আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপন্ন গণতন্ত্র, বিপন্ন দেশ, বিপদ্গ্রস্ত ও আতংকিত জনগণ

আজ সারা দেশে এক ভয়াবহ অবস্থায় বিরাজ করছে। আমাদের ভবিষ্যৎ কি তা আমরা আজ বলতে পারিনা। শুধু এইটুকু বুঝতে পারি যে আমরা আগামীতে অনেক বড় একটা সংঘাত দেখতে পাবো। যার খেসারত দিতে হবে আমাদের মত সাধারন জনগণকে। আজকের এই অবস্থায় আমাদের দাঁড় করানোর জন্য আমি বর্তমান সরকারকেই দোষ দিবো।

কারন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সরকার গত আড়াই বছরে সব ক্ষেত্রে একটু একটু করে এত বেশি অন্যায় করে ফেলেছে যে আজ আড়াই বছরের মাথায় বিরোধীদল সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছে। আর এই বাধ্য করার পেছনে পুরোপুরি সরকারের ভূমিকা রয়েছে। আমার খুদ্র জ্ঞানে আমি যতটুকু বুঝি যে বিরোধীদল অনেক পরে সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। কারন সরকার এর আগেই অনেক অনেক বড় বড় ভুল করেছে তার কোন ইস্যু নিয়ে বিরোধী দল আনদলনে যায়নি। হয়তোবা তারা এতদিন তাদের ভেঙে যাওয়া দলটা কে গুছিয়েছিলেন।

সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ঠিক আড়াই মাসের মাথায় আমরা হারালাম আমাদের দেশের ৫৪ টি মানবসম্পদ। আমাদের গর্ব বীর সেনাবাহিনীর সব উচ্চপদস্থ সাহসী কর্মকর্তাদের। যা একটি ভয়াবহ যুদ্ধেও কোন দেশ সেনাবাহিনীর এত নেতাদের হারায়না। অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে স্বাধীনতার ৪০ বছর পর তিল তিল করে গড়ে উঠা আমাদের সেনাবাহিনীর এত নেতা (যারা যুদ্ধের সময় নেতৃত্ব দিবে) দিনে দুপুরে নিজ দেশে কোন যুদ্ধ ছাড়াই আমাদের হারাতে হলো। যা আজও এক রহস্য থেকে গেলো।

আজ থেকে ৩৫ বছর আগেও যদি এইরকম সাধারন বি.ডি.আর জওয়ানরা বিদ্রোহ করতো তখন কোন এত প্রস্ন আসতো না। কারন তখন দেশের সব জায়গায় ছিলো এক অরাজকতা। কিন্তু এই যুগে এমন ঘটনা বিশ্বের আর কোথাও হয় নাই। যাই হোক সেই বিস্ময়কর ঘটনার কথা আর বলতে চাইনা। সেইদিনের একটি ঘটনাই প্রমান করে দেয় যে ঘটনাটা আসলে কি? তা হচ্ছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী উনি বিপদে মৃত্যুর মুখে পড়া আমাদের সেনাবাহিকে রেখে উনি নিজের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য উনার সরকারি বাসভবনের চারপাশে সেনাবাহিনী সুসজ্জিত করে ও বাঙ্কার তৈরি করে নিজেকে নিরাপদ করে রাখলেন।

এত বড় একটা ইস্যু নিয়েও বিরোধী দল তখন বিবৃতি ছাড়া আর কিছুই করেনি। এবার শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা যা দেখাচ্ছেন তা সত্যিই দুর্দান্ত। যা আমরা হলিউড ও বলিউড সিনেমাতেও দেখিনা। বিরোধীদলের ছাত্রদের মেরে আবার তিনতলার উপর থেকে নিচে ফেলে দেয়। প্রতিটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ তাদের কাছে জিম্মি।

এই ব্যাপারেও বিরোধীদল কোন কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। এবার আসুন দ্রব্যমূল্য। দ্রব্যমূল্যর ‘মূল্য’ শব্দটা যে কোথায় গিয়ে থামবে তা আমাদের অজানা। এখন যে অবস্থায় আছে তার চেয়ে যদি আর দুইগুণ বাড়ে তাহলে নিম্নশ্রেণীর মানুষদের জন্য আরেকটা ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। অথচ এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী জনসভায় একবার নয় বারবার ১০ টাকা মূল্য চাল দেয়ার আশ্বাস দিইয়েছিলেন।

অথচ তিনি আজ পরিষ্কার ভাবে তা অস্বীকার করছেন। আমার স্মরণশক্তি প্রধানমন্ত্রীর মত খুব একটা খারাপ না। আমার এখন স্পষ্ট একটা জনসভার কথা মনে আছে। তিনি চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানের জনসভায় বলেছিলেন “আপনারা ১০ টাকা দিয়ে চাল কিনতে চান নাকি ঐ দুর্নীতিবাজদের আবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনতে চান তা আমি আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম। আমাকে ভোট দিলে আপনারা ১০ টাকা দামের চাল কিনে পেট ভরে দুমুঠো খেতে পারবেন,কিন্তু ঐ দুর্নীতিবাজদের ভোট দিলে কিছুই পাবেন না, ওরা শুধু নিজেদের পেট ভরবে।

