Ctrl+C Ctrl+V হুমায়ূন আহমেদ;
বাংলাদেশের এক ইতিহাসের নাম। এই মানুষটি সাহিত্য কিংবা সংস্কৃতির যে দিকেই হাত দিয়েছেন পরশপাথরের মত ছোঁয়া পেয়ে সে দিকেই সোনা ফলেছে। তিনি বাস্তব জীবনে ছিলেন দারুন সৌখীন মানুষ। তিনি শখের বশে আট টি চলচ্চিত্র ও নির্মান করেন। এই ক্ষেত্রেও তিনি ব্যর্থ হন নি বরং অনেকাংশে সফল।
তিনি এ বাংলার মানুষ কে কাল জয়ী কিছু চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। যে চলচ্চিত্রগুলো ছিল সতন্ত্র গুণের অধিকারী। নিজের হাস্যরস ভঙ্গীতে তিনি সেলুলয়েডের ফিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন এদেশের মুক্তিযুদ্ধ,গ্রামীণ জীবন কিংবা এ বাংলার মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনধারা। এ চলচ্চিত্রগুলো রুচিশীল দর্শকদের বরাবরের মতই আকর্ষিত করেছে। চলচ্চিত্রগুলোতে ছিল হৃদয় ছোঁয়া গানের ব্যবহার যা এখনো এবাংলার মানুষের মুখে শোনা যায়।
রুচিশীল দর্শকদের পাশাপাশি সমালোচকদের দৃষ্টি ও কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে তার চলচ্চিত্রগুলো। যার প্রমাণ মিলে তার একাধিকবার চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরষ্কার সহ দেশী বিদেশী সব পুরষ্কার লাভের মধ্যে।
শুধু নিজের দ্বারা নয় হুমায়ূন আহমেদের কাহিনী অন্য পরিচালকদের দ্বারাও চিত্রায়িত হয়েছে। এ সকল পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন সুভাষ দত্ত,মোরশেদুল ইসলাম কিংবা তৌকির আহমেদের মত গুণী নির্মাতাও। মূলত নিজের কাহিনীর সুন্দর চিত্রায়নই হুমায়ূন আহমেদকে চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্ভুদ্ধ করে।
সময়টা ১৯৯৪ সাল। শঙ্খনীল কারাগার ছবির নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ হয়ে সে বছর নিজেই ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন হুমায়ূন আহমেদ। বন্ধু আসাদুজ্জামান নূরকে সঙ্গে নিয়ে সে সময় তিনি বড় বড় প্রযোজকের কাছে গিয়েছিলেন। সেসব প্রযোজক হুমায়ূন আহমেদকে আপ্যায়ন করেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও আশা ছেড়ে দেননি হুমায়ূন।
ঠিক সে সময়ই তাকে সরকারিভাবে অনুদান দিয়ে (১৮ লাখ টাকা) প্রথম ছবি নির্মাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তাই হুমায়ূন আহমেদ জীবদ্দশায় চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রাসঙ্গিকতায় যতবার তিনি বিভিন্নজনের মুখোমুখি হয়েছিলেন ততবারই তিনি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সে সহযোগিতার কথা স্মরণ করেছেন। তিনি বলতেন 'ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা যদি সেদিন অনুদান দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দিতেন তাহলে হয়তো একজন হুমায়ূন আহমেদকে দর্শক চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে পেতেন না। ' (তথ্যসূত্রঃ দৈনিক ডেসটিনি)
নিচে সংক্ষেপে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্রের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।
১/ আগুনের পরশমণিঃ
হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ৮টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত আগুনের পরশমণি।
একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হুমায়ূন আহমেদকে মুক্তিযুদ্ধ বরাবরই টেনেছে। যার প্রমাণ মিলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা তার উপন্যাস কিংবা নির্মিত চলচ্চিত্রে। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণি নির্মাণের মাধ্যমে। ১৯৯৪ সালে সরকারী অনুদানে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে।
যেখানে আমাদের দেশের সচরাচর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র গুলো '৭১ এর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কিংবা প্রত্যক্ষ যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত হয় সেখানে হুমায়ূন আহমেদ আগুনের পরশমণি নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধের অবরুদ্ধ ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর অভিযান আর মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের সংকট এর কাহিনী নিয়ে। আসাদুজ্জামান নূর, বিপাশা হায়াত, ডলি জহুর অভিনীত এ চলচ্চিত্র অনেকের মতে এদেশের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। এদেশের দর্শক হৃদয় জয় করার