ja
শিরোনামে ভার্সন-ডিডিএস যুক্ত করার কারণ একই নামে কিছুদিন আগে ব্লগার স্বপ্নবিলাস ভাই একই শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাথায় একটা শ্যাম পিরিতের ঝামেলাময় আইডিয়া মাথায় হিজিবিজি করতে শুরু করেছে। আমার কাহিনী গড়ে তুলছি এক আধুনিক রাঁধার হা-হুতাশ থেকে।
ডুবে ডুবে জল খাওয়ার প্রবণতা আমাদের তরুন সমাজে অনেকের মধ্যেই প্রবলভাবে দেখা যায়। মুখে চিৎকার করে বলে বেড়ায় আমি প্রেম-পিরিত একদম দেখতে পারিনা কিন্তু মনে মনে পাশের মানুষটির প্রতি স্লো পয়জনিং-এর মত অনুরক্ত হয়ে থাকে।
কেউ দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলে সমূহ সম্ভাবনা উড়িয়ে এমন ভাব করে যেন প্রশ্নকারী মহা কোন পাপ করে ফেলেছে কিন্তু যেই শ্যাম দূরত্ব সৃষ্টি করে তখনি বিরহ বেদনায় জর্জরিত হয়ে পড়ে। মনে মনে গভীর কামনা করে যাতে শ্যাম প্রস্তাব করে কিন্তু মুখে নিজেকে লীলাবিমুখ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে। এদিকে শ্যামও কম যায়না। রাঁধার এসব আকুলতা তার নজর এড়ায়না, তাই যখনই রাঁধা শ্যামকে আঁচলে বাঁধতে চায় তখনই শ্যাম সরে যায় অপ্রাসঙ্গিক নানা বাহানা করে। আসলেই শ্যাম রাঁধার কুলাভিমানের ব্যাপারে শঙ্কিত থাকে।
সে ভালো করেই জানে যদি রাঁধার এই আহ্বানে সাড়া দেয় তবে একসময় জাত্যাভিমানি রাঁধাই পল্টি মেরে অকুলে ফেলবে শ্যামকে। দীর্ঘ কালক্ষেপণের পর একসময় রাঁধা নিজের মনের আকুলতা সইতে না পেরে প্রকাশ্য আচরণে শ্যামের দৃষ্টি কামনা করে কিন্তু শ্যাম এসব মাথায় না নিয়ে নিজের কর্মেই মশগুল থাকে। শ্যামের এই অবহেলা রাঁধার কানে বাজে তীক্ষ্ণভাবে। আক্ষেপের সুরে একসময় বলে উঠে, “কি আশ্চর্য!!! কিছু বলেওনা!!!”
রাঁধার এই আক্ষেপের টান কোথায়, তা বুঝতে শ্যামের দেরি হয়না, তাই এই নিবেদন এড়ানোর জন্য নিজেকে প্রবৃত্ত করে এমন সব কাজে যা রাঁধার মোটেই পছন্দ নয়। সাক্ষাৎকল্পে রাঁধার নানা আহ্বান এড়িয়ে যায় শ্যাম।
আর আকারে ইঙ্গিতে রাঁধার ব্যক্তিত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে যাতে রাঁধার মনে সুপ্ত বাসনা সুপ্তাবস্থায় ধরাদাম ত্যাগ করে। রাঁধা আর শ্যামের এহেন ভাঙ্গা গড়ার খেলা পড়শিদের নজর এড়ায়না, চারদিকে কানাঘুষা শুরু হয়। শ্যাম আপন কর্মে বেশি মনযোগী হওয়ায় পড়শিদের এহেন কানাঘুষা আমলে নেয়না কিন্তু শ্রীমতী রাধিকা এসব নিজের গায়ে মেখে নিজেকে কলঙ্কিত ভেবে মনঃকষ্টে ভোগে। সে ভেবে পায়না শ্যাম এভাবে চোখ কান বন্ধ রেখে কিভাবে দিন কাটায়, কিন্তু নিজ থেকে কিছু বলারও সুযোগ পায়না। যখনই নিজেকে প্রস্তুত করে শ্যামের সামনে প্রশ্নবাণ নিয়ে হাজির হয় তখনই শ্যাম নানা টালবাহানা দেখিয়ে কেটে পড়ে।
