আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামের প্রকৃত চেহারা, ইসলামের দৃষ্টিতে বিধর্মীরা

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

বিক্ষিতভাবে কিছু কোরআনের আয়াত তুলে ধরা বলা হয় যে ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতি মোটেও সহনশীল নয়। জেহাদ ভুল অর্থে ব্যবহার করা হয়। আরো প্রচার করা হয় যে মুসলমানেরা সারা পৃথিবী জুড়ে ধর্মান্তরের কাজটি করেছে তরবারিত জোরে । এসব কিছুই প্রচার করা হয় উদ্দ্যেশপ্রনোদিতভাবে ইসলামকে হেয় করার জন্য। তাই ইসলামের ব্যপারে যারা অজ্ঞ তাদের কাছে শেষ প্রযন্ত চিত্রটা দাড়ায় এরকম যে মুসলান মাত্রেই সুযোগ পেলে বিধর্মীদের তলোয়ার দিয়ে কতল করতে আসে।

তাই বিধর্মীদের প্রশ্নে ইসলামের প্রকৃত অবস্থানটি কিছুটা স্পষ্ট করে তোলার প্রয়াস এই পোষ্টটি। নাজরান এর খৃষ্টানরা নবীজিকে সাঃ যখন দেখতে এলেন তখন নবীজি সাঃ তাদেরকে যে শুধু মসজিদে থাকতে দিলেন তা নয় তাদের বিশ্বাস অনুসারে মসজিদের ভিতরে প্রার্থনাও করতে দিলেন। নবীজি সাঃ তাদের এমর্মে সনদ প্রদান করলেন যে, নাজরান এর আশেপাশে অন্চলের খৃষ্টানদের জীবনের প্রতি, তাদের ধর্মের প্রতি তাদের সম্পত্তির জন্য মহান আল্লাহর নিরাপত্তা এবং রাসুল সাঃ প্রতিশ্রুতি ...তাদের বিশ্বাস এবং তাদের রীতিনীতিতে কোন হস্তক্ষেপ করা হবে না, তাদের কোন অধিকার বা সুযোগ সুবিধা পরিবর্তন করা হবেনা, তারা ছোট বড় সব কিছুই আগের মত উপভোগ করতে পারবে। রাসুল সাঃ প্রথম ইসলামি ষ্ট্যাটের শুধু যে প্রধান ছিলেন তা নয় তিনি সুপ্রীম জুডিশিয়াল অথরিটিও ছিলেন। বিধর্মীরাও তার কাছে বিচার নিয়ে আসত এবং তিনি তাদের ধর্ম অনুসারে তাদের বিচারকার্য পরিচালনা করতেন।

মুসলমান এবং বিধর্মীদের মধ্যে কোন বিবাদ থাকলে তিনি কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী আইনের চোখে সবাই সমান নীতিতে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন, ধর্মের পার্থক্যটি আমলে আনতেন না। রাসুল সাঃ বলতেন ইসলামী রাজ্যে একজন বিধর্মী এবং একজন মুসলমানের রয়েছে সমান অধিকার। যে কেউ একজন বিধর্মীকে আঘাত করল সে যেন আমাকে আঘাত করল এবং যে কেউ আমাকে আঘাত করল সে যেন আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করল। রাসুল সাঃ আরো বলেছেন, সাবধান হাশরের ময়দানে তার বিরুদ্ধে আমি নিজে অভিযোগ করব যে কোন বিধর্মীর প্রতি অন্যায় করল, তার অধিকার বিনষ্ট করল কিংবা তার উপর এমন দায়িত্ব চাপিয়ে দিল যা বইবার শক্তি তার নেই। প্রথম ইসলামি রাজ্যের কনষ্টিশিউনে বলা আছে, মুসলামনদের জন্য মুসলমানদের ধর্ম ইহুদিদের জন্য ইহুদিদের ধর্ম।

ক্লজ ২৫ এ উপরন্তু ইহুদিদের কম্যিউনিটি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমনকি এও বলা হয় যে ইহুদিদের ভোটাধিকার ছিল। রাজ্য স্থাপনের পর রাসুল সাঃ মদিনার প্রতিবেশি পাগানদের সাথে প্রতিরক্ষা এবং পারষ্পরিক সহযোগিতার চুক্তি করেছিলেন। দীর্ঘ দশ বছর বিশ্বস্থতার সাথে তারা পাশাপাশি অবস্থান করেছিল। নবীজি সাঃ তার মৃত্যু শয্যায় বলে গিয়েছেন তোমরা বিধর্মীদের সর্বাত্মক সততার সুরক্ষা দিয়ো যেমন আমি দিয়েছিলাম।

