আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাটোর জেলার কৃতি সন্তানদের নাম সমূহ

রাজনীতি বুঝিনা। বাঁকা পথে চলিনা । গন্তব্য ওই তো কিছুদূর সামনেই হযরত ঘাসী দেওয়ান তাঁর আসল নাম জানা যায় না। লোকে তাঁকে হযরত ঘাসী দেওয়ান বলেই জানে। তাঁর আস্তানা ছিল সিংড়া উপজেলার চলনবিল এলাকার তিসিখালীতে।

তিনি ছিলেন হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর অদেখা মুরীদ বা অনুসারী। প্রতি বছর চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দাহিয়ার বিলে ঘাসী দেওয়ানের দরগাহে ওরস বা বার্ষিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায় জগদিন্দ্রনাথ রায় ছিলেন নাটোর বড় তরফের রাজা গোবিন্দনাথের স্ত্রী ব্রজসুন্দরীর দওক পুত্র। তার আসল নাম ব্রজনাথ। ১৮৬৮ খ্রীস্টাব্দের ২৬ শে অক্টোবর নাটোরের হরিশপুর নামক গ্রামে এক সম্ভান্ত গরীব হিন্দু পরিবারে তার জন্ম হয়।

তাঁর পিতার নাম শীনাথ রায় এবং মাতার নাম প্রসন্নময়ী দেবী। এই কৃতি সন্তান কালক্রমে জ্ঞানী-গুনী রাজনীতিবিদ ও সমাজ সংগঠক হিসাবে নাটোর রাজপরিবারের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছিলেন। জগদিন্দ্রনাথ ১৮৮৯ সালের ৯ই অক্টোবর রাজকার্যভার গ্রহণ করেন। বৃটিশ ভারতে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রগতিবাদী চেতনার ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান ছিল।

তার রচিত উল্লেখ যোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘নূরজাহান’ ’সন্ধাতারা‘ প্রধান। মহারারজা সাংবাদিকতা ও করতেন। তিনি মানসী নামক একটি পত্রিকার ও সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া তার রচিত অনুবাদ সাহিত্য, ভ্রমন কাহিনী, জীবনী গ্রন্থ, কবিতা, গান এবং রাজনৈতিক প্রবন্ধ সমুহ বাংলাদেশে এককালে বিপুল আলোড়ন এনেছিল। তিনি ছিলেন সমাজ সেবক, প্রজাবৎসল এবং সত্যিকারের দেশ হিতৈষী।

দানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রনী। তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি নাটোরের মহারাজা হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা। ১৮৯৩ সালে নাটোর ত্যাগ করে কলিকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯২৫ খ্রীস্টাব্দের ২৬ শে ডিসেমবর মোটর গাড়ীর ধাক্কায় গুরুতর আহত হন এবং ০৫ জানুয়ারী, ১৯২৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। মহারানী ভবানী নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন রামজীবন।

রামজীবনের পালিত পুত্রের নাম ছিল রামকান্ত। বগুড়া জেলার অন্তর্গত আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রাম নিবাসী আত্মারাম চৌধুরীর একমাত্র কন্যা ভবানীর সাথে রামকান্তের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ভবানীর বয়স ছিল ১৫ বছর। ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামজীবনের মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর দেওয়ান দয়ারামকে রামকান্তের অভিভাবক নিযুক্ত করেন। রামকান্ত রাজা হলেও প্রকৃতপক্ষে রাজকার্যাদি সম্পাদন করতেন দেওয়ান দয়ারাম।

১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামকান্ত পরলোক গমন করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর আলীবর্দী খান রানী ভবানীর উপরই বিস্তৃত রাজশাহী চাকলার জমিদারী পরিচালনার ভার অর্পন করেন। তিনি অত্যন্ত যোগ্যতা ও নিষ্ঠার সাথে তার জমিদারী পরিচালনা করেছিলেন। শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তাঁর দানকৃত অর্থে বহু টোল পরিচালিত হত।

