আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামের নব-যাত্রার সূচনা যে-দিনটিতে

blog_id: 85969 Although Yarmouk is little known today, it is one of the most decisive battles in human history... ... ... Had Heraclius\' forces prevailed, the modern world would be so changed as to be unrecognizable! -George F. Nafziger (Islam at war) ইয়ারমুকের প্রান্তর (৮ মাইল দূরের জর্ডান থেকে তোলা ছবি) ইসলামের অভ্যূদয়ের প্রথম-বেলায় পৃথিবী অন্যতম প্রধান দোর্দন্ড-প্রতাপশালী সাম্রাজ্য ছিলো বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য, যাকে আমরা রোমান সাম্রাজ্য বলে চিহ্নিত করে থাকি। আরব উপদ্বীপের বাইরের অঞ্চলে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হলে এই প্রতাপশালী সাম্রাজ্য কর্তৃক বিরোধীতার সম্মুক্ষীণ হওয়াটাই ছিলো তখন স্বাভাবিক, এবং ঘটে ছিলোও তাই। কিন্তু এই বিরোধীতার ভয়ে-তো আর চুপটি করে বসে থাকাও যায়-না, তাই তলব করা হলো "সাইফুল্লাহ" খালিদ ইবনুল আল-ওয়ালিদকে; যিনি মক্কা বিজয়ের অল্প কিছুদিন পূর্বে ইসলামের পতাকা তলে এসেও নিজের শৌর্য্য-বীর্য্য প্রদর্শন করে হয়ে উঠেছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ.) এবং তাঁর পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রিয়পাত্র, যেখানেই গিয়েছেন ফিরেছেন ইসলামের বিজয়ের নিশান উড়িয়ে। সিরিয়ায় অবস্থিত বীর খালিদ ইবনুল আল-ওয়ালিদ-এর কবর খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ.)-এর সময় থেকে মুসলিমরা সিরিয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপের রোমান সাম্রাজের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো ধীরে ধীরে, হযরত ওমর (রাঃ.) খলিফা হওয়ার পর এটা আরো জোরদার হয়। তিনি ইসলাম কবুল করার প্রস্তাব দিয়ে দূত পাঠালেন রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের দরবারে, কিন্তু এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর রোমানদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠলো।

ইয়ারমুকের যুদ্ধের প্রারম্ভে মুসলিমদের সমর-সজ্জা রোমানরা এর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলো দীর্ঘ্য সময় ধরে, ৬৩৫ সালের শেষ দিক থেকে শুরু হয় তাদের সময়-সজ্জার। কারণ তাদের সাম্রাজ্য রক্ষা করার সাথে সাথে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেবার মাধ্যমে খ্রীস্ট ধর্মকে রক্ষার বিষয়টিও জড়িত ছিলো এখানে; অর্থ্যাৎ তাদের দিক থেকে শুধু নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করাই নয়, সেই সঙ্গে ইসলাম ধর্মকে পৃথিবীর ইতিহাস থেকে নাম-নিশানা শুদ্ধ নির্মূল করারও ইচ্ছে ছিলো! এই যুদ্ধে প্রায় ১,৫০,০০০ সৈন্য সমাবেশ ঘটানো হয় রোমানদের পক্ষে; যাতে শুধু রোমানরাই নয়, ছিলো তাদের বন্ধুভাবাপন্ন দাস, জার্মান, জর্জীয়ান, আর্মেনিয়ান ও আরবীয় খ্রীষ্টানদের অংশ এবং এরা মোট ৫টি সেনাদলে বিভক্ত ছিলো। ঐতিহাসিকদের মতে, যুদ্ধে আগত রোমান সেনাদের জন্য স্থাপিত তাবুর দৈর্ঘ্য ছিলো ১৮ মাইলব্যাপী দীর্ঘ্য! রোমান সম্রাট হেরাক্লিসের নামাঙ্কিত মুদ্রা আর বিপরীতে মুসলিম বাহিনী? মুসলমানরাও তৎকালীন সময় পর্যন্ত তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সেনা-সমাবেশ ঘটায় এই যুদ্ধে, তাও মাত্র ৪০,০০০ জন; এদের মধ্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ.)-এর সান্নিধ্যধন্য ১০০ সাহাবী (রাঃ.)ও ছিলেন। যদিও মুসলিমরা ছিলো রোমানদের এক-চতুর্থাংশ মাত্র কিন্তু তাদের মধ্যে কাজ করছিলো শাহাদাতের অমেয় শরাব পানের দূর্নিবান অপার্থিব ইচ্ছা; যার ফলে তাদের তেজ-দীপ্ত পদচারণা রোমানদের তুলনায় কোনো-অংশে কম ছিলোনা। যুদ্ধে মুসলমানরা ৪টি দলে বিভক্ত হয়ে সৈন্য সমাবেশ ঘটায়; আমর (রাঃ.)-এর নেতৃত্বে প্যালেস্টাইনের সৈন্যরা, সুহরাবিল (রাঃ.)-এর নেতৃত্বে জর্ডানের বাহিনী, ইয়াজীদের নেতৃত্বে দামেস্কের সেনারা এবং আবু উবাইদাহ (রাঃ.)-এর নেতৃত্বে মূল সেনাদের অংশ।

