আল্লাহ তা'লা বলেন, "নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমাসমূহ এবং ভাগ্য নির্ধারক শরকসমূহ অপবিত্র ও শয়তানের কাজ ছাড়া কিছুই না। অতএব, এগুলো থেকে বিরত থাক যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। " সূরা আল মায়েদা - ৯০ ল্যান্ডলিতে যখন গোয়েন্দারা সূত্র খুঁজতে ব্যস্ত তখন সিআইএ অপারেটিভরা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ডেটা সংগ্রহের চেষ্টায় রত। অন্যদিকে ইন্টারোগেটররা গোয়ান্টানামো আর অন্যান্য জেলে আটকে রাখা কয়েদীদের কাছ থেকে গুরুত্ব পূর্ন তথ্য সংগ্রহের চেষ্টায় জেরা চালিয়ে যাচ্ছে। বার বার একটা নামই সামনে আসছে ’আবু আহমেদ আল কুয়েতি’ একজন সংবাদ বাহক।
যিনি বিন লাদেনের মূল কেন্দ্রীয় দলের একজন বিশ্বস্ত সদস্য। এই লোকটা শুধুমাত্র একজন সংবাদ বাহকই নয় বেশ ঘনিষ্ট একজনও ছিল, সে মিটিংয়েও ছিল এবং সে-ই খবর দেওয়া নেওয়া করত। এর নামটা সামনে আসে ২০০২ এবং ২০০৩ এ যখন প্রথম ডিটেইনিদের ইনটারোগেশন করা হয় তখন। ইনটারোগেশনের সময় প্রচন্ড জেরার মুখে পড়ে অনেকেই বলেছে যে আল কায়দার উপর তলার এই সংবাদ বাহকদের তেমন কোন গুরুত্ব নেই। তাদের কিছু কিছু তথ্য কাজে লাগলেও বেশীরভাগই সম্পূর্ন মিথ্যে, একজন ডিটেইটিতো বলেছিলো সে-তো মৃত; আরেকজন একটা মিথ্যে নাম বলে।
তার মানে সিআইএর কাছে যে সব তথ্য আসছিল তার অনেকটাই ভুল তথ্য। তাই তারা এই আসল লোকটার পরিচয় জানার চেষ্টায় বার বার হতাশ হচ্ছিল। এজেন্সি সংবাদ বাহকদের সম্পর্কে যে সব বিবরন জানতে পারছিল তার সম্পর্কে ইন্টারনল প্রফাইল যা তারা নিজেরা একত্রিত করছিল তা মিলিয়ে দেখতে শুরু করল। তাদের কাছে এই নামটা ছিল ’আবু আহমেদ আল কুয়েতি’
পুরা মিশনটাই বানচাল হতে বসেছে। টপ সিক্রেটস স্টেলথ হেলিকপ্টারের একটা যার মধ্যে স্ট্রাইক টিমের অর্ধেক সদস্য রয়েছে বিন লাদেনের বাড়ি উঠানে ক্র্যাশ ল্যান্ড করেছে।
হেলিকপ্টারটা অচল হয়ে গেছে তবে ভেতরে যারা ছিল সবাই অক্ষত রয়েছে। সব স্পেশাল অফসের লোককেরাই বলবে যে, এই ধরনের সমস্যা শুধু দেখাই যায় না, এমন সমস্যা অবস্যম্ভম্বি, প্রথমে যে পরিকল্পনা ছিল যে একটা দলকে ছাদের ওপরে নামানো হবে সেটা বাতিল করা হলো। তার বদলে দ্বিতীয় হেলিকপ্টারটা পাঁচিলের বাইরে নামানো হলো। এবার এই দলটাকে বাড়ির চারদিকে যে উঁচু পাঁচিলটা আছে সেটা পেরোতে হবে। এখন তাদের এই বিরাট পাঁচিল ভেদ করতেই হবে।
স্পেশাল লোক আছে যাদের কাছে এই রকম দেয়াল উড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে যাবার সরঞ্জাম থাকে। দুটো দল এক জোট হয়ে ২৪ জনের দলটা বিন লাদেনের ডেরায় হানা দিল, প্রত্যেকের আলাদা আলাদা দায়িত্ব।
