আপনি আমাকে পছন্দ করেন কি করেন না তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আপনাকে খুশি করার জন্য আমি এ পৃথিবীতে আসিনি।
মেডিকেলে পড়ে কিন্তু গ্রে'জ এনাটমির নাম শুনেনি এমন ছাত্র পাওয়া যাবে না। ভাবতে অবাক লাগে যার বই সারা দুনিয়ার সব এনাটমির শিক্ষার্থীরা পড়ে, তিনি মাত্র ৩৪ বছর বেঁচে ছিলেন! এই অল্প বয়সে তিনি এমন কীর্তি রচনা করে গেছেন যাকে এখন পর্যন্ত এনাটমির বাইবেল বলা হয়।
হেনরি গ্রে নামক এই অসম্ভব মেধাবী মানুষটি ইংল্যান্ডে ১৮২৭ সালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি উইন্ডসর ক্যাসলে জন্মগ্রহন করেন, জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি ইংল্যান্ডের বেলগ্রাভিয়া অঞ্চলে কাটান।
তার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, সেই হিসেবে রাজপরিবারে তাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ১৮ বছর বয়সে তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনের হাইড পার্কে অবস্থিত সেইন্ট জর্জ মেডিকেলে ভর্তি হন। মেডিকেলে পড়াশুনার ব্যাপারে তিনি বরাবরই ছিলেন অত্যন্ত মনোযোগী আর পরিশ্রমী। এনাটমি পড়ার ব্যাপারে তার ছিল কিছু নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি। মেডিকেলে পড়া অবস্থাতেই তিনি ১৮৪৮ সালে “The Origin, Connexions and Distribution of nerves to the human eye and its appendages, illustrated by comparative dissections of the eye in other vertebrate animals” নামক প্রবন্ধ লিখার জন্য রয়াল কলেজ অফ সার্জনস থেকে পুরস্কার পান।
১৮৫২ সালে তিনি সেখানকার ফেলো নির্বাচিত হন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। সেই থেকে এনাটমির প্রতি তার উৎসাহ আরো বেড়ে যায়। ১৮৫৫ সাল থেকে তিনি তার মেডিকেল সেইন্ট জর্জে লেকচারার হিসেবে কাজ করতে থাকেন পাশাপাশি ল্যাবে ডেমন্সট্রেটর আর মিউজিয়ামের কিউরেটর হিসেবেও কাজ করেন।
গ্রেজ এনাটমি বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৫৮ সালে।
প্রথম বইটার নাম ছিল Anatomy: Descriptive and Surgical। পরবর্তীতে হেনরির বেপক জনপ্রিয়তা আর সংক্ষিপ্ত আকারে বলার জন্য বইটি গ্রেজ এনাটমি বলেই প্রকাশিত হয়। প্রথম বইটিতে ৭৫০টি পৃষ্ঠা আর ৩৬৩টি ছবি ছিল। বইয়ের ছবিগুলো আকায় গ্রেকে কারটার নামের এনাটমির একজন ডেমন্সট্রেটর সাহায্য করেন। তিনিও অত্যন্ত বিখ্যাত একজন ব্যাক্তি ছিলেন যিনি পরবর্তীতে ভারতের গ্রান্ট মেডিকেল কলেজে প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি লেপ্রসি বা কুষ্ঠরোগ নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত। বইটিতে লেখক হিসেবে তার নামও অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন প্রকাশকরা, কারণ তার আঁকা ছবিগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কথিত আছে হেনরি গ্রে তাতে বাঁধ সাধেন, তাই এই মহান ব্যাক্তিকে সব সময় গ্রের প্রদীপের আলোর নিচে অন্ধকার হয়েই থাকতে হয়। যাইহোক গ্রে এবং কারটার দুইজন মিলে মর্গের আর হসপিটালের বেওয়ারিশ লাশ কেটে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন ভালমত পর্যবেক্ষণ করে দীর্ঘ ১৮ মাস পরে সেটা বই হিসেবে প্রকাশ করেন। লাশ কাটায় গ্রের নিয়মতান্ত্রিক অসাধারণ দক্ষতা আর কারটারের শৈল্পিক আর মানব দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নিখুত অঙ্কন বইটিকে দান করে এক অনন্য মর্যাদা।
প্রথম দিকে J.W. Parker বইটি প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে Longman এবং সাম্প্রতিক সময়ে Churchill Livingstone/Elsevier এটা প্রকাশ করে। দুঃখের ব্যাপার হলেও সত্য বইটির দ্বিতীয় প্রকাশ হবার বছরেই হেনরী গ্রেকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়।
এনাটমির ইতিহাসের এই মহান ব্যাক্তি ১৩ জুন ১৮৬১ সালে মারা যান। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩৪ বছর। তার এক ভাতিজার স্মলপক্স হয়েছিল, তার সেবা করতে গিয়েই তিনিও সেই রোগে আক্রান্ত হন।
সেই ভাতিজা ভাল হয়ে যায় কিন্তু গ্রে পারেননি মৃত্যুকে ধোঁকা দিতে। তার অকাল মৃত্যুতে সারাবিশ্ব হারাল এক অক্লান্ত গবেষক, এক মহান সাধককে।
সুত্রঃ
http://www.answers.com/topic/gray-henry
http://en.wikipedia.org/wiki/Henry_Gray
Click This Link
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।