তেরোর ব্লগ মানেই হাবিজাবি !! হুম শেষ রাতের দিকে আমি মারা গেলাম। যখন সেই দূর থেকে ট্রেনের ঝিক ঝিক শব্দ শুনা যায় হয়তো ঠিক তখনি। গন্তব্যহীন ট্রেনে উঠার আগে আমি একলা আমার পাশে বসে আছি।
হয়তো দীর্ঘদিন রোগে ভুগে, ঘুমের ঔষধ খেয়ে, বিষ খেয়ে নয়তো নিতান্তই ফট করে আমি মারা গেলাম। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে আমাকে দেখলাম কিছুক্ষন।
স্পন্দনহীন একটা কিছু। চশমাটা পাশেই পড়ে রয়েছে। এখন আর এটার কোনো প্রয়োজন নেই। এখন অবশ্য কিছুরই প্রয়োজন নেই। জগতের সবকিছুর উর্ধ্বে আমি।
সারা ঘরময় হেঁটে বেড়াচ্ছি। হয়তো আর কোনোদিন হবে না। এখনো বাসার কেউ জানে না। জানলেই প্রচন্ড একটা বিশৃংখলার সৃষ্টি হবে। আম্মু হয়তো ১-২ দিন পাগলের মত থাকবে।
এরপর সব ঠিক। ঠিক তো হতেই হবে। বেঁচে থাকার যুদ্ধে এইসব কষ্টের স্থান নেই। হয়তো কিছুদিন এরপর আর নয়। ভালোই হবে।
পড়ার টেবিল টার পাশে এসে দাঁড়ালাম। প্রচন্ড অগোছালো একটা টেবিল। ছোটবেলার ডায়রীগুলো পুড়িয়ে দেয়া উচিত ছিলো অনেক আগেই। করা হয়ে উঠে নি নিতান্তই আলসেমীর কারণে। এখন ঐগুলো কি সবাই পড়বে।
থাক এইসব ভেবে কাজ নেই।
বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। আকাশ আস্তে আস্তে ফর্সা হয়ে যাচ্ছে। সকালবেলার পাখিগুলো আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠছে। বাসার সামনে ছোট্ট রাস্তাটা দেখে আগের অনেক কিছু মনে পড়ে গেলো।
কত বন্ধু ছিলো আমার!! সারা সকাল আমরা খেলা করতাম ছোটবেলায়। একটু বড় হবার পর প্রতি ছুটির দিনে। আমাদের একটা মজার খেলা ছিলো। ট্রেন ট্রেন। আমাদের সবারই ট্রেনের প্রতি তীব্র আকর্ষন ছিলো।
হয়তো ছোটবেলা থেকেই রেললাইনের কাছাকাছি থাকি বলে। আমরা প্রায়ই দল বেঁধে ট্রেন দেখতে যেতাম। আমাদের ছোটবেলার সিদ্ধান্ত ছিলো আমরা একটা ট্রেন কিনবো। ঐ ট্রেন শুধু আমাদের থাকবে। আমাদের মাঝে ফারুক আকারে বড়সড় ছিলো তাই সে ট্রেন চালাবে।
হঠাত করে শুনি পাশের বাসার তিন তালার সুন্দর বড় আপু টা ট্রেনে কাটা পড়লো। এরপর থেকে আমাদের ট্রেন দেখার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। এতক্ষন পর্যন্ত তো সবকিছু ভালোই লাগছিলো। আপুটার কথা কেনো মনে পড়লো। আমি আপুর লাশ দেখে ১ মাস কারো সাথে কথা বলিনি।
আপু ঐদিন আমাকে বলেছিলো যাইরে !! হয়তো আর দেখা হবে না। হুম!!
টুং টাং শব্দে আবার নীচে তাঁকালাম। রিকশা যাচ্ছে একটা। ট্রেনের পর আমি রিকশা খুব পছন্দ করতাম। দল বেঁধে প্রায়ই আমরা রিকশায় ঘুরতাম।
তবে বড় হয়ে একজনের সাথে কতবার যে রিকশায় ঘুরেছি হিসাব নেই। সেই একজন কি ভালো আছে? যোগাযোগ বন্ধ। সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ ছিলো আমার। তাও ১-২ জন প্রায়ই আসতো খোঁজ নিতে। পরে বিরক্ত হয়ে তারাও আসা বাদ দিয়েছিলো।
আচ্ছা ওরা কি দুঃখ পাবে। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমি মারা গেলে কে কে দুঃখ পাবে তা দেখার। আচ্ছা কে কে পেতে পারে? মা বাবা ছোট বোনটা আর কেউ? নাহ !!
আস্তে আস্তে সকাল হয়েই এলো। সময় শেষ পর্যায়ে। শেষবারের মত উঁকি দিয়ে বোনটাকে দেখে নিলাম।
বাবা ঘুম থেকে উঠে গেছে। আমাকে পাশ কাঁটিয়ে গেলো। নাহ আর নয়। চলে যেতে হবে।
গন্তব্যহীন ট্রেনের শেষ বাঁশিটি বেজে উঠেছে ...
*অলস মস্তিষ্কের হুট করে চিন্তাভাবনা !! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।