এভাবে চলতে চলতে একসময় রাঁধার আর সহ্য হয়না। সে নির্জনে শ্যামকে বাধ্য করে তার বাক্যবাণের জবাব দিতে। শ্যাম অবলীলায় নিজের অনিচ্ছা প্রকাশ করে আর এতে রাঁধা তীব্র অপমানিত হয়ে ক্রোধের অনলে পুড়তে শুরু করে। নানা অপবাদে শ্যামকে জর্জরিত করতে কৌশলী হয় কিন্তু বাস্তববাদী শ্যাম সমস্ত অনুরাগ পরিহার করে আপন কর্মে নিযুক্ত হয়। মাঝে মাঝে রাঁধার আবেদন মনে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করলেও কর্মে বিচিত্রতা সৃষ্টি করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের জোর তৎপরতা চালায়।
এদিকে রাঁধা এরুপ পরিস্থিতিতে আড়ি দিতে উৎসাহী হয় কিন্তু শ্যাম এর কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পায়না। হঠাৎ নিজেদের এমন ছন্দময় সম্পর্কের ইতি টেনে নিজেদেরকে সমাজের চোখে দাগ টানার ইচ্ছা মোটেই আসেনা। সে রাঁধাকে নানা কথায় ভুলিয়ে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু কার মনে কি আছে পরের কি আছে জানার সাধ্যি!!
শ্যামের অবহেলায় রাঁধা দিনের পর দিন বিরহ যাতনায় পুড়তে থাকে, এর সাথে মাঝেমাঝে শ্যামের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রবণতা সেই আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। একসময় আর সইতে না পেরে রাঁধা শ্যামকে তার সঙ্গ ত্যাগ করতে অনুরোধ করে।
এসময় রাঁধা নিজেকে সম্পূর্ণ আবেগ মুক্ত মানবী বলে দাবি করে। শ্যাম ব্যাপারটা নানা কৌশলে হালকা করার চেষ্টা করলে রাঁধার অপমানমূলক বাক্যবাণে পর্যুদস্ত হয়ে সব আশা ছেড়ে দিয়ে রাঁধাসঙ্গ ত্যাগ করে।
রাঁধা বিয়োগে শ্যাম নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গের রুপে ফিরে পায়। স্থির করে রাঁধা গৃহের ছায়াও আর মাড়াবেনা। দূর নির্জন বনে আপন মনে বাঁশি বাজানোয় মনোনিবেশ করে।
বাঁশির সুর রাঁধার কানেও ভেসে যায়। শ্যামের এই অনুরাগহীনটা দেখে আরও বিমর্ষ হয়ে পড়ে। সখিদের সাথে কুহলিতে মেতে উঠা হয়না। একাকী নিভৃতে নিজেকে সরিয়ে নেয় অনেক দূরে। যেখানে পড়শিরা তার মনের অস্থিরতা টের পায়না।
কিন্তু শত চেষ্টা করেও নিজের আকুলতা ঢাকতে পারেনা। আক্ষেপের সুরে বলে উঠে-
কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কুলে।
কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে। ।
আকুল শরীর মোর বেআকুল মন।
বাঁশীর শবদেঁ মো আউলাইলোঁ রান্ধন। ।
কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি সে না কোন জনা।
দাসী হআঁ তার পাএ নিশিবো আপনা। ।
---------------------------------------------- শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন
এর মানে দাঁড়ায় কে এই নির্জন দুপুর নদীর কুলে বসে প্রাণসংহারি বাঁশির সুর তুলছে, বাঁশির সুরে আমার কাজে বিঘ্নতা ঘটছে। আমি নিত্ত কাজে মনোনিবেশ করতে পারছিনা। রন্ধনে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমার মন প্রাণ ব্যাকুল হয়ে পড়েছে, বড়াই, আমি তার পায়ে নিজেকে সপে দেব।
