গেরিলা কথাবার্তা সর্বসম্প্রতি লিবিয়া ‘স্বাধীন’ হয়েছে। যে সংগঠনটি এমন দাবি করছে তার নাম ‘ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’। কোন কোন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা, যেমন রয়টার, সংগঠনটির এমন ঘোষণাতে ‘লিবারেটেড’ শব্দটি কোট দিয়ে ব্যবহার করেছে। আমার শুরুর বাক্যটির মতো। লিবিয় ‘জাতি’র এই ‘পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পে আমার মতো অনেকেরই শুরু থেকেই খুতখুতি ছিল।
থাকাটাই স্বাভাবিক। এ কেমন ‘গণ-জাগরণ’- যার মাথা এবং স্কন্ধ দুটোই বহুজাতিক আগ্রাসনের ভাগ্যের সাথে বাঁধা। আগ্রাসনের সমলয়ে, হাতে হাত ধরে, একই পথে চলে। গাদ্দাফিকে পিটিয়ে খুনের পর এমন ‘স্বাধীনতা’র ঘোষণা খানিক কৌতুক ও কৌতুহলের জন্ম দেয়। এই ‘স্বাধীনতা’ কার বিরুদ্ধে এবং কার হাতে অর্জিত হয়েছে? বহুজাতিক বাহিনী ন্যাটোর নেতৃত্বে লিবিয় জনগণের বিরুদ্ধে নয়তো? এই প্রশ্নটি আরো খোলামেলাভাবে করার ভিত্তি তৈরী করেছেন এই সংগঠনটির প্রধান নিজেই কয়েকদিন আগে।
সংগঠনটির নেতা মোস্তফা আব্দুল জলিল কয়েকদিন আগে ন্যাটোর বহিরাগত বাহিনীকে আরো অন্তত এক বছর লিবিয়ায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন। উদ্দেশ্য, খুন হয়ে যাওয়া গাদ্দাফির অবশিষ্ট ‘অপচ্ছায়াগুলো’ প্রতিরোধ ও ধ্বংস করা। আল জাজিরা টিভির এমন ব্রেকিং নিউজে চোখ আটকে যাবে যে কারো, কিন্তু অবাক হবেন কি? অবাক যারা হবেন, তারা হয়তো মরু-আফ্রিকায় বিপ্লবের পদধ্বনিতে অভিভূত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সম্ভবত তারা ভুলে থাকতে চাইছেন, বহুজাতিক ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনীর অধীনে গণ-জাগরণ বা বিপ্লব এর ধারণা একটা বিকৃতি হতে পারে, এর বাইরে আর কিছুই নয়। এর মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্রের বিপরীতে বহুজাতিক দালাল ও লুটপাটের অনুপ্রবেশ ঘটবে মাত্র।
‘স্বাধীনতা’ এখানে উটকো শব্দ একটা- যার সম্ভবত একটাই অর্থ হতে পারে, তা হল গোলামি। সম্ভবত মরহুম মুয়াম্মার গাদ্দাফি এজন্যই এনটিসিকে ন্যাটোর ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া ইঁদুর বাহিনী বলেছেন। তাঁর ভাষায়, লিবিয়ার জনগণ এই ইঁদুর বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। পরিহাস, গাদ্দাফি খুন হলেন। আর গাদ্দাফিকে খুনের পর তাকে হত্যার দায়িত্বও নিতে পারে নাই এই সংগঠনের নেতারা।
বাংলাদেশে বহুল আলোচিত র্যাবের মতই ‘ক্রসফায়ারে’র গল্প ফাঁদতে হল। আর গাদ্দাফিকে পিটিয়ে কাপুরোষোচিতভাবে হত্যার পরও, এই ‘গণ-জাগরণে’র নায়করা, গাদ্দাফি যাদেরকে ইঁদুর বাহিনী বলেছিলেন, ন্যাটো বাহিনীর নিরাপত্তা-ছাতার বাইরে নিরাপদ বোধ করছে না একটুও। তাই আরো এক বছর ন্যাটো বাহিনীকে লিবিয়া শাসন এর অনুরোধ করা হয়েছে, গাদ্দাফির অপচ্ছায়াগুলোকে দাবিয়ে রাখার জন্য। নাকি তেল ভাণ্ডারগুলো দখলের আমন্ত্রণ! ‘গণ-জাগরণের নায়করা’? এ কেমন বিপন্ন ‘গণ’ বা গণনায়কগণ?
