আমি আমাকে চিনি না শয়তান কে? শয়তান বলে কি বাস্তবে কিছু আছে? নাকি এটা একটা নিছক কল্পনা? নাকি সমাজে প্রচলিত কোন গাল-গল্প? মূলতঃ এটা আমাদের আকীদার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জ্বিনকে বিশ্বাস করা অদৃশ্যে বিশ্বাসের একটি অংশ। এবং একজন মুসলিমের ঈমান পূর্ণতা পায় না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে এই অদৃশ্য বিষয়ে বিশ্বাস করে। যদিও বা এই অদৃশ্য বিষয় তার বুদ্ধিমত্তা বা চিন্তার সাথে খাপ না খায়। জ্বিনের অস্তিত্ব কোরআন শরীফ ও হাদীস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।
আল্লাহ্ বলেন :
“আমি জ্বিন ও মানুষকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি” [আয্ যারিয়াত : ৫৬]
“বলুন : আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জ্বিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে অতঃপর তারা বলেছে আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি। ” [আল-জিন : ১]
“অনেক মানুষ অনেক জ্বিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জ্বিনদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত। ” [আল-জ্বিন : ৬]
মহানবী (সঃ) বলেন: “তিন ধরনের জ্বিন রয়েছে : একদল, যারা সর্বদা আকাশে উড়ে বেড়ায়, আরেকদল যারা সাপ ও কুকুরের আকার ধারণ করে থাকে এবং তৃতীয়দল পৃথিবীবাসী, যারা কোন এক স্থানে বাস করে বা ঘুরে বেড়ায়। ” [বায়হাকী ও তাবারানী]
শয়তান সম্পর্কে আহল-আল-সুন্নাহ এর বিশ্বাস:
শয়তান হলো জ্বিন। আল্লাহ বলেন :
“আর আদমকে সেজদা করার জন্য সকল ফেরেশতাকে বলা হলো।
সকলেই সেজদা করল। একমাত্র ইবলিস ব্যতীত। সে ছিল জ্বিনদের অন্তর্ভূক্ত। সে আল্লাহ্র অবাধ্য হলো…” [সূরা আল কাহফ : ৫০]
আর জ্বিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানবজাতির পূর্বেই এক ধোঁয়াহীন আগুন হতে, আল্লাহ বলেন :
“এবং জ্বিনকে এর পূর্বেই সৃষ্টি করেছি গনগনে শিখা থেকে। ” [হিজর : ২৭]
তাই মানবজাতির পূর্বেই জ্বিনের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল এবং তাদের একমাত্র দায়িত্ব হলো আল্লাহ্র দাসত্ব করা।
মানুষের মতই জ্বিনদের চিন্তার স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা আছে। এবং তাদেরকে কৃতকর্মের জন্য আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আদম (আঃ) সৃষ্টির পূর্বে জ্বিনদের আবাসস্থল ও জীবন প্রণালী কেমন ছিল সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানি না। যেহেতু আল্লাহ্ এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কোরআনে কিছু বলেননি তাই এটা আমাদের নিকট তেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়।
আদম (আঃ) এর সৃষ্টি:
জ্বিনের পরই আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।
আল্লাহ্র সকল সৃষ্টির মধ্যে আদম (আঃ) হলেন সর্বশেষ সৃষ্টি। ইবনুল কায়্যিম তাঁর ‘আল-ফাওয়াইদ’ গ্রন্থে আদম (আঃ) কে সর্বশেষে সৃষ্টির করার পেছনে দশটি কারণ দেখিয়েছেন। তার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে:
• আদম (আঃ) ও তাঁর সন্তান-সন্ততি এবং বংশধরদের জন্য উপযুক্ত আবাসস্থল থাকতে হবে।
• মানুষের জন্যই বাকী সকল কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে।
