বিশ্বটাকে সুন্দর করে সাজানোর জন্যই এত কথা বলি.. । রাজনীতিবিদরা যদি মানুষের ভাষায় কথা বলতেন তাহলে গণতন্ত্রের জোয়ারে অনেক আগেই দেশ ভেসে যেত। ভাবছেন তাহলে রাজনীতিবিদরা কোন ভাষায় কথা বলেন?
উনারা দাবি করেন তাদের ভাষার নাম রাজনীতির ভাষা বা রাজনৈতিক ভাষা। মানুষের ভাষা ও তাদের ভাষার মাঝে বিন্তর ফারাক বিদ্যমান।
আপনার জমে থাকা স্বপ্ন, ইচ্ছে, কামনা-বাসনা, আকাংখা গুলো খুজে পাবেন তাদের ভাষার মাঝে।
এর ভিতর লুকায়িত থাকে সুপ্ত ও
গুপ্ত খায়েশ, আপনাকে আকর্ষণ করার জন্য তারা তাদের ভাষায় ব্যবহার করে থাকেন অনেক বেশি অলংকার (rhetoric) ও রূপকের (metaphor) শব্দ। কিন্তু এই ভাষার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হল এটি আপনি বুঝবেন কিন্তু উদ্দেশ্য ও মর্ম উদ্ধার করতে পারবেন না। এই ভাষায় মস্তিস্ক ব্যবহার করা হয় না, ব্যবহার করা হয় শুধু মাত্র বাক-যন্ত্র। উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা
ক্লিয়ার করি-
০১. মানুষের ভাষায় বলা হয়, 'ক্ষমতা থাকলে এককেজি পোলাও কিনে একবেলা গরুর মাংস দিয়ে পেটপুরে খেতাম'।
রাজনীতির ভাষায় এটির রুপ কেমন, 'ভাইসব, ওরা জালিম, অপশাসনে আপনার জিভের স্বাদ নষ্ট করে দিচ্ছে, ক্ষমতা থেকে জিভটেনে বের করে আমাদের ক্ষমতায় আনুন।
পোলাও মাংসের বন্যা বয়ে দিব'।
০২. মানুষের ভাষায় বলা হয়, 'বেটা আস্ত একটা ডাহাইত'।
রাজনীতির ভাষায় এর রুপ হবে, 'ওরা স্বৈরাচার, ভন্ড, প্রতারক, বাকশাল, কাকশাল, বুর্জুয়া, রাক্ষস, পিশাচ, লোভী, অমানুষ, শয়তানের চেলা, বৈঈমান এদের বর্জন করুন'।
০৩. মানুষের ভাষায় বলা হয়, 'স্বাগতম ভাইসাহেব'।
রাজনীতির ভাষায়, ' বাংলার সাহসি পুরুষ, সংগ্রামী নেতা, কারাগারের শেকল ছেড়া বীর, এলাকার কৃতি সন্তান, একসময়ের মেধাবি মানব, দেশপ্রেমিক, রাজপথের ত্রাস, আমাদের অহংকার ও এলাকার গর্ব জনাব ওমুক ভাইকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও স্বাগতম'।
০৪. মানুষের ভাষায় বলা হয়, কালকের মাঝে কাজ করে দিব'।
রাজনৈতিক ভাষায় এটি হবে, '২৪ ঘন্টার মাঝে কাজ উদ্ধার করে দেয়া হবে'।
কথা ঠিক আছে, সর্বনাম ও বিশেষণ পদ ভাষাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায় তার উপযুক্ত ব্যবহারের যে ভাষা তাই রাজনীতির ভাষা।
রাজনৈতিক ভাষার সংজ্ঞায় তাহলে আমরা বলতে পারি, যে ভাষায় মস্তিস্ক ব্যবহার করা হয় না, ব্যবহার করা হয় শুধু মাত্র বাক-যন্ত্র যাতে বাক্যে বিশেষণ ও সর্বনাম আন্ডা-বাচ্চা নিয়ে উপস্থিত থাকে তাকে রাজনীতিক বা রাজনৈতিক ভাষা বলা হয়।
শুনতে বিরক্তিকর লাগতে পারে, অব্যক্ত রাখার ইচ্ছে জাগতে পারে কিন্তু এটাই তো মানুষের ভাষাকে তলিয়ে রাখছে।
মানুষের ভাষা বুঝা যায় সহজে, কাজে লাগে না সহজে। কিন্তু রাজনীতির ভাষাকে বুঝার আগেই আপনি পটে যান আর কাজ হয় সহজে। যুগ যুগ ধরে এই ভাষার ব্যবহারে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে তাই এটিকে দেশের মুখ্য ভাষা বলতেই পারেন।
তবে সবাই এই ভাষায় কথা বলা শুরু করলে মানুষের ভাষার- প্রিয়তমা কে, ময়না টিয়া ডাকা ভুলে যাবেন। কারণ রাজনীতির ভাষায়, প্রিয়তমা ময়না টিয়া, ভালো আছি ভালো থেকো, মা তোমার জন্য এই দেশ তোমার জন্যই আমার ভাষা, আমার সোনার বাংলা বলে কোন বাক্যের অস্থিত্ব নেই।
রাজনৈতিক ভাষার বিলুপ্ত হোক, মানুষের ভাষার জয় হোক। মানুষের ভাষায় কথা বলা তোতা নয়, নেতা চাই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।