বাংলার আলো-জলে ধূলো মেখে বেড়ে ওঠা মুক্তি প্রহসনের চুড়ান্ত রায় আসার আগেই সহপাঠীদের ভালোবাসা ও মানবাধিকার কর্মীদের মানবিক শ্রম ফিরিয়ে এনেছে নির্দোষ কাদেরের জীবন। অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিমাতা সুলভ আচরণ ও পুলিশের ষঢ়যন্ত্র আটকে রাখতে পারেনি নির্দোষ কাদেরকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ধমক ও পুলিশের চোখরাঙ্গানী উপেক্ষা করে সহপাঠী, পরিবার ও মানবাধিকার কমিশনের অদম্য প্রচেষ্টায় নিরপরাধ কাদের জামিনে মুক্তি পেল ক্ষত-বিক্ষত হয়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাদেরের কয়েকজন সহপাঠী বলেছেন , ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে আমরা ঢাবি প্রক্টরের কাছে গেলে তিনিও কাদেরকে ডাকাত আখ্যায়িত করেন এবং আমাদেরকে ধমক দিয়ে বিদায় করে দেন। কাদের সম্পর্কে আমরা কয়েকবছর ধরে জানি- সে ও রকম ছেলে না-- এসব নিশ্চয়তা দিয়ে কাদেরকে বাঁচানোর জন্য বারবার অনুরোধ করলে প্রক্টর তখন বলেন- ব্যাপরটা পুলিশ কেস।
ও যদি নির্দোষ হয় তাহলে নিশ্চই ছাড়া পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু করার নাই। ’
এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক এ ব্যাপারে প্রক্টরের ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, ‘ কাদেরের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা জানতে চাইলে প্রক্টর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান এ ঘটনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জ্বাজনক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ’ কোন তদন্ত না করেই প্রক্টর কাদের সম্পর্কে ওই সাংবাদিকের কাছে এভাবে নেতিবাচক কথা বলায় তিনি হতবাক হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।
এত সব দুঃখের মধ্যে আপাদত এটাই হলো সুখের কথা -কাদের বেঁচে ফিরেছে মুক্ত আলোতে।
ঢাকা কলেজের ছাত্র মোমিনের মতো ওসির হাতে মরতে হয়নি কাদেরকে। তবে জোর করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেয়ার জন্য ওসি নিজের হাতে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে কাদেরকে।
জামিনে প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পাবার পর মায়ের ঘাড়ে ভর দিয়ে বের হয়ে এসে কাদের বলেন, ‘ডাকাতিতে আমি জড়িত এমন মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য বারবার চাপ দেয়া হয় আমাকে। ওসির রুমে নিয়ে ওসি সহ কয়েকজন পুলিশ আমাকে অনেক পেটায়। তারপর ওসি নিজের হাতে চাপাতি দিয়ে আমার পায়ে কোপ দেয়।
তীব্র রক্ত স্রোতে রুমের মেঝে ভিজে যায়। একটা সময় আমি ভাবতে শুরু করি আমি হয়তো আর বাঁচবো না। ’
সেদিন রাতে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ফিরছিল কাদের। তার ছোট বোন একটা বৃত্তি পেয়েছে। সেটার কিছু আনুষ্ঠানিকতার জন্য সারাদিন বোনকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করে সে।
তারপর রাতের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নির্ভার হয়ে ফিরছিল আপন নীড়ে , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।
তারপর গ্রেফতার সম্পর্কে কাদের বলেন, ‘ দুদক কার্যালয় এলাকা পার হয়ে আসার সময় হঠ্যাৎ পিছন থেকে থামতে বলা হয় আমাকে। কয়েকজন পুলিশ এসে আমাকে ডাকাত বলে জোড় করে একটি গাড়িতে তোলে। আমি বারবার আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় দিয়ে বলেছি আমি ছাত্র , ডাকাত না। কিন্তু তারা তাদের কথামতো স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য নির্দয়ভাবে পেটায় আমাকে।
’
আসামী হিসেবে কাদেরের নাম লেখার সময়ও নাটক করেছে পুলিশ। কাদেরের পরিচয় জানতে চাইলে কাদের তার বর্তমান আবাসস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা দিলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছেন কাদের। এ ব্যাপারে কাদের সাংবাদিকদেকে বলেন, ‘ ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় দেয়ার পর পুলিশ বলেছে- এ পরিচয় বাদ। তোর গ্রামের বাড়ির ঠিকানা বল। ’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ কেউ নিরপেক্ষভাবে এগিয়ে না এলেও সহপাঠীদের চেষ্টা ও দেশের এক শীর্ষ জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য আহমদ যাইফ একটি সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এ ব্যাপাটির মুখোশ উম্মোচন করে সচেতন করে তুলেছে দেশবাসীকে।
তারপর মানবাধিকার কমিশনের সরাসরি হস্তক্ষেপ। সচেতন নাগরিকদের যৌথ প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গেছে ছাত্র কাদেরকে ডাকাত বানানোর জন্য পুলিশের নাটকীয় একটি নিষ্ঠুর অপচেষ্টা।
নির্দোষ ছেলের জামিনে মুক্তির পর আবেগ আপ্লুত মা ছেলের পায়ের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে শুধু সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ন্যায় বিচার চেয়েছেন।
পরিবারকে সময় দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সময় পুলিশ তুলে নিয়ে যায় তাকে। পুলিশী ষঢ়যন্ত্রের নাটক শেষে বিপর্যস্ত কাদের ফিরে এসেছে মায়ের কাঁধে ভর করে।
সে বেঁচে আছে এখন পরিবারের সময় নিয়ে।
পুলিশ কি এখনো নতুন কোন গল্প বানানোর ষঢ়যন্ত্র করছে !! ঢাবি প্রক্টর নিশ্চই এখন দ্বিতীয়বারের মতো লজ্জ্বা পাচ্ছে..!!
(ঢাবি প্রশাসনের এই দায়িত্বহীন আচরণে এই প্রতিষ্ঠানের একজন ছাত্র হিসেবে আমি লজ্জ্বিত-ধ্রুব)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।