• একজন দক্ষ কারিগর তার সৃষ্ট কর্মের পরিসমাপ্তি তেমন নিখুঁতভাবেই করেন, যেমন ভাবে তিনি এর সূচনা করেছিলেন।
• আল্লাহ্ তার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ (কোরান), শ্রেষ্ঠ পয়গম্বর (হযরত মুহাম্মদ সঃ) শ্রেষ্ঠ জাতি (মহানবীর (সঃ) উম্মত) সর্বশেষেই পাঠিয়েছেন। এমনকি ইহকালের চেয়ে পরকালই শ্রেয়তর। অনুরূপে আল্লাহ তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে সর্বশেষে তৈরি করেছেন।
সকল জ্বিন ও ফেরেশতা আদম (আঃ)কে সেজদা করল একমাত্র ইবলিস ব্যতীত:
আদম (আঃ)কে সৃষ্টির পর আল্লাহ্ সকল ফেরেশতা ও জ্বিনকে আদম (আঃ)কে সিজদা করতে বললেন। এখানে লক্ষণীয় যে, এর দ্বারা আদম (আঃ) এর ইবাদত করতে বলা হয়নি বরং এর দ্বারা আল্লাহ্র আনুগত্য করতে বলা হয়েছে।
কারণ সেজদা করবার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ্ দিয়েছেন। একমাত্র ইবলিস ব্যতীত সকলেই নির্দেশ পালন করল। এই ঘটনা কোরআন শরীফে ৭ বার উল্লিখিত হয়েছে যেমন :
“আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব তৈরি করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছি আদমকে সেজদা কর। তখন সবাই সেজদা করেছে : কিন্তু ইবলিস ব্যতীত।
সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আল্লাহ্ বললেন: স্বয়ং আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি তখন কিসে তোকে সেজদা করতে বারণ করল? সে বলল: আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা। (আল্লাহ) বললেন: এখান থেকে তুই যা। এখানে তোর অহংকার করার কোন অধিকার নাই।
অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত। সে বলল: আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ্ বললেন: তোকে সময় দেয়া হলো। সে বলল: যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও অবশ্যই তাদের জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকবো।
এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক হতে, পিছনের দিক থেকে, ডান ও বাম দিক হতে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেন না। ” [আরাফ : ১১-১৭]
অর্থাৎ ইবলিস ঔদ্ধত্য প্রকাশ করল যে সে আদম (আঃ) অপেক্ষা শ্রেয়তর। এমনকি ইবলিস আল্লাহ্র ওপর দোষারোপ করে বলল “যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন”। তার ভাগ্য নির্দিষ্ট হয়ে গেছে জেনে সে মানবজাতিকে বিপথে পরিচালনা করার অনুমতি আল্লাহ্র কাছ থেকে পেল।
সে এটা স্পষ্ট ঘোষণা করল যে সে প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবজাতিকে বিপথে পরিচালিত করবে। আর এই বিষয়টিকেই আমরা আমাদের পরবর্তী আলোচনায় বিশদভাবে ব্যাখ্যা করব।
জান্নাত হতে আদম (আঃ), হাওয়া (আঃ) ও ইবলিস বহিষ্কৃত হলো ও পৃথিবীতে তাদের আগমন ঘটল:
জান্নাতে আদম ও হাওয়ার (আঃ) কাছে ইবলিস এসে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাবার জন্য প্ররোচিত করল এবং তাঁরা এই ফাঁদে পা দিলেন। আল্লাহ্ তখন তাদের উভয়কেই (আদম, হাওয়া) পৃথিবীতে প্রেরণ করলেন।
“তোমরা উভয়েই এখান থেকে এক সঙ্গে নেমে যাও।
তোমরা একে অপরের (আদম ও ইবলিস) শত্রু। তারপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না। এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে হে পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ্ বলবেন এমনিভাবে তোমার কাছে আয়াতসমূহ এসেছিল।
অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব। ” [ত্বোয়াহা : ১২৩ : ১২৬]
এরপর আল্লাহ্ ঘোষণা করলেন যে, আদম (আঃ) ও তার বংশধরদের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে থাকতে হবে। তাদের শত্রু শয়তান ও তার সাথীরাও পৃথিবীতে অবস্থান করবে। শয়তান মানবজাতিকে আল্লাহ্র স্মরণ থেকে বিরত রেখে পাপ, মিথ্যা, শিরক ও অন্যান্য কাজ, দ্বীনকে না জানা, সঠিকভাবে পালন না করা ইত্যাদিতে লিপ্ত রাখবে।
শয়তানের উদ্দেশ্য:
শয়তান হলো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। আল্লাহ্ বলেন:
“হে বনী আদম। আমি কি তোমাদের বলে রাখিনি যে, শয়তানের ইবাদত করো না। সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ” [ইয়াসীন : ৬০]
আল্লাহ্র এটা অশেষ দয়া যে তিনি মানুষকে শয়তানের উদ্দেশ্য, কর্মপদ্ধতি ও এর থেকে পরিত্রাণের উপায় বাতলে দিয়েছেন।
শয়তানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন:
“শয়তান তোমাদের শত্রু। অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর। সে তার অনুসারীদের আহ্বান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়। ” [ফাতির : ৬]
অর্থাৎ আল্লাহকে অবিশ্বাস, শিরক ও বিভিন্ন পাপ কাজের মাধ্যমে শয়তান মানুষকে জাহান্নামের আগুনের দিকে ঠেলে দেয়।
শয়তানের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
“তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হতে বলে।
অতঃপর যখন সে কাফের হয় তখন শয়তান বলে: তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। আমি বিশ্বপালনকর্তা আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় করি। ” [হাশর : ১৬]
আমরা পরবর্তী পোষ্টে শয়তানের কার্যসিদ্ধির বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
শয়তান বিভিন্ন পন্থায় তার কাজ চালিয়ে যায়। এমনকি অনেক মুসলিম শয়তানের মিত্র হিসেবে কাজ করছে অথচ তারা এ বিষয়ে সচেতন নয়।
শয়তান এক গভীর ষড়যন্ত্রকারী। সকল খারাপ কাজই শয়তানের কুমন্ত্রণার ফসল। শয়তানের এসব খারাপ কাজ সম্পর্কে আল্লাহ্ ঠিকই অবহিত আছেন। তাই আল্লাহ্ ও মুমিনদের কাছে এসব ষড়যন্ত্র খুবই দুর্বল:
"তোমরা জিহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল। ” (নিসা :৭৬)
এখানে শয়তান কিভাবে মানুষকে বিপথে চালিত করে তা বর্ণিত হলো :
১. অনর্থক মতানৈক্য ও সন্দেহের উদ্রেক করার মাধ্যমে :
রাসুল (সঃ) বলেন “বস্তুতপক্ষে শয়তান প্রকৃত মুমিনদেরকে তার পথে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হবে… কিন্তু শয়তান তাদের মধ্যে মতানৈক্য ও বিরোধ সৃষ্টির পাঁয়তারা করবে।
” [মুসলিম শরীফ] অর্থাৎ শয়তান মুমিনদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টির চেষ্টা করবে এবং তাদেরকে একে অন্যের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেবে যাতে তারা আল্লাহ্র স্মরণ হতে বিরত থাকে।
এমনকি আমাদের মনে যে খারাপ চিন্তা ও সন্দেহের উদ্রেক হয় তা শয়তানেরই কাজ। রাসূল (সঃ) এর স্ত্রী সাফিয়্যা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,