তাদের সংগে থাকে বৌডিকস, কমিউনিকেটরস, ব্রিটলস, ইন্ট্রাপরেটরস, ল্যাংগুয়েষ্ট আর হয়তো কয়েকজন ইনটেলিজেন্স টেকটিশিয়ানস। কমান্ডোদের কাছে ক্যামেরা আছে যা পুরা ঘটনাটাই রেকর্ড করছে তবে সেই ভিডিও রিলিজ করা হয়নি। প্রত্যেকে শরীরে হাল্কা বর্ম পরেছে চোখে গগলস যার সাহায্যে তারা অন্ধকার এবং আলোতে দু' অবস্থায়ই দেখতে পাচ্ছে এবং সংগে রয়েছে অনেক ধরনের অস্ত্র।
বিশেষ করে স্পেশাল সাইস সম্পন্ন রাইফেলস, আরো একটা জিনিস সম্ভবত ছিল সেটা হলো নতুন ধরনের গ্রেনেড লঞ্চার যা প্রোগ্রামএবল ফিউজের সাহায্যে ফায়ার করা যায়। যেমন ধরুন কেউ কোন দেয়াল বা দরজার পিছনে লুকিয়ে থাকে তাহলে এমন ছোটো গ্রেনেড আপনি ফায়ার করতে পারেন যাতে প্রতিপকে আঘাত করবে। এই স্ট্রাইক টিমে এমন একজন রয়েছে যে অন্য সবার থেকে একেবারেই অন্যরকম। প্রশিন প্রাপ্ত কুকুর।
কুকুর দুটো কাজে ব্যবহার করা হয়, এক- এরা সহজেই বিস্ফোরক সনাক্ত করতে পারে, দ্বিতীয়ত যদি সেখানে আন্ডার গ্রাউন্ড বাঙ্কারস থাকে তাহলে কুকুরই জায়গাটা চিনিয়ে দিবে।
ওরা দু'দলে ভাগ হয়ে গেল, একদল তিনতলা বাড়িটায় হামলা করল। দ্বিতীয় দলটা গেষ্ট হাউসের দিকে এগিয়ে গেল। এই দলটা তখনই সামান্য গোলাগুলির মুখোমুখি হলো। ওখানে একজন বিন লাদেনের সংবাদ বাহক একে-৪৭ দিয়ে গুলি করছিল। সীলরা সংগে সংগে তাকে গুলি করে মেরে ফেলল সেই সংগে তার স্ত্রীকেও তারা মেরে ফেলল।
এদিকে প্রধান বাড়িটার সদর দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। তাদেরকে দরজাটা হয় ভেঙ্গে ফেলতে হবে আর না হয় বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে হবে। তারা দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়ল বাড়ির এক তলায় আর দেখল একটা লোক তার হাত পেছনে, তাকে গুলি করা হলো, দেখা গেল তার কাছে কোন অস্ত্র নেই।
মারাত্মক ফোর্স ব্যবহার করা যথেষ্ট যুক্তি যুক্ত; তুমি কি আমার বা অন্যের পক্ষে ক্ষতিকারক? যদি তাই হয় তাহলে মরতে তোমাকে হবেই।
একটা ড্রোন ওয়াসিংটনে অপারেশনের প্রত্যোটা মূহূর্তের ছবি পাঠাচ্ছে, কিন্তু এ ক্যামেরা দেখতে পাচ্ছে না যে বাড়ির ভেতরে কি হচ্ছে;
নিঃশব্দে সময় পেরিয়ে গেছে, হোয়াইট হাউস তখনো সম্পূর্ন অন্ধকারে।
সবাই তখন রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে যাতে সবার অজ্ঞাতসারে পরিকল্পনা অনুসারে কাজটা ঠিকমতো হয়। তবে সীলদের কথা অজানা রইলো না। কাছেরই একজন বাসিন্দা সোয়েব অথার একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার টুইটারে হেলিকপ্টার আর শব্দের কথা জানালো। সে বুঝতেই পারলো না আসলে কি হচ্ছে; সে লিখল হেলিকপ্টার রাত একটার সময় এবোটাবাদের উপর ঘুরছে এমন ঘটনা বিরল। কিছুনের মধ্যেই পাকিস্থানের কর্তৃপ সব জেনে যাবে আর স্থানীয় পুলিশ বা মিলিটারী তৎপর হয়ে উঠবে।
স্ট্রাইক টিমকে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে, বিন লাদেনের বাড়ির ভেতরে কমান্ডোসরা এক ঘর থেকে অন্য ঘরে তল্লাশী চালাচ্ছে সব জায়গায় শুধু মহিলা আর বাচ্চা। একদল তাদের বেঁধে রাখছে কিন্তু অন্য দলটা তাদের লক্ষে অটল “ওসামা বিন লাদেন”।