পাশাপাশি চলচ্চিত্রটি ৮ টি শাখায় লাভ করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার। শাখাগুলো হচ্ছে- শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (প্রযোজক হুমায়ূন আহমেদ), শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার (হুমায়ূন আহমেদ), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা (হুমায়ূন আহমেদ), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (বিপাশা হায়াত), শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (সত্য সাহা), শ্রেষ্ঠ শব্দ গ্রাহক (মফিজুল হক), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী (শিলা আহমেদ), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার (হোসনে আরা পুতুল)।
২/ শ্রাবণ মেঘের দিনঃ
১৯৯৯ সালে নির্মাণ করেন ৭টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্র শ্রাবণ মেঘের দিন।
অনেকের মতে বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের কাহিনী নিয়ে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। আগুনের পরশমণির ন্যায় এ চলচ্চিত্রটিও ছিল হুমায়ূন আহমেদের নিজের উপন্যাসের চিত্রায়ন। নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা নুহাশ চলচ্চিত্রের ব্যানারে নির্মিত অসাধারণ সব লোকগান সমৃদ্ধ এ চলচ্চিত্র দেখতে সে সময় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দর্শক প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমায়। শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত গানগুলোর কিছু ছিল লোকগান বাকিগুলো ছিল উনার নিজের লেখা,মকসুদ জামিল মিন্টুর সংগীত সংগীত পরিচালনায় এ চলচ্চিত্রের গানগুলো এখনো তুমুল জনপ্রিয়। একটা ছিল সোনার কন্যা মেঘবরণ কেশ, আমার গায়ে যতো দুঃখ সয়, শুয়াচান পাখি আমার প্রভৃতি গানগুলো শুধু দর্শক হৃদয় ছুঁয়ে যায় নি গানগুলোর অসাধারণ চিত্রায়ন ও ছিল মুগ্ধ করার মত।
এ চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রে অভিনয় করেন জাহিদ হাসান, শাওন, মাহফুজ আহমেদ, আনোয়ারা, মুক্তি, গোলাম মোস্তফা,সালেহ আহমেদ ও ডাঃ এজাজ। এ চলচ্চিত্রটি যে সকল শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করেছে সেগুলো হচ্ছেঃ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (জাহিদ হাসান), শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা (গোলাম মুস্তফা), শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (মকসুদ জামিল মিন্টু), শ্রেষ্ঠ গীতিকার (রশীদউদ্দিন আহমেদ), শ্রেষ্ঠ গায়ক (সুবীর নন্দী), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক (মাহফুজুর রহমান খান) ও শ্রেষ্ঠ শব্দ গ্রাহক (মফিজুল হক)।
৩/দুই দুয়ারীঃ
২০০০ সালে মুক্তি পায় একজন রহস্য মানবের মন ভালো করার কিছু রহস্যের ঘটনা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র "দুই দুয়ারী"। এ চলচ্চিত্রে মজার মজার কিছু রহস্যের ঘটনা আর অফুরন্ত হাসির কান্ড ফুঁটে উঠেছে। এ চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন জনপ্রিয় অভিনেতা রিয়াজ অন্য প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করছেন শাওন ও মাহফুজ আহমেদ।
এ চলচ্চিত্রটি দুটো শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জিতে নেয়। শাখা গুলো হচ্ছেঃ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (রিয়াজ),শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী (সাবিনা ইয়াসমিন)।
৪/চন্দ্রকথাঃ
২০০৩ সালে হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন তার চতুর্থ চলচ্চিত্র ‘চন্দ্রকথা’। পুরোনো দিনের জমিদার প্রথার নিষ্ঠুরতা,শিল্পের প্রতি অনুরাগ এর কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছিল চলচ্চিত্রটি যেখানে জমিদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। এ চলচ্চিত্রে হুমায়ূন আহমেদ একই সঙ্গে তুলে ধরেন মানবতা আর নিষ্ঠুরতা।
এতে আসাদুজ্জামান নূর ছাড়াও অভিনয় করেন ফেরদৌস, শাওন, চম্পা,আহমেদ রুবেল, স্বাধীন খসরু, ডা. এজাজুল ইসলাম ও আরো অনেকে। এ চলচ্চিত্রে সুবির নন্দীর গাওয়া উকিল মুন্সির বিখ্যাত গান "ও আমার উড়াল পঙ্খী রে" অনেক শ্রোতা প্রিয়তা পেয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের নিজের চলচ্চিত্রের গান নিজে লেখা স্বভাবের কারণে অনেকেই মনে করে এ গানটিও তার নিজের লেখা!!