জনসাধারনের সুবিধার জন্য তিনি অনেক হাট, বাজার এবং রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করেছেন এবং পানির কষ্ট নিবারনের জন্য বহু দীঘি ও পুকুর খনন করেছিলেন। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে ৭৯ বছর বয়সে বড়নগর রাজবাড়ীতে রাণী ভবানী মৃত্যুবরণ করেন। মরমী কবি আহসান আলী আহসান আলী ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে নওগাঁ জেলার অন্তর্গত রাণীনগর উপজেলার লোহাচুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম আহসান আলী খন্দকার। আধ্যাত্ব সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে আহসান আলী সাধক পুরুষ বলে গণ্য হন।

৪৫ বছর বয়সে তিনি গুরু-প্রদত্ত খেলাফত লাভ করেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জেলার সিংড়া উপজেলাধীন বজরাহার গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আহসান আলীর বহুসংখ্যক তত্ত্ব সংগীত রচনায় লালন শাহ্ এবং পাঞ্জু শাহ্ এর প্রভাব যথেষ্ট কার্যকর ছিল। তিনি ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। স্যার যদুনাথ সরকার ১৮৭০ সালের ১০ ডিসেমবর সিংড়া উপজেলার ছাতারদীঘি ইউনিয়নের কড়চমাড়িয়া গ্রামে যদুনাথ সরকার জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ১৮৯১ সালে ইংরেজী সাহিত্য ও ইতিহাস বিষয়ে অনার্স নিয়ে বিএ পাশ করেন। ১৮৯২ খ্রিটাব্দে তিনি ইংরেজীতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম এ পাশ করেন। কলিকাতার রিপন কলেজে অধ্যাপনা পদে চাকুরী জীবন শুরু করে ১৯৩০ সালে তিনি চাকুরী থেকে অবসর নেন। অবসরের পূর্বে ৫ বছর তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে আসীন ছিলেন। বৃটিশ সরকার তাঁকে ১৯২৬ সালে সি আই ই এবং ১৯২৯ সালে ‘নাইটগুড’ খোতাবে সম্মানিত করেন।

১৯৩৬ ও ১৯৪৪ সালে ঢাকা ও পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি. লিট উপাধি প্রদান করেন। ১৯৫৮ সালের ১৯ মে সোমবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শরৎকুমার রায় শরৎকুমার রায় ১৮৭৬ খ্রিটাব্দে দিঘাপতিয়া রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন রাজা প্রমথনাথ রায় বাহাদুর মাতা রাণী দ্রবময়ী। তিনি দয়ারামপুর এস্টেট-এ তিনশত বিঘা জমির উপরে একটি কৃষি খামার স্থাপন করেছিলেন যার নাম ‘রাণী দ্রবময়ী ফার্ম’।

এ ফার্মে উৎপাদিত আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদিত হত। এ অঞ্চলে কোন চিনিকল না থাকায় ১৯৩৬ খিস্টাব্দে গোপালপুরে স্থাপিত হয় ‘নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল’। ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’ এবং ‘বরেন্দ্র মিউজিয়াম’ স্থাপন তাঁর জীবনের অক্ষয় কীর্তি। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। হাসার উদ্দীন কবিরত্ন কবি হাসার উদ্দীনের জন্ম ১৯০৭ সালের ৮ই নভেমবর ।

তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো সৌভাগ্য সোপান, মোড়লের বিচার, শুক্তিমালা, দ্বাদশী, সন্ধানে ইত্যাদি। ত্রার নিজ বাসভবন ''দীন মঞ্জিল'' বড়গাছা, নাটোরে তিনি বর্তমানে বসবাস করছেন। মাদার বখশ ১৯০৭ সালে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার স্থাপনদীঘি নামক গ্রামে মাদার বখশ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বলিউদ্দিন মন্ডল। ১৯২৮ সালে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম,এ পাশ করেন এবং ১৯২৯ সালে তিনি বি,এল ডিগ্রী অর্জন করেন।

প্রথমে ২-৩ বছর শিক্ষকতা করবার পর ১৯৩৪ সালে তিনি রাজশাহী জজ কোর্টে আইন ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি আইন ব্যবসায়ে প্রচুর খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেছিলেন। ওকালতি ছাড়াও তিনি রাজনীতি ও সমাজ সেবায় জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান আইন সভার সদস্য হিসাবে জনগণের সেবা করতে সক্ষম হন।