"রাসূল (সঃ) একবার ইতিকাফের সময় মসজিদে অবস্থান করছিলেন। আমি রাত্রিবেলা তাঁর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। কথা শেষ হলে আমি যখন বাড়ি ফিরব তখন রাসূল (সঃ) আমাকে এগিয়ে দেবার জন্য সঙ্গে আসলেন।
পথিমধ্যে দুজন আনসার আমাদের অতিক্রম করে গেল এবং রাসূল (সঃ) কে দেখার সাথে সাথে তারা দ্রুত চলতে লাগল। রাসূল (সঃ) তাদের ডেকে বললেন, ‘এদিকে এসো। আমার সাথে সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রয়েছেন। ’ তখন তারা বলে উঠলেন: ‘হে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ), আল্লাহ্ সকল সীমাবদ্ধতা হতে কতই না মুক্ত। ’ তখন রাসূল (সঃ) বললেন ‘রক্ত যেমনভাবে শিরার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান ঠিক তেমনিভাবে শয়তান মানুষের মাঝে প্রবাহমান।
এবং আমার ভয় হল যে শয়তান হয়ত তোমাদের অন্তে্রে কোন কুমন্ত্রণা দেবে, ফলে এ নিয়ে বিভিন্ন কথা উঠবে। ” [বুখারী]
তাই এটা বাধ্যতামূলক যে, আমার সম্বন্ধে কোন ব্যক্তির যদি কোন ভ্রান্ত ধারণা থাকে তবে তা ভাঙ্গিয়ে দেয়া। শয়তানই মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণার, অমূলক চিন্তা-ভাবনার সৃষ্টি করে। সে মানুষকে অন্যের খারাপ চিন্তা , ধারণাসমূহ শুনতে উৎসাহ দেয় এবং তদনুযায়ী মনে খারাপ ধারণার সৃষ্টি করে। এমনকি প্রার্থনার সময় পর্যন্ত শয়তান মানুষকে রেহাই দেয় না।
ঠিক মত ওযু করা হয়েছে কিনা, ঠিকমত সূরা পড়া হয়েছে কিনা ইত্যাদি ধারণা মনের মধ্যে সৃষ্টি করে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটায়। তাই অনেকে ইবাদতের সময় কিছুটা অস্বস্তিতে ভোগে।
২. বিদাতকে উৎসাহিত করা :
শয়তান এই বলে মানুষকে বিদাতে প্ররোচিত করে: “এখনকার মানুষ দ্বীন হতে অনেক দূরে সরে গেছে এবং দ্বীনমুখী জীবনব্যবস্থাও তাদের কাছে কঠিন মনে হয়। তাই আমরা ধর্মে এমন নতুন কিছু কেন সংযোজন করছি না যার দ্বারা মানুষ আবার দ্বীনমুখী হয়। ” শয়তান মানুষকে আরও বলে: “আমরা কেন নতুন হাদীস তৈরি করছি না যার দ্বারা মানুষের অন্তেরে ভয় সৃষ্টি হয় এবং ধর্মমুখী জীবনব্যবস্থার প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হয়।
” এর ফলে তারা নতুন নতুন হাদীস তৈরি করে এবং বলে যে: “আমরা রাসূল (সঃ) এর বিপক্ষে মিথ্যা বলছি না, বরং আমরা তাঁর পক্ষে মিথ্যা বলছি। ” তাই তারা নিজেদের মনগড়া কথা মতো জাহান্নাম ও জান্নাতের বর্ণনা দেয় এবং মনে করে এর দ্বারা তারা ভাল কাজ করছে। সুফিয়ান আস সাওরী (রঃ) বলেন:
“শয়তান পাপ অপেক্ষা বিদাত অধিক পছন্দ করে। কারণ পাপ কাজ করলে অনুতপ্ত হবার সুযোগ থাকে। কিন্তু বিদাতে তা থাকে না।
কারণ সে এটাকে ভাল কাজ বলে মনে করছে। ”
বিদাত হলো শয়তানের এক মোক্ষম অস্ত্র যার দ্বারা সে আমাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ ও বিশ্বাসের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। বিদাত পাপ কাজ হতেও ভয়ানক। কারণ এর দ্বারা পুরো ধর্মব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে এবং মুসলিমদের ঐক্য নষ্ট হয়। সাধারণত পাপ কাজের প্রভাব ব্যক্তির উপর পড়ে, ধর্মের ওপর পড়ে না।
কিন্তু বিদাতের মাধ্যমে শয়তান মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বিভাজন সৃষ্টি করছে যাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে বিদাত পালনের বিভিন্ন মতভেদপূর্ণ ব্যবস্থা।