এতেই স্পষ্ট যে শ্যাম বিয়োগে রাঁধা তীব্র যাতনায় ভুগছে।
শ্যামের এই নিরুত্তাপ প্রতিক্রিয়া মেনে নিতে পারেনা সে। তাই কুলাভিমান ত্যাগ করে শ্যামের নীরবতা ভাঙ্গায় উৎসাহী হয়। নানা কৌশলে শ্যামকে আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে নিজের জীবনে কিন্তু শ্যাম নিজেকে আবিস্কার করে অপরিসীম এক মুক্ততার মাঝে, তাই সে রাঁধার এসব নিবেদন কানে তোলেনা। আমলে নেয়না রাঁধার কোন বালখিল্লতা। শ্যামের এরুপ অবহেলায় চরম অপমান বোধ করে রাঁধা।
এই অপমানের আগুনে পোড়াতে চায় শ্যামকেও। তাই বার্তাবাহক মারফতে পত্র লেখে শ্যামকে। নিজেকে উক্ত বিচ্ছেদে অনেক লাভবান হিসেবে দাবী করে শ্যামের প্রতি তীব্র তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে। শ্যামের মনে ধাক্কা দেয়ার জন্য মনগড়া অনেক কাহিনী রচনা করে। রাঁধার এহেন আচরণে শ্যাম সাময়িকভাবে বিস্মিত হলেও দ্রুত ধরে ফেলে তার কৌশল।
এ যে তাকে ফেরানোর ষড়যন্ত্র। কিন্তু শ্যামের পক্ষে সম্ভব নয় এই এই ঝঞ্ঝাটে ফিরে যাওয়া। তাই নিজেকে আপন স্থলে সুখী দাবী করে পাল্টা বাণ নিক্ষেপ করে রাঁধার অনুকূলে। আর মনঃস্থির করে তার প্রতি রাঁধার এই অনুরাগ নষ্ট করে দিতে হবে। রাঁধার অপছন্দের কাজগুলো বেশি বেশি করে করতে শুরু করে।
নিজের স্বভাববিরুদ্ধ নানা কাজে নিজেকে প্রবৃত্ত করে। রাঁধার সামনে নিজেকে অন্যের প্রেমলীলায় মত্ত দেখিয়ে নিজেকে অপরিচিত করে তোলে সে। কিছুদিনের মধ্যেই শ্যাম বুঝতে পারে সে তার উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ সফল, কেননা ইতোমধ্যে রাঁধা সখীমহলে শ্যামের নামে অপবাদ রটানো শুরু করেছে। তাই শ্যাম তার সকল অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিয়ে আপন কাজে নিযুক্ত হয়। রাঁধাহীন জীবনে শ্যাম নিজেকে অনেক মুক্ত আর সুখী হিসেবে আবিস্কার করে।
আবার শ্যামের সরে যাওয়ায় রাঁধা পুরনো যন্ত্রণায় মুষড়ে পড়ে। নানা রকম অভিযোগে, অপবাদে শ্যামের নামে কলঙ্ক রটানোয় প্রবৃত্ত হয় সখীমহলে। শ্যামকে কাপুরুষ বলতেও দ্বিধা করেনা সে।
কিন্তু শ্রীমতী রাধিকা ম্যাডাম, আপনি কি জানেন, সমাজে কলুষতা ছড়াতে গেলে এই কালিমা আপনার গায়েই মাখাবে।
[b]
মিষ্টি প্রেমে মন ভুলিয়া
এমন প্রেম আর কইরনা
শ্যামে যদি পল্টি মারে
রাঁধে’ত কুল পাইবনা
দুয়েকটা মাস যায়নারে ভালো,
এরই মাঝে গণ্ডগোল
আমার লাভের মাঝে কি লাভ হইল
গলেতে কলঙ্কের ঢোল--- (কিঞ্চিত প্যারেডি ) [/b]
---- [b]সকল রাধিকার জন্য শুভ কামনা রইল।
[/b] @};- @};-
ফটো সুত্রঃ গুগল
শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের পঙক্তি লিখতে সহায়তা করেছে আমার চবি সহপাঠী ফারুক।
অনুগ্রহপূর্বক কেউ পোস্টটিকে ধর্মীয় দৃষ্টিতে নেবেন্না। স্রেফ একটা কাহিনী আমি কীর্তনের আদলে বর্ণনা দিলাম।
বর্ণমালায় আগে প্রকাশিত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।