২.
লিবিয়ার বরাত দিয়ে শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমাদের আগ্রহ সেই বরাতে বাংলাদেশকে দেখা।
দুই হাজার সাত সালের এগার জানুয়ারী বাংলাদেশে সুশীলদের দ্বারা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে এক কিম্ভূত বিপ্লব হয়েছিল। এও জাতীয় পুনরুদ্ধারের কথা বলে। লিবিয়াতে এই পুনরুদ্ধার প্রকল্পে সশস্ত্র ন্যাটো ছিল নেতৃত্বে। মূলত ইংরেজী শিক্ষিত ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ‘অভিবাসি লিবিয়’দের একটি অংশ এই ‘গণ-বিদ্রোহে’ ন্যাটোর স্থানীয় এজেন্টের ভূমিকা পালন করেছে, বিশ্লেষকদের এমনই মত। একইভাবে বাংলাদেশে এক এগারর পিছনে বিশ্বের প্রভাবশালী কুটনৈতিক মিশনগুলো ছিল নেপথ্যে।
আর স্থানীয় কুশিলব হলো সুবিধাবাদি ও বর্ণচোরা সুশীল সমাজ। লিবিয়ার মতই, বাংলাদেশে তরুণদের সুবিধাবাদি অংশ এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছিল। এই সুবিধাবাদি অংশের বৈশিষ্ট্য হলো সমাজের যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতি ও রাজনীতির বিরুদ্ধে তিক্ত-বিরক্ত। আবার কোনরকম ঝামেলাপূর্ণ পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় নিজেদের জড়াতে অনিচ্ছুক। তাই সুশীলদের দ্বারা একটি নির্ঝঞ্জাট বিপ্লব পেয়ে এই অংশটি তার ফলাফলকে হাড়-মজ্জাসহ নিজের মনে করল।
লিবিয়ায় যেমন ন্যাটো কর্তৃক মুখে পুরে দেওয়া বিজয়কে ওরা নিজেদের মনে করল। এইভাবে, পুরো দুই বছর জরুরী শাসনের অধীনে আবদ্ধ থাকার পর দুই হাজার নয় সালের উনত্রিশ তারিখের নির্বাচনের মাধ্যমে একদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার আওয়ামীলীগ সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলাদেশে। এই পর্বকে আমরা এক-এগার দ্বিতীয় পর্ব হিশেবে অভিহিত করতে পারি। এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। আগের পর্বে আমরা দেখেছি, রাষ্ট্রের সবচেয়ে সুবিধাভোগি ও স্বার্থপর অংশ যাদেরকে আমরা সুশীল সমাজ হিশেবে চিনি, তাদের মাধ্যমে সমাজের বিরাজনীতিকরণ প্রচেষ্টা চলেছে।
মোটাদাগে। আবার, দ্বিতীয় পর্বে বর্তমানে এই ঘটনা চলছে আরো সুক্ষ্ম ও চতুরভাবে। ক্ষমতাসীন একটি দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও ব্যানার ব্যবহার করেই সেই একই বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া সমাধা করার চেষ্টা চলছে। এই সুচতুর তৎপরতা গুরুত্বপূর্ণভাবে পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে। প্রথম পর্বের তৎপরতার দৃশ্যমান অংশ ছিল খোলামেলা।
কোনরকম ‘গণতন্ত্রে’র ভাব না ধরেই রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দল সহ যে কোন রাজনৈতিক তৎপরতার বিরুদ্ধে চরমভাবে দমন ও নিপীড়ণ চালানো হয়েছে। আর দ্বিতীয় পর্বে এই প্রচেষ্টার দুইটি ভীন্ন রূপ আছে। এক. নির্বাচনী গণতন্ত্রের মোড়কে উগ্র ফ্যাসিবাদের উসকানির মাধ্যমে রাজনৈতিক ভীন্ন মতাবলম্বীদের দমন-নিপীড়ণ-নিষিদ্ধকরণের ধমকি। এই ক্ষেত্রে পুলিশ, আইন-আদালত- সবকিছুই সুবিধামতো ব্যবহার হয়েছে। পূর্বাপর সুশীল সমাজ তো আছেই।