তারা পরিকল্পনা অনুসারে এগিয়ে চলল, বাড়িটাতে তল্লাশি চালাতে লাগল খুঁজতে লাগল কোথায় বিন লাদেন; এতো ক্ষীপ্রগতিতে মরিয়া হয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে একটাই তাদের লক্ষ্য, টার্গেটকে ধরতেই হবে। কিন্তু বিন লাদেনের বাড়িতে সারি সারি দরজা, যা এই ধরনের তল্লাশিকে ব্যর্থ করতে আর শত্রুকে দিশেহারা করতে বানানো হয়েছে। কয়েকটা দরজাতে ইট দিয়ে গেঁথে বন্ধ করা।
তা যদি বাড়ির অন্য অংশে যেতে হয় তাহলে এই দেয়ালগুলো ভেঙ্গে এগোতে হবে। অনেক ফলস দরজাও ছিল, সবাইকে বলা হয়েছিল এগুলো অনেকটা গোলক ধাঁধাঁর মতো। এটাকে বলা যায় কোন তর্কের অবকাশ নেই; স্পেশাল অপারেশনের লোকেদের কঠিনতম আক্রমন।
দলের সদস্যরা সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় উঠতে লাগল, প্রচন্ড বিপদ জনক, এটাই তারা এঁড়াতে চেয়েছিল। সবচেয়ে বড় সমস্য হলো তারা উপর দিয়ে নীচে নামছিলো না, তার মানে লড়াই করতে করতে তাদের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে হবে আর এটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ।
তিনজন সীল সিঁড়িতে ওসামা বিন লাদেনের এক ছেলেকে দেখতে পেল, এতটুকু দ্বিধা না করে ওরা ওকে মেরে ফেলল। ছেলেটার কাছে কোন অস্ত্র ছিল না। ঠিক ঐসময় ওসামা বিন লাদেন তিন তলায় বেড রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দার রেলিং দিয়ে ঝুঁকে দেখছিল যে নীচে কিসের শব্দ হচ্ছে; সীল বিন লাদেনকে দেখতে পেল, তাদের বন্দুক দিয়ে ফায়ার করল। বিন লাদেন চট করে সরে গেল, সীলরা মিস করল তাকে। সে ঢুকে গেল বেডরুমে, এই প্রথমবার কমান্ডোসরা নিশ্চিত হলো যে বাড়ির ভিতর বিন লাদেন আছে।
সিআইএ ডিরেক্টর প্যানেটা হোয়াইট হাউস সিসুয়েশন রুমে জানিয়ে দিল যে আমরা জিরোনিউমোরল ভিজুয়াল পেয়েছি যা ওসামা বিন লাদেনের কোড নেম।
২০০১ এর ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার পেছনে যে লোকটার হাত রয়েছে এবং যাকে প্রায় এক দশক ধরে আমেরিকার সরকার মরিয়া হয়ে খুঁজে চলেছে আজ সে নাগালের মধ্যে। এক নিমিষের মধ্যে সীলরা তিন তলায় উঠে এল, যখন তারা তিন তলায় প্রায় পৌঁছে গেছে, চোখের সামনেই তৎক্ষনিক তিন তলার মেঝেতে দুটো বাচ্চা মেয়ে বেড রুম থেকে বেরিয়ে চিৎকার করে চলে গেল। একজন নেভী সীল ঝট করে বাচ্চা মেয়ে দুটোকে লাইন অব ফায়ার থেকে সরিয়ে দিল। অন্য দুজন সীল বিন লাদেন ও তার স্ত্রীর দিকে এগিয়ে গেল, একজন সীল সংগে সংগে ওসাম বিন লাদেনের স্ত্রীর পায়ে গুলি করল, অন্যজন সীল প্রায় একই সংগে গুলি চালাল একটা বুকে আর একটা সরাসরি গিয়ে লাগল বিন লাদেনের মাথায়।
