হরতালে কলকারখানা দোকানপাটসহ সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পিকেটিং-ভাঙচুর চালালেও নিজেদের প্রতিষ্ঠান ঠিকই খোলা রাখছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঠিকই খোলা রাখছেন তারা। সোম ও মঙ্গলবারের হরতালেও তাদের মালিকানাধীন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা ছিলো।
বিএনপি নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতাল চলাকালে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে দলের ব্যবসায়ী নেতাদের করপোরেট অফিস, বাণিজ্যিক অফিস ও শিল্প-কারখানা খোলা ছিল। মহাজোট সরকারের আমলে বিএনপির এ পর্যন্ত ডাকা কোন হরতালেই দলটির শীর্ষ নেতাদের কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়নি।
উৎপাদনসহ অন্যান্য দাফতরিক কাজ হয়েছে পুরোদমে। এর মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
হরতাল সফল করার জন্য দোকানপাট, কারখানা বন্ধ রাখা ও গাড়ি না চালানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানালেও নিজেরা তা পালন করেন নি। তাদের এ ধরনের দ্বৈত নীতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মঙ্গলবার ১৮ দলের ডাকা ৩৬ ঘণ্টার হরতালেও খোলা আছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার শিল্প প্রতিষ্ঠান! কাজও হরদম চলছে!
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদ খান মুন্নু, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের প্রতিষ্ঠান হরতালে খোলা ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনে উপদেষ্টা হারুন অর রশিদ খান মুন্নুর মালিকানাধীন ঢাকার ধামরাইয়ে মন্নু সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড হরতালে খোলা ছিল।
এ প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বিভাগের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা (চাকরির নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ করা হলো না) বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত কোনো হরতালে বন্ধ হয়নি মুন্নু সিরামিকস। হরতালের দিনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই এ প্রতিষ্ঠান চলে। ’’
এপেক্স গ্রুপের অন্যতম অংশীদার চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রয়েছে এ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
মঙ্গলবারের হরতালেও এপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখা হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের ফরিদপুরের কানাইপুরে রয়েছে ফরিদপুর জুট স্পিনার্স। বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (ফরিদপুর) রেজাউল করিম বিপুল জানান, মঙ্গলবারের হরতালেও চৌধুরী কামালের প্রতিষ্ঠানটি খোলা ছিল।
গাজীপুরে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের মালিকানাধীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বিজি কানেকশনও হরতালে খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা।
বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও একমি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান সিনহার প্রতিষ্ঠানও খোলা রয়েছে হরতালে।
এদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবারের হরতালেও চট্টগ্রামে বিএনপির সিটি সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। তার সাগরিকা গার্মেন্টসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ হয়েছে স্বাভাবিক দিনের মতোই।
বিএনপি সমর্থিত চট্টগ্রামের মেয়র মনজুর আলমের মোস্তফা হাকিম গার্মেন্টসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ হয়েছে। চট্টগ্রামের মীরেরসরাই বিএনপি নেতা কামাল উদ্দীনের ক্লিফটন গার্মেন্টসসহ বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস আগের মতোই চলেছে। সাভারে জামায়াত নেতার সুপার সপ, সাভার মডেল কলেজ খোলা ছিল।
এভাবে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হরতালে খোলা রেখে জাতির সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করা হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রোডে যাতায়াতকারী বাস তুরাগ পরিবহনের চালক মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘বিরোধী দলে যারা থাকেন তারা হরতাল ডেকে নিজেদের কল কারখানা ঠিকই চালু রাখেন, কপাল পোড়ে আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষদের। ’’
মশিউরের দাবি, হরতালের বলি তাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষরা।
মূল নিউজ এখানে : Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।