আবার, যেহেতু এই পর্বের কলা কুশলীদের অপরাপর সব পরা-ভিত্তির সাথে সাথে নির্বাচনী গণতন্ত্র অর্থে গণতন্ত্রের লেবাস এবং সেই হিশেবে গণভিত্তির লেবাসও আছে, এক এগারর রেজিম যে কাজ ‘অসাংবিধানিক’ উপায়ে পরাশক্তির আশ্রয়ে করতে গিয়েছিল, এই নির্বাচনী গণতন্ত্রের একদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার জনগণের সম্মতির কথা বলেই, তাদের ভোটের হাতিয়ার দিয়েই, সেই কাজ সম্পন্ন করার সামর্থ এমনকি হিম্মত রাখে। ভারতের সাথে ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্ট-তিস্তার পানির হিস্যা ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের দর কষাকষিহীন নৈতিক ও আত্মমর্যাদাহীন অবস্থান দ্রষ্টব্য। দুই. সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী ও স্পর্শকাতর তরুণ সমাজকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র মত একটি দারুণ অনর্থ ফাঁপা শ্লোগানে মাতিয়ে তাদেরকে পুঁজি ও টেকনোলজির প্রশ্নহীন দাস বানিয়ে দেওয়া ও রাজনৈতিকতাবোধহীনভাবে তৈরী করা। দুই হাজার ছয় সালে সুশীল সমাজের পরিবর্তনকে তরুণদের যে সুবিধাবাদি অংশ স্বাগত জানিয়েছিল, বর্তমানে তাদের তৎপরতা ও গন্তব্য চিহ্ণিত করতে এক-এগার দ্বিতীয় পর্বের এই উভয় বৈশিষ্ট্য মনে রাখা জরুরী। তাদের তৎপরতা ও গন্তব্যে কিছুটা মৌলিক পরিবর্তন এসেছে।
সম্ভবত ভবিষ্যতে আরো আসবে।
৩.
কীভাবে এর শুরু, একটু বিস্তার করি। লিবিয়ার কাহিনী থেকে শুরু করেছিলাম। প্রকৃত লিবিয়া থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা সুশীলদের এই ‘জাতীয় পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ ও গাদ্দাফীর খুনের ঘটনাকে মূলত তিউনিসিয়া বা মিশর বা আরববিশ্বের সবখানে যে হঠাৎ ‘গণ-জাগরণ’ এর ঢেউ, তার উচ্ছিষ্টাংশ বলা যেতে পারে। ফেসবুক, ব্লগ এবং অপরাপর বিকল্প ও মুক্ত গণ-মাধ্যমগুলোই শুরুতে আরব বিশ্বে এই ‘গণজাগরণ’গুলোর প্লাটফর্ম তৈরী করেছে- এমন তথ্য আমাদের সামনে হাজির আছে।
সর্বসম্প্রতি ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ এর যে ¯্রােত দুনিয়াব্যাপি সাড়া ফেলেছে, ওখানেও এই মাধ্যমগুলোর ব্যাপক ব্যাবহার হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ঘোষণার অনেক আগে থেকেই, তরুণদের একটি বৃহৎ অংশ ফেসবুক, ব্লগ এবং নানানরকম বিকল্প গণমাধ্যমের সাথে লেখালেখি ও নানান উপায়ে তৎপর রয়েছে। এই নতুন সরকার আসার আগেই বাংলাদেশে জরুরী সরকার ও সেনা-আধিপত্যের বিরুদ্ধে দুই হাজার সাত সালে আগষ্টের ছাত্র-আন্দোলন ঘটে গিয়েছে। এর আগে এই তরুণদের সাধারণ চরিত্র ছিল ঘরকুনো। জরুরী অবস্থার কঠিন শাসনের ভিতরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বাংলাদেশের ছাত্ররা যে সাহসের আস্পর্ধা দেখিয়েছিল, তা এই তরুণদের মধ্যেও ছোঁয়া দিয়ে গিয়েছিল।