আমেরিকার কাছে পৃথিবীর সবথেকে ভয়ংকর সন্ত্রাসীর প্রাণহীন দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তার বিশ্বস্ত সঙ্গী একে-৪৭ আর একটা পিস্তল তার পাশেই পড়ে আছে। আগেই দাবী করা হয়েছিল যে ওসামা বিন লাদেনকে মৃত বা জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করতে হবে কিন্তু স্যুট অন সাইট কিল মিশনে এটা ঘটে গেল।
কমান্ডোসরা প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে এই কম্পাউন্ডের ভেতরে রয়েছে। কিন্তু অভিযান এখনো শেষ হয় নি।
মৃত দেহ সনাক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিন লাদেনের মৃত দেহটা একটা বডি ব্যাগে ভরে নীচে নামানো হলো।
এরি মধ্যে কোন এক সময় তার মুখের ফটো তোলা হয় এবং বিন লাদেনের স্ত্রীদের মধ্যে একজন তাকে সনাক্ত করে। বিন লাদেনের উচ্চতা মাপার জন্য মনে করা হয় যে সে ছয় ফুট চার ইঞ্চি লম্বা ছিল। ছয় ফুল লম্বা একজন সৈনিক তার মৃত দেহের পাশে শুয়ে পড়ে তার মাপ নিল কারণ তাদের কাছে মাপার কোন ফিতা ছিল না।
মৃত দেহটা আরো কয়েক ইঞ্চি লম্বা, দলের একজন সদস্য দেশের উদ্দেশ্যে রেডিওতে ঘোষনা করল;
’জিরো নিমো, জিরো নিমো, জিরো নিমো’
ডিরেক্টর প্যানেটা হোয়াইট হাউসে খবর পাঠাল- ’জিরো নিমো, ইকেআইএ (এনিমি কিলড ইন আ্যাকশান)
যখন সবাই প্রথম কথাটা শুনে বিশেষ করে ঐ জিরো নিমো শব্দটা ’আর সে নিহত’ সেটা ছিল বিন লাদেনের অন্তিম অধ্যয়ের প্রথম সূচনা।
কিন্তু হোয়াইট হাউস তখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নই যে সত্যিই বিন লাদেন মারা গেছে কি না; একটা ইন্টেলিজেন্স টিম পুরো বাড়িটাতে যতো কম্পিউটার ইক্যুইপম্যান্ট, জার্নালস, পার্সোনাল আইটেমস ছিল সব নিয়ে গেল। যে দুটো হেলিকপ্টার অপক্ষা করছিল তার একটাতে বিন লাদেনের মৃতদেহ উঠানো হলো। একটা হলো ওয়ার্কিং ব্লাক হকস আর অন্যটা সিনো যেটা সেই ক্ষতিগ্রস্থ ব্লাক হকের জায়গায় আনা হয়েছিল। এই আটকে পড়া হেলিকপ্টারটাতে শক্তিশালী বিষ্ফোরক ছিল।
অন্য হেলিকপ্টার গুলো উড়ে যাবার পর সেটাকে ডেটোনেট করা হলো।
নিরাপদ উচ্চতায় ওঠার পর নিরাপদ দুরত্বে যাবার পর ওটা উড়িয়ে দিতে পারে। এই বিস্ফোরকে একদিকে যেমন হেলিকপ্টারের কিছু রহস্য চিরকালের মতো ধবংস হয়ে গেল অন্য দিকে তা পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষকেও সতর্ক করে দিল।
এই প্রোশনটা এতই শক্তিশালী ছিল যে ঐ অকেজো হেলিকপ্টারটার টেইল রোটার বেসড কিছুটা দুরে ছিটকে পড়ল, তারা সবকটাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছিলো, আটত্রিশ মিনিটের মধ্যে পুরো স্ট্রাইক টিম পুরো ঘটনাটা ঘটিয়ে ফেলল। প্রত্যেকে জীবিত ও সুরক্ষিত, ঐ বাড়িটাতে প্রায় এক ডজন মহিলা আর শিশুও রয়েছে।
চারটে মৃত দেহ ওখানে পড়ে আছে, তাদের সংগে এখন একজন অতিরিক্ত যাত্রী রয়েছে তাদের ধারণা এই যাত্রীটি হলো ওসামা বিন লাদেনের প্রাণহীন দেহ।