মহাবীর খালিদ (রাঃ.)ছিলেন আবু উবাইদাহ (রাঃ.)-এর অংশের সৈন্য দলের অন্তর্ভূক্ত। এই যুদ্ধ মুসলিম ভার্তৃত্ববোধের আর নেতৃত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক জ্বলন্ত স্বাক্ষী হয়ে আছে। আধুনিক সমরবিদদের নিকটও এর গুরুত্ব অপরিসীম; কারণ মাত্র এক-চতুর্থাংশ সৈন্য নিয়ে, যাদের অধিকাংশই প্রশিক্ষণবিহীন ও কেবলমাত্র ধর্মীয় কারণে জিহাদে শরীক হতে এসেছে তাদের দ্বারা তৎকালীন বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান সেনা বিহিনীর পরাজয়কে দেখা হয় ইতিহাসের অনন্য এক দৃষ্টান্ত হিসেবে। এই যুদ্ধেই দেখা গিয়েছে ইসলামের ইতিহাসের সেই অনন্য দুটি ঘটনাঃ ১. নিজে তৃষ্ণার্ত হওয়ার পরও পানি না-পান করে অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য প্রেরণ করা ও বিপরীতে নিজের শাহাদাত বরণ করা এবং ২. একজন প্রধান সেনাপতির কর্তৃত্ব হারানোর পরও নতুন নের্তৃত্বের অধীনে সাধারণ সেনার ন্যায় যুদ্ধ করে যাওয়া। যে সম্পর্কে সাহাবী হযরত খালিদ (রাঃ.) নিজে বলেছেনঃ "আমার জানতো আল্লাহ আর তাঁর রাসুল (সাঃ.)-এর জন্য কুরবান করেছি আমি।

