটে পড়ার সময় প্রিপারেটরি লিভের আনন্দময় দিনগুলোও দেখেছি।
!!!
কাজে এগুলো খুবই সম্ভব! মোটেই অসম্ভব নয়।
এরকম স্কুলগুলোতে কীরকম ভাবে দিন যায়?
ধরা যাক ক্লাশ টুর কথা। আমি যে শাখার কথা বলছি সে শাখার মাস্কট হচ্ছে ছোট ভালুক ছানা। ওদের ক্লাশে একটি ছোট ভালুক ছানা আছে। প্রতি বৃহস্পতিবার সপ্তাহান্তে সেটি নিয়ে যায় ক্লাশের কেও একজন।
এ সপ্তাহে সেটি বাসায় নিয়ে এসেছে টুম্পা।
আমি বললাম,” বাহ! ওর নাম কি?”
টুম্পা- ”এর নাম শুভ্র”।
শুভ্র কেন?
দেখোনা, এর গায়ের রং। ও, আচ্ছা।
তারপর দুইদিন দেখলাম শুভ্রকে নিয়ে টুম্পার খুবই ব্যস্ততা।
ওর মার সঙ্গে বসে ঠিক করা হল ও কী খাবে, কোথায় থাকবে। টগর আবার এসে যাতে ওরে কোন ডিস্টার্ব করতে না পারে তার জন্যও ব্যবস্থা করা হল।
টুম্পা একটা খাতার মধ্যে লিখে রাখছে শুভ্র-র সব কীর্তির কথা।
যেমন ---
“শুভ্র আজকে আমাদের বাসায় এসেছে। গাড়িতে আসতে আসতে আমি ওকে বাসার সব কথা বলেছি।
বলেছি তহুরা আপু আর গোলাপী আপু তাকে ডিস্টার্ব করতে পারে। সে যেন কিছু মনে না করে। কারণ আপুরা ভাল, খালি নতুন কাউকে পেলে ডিস্টার্ব করে। বাবা অফিস থেকে আসলে আমি তাকে জড়িয়ে ধরি। আজকেও ধরবো।
তখন কিন্ত আমি শুভ্রকে কোলে রাখতে পারবো না। ”
---
“শুভ্র আলুভর্তা খেতে চাইলো না। আমার খুব মন খারাপ হয়েছে। আলুভর্তা আমার খুব প্রিয়। কিন্তু ও কেন খেলো না।
”
---
“রাতে শুভ্র আমার সঙ্গে থাকবে। আমার মনে হচ্ছে ভাইয়া রাতের বেলায় ওকে হ্যাইজ্যাক করার চেষ্টা করতে পারে। খুব সতর্ক থাকতে হবে। ”
............................
আরো অনেক কিছু ওর খাতার মধ্যে পাওয়া যাবে। টুম্পা খুব সতর্ক থাকছে যাতে শুভ্রর সব কথা সে রোববার স্কুলে গিয়ে ঠিকঠাক মতো বলতে পারে।
-------
স্কুলের এটি হলো শিশুর ক্রিয়েটিভিটি বিকাশের একটি পদ্ধতি সঙ্গে দায়িত্ববোধও!
শুভ্র আসলে একটি টেডি বিয়ার!!!!
একইভাবে গণিতের ক্লাশে ওদের ক্লাশ করতে হয় মার্বেল দিয়ে। ক্লাশে ওরা সংখ্যা রেখার ওপর লাফালাফি করে।
ওদের স্কুলে একটি থিয়েটার আছে। সেখানে ওরা নিয়মিত সিনেমা দেখে, ভিডিও দেখে।
নিজেরাই আবার নাটকও করে।
খেলার মাঠ একটা সমস্যা। তাই ওরা নিয়মিত দূরের একটা মাঠে খেলতে যায়। স্কুলেই ওদের জন্য টিফিন তৈরি হয়। সবাই মজা করে সেটি খায়। টিফিন খাওয়ার পর ক্লাশ টু-এর বড়োদের থালা বাসন ধুয়ে রাখতে হয়।
কোন একদিন যদি ঐ স্কুলে আপনি যান তাহলে দেখবেন একজন হঠাৎ করে দৌড়ে এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিংএ চলে যাচ্ছে, থিয়েটার রুম থেকে হই হই শব্দ। কোন রকমে কোন ক্লাশের সামনে গেলে হয়তো দেখা যাবে ক্লাশের মধ্যে টিচারের চোখে রুমাল বেধে কারামাছি ভো ভো খেলা হচ্ছে!!!
আপনি ততক্ষনে হয়তো নিশ্চিত হবেন যে, এই স্কুলে কোন পড়ালেখা হয় না। তারপরও আসছেন যখন ভদ্রতা করে প্রিণ্সিপালের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। হয়তো তিনি রুমে নেই।
তখন আপনি সেখানে টাঙ্গানো স্কুলের রেজাল্ট দেখবেন।
এবং চমকে গিয়ে জানবেন স্কুলটি হলো এই এলাকার সেরা বিদ্যাপীঠ!!!!
এমন একটা ইশকুল কখনো বানাবো আমরা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।