বিস্ফোরনের পর পাকিস্তানিরা সতর্ক হয়ে যায়, আর এয়ারফোর্সের কয়েটা জেট দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। পাকিস্তানিরা যদি জানে যে ওগুলো আমেরিকার হেলিকপ্টারস তাহলে তারা হয়তো এমনি গুলি চালাবেনা তবে জোর দিয়ে বলাও যায় না যে ঠিক সেটাই ঘটবে। তাই এই ভয়টা কেটে গেলেই সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচবে। ওরা তখন ভাবছে আমরা পেরেছি, সবকিছু ঠিকঠাক আছে।
এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর লোকটা এখন আমাদের হাতের মুঠোয়; ওরাও আনন্দে হাত মিলিয়েছিল তবে যতন না ওরা হেলিকপ্টারে করে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে ততক্ষন হাত মেলাইনি।
এদিকে সিচুয়েশন রুমে রাষ্ট্রপতি ওবামা সেই শব্দগুলিউচ্চারণ করলেন যার অপোয় সবাই ছিল। ’আমরা ওকে পেয়েছি’ এবার বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমান করতে হবে মৃতদেহটা প্রকৃত ভাবেই ওসামা বিন লাদেনের; ইউএস অফিসিয়ালদের কথা অনুসারে দুটো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। প্রথম ফেশিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজি যা ইউনিক ফেশিয়াল ক্যারেকটারিস্টিকস মিলিয়ে দেখে। ফেশিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে নিয়মিত ভাবে সিআইএ সম্ভাব্য আলকায়দা সন্ত্রাসবাদীদের সনক্ত করে।
আমার যতদুর ধারণা সিকিউর ফোনের মাধ্যমে সিআইএ হেড কোয়ার্টারস আর হোয়াইট হাউসে বিন লাদেনের ছবি পাঠানো হয়। এই সফটওয়্যারটা দেখে মুখের ডায়মেনসনস, মুখের এমন কিছু পয়েন্টস যেমন- চোখ, নাক, থুতনি। ভাল করে খতিয়ে দেখে যে যার ছবি বলে মনে করা হচ্ছে সত্যিই কি এটা তার ছবি? লাদেনের মুখটা তিগ্রস্থ হওয়া সত্বেও অফিসিয়ালরা পঁচানব্বই শতাংশ ম্যাচ করতে সম হয়। কিন্তু ভুলের কোন সুযোগ নেই তাই দ্বিতীয় আরো নির্ভুল পদ্ধতিতে সনক্ত করা হয়। সেই পদ্ধতির নাম ডি,এন,এ টেস্টিং।
এমন সব ইক্যুইপমেন্টস ব্যবহার করা হয় যা চট করে বিশ্লেষন করতে পারে। তবে অবশ্যই রেজুলেশন আধুনিক ইক্যুইপমেন্টের মতো ততো হাই নয়। যা সাধারনত যেকোন ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে দেখা যায়। তবে কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেই রকম ফলাফলও পাওয়া যায়। আমার মনে হয় এখানেও ঠিক তাই হয়েছিল।
কারণ আমেরিকার রাষ্ট্রপতি কখনোই ঘোষনা করবেন না যে ওসামা বিন লাদেন মৃত যতন না তিনি একেবারে ভালরকম ভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন। এই ত্রে ৯৯.৯% নিশ্চয়তা থাকলেও ০.১% অনিশ্চয়তাও আছে কারণ সরকারের কাছে বিন লাদেনের ডি,এন,এর আগের কোন স্যাম্পল নেই। সুতরাং তার কোন নিকট আত্মীয়ের শরীর থেকে নেওয়া ডি,এন,এর সংগে তুলনা করতে হবে। এফবিএই যাদের পরীক্ষা করেছে তাদের সবাই হাফ সিভলিক মানে ওসামার সৎ ভাই তাই আমরা ৯৯.৯% স্টাটিস্টিকস পাচ্ছে বলে ধারণা।