আইন সভার সদস্য থাকা সত্ত্বেও ১৯৫০ সালে তিনি রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাপ্নিক ও স্রষ্টা। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে মাদার বখশ এর বিশেষ প্রচেষ্টায় তদানিন্তন সরকার ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ ‘ রাজশাহী বিশ্ববিদালয় এ্যাক্ট’ পাশ করে এবং তারপর যথারীতি কার্যক্রম শুরু করে এবং তা বাস্তবায়িত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ চালু হলে তিনি শিক্ষকরূপে যোগদান করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। স্বাধীনতার পর তাঁর নামানুসারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নাম মাদার বখশ রাখা হয়েছে।

১৯৬৭ সালের ২০ জানুয়ারী দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মোঃ মকসুদুর রহমান সিংড়া উপজেলার ছিলামপুর গ্রামে ১৯৫১ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন প্রাবন্ধিক ও গবেষক। বর্তমানে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন, নাটোরের মহারাণী ভবানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান তওব ও নীতিমালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

রাধাচরণ চক্রবর্তী সাহিত্যিক রাধাচরণ চক্রবর্তী ১৩০১ বঙ্গাব্দে ৮ই চৈত্র চৌকিরপাড় গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে আলেয়া, দীপা, তিলকধারী, পল্লব, বুকের ভাষা, চক্রপাক, বৈরাগীর চর, সাওন, হোয়াইট কেবিন, ঝড়, তপ ও তাপ, ঘর মোহানী, কো-এডিকেশন, মৃগয়া, ভাঙন ইত্যাদি অন্যতম। বাংলা ১৩৪৫ সনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল খাদেমুল বাসার খাদেমুল বাসার ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলাধীন ছাতারবাড়ীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাসমতুল্লাহ শাহ্ এবং মাতার নাম মোছাঃ হাছিনা বেগম।

খাদেমুল বাসার রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ১৯৫৩ সালে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন এবং বিমান বাহিনী একাডেমী থেকে গ্রাজুয়েশান ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ক্যাডেট হিসাবে যোগদান করে ধীরে ধীরে পদোন্নতির মাধ্যমে ১৯৭০ সালে উইং কমান্ডার পদ লাভ করেন। স্বাধীনতা লাভের পর তিনি ৩ বার পদোন্নতি লাভ করেন এবং ১৯৭৬ সালের মে মাসে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন এবং ঐ মাসেই তাঁকে এয়ার ভাইস মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য তাঁকে ‘‘বীর উত্তম’’ খেতাব প্রদান করা হয়। ১ সেপ্টেমবর, ১৯৭৬ ঢাকা বিমান বন্দরে এক বিমান দুর্ঘটনায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী এলাকার কৃতি সন্তানদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ১৯৭০ এবং ১৯৮১ সালে এম.পি নির্বাচিত হন। এছাড়াও ৩ বার পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ১৯৭৫ সালে গভর্ণর নির্বাচিত হন। তাঁর সম্মানে শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কুবীর চান শাহ্‌ কুবীর চান শাহ্‌ এই এলাকায় আসেন ধর্ম প্রচারের জন্য।

ধর্ম প্রচারের পর তিনি এখানেই ইন্তেকাল করেন। নাটোর সদর উপজেলার বাবুর পুকুর পাড় একডালা নামক স্থানে তাঁর মাজার আছে। দেওয়ান সাগর দেওয়ান সাগর ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এদেশে আগমন করেন। সদর উপজেলার দিঘাপাতিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে তাঁর মাজার বিদ্যামান। পূর্বে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নাটোরের কৃতি সন্তানদের মধ্যে রয়েছেন কালী প্রসন্ন রায়, রামকান্ত রায়, রাণী হেমাঙ্গিনী দেবী, মোহিত কুমার মৈত্র, প্রমথ নাথ বিশী, গজেন্দ্রনাথ কর্মকার ও সমর পাল।

(সংগ্রহ ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.