মানবিক, যৌক্তিক আর অযৌক্তিক। সোজা কথা আরেকটা মানুষ। দশ জনের ভীরে ডুবে থাকার প্রানান্ত চেষ্টায় থাকা মানুষ। .... মাস দুয়েক আগের কথা মনে হয়, দেখি হটাৎ করেই আমার ফেবু হোমে -পম গানা, পম গানা চিৎকার... হাজারো পোস্ট, হাজারো গ্রুপ। কিছু বাচ্চার কোমর দোলানো চিত্তাকর্ষক পোস্টার, তাতে আবার জলিল ভাই লেখা...!! ভাবলাম, এত বড় রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সাংসদ জলিল সাহেব কে নিয়ে এইভাবে গণ- আন্দোলনের হেতু কি?? তাও আবার রস মেশানো...!! ওমা, পরে দেখি এর সবই এক নায়কের ব্যাপারে।
তাঁর এই ইংরেজি উচ্চারনগত ত্রুটি নিয়ে আমাদের যে লাফালাফি তাঁর সিকি ভাগ ও আমাদের বাংলা উচ্চারনের ত্রুটি নিয়ে হতো, তাহলে হয়ত এই দুই মাসে আমরা বাংলায় নতুন দীক্ষা নিতাম। আলোচনার বিষয় মোটেও অনন্ত জলিল নন, এই যে আমরা প্রতি ফাল্গুনে ভাষা দিবস এই, ভাষা দিবস সেই করে প্রান ত্রাহি করে ফেলি- বিষয় টা সেই ভাষার তাৎপর্যের। মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুবার পরেই অন্তত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে বাংলার প্রয়োজন থাকেনা বললেই চলে ( সব বিষয়ের ক্ষেত্রে নয়)। কি ব্যবসায় শিক্ষা, কি চিকিৎসা বিজ্ঞান, কি কারিগরি শিক্ষা... ধীরে ধীরে আমরা উচ্চ শিক্ষিতের ছাপ্পড় ধারী হই... এবং সাধারণ্যে বিশ্বাস গড়ে উঠে যে যত ভালো ইংরেজি জানে, সে ততই উচ্চ শিক্ষিতের পর্যায়ে!!!!
......বেশিদূর পরিব্রাজন না করি, আমার নিজের ঘরেই আমাকে বাল্যকালে বেদম প্রহার করা হয়েছিল ইংরেজিতে ভালো করানোর প্রয়াসে। আমার চামড়া পাতলা, মার তাতে সহ্য হয়না, তাই চরম বিরক্তি নিয়ে হলেও ইংরেজি পাঠে আমি চরম মনোযোগী হয়ে উঠি।
এর পর দিন গড়ানোর সাথে সাথে এক সময় চাকুরির প্রয়োজন আর আমার সাইফুর'স পঠন। তাতে প্রতি পৃষ্ঠায় ইংরেজি গুণ- কীর্তন। ইংরেজি ছাড়া আপনি পঙ্গু, অন্ধ, জরাগ্রস্থ এই- সেই। এবং কথা অবশ্যই সত্য, অস্বীকার করিনা। বিশ্বায়নের যুগে কাউকে পিছিয়ে থাকতেও বলছিনা।
কিন্তু, তাঁর মানে এইত নয় যে এই একটি ভাষা না জানলে অথবা তাতে ভালো না হলে আপনি অশিক্ষিত...হারুর দল...নরাধম...পাপী...কুকুরমাত্র...!!!!
...মুগ্ধ হই যখন দেখি ইতালি, ফরাসি অনেক জনপ্রিয় ফুটবলার ভালো ইংরেজি জানা সত্তেও সংবাদ সম্মেলনে তাদের নিজ নিজ ভাষাতে কথা বলেন। দোভাষী-রাই তরজমা করে দেন অন্যদের। ভাষার প্রতি নিখাদ ভালোবাসা তো এই। ... বেশ কয়েকজন নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত মহা মানব দের ব্যাপারে প্রথম আলো সাময়িকীতে পড়েছিলাম যারা আধ-ভাঙ্গা বা না হলেই নয় জাতীয় ইংরেজী জ্ঞান রাখেন। এই মায়াময় দেশে তারাও কি অশিক্ষিতের কাতারে...!!!!!!!!!...
হ্যাঁ, এই লেখার সাথে ইদানিং কালে ঘটা অনন্ত জলিলের সাথে অভব্য আচরনের যোগসূত্র আছে ঠিকই, কিন্তু না, জনাব জলিলের সাথে ঘটা এহেন আচরণ সমর্থন যোগ্য না হলেও এতে তিনি শুধুমাত্র সহানুভূতি পাবারই যোগ্য, অনেকের মনে যে এর ফলে হটাৎ শ্রদ্ধা উদয় হয়েছে তাঁর যোগ্য তিনি বলে আমার মনে হয়না।
সহানুভূতি আর শ্রদ্ধায় ক্রোশ ক্রোশ দূরত্ব। কৌতূহল দমাতে না পেরে আমি তাঁর ওই সাক্ষাৎকার খানা দেখেছিলাম, যেখানে তিনি গাত্রবর্ণ উদ্বৃত করে সেই ঘানা বিষয়ক প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। একি চরম বর্ণবাদী মন্তব্য নয়??? তাঁর প্রতি কথায় ফুটে উঠে যে শিক্ষিত মাত্রেই ইংরেজি বুলি। তাই আমি শিক্ষিত না বলে সারাক্ষন I'm educated, I'm educated বলে গলা ফাটিয়ে ফেলা তাঁর এই আচরণ সেই অনগ্রসর বিশাল জনগোষ্ঠীর পরিচয় দিয়ে যায় অবিরত।
পরিশেষঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুত্রে পরিচিত আমার খুব আদরের এবং খুবই মেধাবি এক ছোট ভাই আছে, যে বছর তিনেক আগে লিখেছিল- সে বাংলার চেয়ে ইংরেজিতে ভাব প্রকাশে অনেক বেশী সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
... এহেন পরিস্থিতিকে আমরা কি বলবো- এটা কি ইংরেজি ভালো জানা নাকি বাংলায় দুর্বলতা????!!!!!!
অভ্র আসার পর তাঁর বাংলায় ভাব প্রকাশ কর্ণফুলীর প্রমত্ততাকে হার মানিয়েছে। অভ্র-র কারিগর দের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।