৫/শ্যামল ছায়াঃ
২০০৫ সালে হুমায়ুন আহমেদ নির্মাণ করেন ‘শ্যামল ছায়া’। এ চলচ্চিত্রটি ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে পাঠানো হয় শ্রেষ্ঠ বিদেশি চলচ্চিত্র বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য। এ ছবির বিশেষত্ব হচ্ছে, সরাসরি যুদ্ধের দৃশ্য না দেখিয়েও এতে যুদ্ধের আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এ চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের কিছু অনন্য দিক হুমায়ূন আহমেদ অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধে একটি নৌকার মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌছার লড়াই যা পরবর্তীতে প্রত্যক্ষ মুক্তিসংগ্রামে রুপ নেয় এরকম কাহিনী নিয়ে শ্যমল ছায়া চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এ চলচ্চিত্রে রিয়াজ অভিনীত চরিত্রের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন টুপি দাড়ি রাখা মৌলভী মানেই খারাপ বা নেতিবাচক চরিত্র নয়। মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রে স্টেরিওটাইপ হয়ে যাওয়া রাজাকারদের চেহারাকে ভেঙে দিতে চাইলেন হুমায়ূন। সেই স্টেরিওটাইপকে শুধু ভাঙেননি তাকে দিয়ে বন্দুক ধরিয়েছেন পাক সেনাদের বিরুদ্ধে।
ধর্মভিরু এই রিয়াজ শুধু দখলদার সেনাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রই ধরেনি, এক হিন্দু মেয়েকে যখন রাজাকারকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন সে-ই একমাত্র সাহস করে এগিয়ে যায় বাধা দিতে। তার বাধার মুখে রক্ষা পায় নববধূটি। ধর্মের অনুশাসন মেনে চলা এই মুসলমান মৌলভী ন্যায় অন্যায়ের ভেদাভেদ বুঝতে সক্ষম। কিন্তু এই ছবির আগে যত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র হয়েছে তার সবকটিতেই রাজাকারকে দেয়া হয়েছে মৌলভীর বেশ। সে দিক থেকে এটি একটি অনন্য কাহিনীও বটে।
৬/নয় নম্বর বিপদ সংকেতঃ
হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত সম্পূর্ণ হাস্যরসের ছবি ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এ ছবির শেষ দিকে একে অর্থহীন ছবি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একজন ধনাঢ্য বয়স্ক ব্যক্তি হঠাৎ করে তার আপনজনদের কাছে পেতে চান। তাদের এক করা তার জন্য হয়ে উঠে কঠিন। সবাইকে তার মৃত্যু সংবাদ দিয়ে একত্রিত করা হয়।
ঘটতে থাকে একের পর এক মজার মজার ঘটনা। সম্পূর্ণ বিনোদনধর্মী এ ছবিতে অভিনয় করেন রহমত আলী, তানিয়া আহমেদ, রুপক, মিঠু, ডা. এজাজ আহমেদ, ফারুক আহমেদ প্রমুখ। নিজে অর্থহীন বললেও এ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের অন্যতম কমেডি চলচ্চিত্র।
৭/আমার আছে জলঃ
২০০৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল ২ টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্র আমার আছে জল। এটি হুমায়ুন আহমেদের জীবদ্দশায় মুক্তি প্রাপ্ত শেষ চলচ্চিত্র।
নিজের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এ চলচ্চিত্র ছিল ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী নিয়ে। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস, মীম, জাহিদ হাসান, মেহের আফরোজ শাওন, পিযুষ বন্দোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ, সালেহ আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও ডাক্তার এজাজ আহমেদ।
৮/ঘেটুপুত্র কমলাঃ
২০১২ সালে মুক্তি পায় হুমায়ূন আহমেদের শেষ চলচ্চিত্র 'ঘেটুপুত্র কমলা' এই চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে সমকামী পুরুষমানুষের বালকপ্রীতি নিয়ে। চলচ্চিত্রটির সময়কাল ব্রিটিশ আমল। প্রায় দেড়শ বছর আগের এক গ্রামীন পরিবেশের কথা খুঁজে পাওয়া যায় চলচ্চিত্রটিতে।
