আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আস্তিকতা আর নাস্তিকতা: সায়েন্সের ধারক ও বাহক

ইদানিং খুব একটা আলোচিত বিষয় হল নাস্তিকতা। কি ব্লগে, কি পত্র পত্রিকায় বা বন্ধুদের আড্ডায়। হঠাৎ এই বিষয়টা এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কি? মনে হয় মানুষ এই সময়ে এসে খুব বেশি জ্ঞান বিজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে গেছে আর মহাবিশ্বের তাবৎ সবকিছু জেনে ফেলেছে। এই বিষয়টা নিয়ে কিছু ভাবতে গেলেই প্রথমে যে জিনিষটা খেয়াল করা যায় তা হল নাস্তিকেরা খুব বিজ্ঞানমনস্ক হয়। এই ব্লগেও কিছু পোস্ট খেয়াল করলেও দেখবেন যে তাদের খুব চিন্তা কিভাবে পবিত্র কোরআন কে বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখা করা যায়।

বিজ্ঞান কি বলে আর আমরা কি কি অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে কোরআন বিশ্বাস করি সেটা প্রমাণ করাই এই বিজ্ঞানমনস্কতার মুল উদ্দেশ্য। জীন জাতিকে যে বিজ্ঞানের কোন সুত্র দিয়ে ব্যাখা করা যায় না, ফেরেশতা বা ওহী নাজিল হওয়াটাও যে বিজ্ঞান ব্যাখা করতে পারে না সেটাই এইসব আলোচনার ভিত্তি। কিন্তু মানুষের মস্তিস্কের সীমাবদ্ধতা দেখলে খুব দুঃখ লাগে। নিউটন আর আইনসটাইন সাহেব কয়টা সুত্র আবিস্কার করেছেন আর কতটা রহস্যই বা সমাধান করেছেন? এখনো বিলিয়ন বিলিয়ন সুত্র আর রহস্য অজানাই রয়ে গেছে যা জানতে পারলে হয়ত মানুষ বুঝতে পারত নিজেকে সবজান্তা ভাবাটা আসলে ভুলই ছিল। একটা মাছ যখন পুকুরে থাকে তখন তার কাছে মনে হয় পৃথিবীর তাবৎ রহস্য মনে হয় তার জানা হয়ে গেছে, রহিমের বাড়ির কোনা থেকে করিমের উঠান পর্যন্ত হল সব রহস্যের সমাধান।

তাকে সমুদ্রে নিয়ে গেলে মনে হয় সে বুঝতে পারবে সবজান্তা ভাবাটা খুব হাস্যকর। যারা সত্যিকারের বিজ্ঞান বুঝে (না বুঝে যারা বিজ্ঞানের বুলি কপচায় তারা বাদে) একটা জিনিস তারা নিশ্চয় বুঝে, সেটা হল "Scope/Limitation"। একটা ছোট উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে। যারা "Programming" এ কাজ করেন তাদের কেউ যদি কোন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এ একটা কোডিং করেন যেখানে শুধু ২টি সংখ্যার যোগফল বের করা যাবে। আপনি হাজার চেষ্টা করলেও সেখানে গুন বা ভাগ করতে পারবেন না।

ফোটশপ এ ভেকটর গ্রাফিক্স বা ইলাস্ট্রেটর এ বিটম্যাপ আকতে গেলেও আপনি সমস্যায় পরবেন। যে সেটআপ এর ভিতর আপনি বসবাস করছেন সেটার বাইরের বিষয় নিয়ে যত সুত্রই প্রয়োগ করেন না কেন জানাটা বেশকিছুটা কঠিনই হবে। বেগুন কাটার বিদ্যা দিয়ে নারিকেল কাটা কি ঠিক? আপনি পৃথিবীতে বসে মহাবিশ্বের সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন নিউটনের সুত্র দিয়ে, তাহলে তো ভাই ঘরে ঘরেই নাসা তালাশ করত - মহাবিশ্বে না। কেউ কি এখনো বলতে পারবে যে মহাবিশ্বে কি কি ম্যাটেরিয়াল আছে? আল্লাহই জানেন, এন্টিম্যাটার আবিষ্কার না হলে সেটা মানুষ কিভাবে বাংলাদেশের ঘরে বসেই বলে দিত। তাও যদি যা জ্ঞান বা সুত্র আবিষ্কার হয়েছে তাও সব জানতে পারতাম।

অল্পবিদ্যা আসলেই ভয়ংকর। কিছুদিন আগে স্টিফেন হকিন্সের একটা লাইন দেখলাম পত্রিকায়, যেখানে তিনি বলেছেন মৃত্যুর পর কোন জীবন নেই। তার মতে মানুষ মারা যাওয়াটা অনেকটা কম্পিউটার সাট ডাউন এর মত ব্যাপার। তবে বিজ্ঞানের এত বড় একজন লোক হয়ে তিনি যেখানে একটু ভুল করে ফেলেছেন সেটা হল তুলনায়। বিজ্ঞানের যেকোন তুলনায় কিন্তু ব্যাখা জরুরী যেটা করতে না পারার কারণে অনেক বিজ্ঞানীর আবিস্কার গ্রহণ করা হয়নি।

কম্পিউটার সাট ডাউন যদি মৃত্যুর সাথে তুলনা করা হয় তবে কথা আসে যে কম্পিউটারের তো একজন প্রস্তুতকারক আছেন, তাহলে তো মানুষেরও তো সৃষ্টিকর্তা থাকা উচিত। এই ধরনের একটা দুর্বল তুলনার কারনে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের কিন্তু পরবর্তীতে সংশোধনের প্রয়োজন হয়েছিল। মানুষ হিসাবে আমাদের উচিত নিজেদের সীমাবদ্ধতা বুঝে চলা। সাথে এইটাও বুঝতে হবে যে কিছু প্রমাণ করতে হলে প্রয়োজনীয় টুল লাগে। আইনসটাইন "E=MC2" আবিস্কার না করলে তো আজকে আমরা পারমাণবিক শক্তিকেও অস্বীকার করে বসতাম।

আবিস্কার নাও হতে পারত। নিজেকে কেন আমরা এত সবজান্তা মনে করি? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.