এই ঘটনা তাদের তৎপরতা ও গন্তব্যে যে মৌলিক পরিবর্তন এনেছে, তার তাৎপর্য বিশাল। তাদের মধ্যে এতদিন যারা এই প্লাটফরমগুলোকে স্রেফ ফুল পাখি লতা-পাতার কাব্য বা আস্তিক-নাস্তিকতার বাদানুবাদে ভরে রাখতো, এই ঘটনার পর থেকে তারা এটিকে কাজের জায়গাতেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করতে শুরু করেছে। তাদের ফুল পাখি লতা-পাতার ফাঁকে স্থান পাচ্ছে, রাষ্ট্র, নাগরিক অধিকার, গণতন্ত্র, এর পরিসর ও চরিত্রের বিবর্তন ইত্যকার বিষয়গুলো। তার উপর মিশরের তাহরির স্কয়ারে সফল গণ-অভ্যুত্থান এর ঢেউ, তিউনিসিয়ার ‘গণ-জাগরণ’ এইসব তো অনুপ্রেরণা হিশেবে আছেই। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের এইসব ঘরকুনো ফেসবুকিয়ান এবং ব্লগাররা ইদানিং হঠাৎ হঠাৎ রাস্তায় ব্যানার নিয়ে আস্পর্ধায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন সময়ে ভারত সীমান্তে বিএসএফ এর খুনোখুনির প্রতিবাদ, টিপাইমুখ বাঁধের মাধ্যমে ভারতের পানি সন্ত্রাস, সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-আন্দোলন, তেল গ্যাস ও প্রাণ প্রতিবেশ রক্ষার আন্দোলনে ফেসবুক এবং ব্লগ কম্যুনিটির উৎসাহ, বিভিন্ন উপায়ে ‘সংহতি জ্ঞাপন’ লক্ষনীয়। এইসব ইস্যুতে ব্লগারদের গ্রেফতারের মত ঘটনাও ঘটেছে কয়েকবার। যেহেতু ফেসবুক, ব্লগ এইসব অনলাইন প্লাটফরম এখনতক সরকারের আইনি নজরদারির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, আবার বেশিরভাগ সময়ে সম্পাদকীয় নীতিমালার খড়গহীন এবং মুক্ত, তরুণরা দ্রুততম সময়ে কথা ও বক্তব্য ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তরুণদের এই আগ্রহের মধ্যে একটা রোমান্টিক ভাবও আছে। দেখা গেছে, অবিকল পশ্চিমাদের অনুকরণে এদের একটি দল ইতিমধ্যে ‘ওয়ালস্ট্রিট দখল’ প্রোগ্রামও করে ফেলেছে, ঢাকায়।
আবার দেখা গেছে, সম্প্রতি সৌদিআরবে আট বাংলাদেশীর আইনি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সৌদি রাজতন্ত্রের জুলুম ও বাংলাদেশের কুটনৈতিক ব্যর্থতা চিহ্ণিত করার পরিবর্তে জল্লাদ হিশেবে ইসলামকে হাজির করতে তৎপর এদের অনেকেই। এই ধরণের ব্যাপার তো আছেই। যাই হোক, মিডিয়াগুলো এখন ব্লগারদের তৎপরতাকে আমলে রাখছে, সংবাদ শিরোনাম করছে। ফেসবুক আর ব্লগে প্রচুর ‘ঝড়’ হচ্ছে। মিডিয়া এমন ঝড়গুলোকে উদ্ধৃত করছে।
মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী পুলিশ, ছাত্রলীগ, গোয়েন্দা সংস্থা, হাইকোর্ট সবাই এখন এই ঝড়গুলোর নজর রাখছে। এই ঝড়গুলোকে নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন করার কথা ভাবছে সরকার। ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট রুলনিশি জারি করছে। এইসব ঘটনাপঞ্জিতে একদিকে সরকারের অসহিষ্ণু ভাব প্রকাশ পেলেও, অপরদিকে বুঝতে পারা যায়, ওদের কর্মকাণ্ডের ফলাফল মোটামোটি ফেলে দেবার নয়। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ‘তরুণ’দের উদ্দেশ্য করে মিডিয়াতে লেখা লিখেছেন।
তাই, বাংলাদেশের এই ‘অনলাইন’ ‘ভার্চুয়াল’ তরুণরা একঘোরের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে এই সময়ে। কারণ তারা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।
৪.
