আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধারাবাহিক উপন্যাস, পথে পথে-৮

View this link দেখতে দেখতে দারুস সালাম মাদ্রাসার সামনে এসে উপস্থিত হয় দু’জন। বেশ লোক জড়ো হয়েছে। সবাই ইন্টারবিউ দিতে এসেছে। হারুন সাহেব বলেন, ‘ আসুন একটা চেয়ারে বসি। ’ মোকলেস চেয়ারে বসে।

মনে মনে ভাবে এদেশের বেকার সমস্যাটা কতো প্রকট। একটা চাকরির খবর শুনলেই মানুষের ঝাক সেখানে হাজির হয়। দিনের পর এভাবে হাজির হওয়া আর ইন্টারবিউ দেওয়া চলতে থাকে। চাকরি সে যেন সোনার হরিণ। প্রায় একঘন্টা পর হারুন সাহেবের ডাক পড়ে।

মোকলেসও হারুন সাহেবের সাথে ওঠে। ভেতরে প্রবেশের আগে একজন বাধা দেয়, ‘ দুইজন যাচ্ছেন কেন?’ ‘ আমি ইন্টারবিউ দিতে আসিনি। ’ কথা বলে মোকলেস। ‘ তাহলে ভেতরে যাওয়ার দরকার কি?’ ‘ দরকার আছে। আপনি কি আমাকে চেনেন?’ অল্প বয়স্ক ছেলেটা ভয় পায়।

ভাবে হয়তো কোন পাওয়ারফুল কোনো পারসন। এরকম একটা ঘটনা জানে মোকলেস। পিয়ন ছেলেটা জানে কিনা কে জানে! সাত সকালে সিটি মেয়রের রুমে ঢুকে পড়ে অচেনা এক ভদ্রলোক। তার প্রাইভেট সেক্রেটারী পরোক্ষনেই যখন জানতে পারে সাথে সাথে তার পেছনে ছোটে। ‘ এই যে ভাই কোথায় যাচ্ছেন?’ ‘ মেয়র সাহেবের কাছে।

’ সেক্রেটারীর মেজাজ গরম হয়ে ওঠে। বেশ জোরের সাথে বলে,‘ কার অনুমতি নিয়ে আপনি ভেতরে যাচ্ছেন?’ ‘ কার অনুমতি নিতে হবে?’ পাল্টা প্রশ্ন করে ভদ্রলোক। ‘ বোঝেন না!’ ‘ বুঝিতো। ’ তারপর কাছে ডেকে কানে কানে বলে, ‘ তু্ই কি তোর চাকরিটা হারাতে চাস? সাথে জীবনটাও হারাবি?’ সেক্রেটারী ভয়ে চুপসে যায়। এ তো সেই সমাজ।

কোন আইন যেখানে তার নিজের গতিতে চলেনা এ তো সেই দেশ। ভেতরে প্রবেশ করে পাঁচজন মানুষের সামনে পড়েন। তারা লাইন দিয়ে বসে আছেন। ইন্টারবিউ নিচ্ছেন। তাদের দু’জনকে দেখে তারাও একে অপরের দিকে তাকাতাকি করেন।

শেষমেষ একজন বলেই ফেলেন, ‘ কি ব্যাপার দু’জন একসাথে এসেছেন কেন?’ ‘ স্যার আমি ইন্টারবিউ দেখতে এসেছি। ’ কথা বলে মোকলেস। ‘ ও, আচ্ছা। ’ ভদ্রলোক হাসেন। ‘ দেখুন।

’ হারম্ননকে প্রথম যে লোকটা প্রশ্ন করেন তিনি দেখতে বেশ কালো। মোটা একজন মানুষ। ‘ বলুন তো বাংলাদেশে সম্প্রতি কোন ছবিটি খুব হিট করেছে?’ হারুন আমতা আমতা করে। বলে, ‘ জ্বি, কোন ছবিটা যেন!’ তারপাশের লোক বলে ওঠেন, ‘ তাড়াতাড়ি বলুন। ’ হারুন কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারেনা।

