জীবন্ত মানব সত্তার অস্তিত্বই নিঃসন্দেহে মানবের সকল ইতিহাসের প্রথম আরম্ভ...
ব্লগ কর্তৃপক্ষের অবনমন আর কিছুটা স্বেচ্ছানির্বাসন, সেখান থেকে ফিরে রিফাত হাসান প্রথম যে পোষ্ট (নোটন নোটন পায়রাগুলি ও কয়েক চিরকুট নোট) Click This Link
দিয়েছেন --কয়েক পর্বে বিভক্ত সে পোষ্টে “এগার একের দ্বিতীয় পর্ব” উপশিরোনামের অংশটি পড়ে আমি হতাশই হয়েছি। এই পর্বে সম্প্রতি বিদায় নেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার যাকে রিফাত ‘এগার একের রেজিম’ নামে ট্যাগ লাগিয়েছেন-তার কিছু সমালোচনা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো এটা করতে গিয়ে রিফাত শুরু থেকে যে ধরনের যুক্তি পেড়েছেন আর যে সব তত্ত্ব আওড়েছেন তা যেমন একপেশে, তেমনি বহু গুরুত্বপুর্ন বিষয় রিফাতের পর্যবেক্ষন এড়িয়ে গেছে। রিফাতের এই পোষ্ট কোন রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার তুলনায় কোন রাজনৈতিক দলের ইস্তেহার লিখার প্রয়োজনে বেশি সহায়ক হবে বলে আমার মনে হয়েছে।
রিফাত হাসানের সাথে ব্লগে আমার প্রথম যোগাযোগ তার “একটি প্রাথমিক আলোচনার খসড়া: জামাত, জামাত বিরোধী রাজনীতির বিষয় আশয় ও যুদ্ধাপরাধ রাজনীতি” শীর্ষক একটা পোষ্ট পড়তে গিয়ে।
জামাত রাজনীতির মোকাবিলায় সে পোষ্ট আমাকে আকৃষ্ট করেছিল।
রিফাত হাসানের অনেক পোষ্টই আমার প্রিয় পোষ্টের তালিকায় পড়ে, রিফাতের বড় পরিচয় সে একজন কবি। যদিও তার কবিতা নাকি রাজনীতির দার্শনিক বিশ্লেষন কোনটা আমার বেশি প্রিয়, তা নিয়ে আমি মাঝে মাঝেই ধন্ধে পড়ে যাই। রিফাতের লিখা কবিতা এবং রিফাতের যে কোন পোষ্ট আমি আগ্রহ নিয়ে পড়ি। কিন্তু বহুদিন পর (রিফাতের ভাষায় দীর্ঘ প্রায় সতের দিন) রিফাতের নতুন পোষ্ট নোটন নোটন পায়রাগুলি...... ব্লগে পাঠ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম।
‘এগার একের রেজিম’ নিয়ে মন্তব্য করার সময় রিফাত হাসান এর পর্যবেক্ষন গুলো কি কি ছিল, জানতে পারলে ভাল হতো?
“এগার একের দ্বিতীয় পর্ব” উপশিরোনামের এই পর্ব শুরু হয়েছে ১১ সংখ্যাটির মাজেজা বর্ননা করে। এই বর্ননার মধ্যে কৌতুকের বিষয় আছে, খুজলে কিছু শ্লেষও পাওয়া যাবে কিন্ত তা আমাদের এগার এক- দ্বিতীয় পর্বের যে রহস্য এবং মাজেযা আছে তা বুঝতে কিভাবে সাহায্য করবে এটা আমি বুঝি নাই। এর অর্থ কি--কেউ বা কাহারা খুব ভাবনা চিন্তা করে ১১নম্বর সংখ্যার তারিখটিকে ঘিরে কিছু ক্রিয়া কর্ম চালাচ্ছে?