ব্রিটিশ শাসনাধীন (বর্তমান বাংলাদেশের) হবিগঞ্জ জেলার জলসুখা গ্রামের পটভূমিতে চলচ্চিত্রটির কাহিনী চিত্রিত। সে সময় জলসুখা গ্রামের এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেটুগান নামে নতুন গ্রামীন সঙ্গীতধারা সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন সেই সঙ্গীত ধারাতে মেয়েদের পোশাক পরে কিছু সুদর্শন সুন্দর মুখের কিশোরদের নাচগান করার রীতি চালু হয়। এই কিশোরদের আঞ্চলিক ভাষাতে ঘেটু নামে ডাকা হতো। ঘাটু নামের নব এই সঙ্গীত ধারাতে গান প্রচলিত সুরে কীর্তন করা হলেও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের প্রভাব বেশ লক্ষনীয় ছিল।
গ্রাম্য অঞ্চলের অতি জনপ্রিয় নতুন সঙ্গীতরীতিতে নারী বেশধারী কিশোরদের উপস্থিতির কারণেই এর মধ্যে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ে। সমকামী বিত্তবানরা বিশেষ করে জোতদার প্রমুখ এইসব কিশোরকে যৌনসঙ্গী হিসেবে পাবার জন্যে লালায়িত হতে শুরু করে। একসময় সামাজিকভাবে বিষয়টা স্বীকৃতি পেয়ে যায়। হাওর অঞ্চলের জমিদার ও বিত্তবান শৌখিন মানুষরা বর্ষাকালে জলবন্দি সময়টায় কিছুদিনের জন্যে হলেও ঘেটুপুত্রদের নিজের কাছে রাখবেন এই বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে বিবেচিত হতে থাকে। সমকামী বিত্তবানদের স্ত্রীরা ঘেটুপুত্রদের দেখতেন সতীন হিসেবে।
চলচ্চিত্রের ঘেটুপুত্র কমলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন শিশুশিল্পী মামুন। চলচ্চিত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তির আগেই ১৯শে জুলাই, ২০১২ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তবে একমাসের জন্যে দেশে ফিরে পুনরায় নিউ ইয়র্ক যাওয়ার আগে ৩০ মে ২০১২ তারিখে তিনি ছবিটি দেখে যেতে পেরেছিলেন। এ সময় তিনি এ চলচ্চিত্রটি টেলিভিশনে মুক্তি না দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের কড়া নির্দেশ দিয়ে যান। ৮৫তম অস্কার প্রতিযোগিতায় ‘সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র ’ বিভাগের জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন পেয়েছে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।
৮৫তম অস্কার বাংলাদেশ কমিটি চলচ্চিত্রটিকে মনোনয়ন দিয়েছে। এছাড়া চলচ্চিত্রটি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, কানাডা ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উত্সবের আয়োজক কমিটির কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রঃ
হুমায়ূন আহমেদের অসাধারণ কাহিনী তথা লেখনশৈলী বরাবরই এদেশের গুণী নির্মাতাদের আকৃষ্ট করে। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে মোট ৮টি ছবি নির্মাণ করেন স্বনামধন্য পরিচালকরা। তার কাহিনী নিয়ে নির্মিত সর্বপ্রথম চলচ্চিত্র ছিল মোস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত ‘শঙ্খনীল কারাগার’।
এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদ জিতে নেন শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর হুমায়ূন আহমেদের কাহিনী নিয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত নির্মাণ করেন আবদার নামে একটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে নির্মিত আবু সাইয়ীদ পরিচালিত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি নিরন্তর ২০০৬ সালে ভারতের ৩৭তম গোয়া ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে রৌপ্য ময়ূর (সিলভার পিকক) এবং ভারতের কেরালা ফিল্ম ফেস্টিভালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং কলকাতার কালাকার অ্যাওয়ার্ডে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে। হুমায়ূন আহমেদের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত অন্য চলচ্চিত্র গুলো হচ্ছেঃ মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘দূরত্ব’ ও ‘প্রিয়তমেষু’, শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ‘সাজঘর’,বেলাল আহমেদ পরিচালিত ‘নন্দিত নরকে’ এবং তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’। নিজের নির্মিত চলচ্চিত্রের পাশাপাশি এ চলচ্চিত্রগুলোও দর্শক নন্দিত হয় এবং প্রায় প্রতিটি চলচ্চিত্রই একাধিক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার অর্জন করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।