এই সময়টি গুরুত্বপূর্ণ।
হাঁ, বাংলাদেশের অনলাইন ভার্চুয়াল তরুণদের এই সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশান্বিত হই, এই তরুণরা যখন প্রাণ-প্রকৃতি ও ভূখ- রক্ষার লড়াইয়ে ছাত্রসমাজ, শিক্ষক এবং সাধারণ মানুষের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করে।
আবার যখন হুবহু পশ্চিমা অনুকরণে ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ করে, সৌদি জুলুমের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের অনুকরণে খোদ ইসলামকে আসামী হিশেবে হাজির করে, তখন তরুণদের এই অংশের অপরিণত ভাব সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হয়। যা বিষয়কে স্থানিক রাজনীতির প্রপঞ্চে জারিত না করে স্রেফ অনুকরণ, রোমান্টিক ও হিরোপ্রকল্প হিশেবে সামনে নিয়ে আসে। ভাবতে হয়, এই তরুণরা তো বাংলাদেশের তরুণদের সমগ্র নয়। ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। যারা সমগ্রের সাথে মিলার লড়াই শুরু করেছে মাত্র।
এই লড়াই অনেক বন্ধুর। তরুণদের এই বিবর্তনে ডিজিটাল বাংলাদেশের হর্তা কর্তারা মোটামোটি হতাশ, আবার তারাও মোটামোটি আশাবাদি পরিস্থিতি তৈরীর জন্য তৎপর। তরুণদের তৎপরতাগুলিকে ফাঁপা অনর্থ রোমান্টিতা, ক্ষেত্র বিশেষে হটকারিতায় পর্যবষিত করার জন্য মরিয়া ওরা। এদিকে সুশীল সমাজ-ও অস্থির। ঘরের কোণে বসে আলসেমি, প্রেম ও কাব্য করা এই তরুণ সমাজের হঠাৎ এ কি মতিভ্রম ঘটল।
তারা এই পরিবর্তনকে রুখে ও বদলে দিতে নানান ‘অরাজনৈতিক’ ওয়াজ-নসিহত নিয়ে তৎপর। কারণ এক-এগারর সেই ‘মেধাবী’ ও ঘরকুনো, স্বার্থপর তরুণেরাই তাদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল ছিল, যারা মূলত ‘অরাজনৈতিক’। কিন্তু ওরা বিফল হবেন, এটাই আমাদের আশা। কারণ, তাদের প্রকল্পিত অর্থহীন ‘অরাজনৈতিক’ ডিজিটে পর্যবসিত হতে এই তরুণরা আর প্রস্তুত নয়। তাই, সমাজের চরম বিরাজনীতিকরণ প্রচেষ্টার বিপরীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং আমাদের প্রাণ, প্রতিবেশ-ভূখ- রক্ষার লড়াইয়ে এই তরুণরা এদেশের ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সাথে একাত্ম ও সংহতি প্রকাশ এর মাধ্যমে সমগ্রের সাথে মেশার লড়াই করছে এই সময়ে।
অনলাইন ভার্চুয়াল তরুণদের এই সমগ্রে মেশার লড়াই সফল হোক। এক-এগারর সময়ের সুবিধাবাদি তারুণ্যের মৌলিক রূপান্তর ঘটুক। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।