পোষ্টের শুরুর দিকে রিফাত “তৎকালীন এগার একের রেজিম এবং এর পেছনের মীর জাফরদের” কিছু সমালোচনা করেছেন (আমি অবশ্য বুঝি নাই এই মীরজাফর কে বা কারা) এবং দাবী করেছেন বাংলাদেশের মানুষ নাকি উনত্রিশ তারিখের নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল এগার একের রেজিমের বিরুদ্ধে……।
বিগত দুই বছরের রেজিমের বিরুদ্ধে এক দ্রব্যমুল্যের বৃদ্ধি ছাড়া আর কি কি বিষয়ে জনগন ক্ষুদ্ধ ছিল আমার জানা নাই। হ্যাঁ, কিছু লোক মিটিং মিছিল করতে পারতো না, কিছু কিছু লোক হরতাল করতে পারতো না, ভাঙচুড় করতে পারতো না... যদি কিছু লোকের ক্ষুদ্ধ হওয়ার জন্য এগুলোই কারন হয়- তবে তা হতে পারে।
কিন্তু রিফাতের বক্তব্য যদি সত্য বলে মানি আর সত্যই যদি বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বিগত কেয়ারটেকার রেজিমের বিরুদ্ধে- তবে তো সেই ভোট বিএনপির বাক্সে যাওয়ার কথা!! কারন একমাত্র বিএনপিই দল হিসাবে বিগত কেয়ারটেকার রেজিমের বিরুদ্ধে খোলাখুলি সমালোচনা করছে। রিফাত নিজেও মনে করে আওয়ামীলীগ “...... এক এগারর রেজিম কর্তৃক সুবিধাভোগী,...... সর্বোপরি বহুত আগ থেকেই এগার একের রেজিমের যাবতীয় অবৈধ কাজকে বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামীলীগ, সে কথাতো কারোর অজানা নয়। .........” তবে সেখানে ক্ষুদ্ধ জনগন কেন আওয়ামীলীগকে এমন ছাপ্পড় ফেড়ে ভোট দিবে?? এ প্রশ্নটা আমি রিফাত হাসানকেই করতে চাই।
পোষ্টের পরবর্তী অংশে নির্বাচন নিয়ে রিফাতের মন্তব্য “......গণতন্ত্র বিষয়ে আমাদের যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা ও তৎপরতা নির্বাচনের ধারণাকে কেন্দ্র করেই লুটোপুটি খায়……” কথাটার যথার্থতা নিয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নাই কিন্তু পরবর্তীতে রিফাত যা দাবী করছেন—“……সাম্প্রতিক সময়ে পরাশক্তির তাবেদার রেজিমের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ আন্দোলনের যাবতীয় পরিপ্রেক্ষিতে মাঠ ঊর্বর হয়ে থাকলেও, বিএনপির মত রাজনৈতিক দল অদূরদর্শী জামাতের ফাঁদে পা দিয়ে উনত্রিশ তারিখের নির্বাচনে বুঁদ হয়ে থাকে। ...” তাতে করে রিফাতকে প্রশ্ন করা যায়-- সাম্প্রতিক সময়ে পরাশক্তির তাবেদার রেজিমের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ আন্দোলনের শুরু করার জন্য মাঠ কি আদৌ ঊর্বর ছিল?? আর বিএনপির মত রাজনৈতিক দলের উনত্রিশ তারিখের নির্বাচনে বুঁদ হওয়া কি ছিল অদূরদর্শী জামাতের ফাঁদে পা দিয়ে??