বিদাতের মাধ্যমে শয়তান মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও বিভাজন সৃষ্টি করছে। শয়তান মানুষের কাছে সুন্নাহকে অপর্যাপ্ত বলে তুলে ধরে। মানুষকে সুন্নাহ্র ওপর চলতে ও ধৈর্য্য রাখতে বাধা দেয়। তাই মানুষ বিদাতের সূচনা করে যা মহানবী (সঃ) ও সাহাবীরা কখনোই করতে বলেননি বা করেননি।
এই বিদাত অবলম্বনকারী ও অমান্যকারীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিদাত অনুসরণই হয়ে ওঠে মানুষকে পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তি। তাই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে মুক্তির জন্য আমাদের জীবনের সকলক্ষেত্রে সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে।
আল ইরবাদ ইবনে সারীয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত:
“রাসূল (সঃ) আমাদের সামনে এমন কিছু আলোচনা করলেন যার দ্বারা আমাদের অনর্ত ভয়ে পূর্ণ হয়ে গেল এবং আমাদের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। তখন আমরা বললাম ‘এটা আমাদের কাছে আপনার বিদায়ী ভাষণের ন্যায় মনে হচ্ছে।
আমাদের কিছু উপদেশ দিন। ’ তখন রাসূল (সঃ) বললেন: ‘আমি তোমাদের আল্লাহ্কে ভয় করতে নির্দেশ দিচ্ছি আর কোন দাসও যদি তোমাদের নেতা হয় তবুও তাকে তোমরা মান্য করবে। তোমাদের মধ্যে যারা দীর্ঘজীবী হবে তারা অনেক বিরোধপূর্ণ ব্যাপার দেখতে পাবে। তাই তোমরা আমার সুন্নাহ অক্ষত রাখবে এবং সঠিক পথে পরিচালিত খলীফাদের নির্দেশমত চলবে। বিদাত সম্পর্কে সাবধান! (দ্বীনের অংশ হিসেবে) সকল নবউদ্ভাবিত বিষয়ই বিদাত।
আর সকল বিদাতই পথভ্রষ্টতা, আর সকল পথভ্রষ্টতার পরিণামই জাহান্নামের আগুন। ”
বিদাত এই মুসলিম উম্মাহ্-এর জন্য একটি ধ্বংসাত্মক ব্যাপার। তাই একজন প্রকৃত মুমিন হিসেবে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন থেকে বিদাত সমূলে উৎপাটন করতে হবে। এই বিদাত কোন ইবাদত কিংবা বিশ্বাসের ক্ষেত্রেই হোক বা কোন ধারণাতেই হোক যেটাই সুন্নাহর পরিপন্থী তাই ত্যাগ করতে হবে।
৩. শুধু একটি বিষয়কে সমগ্র দ্বীনের উপর প্রাধান্য দেয়া:
এটি ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত উভয়ক্ষেত্রেই হতে পারে।
ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে যেসব ঘটনা ঘটে তার কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে দেয়া হলো।
• ক. অনেক ব্যক্তি বিভিন্ন পাপকাজে লিপ্ত থাকে আবার ঠিকমত সালাত আদায় করে। অনেকে মনে করে যেহেতু শেষ বিচারের দিনে সালাতের জন্য প্রথমে হিসাব নেয়া হবে, তাই সালাত ঠিক মত আদায় করলে সাথে সাথে পাপ কাজ করলেও সমস্যা নাই। আবার অনেকে সালাতকে এমন উচ্চস্তেরের ইবাদত মনে করে যে, সে ধারণা করে যে এর দ্বারা সকল পাপকর্ম মাফ হয়ে যাবে। এসবই ভ্রান্ত ধারণা।
সালাত অবশ্যই ইসলামের একটি মূলস্তম্ভ, কিন্তু কেবল সালাতই পূর্ণাঙ্গ ইসলাম নয়। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে যে সালাত মানুষকে খারাপ কাজ হতে বিরত রাখে এবং তাকে পবিত্র করে। কিন্তু সালাত কোনক্রমেই খারাপ কাজে লিপ্ত হবার অনুমতি দেয় না। এবং এ কথা মনে করে নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই যে সালাতই সকল পাপ কাজের গুনাহ হ্রাস করবে। এসব ভ্রান্ত ধারণা শয়তানেরই প্ররোচনা।
