আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাতু মালয়েশিয়া - ২

পর্ব-১ Click This Link প্রথম সপ্তাহ রিজ কার্লটনে আমাদের ট্রেনিং ভেন্যু প্রথম সপ্তাহের জন্য পাঁচতারা রিজ কার্লটনে। বুকিত বিনতাং হোটেলেরও মেলা। এর সাথে লাগানো জে ডাব্লিউ ম্যারিয়টও একই মালিকের। বলা বাহুল্য মূল মালিক চাইনিজ মালয়েশিয়ান। রাস্তার উল্টো পাশে ওয়েস্ট ইন।

সব কয়টাই কিং সাইজের। ট্রেনিং পরিচালনা করেছে কানাডিয়া পেট্রোলিয়াম ট্রেনিং ইন্সটিটিউ। হোটেল লবিতে আমাদের স্বাগত: জানালেন ইন্সটিটিউটের প্রেসিডেন্ট জর্জ সাদারল্যাণ্ড। ভদ্রলোক জিওলজিস্ট। আর রিসোর্স পারসন ডেভিড মরিসন ম্যাকলেমেন্ট।

ভদ্রলোক মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ার। মূলত: আইরিশ। কানাডায় সেটেল্ড। পাসপোর্ট অবশ্য দুই দেশ থেকেই একখানা করে বাগিয়েছেন। তেল গ্যাস সেক্টরে প্রায় ৪৫ বছরের পদচারণা।

মোটাসোটা, রসিক লোক। কিন্তু পাঠ্য বিষয়গুলো বড়োই খটোমটো টাইপের। যেমন- পাইপলাইন স্থাপনের জন্য মালামাল ক্রয়ের কৌশল, পাইপলাইন কোম্পানীর সাথে উৎপাদন কোম্পানী আর মার্কেটিং কোম্পানীর চুক্তি, আন্তর্জাতিক আইন কানুন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকি মোকাবেলা ইত্যাদি। সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ক্লাস। ঘোরার দফা ঠাণ্ডা ! বুকিত বিনতাং ছাড়া বাকীরা রাত ৮টা থেকে ঝাঁপ ফেলতে শুরু করে।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থানতো রাতে খোলা থাকে না ! ফলে বুকিত বিনতাং এলাকার শপিং মলে উইণ্ডো শপিং আর মানুষ (এর মধ্যে নানা দেশের সুন্দরীরাও আছেন) দেখা ছাড়া কি আর করবো ? ইতালীয় রেস্তোরাঁ দুপুরের খাবারের জন্য হোটেল রিজ কার্লটন আর ম্যারিয়টের নীচে ভাগ ভাগ করে ওই মালিক প্রায় দেড় ডজন রেস্তোরাঁ খুলেছেন। প্রথম দিন গেলাম ইতালীয় রেস্তোরাঁয়। ঢোকার মুখে লেখা আছে ''হালাল''। মালয়েশিয়া মুসলিম প্রধান দেশ। হালাল লেখা ছাড়া অনেকেই ঢুকবেন না।

হালাল দেখে খুশী মনে ঢুকলাম। খাবার দেখে তো ঘুম হারাম হবার দশা। নাম মনে নেই, কারণ সব ইতালীয় নাম। সৈয়দ মুজতবা আলী কথিত রোসেত্তি ( পোলাও) ছিলো না এটা নিশ্চিত। স্যুপটা কেমন জানি লাগলো।

তবু গিলে ফেললাম। হেবি সাইজের অচেনা এক মাছের টুকরা (তিন শ গ্রামের বেশী হবে) সিদ্ধ করে প্লেটে দেয়া। সাথে পেঁয়াজ কুচি, সালাদ, আর মরিচ গুঁড়া। গন্ধেই মাথানষ্ট ! আরেকটা বাটিতে কিছু আলু সিদ্ধ ছিলো। সেটা দিয়েই সারলাম লাঞ্চ।

ডেজার্টও সেই রকম ! কয়েক পিস বরফিত আইসক্রিম। চার কোনা পিস করে কাটা। কঠিন শক্ত। সকাল বিকালের চা/কফি সকাল সাড়ে ১০টা আর বিকাল সাড়ে ৩টায় ব্রেক। ক্লাস রুমের ভেতরেই হালকা নাস্তা আর চা/কফির আযোজন।

সাদারল্যাণ্ড সাহেব অদ্ভুত মেন্যু পছন্দের জাদুকর। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কফি ভরসা। চা মুখে দেবার মতো মনে হয়নি কখনো। মাঝে মাঝে বিস্কুট বা কেক পেলে বর্তে যাই। কেক নিয়েও হাঙামা কম না।

কেকের ঘাড়ে আধখানা স্ট্রবেরী চাপানো থাকে। স্ট্রবেরীর ওপর মন উঠে গেছে এ যাত্রা। ওয়েলকাম ডিনার ! রিজ কার্লটনে ওয়েলকাম ডিনারের ব্যবস্থা হলো। আলো আঁধারীতে স্বপ্নিল আয়োজন। সাদারল্যাণ্ডের সাথে তার বউও আছে।

বউকে দেখলঅম খুব তেলাচ্ছে। হানি ছাড়া কথাই বলে না। বউয়ের গুনের ওপর লম্বা একটা লেকচার দিলেন। বউ গানের মানুষ। গিটারও বাজান।

সে বাজনা শোনার ভাগ্যও হয়েছে। সে কাহিনী পরে বলা যাবে। শুরুতে লেমন ড্রিঙ্কস। এরপর এলো লালপানি। রুবাই লিখে ভরিয়ে ফেললেও লালপানির ট্রেনিং আমার হয়নি।

চাইলাম স্প্রাইট। স্বল্পবসনা চীনা সাকি অবাক হলো। স্প্রাইটের পর ফ্রেঞ্চফ্রাই, স্যুপ আর গোলগাল বনরুটি এলো। বনরুটি আমার চিরকালের ফেভারিট। তারপর এলো বহুল প্রতীক্ষিত মূল ডিশ।

অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানী করা ভেড়ার মাংস। হাফ কেজির বেশী হবে এমন একটা পিস হালকা আঁচে প্রিল করা বলে মনে হলো। সাথে চিকন করে কাটা গাজর আর পেঁয়াজ গাছের গোড়াসহ প্রায় আস্ত বডি। ভেড়ার প্রতি একটা বিরূপ মনোভাব আমার আছে। প্লেনে সবসময় ভেড়ার বদলে মুরগী চেয়ে নিই।

সবার দেখাদেখি আমিও অগত্যা ভেড়ার পিসের ওপর ছুরি আর কাঁটা চামচ নিয়ে অভিযান শুরু করলাম। কাটার পর দেখি ভেতরটা হালকা হলদে। একটু লবন ছিটা দিয়ে মুখে পুরলাম। পুরেই চেহারা বদলে গেলো। জঘন্য অবস্থা ! কোন রকমে গিলে ফেললাম।

তারপর প্লেটে তাকিয়ে মুখ ভচকে গেলো। কাটা জায়গা থেকে রক্ত বের হয়ে প্লেট ভেসে যাচ্ছে ! ভেতরটা একেবারে কাঁচা ! ওখানে রনে ভঙ্গ দিলাম। ডেজার্ট ছিলো আইসক্রিম। সেটাই ভরসা। কোন মতে ডিনার সেরে হোটেলে ফিরলাম।

একটু পর দেখি ক্ষুধা লেগেছে। বাইরে গিয়ে একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট থেকে মুরগী আর সাদাভাত খেয়ে ওয়েলকাম ডিনারের পাট শেষ করলাম ! (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।