এক জন দলীয় প্রধানের দৃষ্টিকোন থেকে থেকে যদি আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি, তবে হয়তো আমরা বুঝবো--দলীয় প্রধান হিসাবে খালেদা জিয়া কি পরিমান বিপদের মধ্যে ছিলেন এবং নির্বাচনে না যাওয়াটা তার নিজের এবং দলের জন্য কি পরিমান অদুরদর্শী সিদ্ধান্ত হতো।
বিএনপি জানতো বিগত কেয়ারটেকার রেজিমের মনোভাব তার দলের বিরুদ্ধে, ফলে সে চেষ্টা করেছে সময় ক্ষেপন করতে, সম্ভব হলে নির্বাচন বানচাল করে দিতে- কিন্তু যেখানে দীর্ঘ দুই বছরে কোন কার্যকরী আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হলো না, সেখানে ভোটের ঠিক আগে আগে জনপ্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করার জন্য মাঠ এমন কি ঊর্বর ছিল যে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনের ডাক দিতে পারতো? সারাদেশে তখন নির্বাচনের আবহাওয়া, এমনকি বিএনপির এম পি ক্যান্ডিডেটরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনের। কেউ এলাকায় দখল বজায় রাখার জন্য, আর কেউ কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভিন্ন মামলা থেকে নিজের চামড়া বাচানোর জন্য। সে সময় বিএনপির দিক থেকে আন্দোলনের জন্য কি কল হতে পারতো? কিসের দাবীতে শুরু হতো আন্দোলন? সরকার উৎখাত? সরকার নিজেই তো ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চায়।
বড় জোর নির্বাচন বয়কট করতে পারতো বিএনপি, কিন্ত সেক্ষেত্রেও জোরালো কোন যুক্তি দেখানো বিএনপির পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না, নির্বাচন কমিশন আর সরকারী উপদেষ্টাদের আন্তরিক (অন্ততঃ সে আন্তরিকতা লোকদেখানো হলেও)উদ্যোগ আর ছাড় দেওয়ার ফলে। এক এক করে বিএনপির সব দাবীই তো মেনে নেওয়া হচ্ছিল।
রিফাত লিখেছেন ......'গণতন্ত্র' ফ্যাসিবাদকেও নিমন্ত্রণ করে আনে কখনো কখনো। ... অত্যান্ত যৌক্তিক কথা আমি একমত রিফাতের সাথে। তবে আমি শুধু এখানে মনে করিয়ে দিতে চাই এর উদাহরনের জন্য আমাদের সুদুর জার্মানী, স্পেন এবং ইতালী যাওয়ার প্রয়োজন নাই। একদম নিকট অতীতে আমরা যদি আমাদের দেশের ২০০১ সালের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে নজর দেই তবে দেখব, কিভাবে বিএনপিকে জনগন সেদিন ভোটের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিল আর ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি কি চরম একটা ফাসিস্ত দলে পরিনত হয়েছিল। সেদিন কিন্তু এই 'গণতন্ত্র'ই ফ্যাসিবাদকে নিমন্ত্রণ করে এনেছিল।
রিফাত ফ্যাসিজমের নমুনা হিসাবে গণভিত্তির দোহাই দিয়ে ভীন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করা, রাজনৈতিক তৎপরতাকে নিয়ন্ত্রণ করা, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি দিয়ে, তার প্রকৃতি বোঝার কথা বলছিলেন।
আমি শুধু কয়েকটা ঘটনা এখানে উল্লেখ করবো বিএনপির ফ্যাসিজমের প্রকৃতি বোঝার জন্য—স্মরন করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরীর আলাদা দল গঠনের সময়ের কথা, ভিন্নমতকে কিভাবে সেদিন কন্ঠরোধ করা হয়েছিল। একটা দৃশ্য আমার খুব মনে পড়ে--শুধুমাত্র পুলিশের লাঠি আর বিএনপির পোলাপানের হাত থেকে বাঁচার জন্য সেদিন বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর মাহি চৌধুরীকে ফূটপাতের এক কোনায় বসে কোরাণ তেলাওয়াত করতে হয়েছিল। আর গুপ্তহত্যা? ক্রশফায়ারের রমরমা যুগতো ছিল সেটাই!!
এ ছাড়াও বিএনপির সে রেজিমে দুর্নীতি আর লুটপাট কি পর্যায়ে গিয়েছিলো তা তো আপনি আমি সবাই জানি।
ফলে বিগত কেয়ারটেকার সরকার যাকে এগার একের রেজিম তথা পরাশক্তির তাবেদার রেজিম হিসাবে যাদের কথা রিফাত তুলেছেন তাদের ক্ষমতা গ্রহনের সু্যোগ কি বিএনপিই তৈরি করে দেয় নাই তার সীমাহীন দুর্নীতি আর লুটপাট দিয়ে? তার চুড়ান্ত দলবাজি দিয়ে?
তবে একটা বিষয়ে আমি রিফাতের আশঙ্কার সাথে একমত—একই মাত্রার ফ্যাসিস্ত হয়ে উঠার যাবতীয় শর্ত কিন্ত বর্তমান রেজিমের মধ্যেও বিদ্যমান, তবে অবশ্যই সেটা বাকশাল হবে না, হবে অন্যকিছু।
সে বিষয়ে মন্তব্য করার এখনই সময় আসে নি- তবে চোখ কান খোলা রাখলে অনেক আলামতই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।