বরং প্রকৃত সত্য হচ্ছে সঠিক পদ্ধতিতে ও যথাযথ উপলব্দি সহকারে যিনি বিনয়াবনত হবেন তিনি আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন এমন সব কাজের নিকটবর্তী হতে লজ্জা পাবেন ও ভয় করবেন এবং সকল কাজে আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতার ব্যাপারে সবসময় সচেতন থাকবেন।
• খ. উপরে যা উল্লেখ করা হলো তার ঠিক বিপরীত আরেকটি শয়তানের প্ররোচনাজনিত বিভ্রান্তি হলো এই যে কেউ বা দাবী করে থাকে ধর্ম মানেই হলো মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও লেনদেনের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করা, মিথ্যা না বলা এবং কারো হক নষ্ট না করা। তারা এই ধারণায় এতটাই মগ্ন যে তারা ইবাদত হতে দূরেই থাকে কারণ মহানবী (সঃ) বলেছেন: “দ্বীন মানুষের সাথে লেনদেন বৈ নয়। ” অতএব এখানে অন্যান্য ইবাদতের স্থান কোথায়।
এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে লেনদেন ও আচরণের ক্ষেত্রে আল্লাহর আদেশ নিষেধসমূহের প্রতি সতর্কতার সাথে অনুগত থাকা আবশ্যাক। কিন্তু এর দ্বারা কারো পক্ষে (শয়তানের প্ররোচনায়) নিজের মনগড়া ধারনা থেকে আল্লাহর অন্য আদেশসমূহকে গুরুত্বহীন গন্য করার কোন উপায় নেই। অথচ আল্লাহ যেসব বিষয়/ইবাদত বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন তা সর্বাত্নকভাবে পালন করার চেষ্টা করা সকলের জন্যই অপরিহার্য। কোন বাধ্যতামূলক বা ঐচ্ছিক ইবাদাতের তাৎপর্য কেউ বুঝতে না পারলেও তার জন্য জরুরী হচ্ছে তা পালন করতে থাকা আর বিনম্রভাবে দ্বীনের যথাযথ ঞ্জান অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, আশা করা যায় আল্লাহ তাকে নিজ অনুগ্রহে উপলব্ধি দান করবেন।
• গ. অনেকে মনে করে ভাল চিন্তা বা ভাল উদ্দেশ্যই আসল।
তাই অন্তর পবিত্র রাখতে হবে। এই ধরনের লোকেরা তাই আল্লাহ্র ইবাদত ও সৎকর্ম থেকেও দূরে থাকে। শয়তান যাদেরকে এই বিভ্রান্তিতে নিপতিত করেছে তারা এটা বুঝতে অক্ষম যে আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে অজ্ঞতা, এর প্রতি উদাসীনতা ও একে গুরুত্বহীন গন্য করার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের অন্তরকে এরমধ্যেই চুড়ান্তভাবে দূষিত করেছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে আল্লাহর প্রতি বিনম্র অনুভুতি, তার আনুগত্যের ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান ও তদনুযায়ী অনুসরণের মাধ্যমেই শুধুমাত্র অন্তর বিশুদ্ধতা অর্জন করে, অন্য কোনভাবে নইয়। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে অন্তরের প্রকৃত বিশুদ্ধতা কখনোই আল্লাহর ইবাদত, আনুগত্য তথা সৎকর্ম হতে দূরে রাখে না বরং নিকটবর্তি করে।
অতএব বিশুদ্ধ অন্তর নিয়েই আমরা সৎকর্ম তথা আল্লাহর ইবাদাত/আনুগত্য করব।
• ঘ. মুসলিম সমাজে একটি ভ্রান্তধারণা এই যে কোরআনে হাফেয হওয়া বা সুন্দর উচ্চারণে কোরআন শরীফ পড়তে পারাটাই সব এবং এটাই আল্লাহ্র রাস্তায় চলার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের উচিত কোরআন শরীফ বুঝে পড়া এবং এর শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। উপরোক্ত বিষয়গুলিকে মানুষ সাধারণত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে এবং ইবাদত ও অন্যান্য ভাল কাজ হতে দূরে থাকে।