তারপরের প্রশ্নটা হয় ওয়াল্ড কাপের আয়োজক কোন দেশ। হারুন মিন মিন করে জবাব দেয়, ‘ উপমহাদেশের দেশ গুলো স্যার। ’ ‘ হ্যা ঠিক বলেছেন। আবার বলুন। ’ ‘উপমহাদেশের দেশ গুলো ।

’ ‘ আবার বলুন?’ মোকলেসের রাগ হয়। সে বলেই ফেলে, ‘ আবার কি বলবে? অন্য প্রশ্ন করুন। ’ মোকলেসের কথা শুনে ইন্টারবিউ র্বোডের পাঁচজনই বিস্ময়ে চোখ বড় করে। ‘ আপনি কথা বলেছেন কেন?’ ‘ বলছি আপনাদের উল্টোপাল্টা কথা শুনে। কথা বলবেন ইসলাম নিয়ে।

মাদ্রাসার ইন্টারবিউ। যাচাই করবেন তার ভেতর ইসলামী জ্ঞান কতোটুকু আছে। সে ছাত্রদের ঠিকমতো পড়াতে পারবে কিনা। ’ ‘ সেটা কি আপনার কাছে শিখতে হবে?’ ‘ সে যোগ্যতা কি আপনাদের আছে? আমার কাছে শেখার মতো যোগ্যতা। ’ পাঁচজনই ক্ষেপে ওঠে।

সমস্বরে বলে ওঠে, বের হন। বেয়াদব কোথাকার। মোকলেস উঠে দাড়িয়ে কিছু বলতে যায়। হারুনের জন্য পারেনা। সমুহ বিপদের আশঙ্কায় সে মোকলেসকে টেনে বের করে নিয়ে আসে।

মাদ্রাসা থেকে বেরোতে বেরোতে বলে, ‘ মোকলেস বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম ভাই। ’ মোকলেস কিছু বলেনা। চুপকরে থাকে। রাস্তা দিয়ে হাটে। বিশ্ব শিশু দিবসের র্যা লি আসছে।

সবার মাথায় কাগজের ক্যাপ। তাতে লেখা- শিশুদের জন্য হ্যা বলুন। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। সবার মুখে একই স্লোগান। এ স্লোগান শুধু বাংলাদেশে নয় ধ্বনিত হয় সারা বিশ্বে।

সারা বিশ্বের আকাশে বাতাসে। সভ্য জাতি, সভ্য দেশের বুলি আমরা তোতা পাখির মতো আওড়াই। মোকলেসের মনে হয় পৃথিবীর সব ছোট বাচ্চা শিশু নয়। সব শিশুর কথা মানুষ ভাবেনা। কয়েকদিন আগে পেপারে পড়ছিল একটা ঘটনা।

ছোট্ট একটা শিশু। জ্বানালা ধরে দাড়িয়ে দেখছিল সামনের বাড়ি ঘর গুলো কিভাবে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে মাটির সাথে। হঠাৎ একটা গোলা এসে বুকে বেধে তার। নিথর হয়ে জ্বানালার পাশেই পড়ে থাকে সে।

ও কি একটা শিশু! ওর কি বেচে থাকার কোন অধিকার ছিল? হয়তো ওদের মতো শিশুদের বেচে থাকার কোন অধিকার নেই। ফিলিস্তিনে যে শিশু জন্মে তাদের বেচে থাকার অধিকার থাকতে নেই। ইরাকে, কাস্মীরে, আফগানে যে শিশু জন্মে তাদের বেচে থাকার অধিকার থাকতে নেই। ওরা শিশু নয়! ওদের নেই কোন অধিকার। ওদের জন্য কেউ হ্যা বলেনা।

কেউ বলেনা ওরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। টু-ইন টাওয়ারে চাপা পড়া মানুষের প্রানের অনেক মূল্য তার জন্য বছরের পর বছর হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ হত্যা করাই সভ্যতা। নারী-শিশু, মানুষ সবাই মিলেও সে দায় শোধ করতে পারেনা। ইরাক, ফিলিস্তিন, আফগান এসব দেশের মানুষের প্রনের কোন মূল্য নেই। নেই জীবনের কোন দাম।

।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।