আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জিএসপি ফিরে পাওয়ার রূপরেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেতে হলে বাংলাদেশকে কী কী করতে হবে, তা জানিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নতি ও শ্রমিকস্বার্থ সুরক্ষায় দেওয়া এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশের জিএসপি ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে সুযোগ করে দেবে।
গত শুক্রবার (মার্কিন সময়) মার্কিন বাণিজ্য, শ্রম ও পররাষ্ট্র দপ্তর এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার ও কারখানার নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশকে ‘বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৩’ (বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা ২০১৩) বাস্তবায়নে উৎসাহিত করছে ওবামা প্রশাসন। এ কর্মপরিকল্পনায় অগ্নিনিরাপত্তা ও কাঠামোগত শর্ত পূরণবিষয়ক ত্রিপক্ষীয় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

সেই সঙ্গে কারখানার অগ্নিকাণ্ড ও কাঠামোগত নিরাপত্তা পরিদর্শন, তৈরি পোশাক খাত, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) ও চিংড়িশিল্পের কর্মপরিবেশের উন্নতি ও শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষার জন্য করণীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শ্রমিকস্বার্থ সুরক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড পূরণে বাংলাদেশ সরকার ব্যর্থ হওয়ায় গত ২৭ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার ঘোষণা দেন। ওই সময় মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশকে একটি কর্মপরিকল্পনা দিয়েছিল। আর ওই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার পথ সুগম হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
মার্কিন প্রশাসনের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই বিবৃতি জনসমক্ষে প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশের শ্রমিকস্বার্থ সুরক্ষা ও কর্মপরিবেশের উন্নতিতে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে মার্কিন প্রশাসন তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে।


যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ঘোষণায় ইইউ-বাংলাদেশ-আইএলওর ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম অংশীদার হিসেবে লক্ষ্য পূরণে আগ্রহী। কারণ, ত্রিপক্ষীয় ওই ঘোষণার অনেক শর্ত জিএসপির কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ রয়েছে।
পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকালের এ যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ইইউ-বাংলাদেশ-আইএলওর ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হলো। জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগটি নেওয়া হয়।

৮ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উদ্যোগে জেনেভায় ‘স্টেইং এনগেজড আ সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট উইথ বাংলাদেশ’ শীর্ষক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সময়সীমাভিত্তিক ওই যৌথ ঘোষণা গৃহীত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঘোষণার ফলে ৮ জুলাইয়ের ঘোষণায় মার্কিন অঙ্গীকারের বিষয়গুলোর উল্লেখ করে সংশোধনী আনা হবে।
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন ও গত এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর পর বাংলাদেশের কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। ফলে গত ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের ঘোষণা দেয়।


কর্মপরিকল্পনায় যা আছে: বাংলাদেশকে শ্রম, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ও কারখানা পরিদর্শকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে এবং তাঁদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব কারখানা শ্রমিকের অধিকার ও ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না, তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলের বিধান করতে হবে।
এ ছাড়া পোশাক কারখানায় শ্রমিক, আগুন ও ভবন পরিদর্শনের প্রতিবেদন নিয়ে একটি প্রকাশ্য তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে মার্কিন প্রশাসন। কারখানাগুলোয় যেসব ত্রুটি পাওয়া যাবে এবং এ জন্য তাদের যে শাস্তি দেওয়া হবে, প্রধান পরিদর্শকের নামসহ তা থাকবে ওই তথ্যভান্ডারে।


মার্কিন সরকারের সুপারিশকৃত কর্মপরিকল্পনায় কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়নের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ইউনিয়ন এবং তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিকের স্বাক্ষর নিশ্চিত করতে পারলেই দ্রুততার সঙ্গে ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
মার্কিন প্রশাসন বলেছে, প্রতিটি শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধনের আবেদন-প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগছে, নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে কি না, না দিলে কোন কারণে দেওয়া হলো না, তা প্রকাশ করতে হবে। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের কারখানাগুলোতেও শ্রমিক ইউনিয়ন করার পূর্ণ অধিকার দিতে হবে। এ ছাড়া শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।


উল্লেখ্য, গত সোমবার বাংলাদেশ সরকার একটি নতুন শ্রম আইন পাস করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন আইনে শ্রমিক ইউনিয়ন করার প্রক্রিয়া আগের চেয়ে সহজ করা হয়েছে। তবে শ্রমিকনেতারা জানিয়েছেন, নতুন আইনের কিছু ধারার কারণে শ্রমিক ইউনিয়ন করা আগের চেয়ে আরও কঠিন হবে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.