• ঙ যেসব ফাঁদ পেতে শয়তান বেশ সহজেই অনেক মুসলিমকেই প্রবঞ্চিত করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার যুক্তি, পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যের দোহাই আর অন্ধ আনুগত্যর অজুহাত।
দুনিয়ার এত লোক কি ভুল করছে, আমার বাপদাদা চৌদ্দপুরুষের রীতিনীতি ও ঐতিহ্য কিভাবে আমি অস্বীকার করব, আমার গুরু/পীর/উস্তাদ/দল কিভাবে ভুল করতে পারেন – ইত্যাদি কুযুক্তি যুগে যুগে শয়তান বিভ্রান্ত মানুষের সামনে সত্য প্রত্যাখানের চমৎকার অজুহাত হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
আল্লাহ বলেনঃ
“যদি আপনি এই পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের অনুসরণ করেন, তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে দেবে। ” (সুরা আল-আনআম ৬:১১৬)
“আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, সে হুকুমের আনুগত্য কর যা আল্লাহ নাযিল করেছেন, তখন তারা বলেঃ কখনো না, আমরা ত সে বিষয়েরই অনুসরণ করব, যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানত না, আর সরল সঠিক পথেও ছিলনা। বস্তুতঃ এসব সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের উদাহারণ এমন, যেন কেউ এমন জীবকে আহবান করছে, যা কিছুই শোনে না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া।
এরা বধির, মুক এবং অন্ধ। সুতারাং এরা কিছুই বোঝে না” (সুরা আল-বাকারা ২১:৭০-১৭১, আরো দেখুন ৩৭:৬৯-৭০; ৩১:২১)
একবার রাসূলুল্লাহর সাহাবী আদি ইবন হাতিম (রাঃ), যিনি খ্রীষ্ট ধর্ম ছেড়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করতে শুনলেনঃ
“তারা তাদের পণ্ডিত এবং সন্ন্যাসীদেরকে আল্লাহর পাশাপাশি তাদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে। ”(সূরা আত তাওবাহ ৯:৩১)
শুনে তিনি মন্তব্য করলেন “নিশ্চয়ই আমরা তাদের ইবাদাত করতাম না। ” আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাঁর দিকে ফিরে প্রশ্ন করলেনঃ “এমনকি হতো না যে আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তারা তা হারাম করে দিত, এবং তোমরাও সেগুলোকে হালাল করে নিতে?”, তিনি জবাবে বললেনঃ “হাঁ, আমরা নিশ্চয়ই তাই করতান। ” আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেনঃ “ওভাবেই তাদের ইবাদাত তোমরা করতে।
”(তিরমিজি)
মুসলিম মাত্রেরই স্মরণ রাখা উচিৎঃ
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরূষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হইয়। ” (সূরা আলা আহযাব, ৩৩:৩৬)
সামাজিক ক্ষেত্রে যেসব ঘটনা ঘটে তার কয়েকটি নিম্নে বর্ণিত হলো :
ক. দ্বীনের প্রতি দাওয়াতের ব্যাপারে কিছু লোক বিশ্বাস করেন দাওয়াতের ব্যাপারে সময় ও শ্রম ব্যয় করাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা দ্বীনের প্রতি আহবানের ব্যাপারে শরীয়ায় যে স্পষ্ঠ মূলনীতি (principles, methodology) ও অগ্রাধিকারের রুপরেখা (priorities) প্রণীত আছে তার ব্যাপারে উদাসীন থাকেন। সাধারণত, তারা বিনাবাক্যব্যয়ে নেতৃস্থানীয়দের আনুগত্য করে থাকেন। তারা পবিত্র কুরআন, রাসুল (সাঃ) এর সহীহ হাদীসসমূহের প্রমাণাদি ও এর ভিত্তিতে সলফে সালেহীনগ্ণ যে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিশ্লষন রেখে গিয়েছেন তার ব্যাপারে উদাসীন ও অজ্ঞাত থাকতে পছন্দ করেন।
