বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের তিন সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘একটি কর্মপরিকল্পনা’ প্রকাশ করেছে; যাতে শ্রম, অগ্নি ও ভবন পরিদর্শকের সংখ্যা বাড়াতে এবং তাদের প্রশিক্ষণ উন্নত করতে বলা হয়েছে।
এতে শ্রম, অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তা মান লঙ্ঘনকারী পোশাক কারখানাগুলোর রপ্তানি লাইসেন্স কেড়ে নেয়াসহ আরো কঠোর শাস্তি দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর পরিদর্শনের তথ্য-প্রতিবেদন তুলে ধরতে একটি পাবলিক ডাটাবেইজ তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়, যাতে প্রধান পরিদর্শকের নামসহ বিধিলঙ্ঘন, তার জন্য শাস্তি এবং সংশোধনের তথ্যও প্রকাশ করা হবে।
গত বছরের নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে শতাধিক এবং এ বছরের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনার পর জুনের শেষে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর থেকে প্রকাশিত ওই কর্মপরিকল্পনায় শ্রমিকরা যাতে অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তা এবং শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক তথ্য নামপ্রকাশ না করে দিতে পারে তার জন্য ‘হট লাইনসহ একটি কার্যকর অভিযোগকেন্দ্র স্থাপনের’ কথা বলা হয়েছে।
পোশাক শিল্প বিবেচনায় নিয়ে ওবামা প্রশাসন বলেছে, কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার এবং দলবদ্ধভাবে দরকষাকষির অধিকার না দেয়া নিয়ে তৈরি হওয়া উদ্বেগ নিরসনে বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
মালিকদের প্রতিশোধ নেয়া থেকে ট্রেড ইউনিয়নের সমর্থকদের রক্ষা এবং বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর সংগ্রহের ভিত্তিতে দ্রুত ইউনিয়নের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
শনিবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একটি কোম্পানির শ্রমিকরা ইউনিয়ন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ৩০ শতাংশ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে শ্রম দপ্তরে জমা দেয়ার পর তারা ওই তালিকা কোম্পানির কাছে দিয়ে দেয়। এরপর কোম্পানির মালিক স্বাক্ষরকারী শ্রমিকদের মধ্য থেকে অনেককে ছাটাই করেছে বা স্বাক্ষর প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে, যাতে প্রয়োজনীয় স্বাক্ষরের শর্ত পূরণ হয়।
একারণেই চল্লিশ লাখ শ্রমিক নিয়ে চালু সাড়ে পাঁচ হাজার পোশাক কারখানার মধ্যে মাত্র কয়েকটির বেশি কারখানায় ইউনিয়ন নেই বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
সম্প্রতি সরকার শ্রম আইনের যে সংশোধন করেছে তাতে শ্রমিকদের পক্ষে ইউনিয়ন করা আরো সহজ হবে বলে কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে।
সংশোধিত আইনে ইউনিয়ন সমর্থকদের তালিকা কারখানা মালিকদের না দিতে শ্রম অধিদপ্তরকে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরেও শ্রমিকরা কিছু ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছে, যেগুলো ইউনিয়ন গঠনের জন্য বাধা হবে দাঁড়াবে বলে মনে করছে তারা।
প্রত্যেকটি কারখানায় ইউনিয়ন গঠনের বর্তমান অবস্থা ও ফলশ্রুতি সম্পর্কে তথ্য এবং ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়ায় নেয়া সময় ও কোনোটা বাতিল করা হলে তার কারণসহ সরকারিভাবে নিবন্ধনের তথ্য সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলগুলিতে শ্রমিকরা যাতে ইউনিয়ন করার পূর্ণ স্বাধীনতা পায় তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
ওবামা প্রশাসন আরো বলেছে, গত বছর নিহত শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বাংলাদেশ সরকারকে ‘স্বচ্ছ তদন্ত’ শুরু করতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তারা ওই ঘটনা আড়াল করার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে উল্লেখ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর খবরের কথা বলা হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।