নবীজি সাঃ একজন অমুসলিমকে আবিসিনিয়ার দুত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে অনেক মুসলিম গভর্নমেন্ট খৃষ্টান যাচককে বিচারকার্যের ক্ষমতা দিয়েছিলেন, আবার অনেক ইহুদি এবং খৃষ্টান রাষ্টের সর্বোচ্চ সম্মানিতদের মধ্যে ছিলেন যাদের সরাসরি সম্পর্ক ছিল খলিফার সাথে। হযরত ওমর রাঃ এর সময় কিছু মুসলমান এক ইহুদির জায়গা দখল করে মসজিল নির্মনা করেছিল তা জানতে পেরে ওমর রাঃ মসজিদ ভাংগার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং ইহুদিকে তার জায়গা ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাইয়াতুল ইয়াহুদ নামক জায়গাটি এখনো বিদ্যমান এবং সর্বজন পরিচিত। আরেকবার গির্জা এক অংশ ভেংগে মসজিদ নির্মান করা হয়েছে, এরকম এক অভিযোগ আসলে ওমর রাঃ মসজিদের গির্জার অংশটি ভেংগে ফেলার নির্দেশ দিলেন এর সাথে সাথে গির্জাটি পুনর্নির্মানেরও নির্দেশ দিলেন।

ওমর রাঃ বলেছেন, বিধর্মীদের সুব্যবস্থার প্রতি নজর দাও, তাদের সাথে নম্র ব্যবহার কর তাদের কেউ বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হলে কোন সম্পদ না থাকলে তোমাকে তার ব্যয়ভার বহন করতে হবে। আলী রাঃ একবার এক যুদ্ধে একজন বিখ্যাত কাফের যোদ্ধার সাথে লড়ছিলেন। তুমুল সেই যুদ্ধের শেষের দিকে আলী রাঃ কাফেরের বুকের উপর চেপে বসে যেই তলোয়ার দিয়ে মারতে উদ্যত হলেন পরাজিত সেই কাফের ক্রুধে আলী রাঃ মুখের উপর থুথু ছুড়ে মারল। ক্ষনিকের জন্য আলী রাঃ মাথায় ক্রুধের সন্চার হল তিনি দ্বিগুন তেজে তলোয়ার চালাতে গিয়েও থেমে গেলেন। কাফেরের বুকের উপর থেকে নেমে পড়লেন।

সেই কাফের যোদ্ধা ত অবাক। ধাতস্ত হয়ে সে জিজ্ঞাসা করল, আমায় মারলেন না কেন? আলী রাঃ উত্তর দিলেন, এতক্ষন তোমার সাথে যে আমার যে যুদ্ধ হল তা ধর্মের (নীতির)কারনে ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারনে নয়। কিন্ত তুমি যখন আমায় থুথু দিলে তখন আমার মধ্যে ক্রুধের সন্চার হল, তাই তখন যদি আমি তোমায় মারতে যেতাম তাহলে ব্যক্তিগত বিদ্বেষটা কারন হয়ে দাড়াত। তাই ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারনে আমি তোমাকে মারতে পারিনা। উপরের ঘটনাটি বলে দেয় যে, ব্যক্তিগত বা জাতিগত কিংবা জাতিগত বিদ্বেষ নয় নীতিগত কারনেই নবীজি সাঃ এবং তার সহচরদের বিধর্মীদের ব্যপারে কঠোর হতে হয়েছিল।

নবীজি সাঃ আর সেই ইহুদি বুড়ির ঘটনা আমরা সবাই জানি যে বুড়ি নবীজি সাঃ কষ্ট দেয়ার জন্য পথে কাটা বিছিয়ে রাখত। একদিন পথে কাটা নে পেয়ে নবীজি সাঃ চিন্তিত হলেন, ভাবলেন বুড়ির কিছু হয়নিত। বুড়ির ঘরে গিয়ে দেখলেন তিনি অসুস্থ, সেবা করে সারিয়ে তুললেন তাকে। আরেকজন মানুষের (শত্রুর) প্রতি কিরকম মমত্ব থাকলে এ ধরনের আচরন সম্ভব আমরা কি কেউ ভাবি। অথচ এরকম একজন মহামানবের চরিত্রে কালিমা লেপনে কিছু কিছু মুর্খের হাত একটুও কাপেনা।

শেষে ব্লগারদের কাছে আমার প্রশ্ন আমরা কি শুধু নীতির কারনেই পরষ্পর ঝগড়াঝাটি করি নাকি এতে ব্যক্তিগত বিদ্বেষেটাই শেষ পর্যন্ত মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.