আস্তিকতা ও নাস্তিকতা নিয়ে ব্লগে অনেক লেখালেখি, আলোচনা সমালোচনা হয়েছে, আমি সেই বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে নতুন ভাবে কিছু বলতে চাচ্ছিনা, শুধু এই বিষয়টাকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখতে চাচ্ছি।
একটু পিছনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই আধুনিক বিজ্ঞানের যাত্রাপথের শুরু তথা সপ্তদশ শতকে বিজ্ঞান এবং ধর্ম সহঅবস্হান করত সেই সময় কার প্রখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন সহ অনেকেই ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান ছিলেন, দুই একজন বাদে মোটামুটি কেউই ধর্ম বিশ্বাস এবং বিজ্ঞানকে মুখোমুখি দাঁড় করাননি। প্রথম এটা নিয়ে ব্যাপক ভাবে শোরগোল ওঠে ডারউইনের বিবর্তনবাদ এর মতামতের পর, তারপর আদ্যবধি এটা নিয়ে সাসপেনশন কমেনি। তবে আমার ধারণা বিজ্ঞান ও ধর্ম সবচেয়ে বেশি conflict করেছে পদার্থ বিজ্ঞানে,পাশাপাশি রসায়ন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানেও। তবে এখন নতুন ভাবে প্রশ্ন উঠছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এবং তা ডাক্তার এবং রোগীর প্রশ্নোত্তরে, বলা হচ্ছে আমেরিকায় এখন ডাক্তাররা রোগীর খাদ্যাভ্যাস,জীবনযাপন প্রণালীর পাশাপাশি তারা জানতে চাচ্ছেন রোগী নিয়মত চার্চে বা ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাচ্ছেন কিনা, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পাদ্রী বা ধর্মীয় গুরুকে হাসপাতালে আনা হচ্ছে চিকিৎসার অংশ হিসেবে, আর এখানে আপত্তি কারণ যেটা বিজ্ঞান হিসেবে গণ্য সেখানে আবার ধর্ম কে ডাকা কেন আর এর ব্যাখ্যাই বা কি ? ?
ব্যাখ্যা দিয়েছেন পেনসিলভার্ণিয়া ইউনিভাসিটির অধ্যাপক এবং স্নায়ুবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু নিউবার্গ - তিনি এবং তার সহকর্মী স্নায়ুবিজ্ঞানী মার্ক রবার্ট ওল্ডম্যান যৌথ ভাবে লিখেছেন "হাউ গড চেঞ্জেস ইয়োর ব্রেনঃ ব্রেকথ্রু ফাইন্ডিংস ফ্রম আ লিভিং নিউরোসায়েন্টিস্ট" ,সে বইতে তারা বিভিন্ন সমীক্ষার ফলাফলে জানিয়েছেন, যে কোন এক বছরে যারা চার্চে যান, তাদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা যারা চার্চে যাননা তাদের চেয়ে কম।
তাঁরা জানিয়েছেন পেনসিলভার্ণিয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর স্পিরিচুয়ালিটি তে যারা তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাদের মধ্যে শতাধিক মানুষের মস্তিষ্কের স্ক্যান করে যখন সে প্রার্থনা, ধ্যান বা ঈশ্বর ভজনা করে তখন তার মস্তিষ্কের অবস্হান দেখেছেন, তাঁরা জানিয়েছেন মানুষ যখন ধ্যানের প্রাথমিক অবস্হায় থাকে তখন তার মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবটা কাজ করে যখন ধ্যান গভীর হয় তখন মস্তিষ্কের পেরিয়েটাল লোব কাজ করে। তাঁরা তাদের সমীক্ষায় আরও প্রকাশ করেছেন যারা নিয়মিত এগুলোর চর্চা করে তাদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব এর আকৃ্তি বৃদ্ধি পায়।
এই বিষয়ে ১৯৯৮ সালে আরেকটি বিতর্কিত সমীক্ষা পেশ করেন সানফ্রান্সিস্কো জেনারেল হসপিটাল এর কার্ডিওলজিস্ট রুডলফ বায়ার্ড - তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি সেইসব রোগীরা ভাল থাকেন যাদের জন্য তাঁর পরিবার এবং অন্যমানুষেরা প্রার্থনা করেন তুলনামুলকভাবে যাদের জন্য কেউ প্রার্থনা করেনা তাদের চেয়ে। কিন্তু ২০০৫ সালে প্রার্থনার এরকম অলৌ্কিক ক্ষমতাকে ধূলিস্যাত করেন হাভার্ড ইউনিভাসিটির বিজ্ঞানী হারবাট বেনসন,তিনি একটি সমীক্ষা প্রদান করেন তাতে তিনি দেখান অন্যের প্রার্থনা পাওয়া সত্ত্বেও জটিলতা বাড়ছে ৫২% বাইপাস সার্জারী রোগীর ক্ষেত্রে , অপরদিকে এটা ৫১% যাদের জন্য কেউ প্রার্থনা করেনি। তাহলে কি দাঁড়াল ?
চিকিৎসাবিজ্ঞান এটাকে ব্যাখ্যা করছে "প্লেসিবো এফেক্ট" বলে, রুগী যখন শুনছে তার আরোগ্য কামনায় প্রার্থনা করছে ,তখন মানষিক ভাবে স্বস্তি লাভ করছে এটাই হয়ত তাকে আরোগ্য লাভ করতে সহায়তা করছে ।
তবে এসব ব্যাপারে রীতিমত বিরক্ত কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টার এর মনো চিকিৎসার অধ্যাপক রিচার্ড স্নোয়ান, এবং এর উপরে তিনি একটি বই ও লিখে ফেলেছেন "ব্লাইন্ড ফেইথঃ দ্য আন হোলি অ্যালায়েন্স অব রিলিজিয়ন এন্ড মেডিসিন", তিনি বলেছেন কোন আস্তিক যদি দীঘায়ু হন তবে সেটা তার আস্তিকতা কিংবা ধর্মের অলৌকিকতার জন্য নয় বরং উপাসনালয়ের শান্তসমাহিত, নির্ঝঞ্চাট পরিবেশের জন্য মানুষের দেহে যে প্রভাব পড়ে তার কারণে।
ব্যক্তিগত ভাবে আমিও রিচার্ড স্নোয়ান এর সাথে এক মত কারণ মানুষের শ রীরে অলৌকিকতার প্রভাব প্রশ্ন সাপেক্ষ কিন্তু পরিবেশ,পরিস্হিতির প্রভাব অতিসত্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।