১লা মে রাত ১১:৩৫ মিনিট, রবিরার; রাষ্টপ্রতি ওবামা সেই অবিশ্বাস্য ঘোষনাটি করলেন।
“আজ রাতে সমস্ত আমেরিকা বাসী আর বিশ্বের সামনে ঘোষনা করছি যে ইউনাইটেড স্টেটস একটা অপারেশন চালায় যাতে আল-কায়দার লিডার ওসামা বিন লাদেন নিহত হয়েছে”
সারা আমেরিকা মেতে উঠল, সবাই জানতে উৎসুক যে কিভাবে এই অভিযান সংঘঠিত হয়েছে? কিন্তু সাধারন মানুষের অজান্তে মিশনের শেষভাগ তখনো নিঃশব্দে সম্পাদিত হচ্ছে, সীল বিন লাদেনকে নর্থ এ্যরাবিয়ান সীতে ইউএসএস কালবেনসনে নিয়ে আসল। তাকে গুলি করে হত্যা করার বার ঘন্টার মধ্যে ইসলামের নিয়মানুসারে তার সমূদ্রে সলিল সমাধি হলো। একটা ফ্লাট বোর্ডের উপর বডিটা রেখে আর ঐ মৃত দেহটা সমূদ্রের জলে ফেলে দেওয়া হয়। ওরা তাকে অপসরে মানে সমূদ্রে সমাধি দিল, কারণ এমন কোন সমাধি ত্রে নেই, এমন কোন জায়গা নেই, কোন দেশ নেই যারা তার দেহটা রাখতে চাইবে বা স্মৃতি সৌধ গড়ে তুলবে যা ভবিষ্যতে জেহাদীদের কর্মক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে।
সমূদ্রে ফেলে দেওয়া তাতে জড়ো করার মতো কোন জায়গা আর থাকল না।
এই অভিযানে সাফল্য বিন লাদেন হত্যার চেয়েও অনেক বড়। বি-২৭ তল্লাশীতে ইন্টেলিজেন্স গুপ্তধনের যে সন্ধান পেয়েছে তার মধ্যে আছে ১০টা হার্ড ড্রাইভস, পাঁচটা কম্পিউটার, একশটার বেশী স্টোরেজ ডিভাইস, ডিস্ক, ডিভিডি আর থাম্বড্রাইব। আমেরিকার অফিসিয়ালরা বলছে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেপ্টেম্বর ১১এর এ্যটাকের পর এতোবড় তথ্যপ্রমান গোয়েন্দা বিভাগের হাতে আসেনি। আর এই সব তথ্যপ্রমান থেকে সবচেয়ে বড় যে কথাটা জানা গেছে সেটা হলো, আইমিনাল জাওয়াহেরীর বর্তমান অবস্থান যে এখন আল-কায়দাদে দু’নম্বর পজিশনে আছে।
আমেরিকার অফিসিয়ালরা বলছে কয়টা লিখিত ও ডিজিটাল মেটেরিয়াল পরীক্ষা কারার পর যার মধ্যে বিন লাদেনের জার্নালস আর আল-কায়দার পরবর্তী পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। যেমন ইউএস রেলপথ এ্যটাকের পরিকল্পনার কথা, সিআইএর কাছে এছাড়াও যা আছে তাকে ওরা বলে অনেক ভিডিও।
৭ই মে সরকার বিভিন্ন রকমের পাঁচটা ভিডিও রিলিজ করল যার অডিও মুছে দেওয়া হয়েছে।
যার মধ্যে আছে আগের আন রিলিজ প্রবাগান্ডাটেপস যা বিন লাদেন ঐ বাড়িতে বসেই বানিয়েছিল, আর একটা ভিডিও যেখানে দেখা যাচ্ছেযে বিন লাদেন নিজেকে টিভিতে দেখছে। কিন্তু যেসব ডকুমেন্টস আর কম্পিউটার ফাইল পাওয়া গেছে সেগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন।
আজকের হার্ড ড্রাইভে কতটুকু ইনফরমেশন স্টোর করা যায়, একজন সীল অপারেটরের কাছে যে হার্ডড্রাইভ থাকে আশাকরি তা সব আল-কায়দাকে ডিজম্যান্টাল করে দিতে পারে। আল-কায়দা স্ট্রাকটারের মাধ্যমে অনেক কিছুই জানতে পারা যাবে, যা নিয়ে শুধু কল্পনা জল্পনাই করা হতো কিন্তু জানার উপায় ছিলো না।
সমাপ্ত । । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।