ফলে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট নির্দশেনার পরিবর্তে মনগড়া ধ্যান-ধারনা ও চিন্তা ভাবনা দ্বারা পরিচালিত হন। যথেষ্ট আন্তরিকতা নিয়েই দুর্বল ও বানোয়াট হাদীস আর এম্ন অনেক গল্পকাহিনী দিয়ে মানুষকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে যান যেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্ত আকীদার শিক্ষা দেয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হ্য় তারা সচেতন নন যে আল্লাহ ও তার রাসূলের (সাঃ) নামে বানিয়ে কিছু বলা জঘন্যতম অপরাধ, উদ্দেশ্য যেমনি হোকনা কেন।
আল্লাহ বলেনঃ (ভাবার্থঃ)
” … …. … বলুনঃ আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও অপ্রাকাশ্য অশ্লীলতা, পাপ কাজ, অন্যায় ও অসংগত বিদ্রোহ ও বিরোধিতা এবং আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করা যার পক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেন্নি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই। ” (সূরা আলা আরাফ ৭:৩৩।
এখানে আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজগুলোর ধারাবাহিকতার উর্ধক্রমে বলে, এটাকে সবশেষে উল্লেখ করা হয়েছে। )
“… … বলুনঃ তোমাদের কাছে কি কোন নিশ্চিত জ্ঞান আছে যা তোমরা প্রমাণ হিসেবে উপস্থিত করতে পার? তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরন কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল। বলুন, অতএব চুডান্ত প্রমাণ আল্লাহরই … … । ” (সূরা আনআম ৬:১৪৮,১৪৯)[আরো দেখুন - ২:৮০,১৬৯, ৪:১৫৭, ৬:২১,৯৩,১১৬,১৪৪, ৭:২৮,৩৭,৬২, ১০:১৭,৩৬,৬৮,৬৯, ১১:১৮,১৮:১৫,২৩:৩৮, ২৯:৬৮, ৪২:২৪, ৫৩:২৮,৩২, ৬১:৭]
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
"আমি যা বলিনি সে কথা যে আমার নামে বলবে তার আবাসস্থল হবে জাহান্নাম। " (বুখারীঃ সালামাহ ইবন আকওয়া বর্ণিত।
একই/কাছাকাছি অর্থবোধক হাদীস ১০০ এর বেশী সংখ্যক সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে, যা এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ। )
একশ্রেণীর লোক মনে করেন যে, বর্তমানের মুসলিম ও কাফেরদের সামগ্রিক অবস্থান সম্পর্কে জানাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনৈতিক সম্পর্কই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেই আগের আমলে নেই। তাই এই উম্মাহ্র প্রকৃত মঙ্গলের ক্ষেত্রে ইবাদত ও ঈমান তেমন কার্যকরী নয়।
এই শ্রেণীর লোকেরা কমিউনিজম, ধর্মনিরপেক্ষতা, ফ্রিমেসন ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান রাখেন। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক ধ্যানধারনা, মতবাদ ও সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে দ্বীনের জ্ঞানসম্পন্ন মুসলিমদের মধ্যে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ থাকতে পারেন যারা প্রয়োজনে এ বিষয়ে অবগত/সতর্ক করবেন। সাধারনভাবে সকল মুসলিমের এসব বিষয়ে জানা জরুরী নয়। সকল মুসলিমের জন্য যা জানা একান্তভাবে জরুরী তা হচ্ছে তাওহীদ ও ঈমানের বুনিয়াদি বিষয়াবলীর জ্ঞান, যা বস্তুতঃ দ্বীনের ভিত্তি – কেবল তাত্ত্বিক/একাডেমিক জ্ঞান নয় বরং প্রয়োজন সঠিক অনুধাবন ও কার্যত বিশ্বাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।