বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের পরে কবি সাহিত্যকের আকাল পড়েনি বটে তবে আবাল বৃদ্ধ বনিতা নির্বিশেষে আজ আমরা যাকে লেখক বলে জানি, নাট্যকার বলে জানি, গীতিকার বলে জানি, যে লোকটি জ্যোৎস্না দেখতে বড় ভালোবাসতেন, যিনি বলেছিলেন মাটি ও মানুষের কথা, আমাদের হৃদয়ের কথা, ব্যাথা শোক তাপ ভালোবাসা ভালোলাগা যার লেখনীতে ফুটে উঠেছিলো খুব সাধারণ মানুষের ভাষায়। যিনি আমাদেরকে কাঁদিয়েছেন যতটা হাসিয়েছেনও কম নয় তিনিই সেই স্বপ্নবিলাসী অমর কথা-সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। তার মৃত্যু পরবর্তী এমন আর কোনো একটিও হুমায়ুন আহমেদ আমার জীবদ্দশায় আমি দেখে যেতে পারবোনা সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিৎ।
আমার জীবনে একটি বিশেষ কারণে তিনি জড়িয়ে ছিলেন, আছেন আর থাকবেনও আমৃত্যু আমার সাথে। এমনকি হয়তো আমার মৃত্যু পরবর্তী সময়েও আমারই সাথে জড়িয়ে রইবেন তিনি আমার আপনজনদের কাছে।
সে কারণটি আমার এই নাম "ময়ূরাক্ষী"। আমার খালা আমার এ নাম দিয়েছিলেন। আর হুমায়ুন আহমেদের এক নিষ্ঠ পাঠকও ছিলেন তিনি। শৈশবে বই এর আলমারীতে সাজিয়ে রাখা এই খটমট বানানের বইটিই ছিলো আমার কাছে পৃথিবীর সবচাইতে প্রিয় বই। আর কৈশোরে বইটি পড়ে খালার মত আমিও হিমু বা হিমালয়ের সাথে সাথে হয়ে উঠেছিলাম হুমায়ুন আহমেদের এক নিষ্ঠ ভক্ত।
আরও পরে জেনেছিলাম ময়ূরাক্ষী একটি নদীর নাম। অনেক খানে অনেক সময় অনেকেই জানতে চেয়েছেন আমার এই নামের রহস্য। আমাকে উপরের বর্নীত দুটি ব্যাপারই বর্ণনা করতে হয়েছে তাদের কাছে। আমি কৃতজ্ঞ আমার নামের সেই স্রষ্ঠার প্রতি আর অবশ্য অবশ্য বইটির লেখকের প্রতি যিনি আমাকে দিয়েছেন অপূর্ব সুন্দর একটি নাম নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আনন্দ।
ময়ুরাক্ষী- গল্পের শুরুতে একটা ছেলেকে একজন মহিলা ভুল করে তার গাড়িতে ডেকে ওঠান আর গাড়িতে ছিলো তার মেয়ে।
না সে মেয়েটি ময়ুরাক্ষী নয়। তবে বইটা হাতে নিতেই আমি ধরেই নিয়েছিলাম এই সেই ময়ুরাক্ষী। গল্পে প্রথম দেখায় ছেলেটার মেয়েটাকে তেমন সুন্দর মনে হয়নি তায় তার গায়ের রঙটাও নাকি তেমন ফরসা না। এসব বর্ণনা সেই ক্লাস সেভেন এইটে থাকতে মোটেও পছন্দ হয়নি আমার। মনে মনে লেখকের উপর একটু ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম বটে।
নায়িকাদের অপরূপা সুন্দরী হতে হয় এটাই নিয়ম আর ইনি এটা কি করলেন! অভিমানে ঠোঁট ফুলে উঠতো আমার। এর আরেকটা কারন নিজের সম্পর্কে প্রায়ই শুনতাম মেয়েটা মায়ের মত ধপধপে হয়নি। সে যাইহোক ফিরে আসি হুমায়ুন আহমেদের ময়ূরাক্ষীতে।
এই গল্পের এই গাড়িতে ওঠা ছেলেটিই সেই হিমু বা হিমালয়। যাকে আমরা পরবর্তীতে পাই কালজয়ী এক চরিত্র হিসাবে।
