হাউকাউ পার্টি
শয়তান একই সাথে একটা বিশেষ্য আর বিশেষন শব্দ। বিশেষ্য হিসেবে শয়তান এর অর্থ শত্রু, প্রতিপক্ষ আর বিশেষন হিসেবে এর অর্থ হলো খারাপ।
ইসলামী ধর্মমত অনুসারে শয়তান বা ইবলিস তৈরি করা হয়েছিল ধোয়বিহীন আগুন আর মানুষকে কাদা থেকে । শয়তানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তার নিজের কোন খারাপ কাজ বা সরাসরি মানুষের ক্ষতি করার শক্তি নেই। শুধুমাত্র মানুষের মনের ভেতর কুমন্ত্রনা দেবার শক্তি আছে।
শয়তান ছিলেন একজন আল্লাহর জন্য নিবদীত প্রাণ একজন জিন, অন্য সূত্র মতে শয়তান একজন অবাধ্য ফেরেস্তা। ফেরেস্তাদের স্বাধীন কোন ইচ্ছা নেই, তাদের মনে কখোনও খারাপ বা পাপ চিন্তা হয়না, কারন আল্লাহ আদের অবাধ্য হবার কোন শক্তি দেননি। ইবলিসই একমাত্র ফেরেস্তা, যে আল্লাহতালার অবাধ্য হয়েছিলেন।
সৃষ্টির সেরা আদম (আ: ) কে সেজদা না করার কারণে তাকে বেহেস্ত থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল।
"It is We Who created you and gave you shape; then We bade the angels prostrate to Adam, and they prostrate; not so Iblis (Lucifer); He refused to be of those who prostrate."
(Allah) said: "What prevented thee from prostrating when I commanded thee?" He said: "I am better than he: Thou didst create me from fire, and him from clay."
Qur'an 7:11-12
এরপরে তিনি শয়তান নামে পরিচিত হন এবং বলেন যে "যেহেতু অবাধ্যতার জন্য তিনি বিতারিত হলেন, তাই কেয়ামতের আগ পর্যন্ত আদমের সন্তানদের (মানুষ) তিনি ভুল ভুল পথে চলার জন্য প্ররোচনা দিয়ে যাবেন।
আদম ও হাওয়া এর সাথে তাকেও পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়।
হিব্রু বাইবেলেও 'হা শয়তান' নামক একজন ফেরেস্তার উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানকার বর্ণনা অনুসারে তিনি নিজে কোন খারাপ কাজ করেন না, মানুষের প্রতিটি পাপ আর খারাপ কজের দিকে সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টি অকর্ষন করেন।
খ্রীষ্টান ধর্ম আনুসারে একটা শয়তান হলো সাপ, যে ইভ কে নিষিদ্ধ ফল খাবার জন্য প্ররোচনা দিয়েছিলেন। এখানেও তাকে একজন ফেরেস্তা হিসেবে উল্লেখ কারা হয়েছে, যে সব সময় মানুষকে সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধচারণ করার মন্ত্রণা দেয়।
। The Book of Revelation এ শয়তান ও তার কর্মকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।
শয়তানের সংখ্যা হলো ৬৬৬। তবে বাইবেলের বুক অফ রিভেলেশনে কিন্তু এই শয়তানের এই সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই। বেশির ভাগ গবেষকদের মতে রোমান সম্রাট নিরোর উদ্দেশ্য করে ৬৬৬ সংখ্যার প্রচলন হয়, কারণ নিরোর সময়ে প্রাচীন খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের উপর বেশ কয়েকটি নৃশংস আক্রমন চালানো হয়েছিল।
কালের বিবর্তনে শয়তানিজম নামে একটি বিশেষ প্রপঞ্চ গড়ে উঠেছিল। এর মতাবলম্বিরা শয়তান কে দেবতা হিসেবে উপসান করে। শয়তান উপাসনার শেকড় অবশ্য আরও অনেক প্রচীন, যীশু খ্রী: এর জন্মেও আগে।
তবে এই Satanism বা প্রেতচর্চার বেশির ভাগ ধারণা কিন্তু আসল 'শয়তান' থেকে উদ্ভব হয়নি। ডাইনী আর অপদেবতার রিচুয়াল থেকে শয়তান উপাসনার বিভিন্ন ধারণা তৈরি হয়েছে।
এই উপাসকরা শয়তানকে মানুষ দেহধারী রূপে কল্পনা করে।
ধর্ম বিশ্বাস হিসেবে শয়তানবাদের প্রচলন হয় ১৯৬৬ সালের দিকে। এই সময় গড়ে ওঠে চার্চ অব শয়তান নামক একটা সংস্থা।
The Church of Satan এর ওয়েব সাইটের লোগো।
শয়তান উপসনার নামে মানুষ-এর ওপর নির্যাতন এবং আরো অনেক অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।
এরা বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচয় পায় শয়তান-এর উপাসক হিশেবে। প্রকৃতপক্ষে The Church of Satan শয়তান-এর উপাসনা করা কোনো সংগঠন নয়।
The Satanic Church প্রধানত একটি নাস্তিক সংগঠন এবং তাদের ধর্মগ্রন্থ The Satanic Bible এ রয়েছে, 'There is no God, there is no Devil. A person is insane if he believes in any of them. Satan is more of a mode of behaviour'. তারা বিশ্বাস করে ধর্ম মানুষকে তার নিজস্ব মানব বৃত্তি পালন করতে বাঁধা দিচ্ছে এবং তারা এর বিরোধী আর তাই তারা হলো Satanist.
শয়তানিজমের অনেক গুলো শাখা প্রশাখা আছে। যেমন: Theistic Satanism, LaVeyan Satanism, Rebel Satanism এবং সর্বশেষে Modern Satanism।
আধুনিক Satanism ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সমর্থন করে।
যাই হোক দুষ্ট ও পাজী মানুষদের উপমা হিসেবে আমাদের বাংলা ভাষায়ও এর ব্যপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন: শয়তানের হাড্ডী, শয়তানের ডিম, শয়তানের বাচ্চা ইত্যাদি
''এই লেখাটি একজন ভাল শয়তানের জন্য লিখিত হইয়াছে''
সংযোজন : 'চার্চ অব শয়তান' এর কিছু অংশ সংযোজিত হয়েছে,
ধ্রুব তারার "The Satanic Church এবং কিছু প্রচলিত ভুল বোঝাবুঝি" নামক পোস্ট থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।