“ এখন প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন যে উনি চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে কোন নির্বাচনী জনসভা করেননি তা হলে আমার আর বলার কিছু নাই। হয়তো আমি পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানারজির কোন নির্বাচনী জনসভা দেখেছিলাম! তার জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু এটাতো সত্যি যে আজ দ্রব্যমূল্যর যে অবস্থা তা একটা ভীতিকর ও অসহনীয়। সেইটা নিয়েও বিরোধীদল এতদিন চুপ ছিলো যা তারা আজ তাদের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করেছে। এবার আসুন শেয়ার বাজার।

শেয়ার বাজারে যে আওয়ামীলীগ অদৃশ্য এক দৈত্য পুষে তা তারা এইবার আবার প্রমান করলেন। ৯৬ সালের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা তাদের সেই পোষা দৈত্যটি এবার ঘটিয়েছে। অথচ তার জন্য সরকার কোন সঠিক বিচারতো করেননি বরং উনার মহাজ্ঞানী অর্থমন্ত্রী প্রকাশ্যই বললেন যে “কেলেংকারির সাথে কিছু নাম এসেছে যা বাদ দিতে হবে’’। একজন মন্ত্রি যদি জনগণের বিপক্ষে প্রকাশ্য মুল অপরাধীদের পক্ষে এইভাবে কথা বলতে পারে তাতেই বুঝা যায় যে দৈত্যটা যে রুপকথার কোন দৈত্য নয়, তা বাস্তবেই এই সরকারের ছায়ায় আছে। ৪৪ লক্ষ সাধারন বিনিয়োগকারীর কান্নাতেও প্রধানমন্ত্রির মন গলেনি।

তাহলে কি ধরে নিবো যে দৈত্যটা যতজন বিনিয়োগকারীর ক্ষতি হবে বলেছিলো হিসেবে তার চেয়েও কম ঘটেছে? যার জন্য ৪৪ লক্ষের ৮৮ লক্ষ চোখের পানির কোন মূল্যই আপনার নেই? এই বিষয় নিয়েও বিরোধীদল আপনাদের উপর ঝাপিয়ে পরেনি। এবার আসুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারনাটা আপনাদেরই সৃষ্টি যার জন্য একদিন লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। কতগুলো হরতাল করেছিলেন তা আর নাইবা বললাম। এখন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেন যে আপনার এতো মাথা ব্যথার কারন হলো এবং কেনই যে আগামি নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন কিনা তার ভয় আপনার মাঝে আসলো তা এই ক্ষুদ্র মানুষের এখনো বোধগম্য হয়নি।

এর জন্য হয়তো আমাকে আবার জন্মগ্রহণ করতে হবে। আর যদি বদলাবেনই তাহলে এরমত একটা স্পর্শকাতর বিষয় কেন আপনি ও আপনার দল একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন? বিরোধীদল না হয় বুঝলাম যে ওরা আপনার কথা শুনে না, আপনার সাথে কোন কথা বলবে না। ওরা অবাধ্য ও দুষ্টছেলের দল দল। কিন্তু সাধারন জনগণতো আর আপনার অবাধ্য নয়। আপনিতো তাদের জিজ্ঞেস করতে পারতেন।

আপনি বিরোধীদল কে বলতে পারতেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণ চায় কি চায় না তার একটা আসল পরীক্ষা হয়ে যাক। জনগণ যা মানবে আমরা দুজনেও তা মানবো। আপনি শুধুমাত্র একটা ‘হাঁ’ ও ‘না’ ভোট নিয়ে জনগণের সামনে সৎভাবে দাঁড়াতে পারতেন। এবং একটি সত্যি কারের অবাধ ও সুষ্ঠু গণভোট করতে পারতেন। তখন যদি জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার না চাওয়ার পক্ষে রায় দেয় তখন বিরোধীদল আজ এই আন্দোলনে নামতে পারতোনা।

নামলেও জনগণ তাদের মানতো না। কিন্তু আপনি ও আপনার দল আজ এই সুযোগটা তাদের করে দিয়েছেন যার ভুক্তভোগী হলাম আমরা এই সাধারন জনগণ। আসলে কি আপনার যদি সত্যিকারের দেশপ্রেম থাকতো এবং জনগণের উপর আস্থা থাকতো তাহলে আপনি বিরোধী দলকে এতগুলো ইস্যু দিতে পারতেন না। আজ যখন বিরোধী দল আন্দোলনে নেমেছে তখন আবার তাদের নির্মম ভাবে পেটাচ্ছেন যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারন করবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আপনি কোনদিন এই সাধারণ মানুষের মত দেশটাকে এতো সাধারণ ভাবে ভালোবাসেননা।

আপনার ভালোবাসা হচ্ছে অসাধারন ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় আছে দেশের দোহাই দিয়ে আপনার কল্যাণ, যার বিপরীতে আছে এই দেশ আর ১৬ কোটি মানুষের অকল্যাণ ও ধ্বংস। সারাজীবন নিজের জন্য করেছেন,পেয়েছেনও অনেক। এইবার অন্তত শেষ বয়সে দেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য দয়া করে একবার ভাবুন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.