আমার ধারণা হুমায়ুন আহমেদের এই বইটিতেই হিমু বা হিমালয় সবচাইতে বেশী সুস্পষ্ট হয়েছে। আর সেই হিমুর প্রিয় নদীটিই ছিলো ময়ুরাক্ষী। যেই প্রিয় নামে সে ডাকতো রূপাকে। হ্যাঁ হিমু সেখানে রূপাকেই নাম দিয়েছিলো ময়ুরাক্ষী। তবে শুরুতেই গাড়িতে সেই প্রথম দেখার মেয়েটি যাকে আমি ময়ূরাক্ষী ভেবেছিলাম সে আজও ময়ূরাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে আমার মাঝে যার প্রেমে হিমু পড়েনি তবে তার স্বভাজাত আচরণে তার প্রেমেই ফেলেছিলো আমার ময়ূরাক্ষীকে।
ময়ুরাক্ষীই সেই উপন্যাস যেখানে হুমায়ুন আহমেদের হিমু বা হিমালয় প্রথম জন্মলাভ করে। ১৯৯০ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয় ময়ুরাক্ষী।
হুমায়ুন আহমেদ বর্ণনা অনুসারে হিমুর আসল নাম হিমালয়। এ নামটি রেখেছিলেন তার বাবা। তিনি ছিলেন একজন বিকারগ্রস্ত মানুষ যার বিশ্বাস ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা যায় তবে একইভাবে মহাপুরুষও তৈরি করা সম্ভব।
তার একটি মহাপুরুষ তৈরির স্কুল ছিল যার একমাত্র ছাত্র ছিল তার সন্তান হিমু।
হিমুর পোশাক ছিলো পকেট বিহীন হলুদ পাঞ্জাবী। ঢাকার পথে-পথে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম। মাঝে মাঝে তার মধ্যে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। মানুষকে বিভ্রান্ত করা তার একটি আনন্দের কাজ।
হিমুর বান্ধবীর নাম রূপা; যাকে ঘিরে হিমুর উপন্যাসে অজানা সব রহস্যময়তা ঘুরপাক খায়। হিমু ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়েছে তবে পাশ করেছে কিনা তা জানা যায়নি। হিমু সবসময় হলুদ রঙের পাঞ্জাবী অধিকাংশ সময়ে যেটার পকেট থাকে না এমনটাই পরে। রাতের বেলায় রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে। হিমুর জীবন যাপন বাউন্ডুলে ধরনের।
সে মেসে তার বন্ধু-বান্ধবের সাথে থাকে। মাঝে মাঝে রাস্তায় ও পার্কেও রাত কাটায়। তার প্রধান কাজ রাস্তায় ঘুরে বেরানো । তার কোনো পেশা নেই। তবে তার আত্মীয় স্বজনরা বেশ বড়লোক।
হুমায়ুন আহমেদের ভক্তকূলের মাঝে অধিকাংশ তরুনেরাই একটা সময় নিজেদেরকে হিমু ভাবতে পছন্দ করে। হিমুর মত গেট আপ হলুদ পান্জাবী, স্যান্ডেল পরতে ভালোবাসেন। অনেকের মত আমারও ধারনা এই হিমু চরিত্রের মাঝে লুক্কায়িত রয়েছে আমাদের প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের স্বত্তা। হিমুর মাঝে তিনি প্রকাশ করেছেন তার অপ্রকাশিত বৈশিষ্ঠাবলী।
তার খুব প্রিয় একটি নদী ছিলো এই ময়ুরাক্ষী।
গানে, গল্পে কথায় তাই নদীটির নাম উঠে এসেছে বার বার। সৃ্ষ্টিকর্তার কাছে জানাই কৃতজ্ঞতা । প্রিয় লেখকের প্রিয় নদীটির নামটিতে ধন্য হয়েছি আমি।
নদীর নাম ময়ুরাক্ষী-এস আই টুটুল, গীতিকার হুমায়ুন আহমেদ
Click This Link target='_blank' >ময়ুরাক্ষী
হুমায়ুন আহমেদের সকল বই ডাউনলোড লিন্ক
আজও হাজারও তরুণদেরকে দেখা যায় হলুদ পান্জাবীতে হিমু হয়ে ঘুরে বেড়াতে। হিমুর জীবন যাপন পদ্ধতি সে যতই অদ্ভুত হোকনা কেনো তাকেই ভালোবাসতে।
যুগ যুগ বেঁচে থাকুক এই হিমুরা আর এই সকল হিমুদের মাঝে বেঁচে থাকুক আমাদের প্রিয় আরেক হিমু আমাদের অন্তরে, আমাদের ভালোবাসায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।