ইসলামের জন্য আমি যুদ্ধ করি, নের্তৃত্বের মোহে নয়!" যুদ্ধটি সংগঠিত হয় বর্তমান জর্ডান-সিরিয়া সীমান্তে অবস্থিত ইয়ারমুক নদীর তীরবর্তী (৩২°৪৮'৫১" উত্তর অক্ষাংশ ও ৩৫°৫৭'১৭" পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যবর্তী) স্থানে; যার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে গ্যালিলি সাগর। স্থানটি তৎকালীন মুসলিম ও রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত। ৬ দিনে স্থায়ী এই যুদ্ধটি শুরু হয় ৬৩৬ খ্রীস্টাব্দের ১৫ আগষ্ট তারিখে এবং শেষ হয় ২০ আগষ্ট মুসলিমদের চুড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে। প্রতিদিনের যুদ্ধের অবস্থা পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবোঃ ১৫ আগস্ট তারিখঃ সম্মুখ যুদ্ধরে মাধ্যমে যুদ্ধের শুরু... জর্জ নামক এক রোমান সেনাপতির সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে মুসলিম বাহিনীতে যোগ দান... মুসলিমদের কিছুটা ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে সূর্যাস্তের দ্বারা দিনে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি... ১৬ আগস্ট তারিখঃ রোমান সেনাপতি মাহান মধ্যাহ্নের সময় মুসলিমদের আকস্মাৎ আক্রমণ করে বিদ্ধস্ত করার প্রচেষ্টা করে... মুসলিমদের ডান দিকে রণক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি... আমর-এর সৈন্য-দলের পর্যুদ্ধস্ত অবস্থা... রোমানদের আগ্রগমন... খালিদের অসম-বীরত্বে মুসলিমদের রক্ষা...মুসলিমদের প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে সূর্যাস্তের দ্বারা দিনে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি... ১৭ আগস্ট তারিখঃ মুসলিমদের ডান দিকে রণক্ষেত্রে রোমানদের ব্যাপক আক্রমণ... খালিদের বীরত্বে ও সমর-নায়কোচিৎ সিদ্ধান্তে মুসলিমদের রোমান-বাহিনীর মধ্যবর্তী স্থানে আক্রমণ... মুসলিমদের পূর্ব দিনের হারানো স্থান উদ্ধার... রোমানদের প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে সূর্যাস্তের দ্বারা দিনে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি.. ১৮ আগস্ট তারিখঃ পূর্ব দিনের ন্যায় রোমানরা মুসলিমদের ডান দিকে ও মুসলিমরা রোমানদের বাম দিকে আঘাত করলো... ব্যঅপক যুদ্ধ... খালিদ-এর বাল্য-বন্ধু মুসলিম সেনাপতি ইকরিয়া ইবন আবু জাহেলের শহীদান লাভ... মুসলিমদের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে সূর্যাস্তের দ্বারা দিনে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি... ১৯ আগস্ট তারিখঃ নিজেদের পর্যুদস্ত অবস্থা দেখে ভীত রোমান সেনাপতি মাহানের সন্ধি প্রস্তাব দান; কিন্তু বীর খালিদের তা প্রত্যাখ্যান। খালিদের চাতুর্য ও সমর-কৌশলের ফলে রোমানদের বাম দিকের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবর্তী স্থানে মুসলমদের প্রচন্ড আক্রমণ এবং একই সঙ্গে পাহাড়ের স্থাপনা থেকে আক্রমণ, ফলে মুসলিমদের বিজয় প্রায় সুনিশ্চিৎ হয়ে ওঠে।

বীর খালিদ ইবনুল আল-ওয়ালিদ মসজিদ (সিরিয়া) ২০ আগস্ট তারিখঃ যুদ্ধের চুড়ান্ত এই দিনে খালিদের বাহিনীর দ্বারা রোমনদের সর্বক্ষেত্রে পর্যুদস্ত করা হয়; রোমান প্রধান সেনাপতির মাহাস পলায়ন করে এবং অন্যতম সেনাপতি থিওডর এর মৃত্যু হয় মুসলিম-সেনাদের হাতে। এভাবেই মুসলিমদের দ্বারা সিরিয়া ও প‌্যালেস্টাইন বিজিত হয়। খলিফা ওমরের (রাঃ.) সময় মুসলিম সাম্রাজ্যের মানচিত্র এবং এর ফলেই সম্ভব হয়, আরবের বাহিরে ইসলামের জয়-যাত্রার সূচনা করার। কালক্রমে ইউরোপের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে ইসলামের শ্বাশত বানী আর শান্তির আচ্ছাদ্দন। >>> আগ্রহী দর্শকদের জন্য একটি ছবির লিংকঃ http://wn.com/Battle_of_Yarmouk >>> একটি যৌথ প্রকাশনা! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.