আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন রুখে দাঁড়াই নিজের ভিতরের পশুর বিরুদ্ধে!!

একদিন আমাদের স্বপ্ন পূরন হবেই। বাংলাদেশ একদিন সোনার বাংলা হবেই। অনেকদিন ধরেই লিখব লিখব করে আর লেখা হচ্ছিলনা। লেখাটা আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া কিছু ধারাবাহিক ঘটনার প্রসঙ্গ এবং আমার অভিব্যক্তি। আসলে আমাদের জীবন এতটাই দূর্ঘটনা পূর্ণ বলেই বোধহয় আমরা যে কোন ঘটনা খুব সহজে ভুলে যেতে পারি।

আজ, মিরসরাই এর দূর্ঘটনা আমাদের কে বিচলিত করেনা, হয়ত পাশের বাড়ির মেয়েটি ধর্ষিত হলে আমরা বিন্দুমাত্র বিশ্ময় প্রকাশ করিনা, মনে হয় এটা তো হওয়ার ছিল। না হলেই সব থেকে অবাক হতাম(!!)। একজন দেশ গড়ার কারিগর যখন ভবিষ্যত প্রজন্মের কর্ণধারকে ধর্ষন করে আমরা আনন্দে উল্লাসে তার মাঝে রাজনৈতিক ইন্ধন ও বিদেশী ষড়যন্ত্র খুঁজে পাই। এসব ঘটনা ঘটছে ঘটবে। লিমন এর কথা হয়ত মনে আছে আপনাদের? খুব বেশি দিন আগের কথা নয়।

যে ছেলেটি একটি গরীব ঘড়ের সন্তান, যে নিজে পড়াশোনা বাদ দিয়ে পরিবারের অন্ন যোগাবার জন্য পরিশ্রম করে রোজগারে নেমেছে। যে ছেলেটির অপরাধ একটাই যে সে একজন দাগী সন্ত্রাসীর শার্টের মত সাদৃশ্যপূর্ণ আরেকটি শার্ট পড়েছে। আমাদের অত্যন্ত বুদ্ধিমান (!!) র‍্যাব সদস্য যারা দুইজন মানুষের মাঝে তফাত করতে পারেনা, শুধু শার্টের রঙ এক হওয়ার জন্য লিমন কে সন্ত্রাসি মনে করে গুলি চালিয়ে নির্যাতন করে ফেলে রাখে, এক মায়ের কান্না যাদের কাছে নিষ্ফল বলে প্রমানিত হয় সেই র‍্যাব সদস্যদের বিচারের কাঠগড়ায় আজও দেখলাম না। প্রধানমন্ত্রী এব্যাপারে নীরব কেন? লিমন তার ছেলে নয় বলে? বিরোধীদলীয় নেত্রী ও এ ব্যাপারে নীরব কেন-বুঝলাম না। যে কিনা নির্বাচনের পর দেশের মানুষকে সমূহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বদ্ধপরিকর, যিনি তারেক রহমানের জন্য রাস্তায় নামছেন, তিনি কেন লিমন এর ব্যাপারে কিছুই বলছেন না।

লিমন কি তাহলে তার ছেলের মত নয়? পত্র পত্রিকা গুলো কিছুদিন লেখা লেখি করে এখন চুপচাপ। আমরাও ভুলে যাচ্ছি লিমন কে। এভাবে কত লিমন চলে গেছে আমাদের দৃশ্যপট থেকে সে হিসেব কে রাখে! রুমানা মঞ্জুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর স্বামী বুয়েট থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার। এই ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের নির্যাতনে রুমানা মঞ্জুর এখন অন্ধ। এবার আসুন, মূল প্রসঙ্গে।

রুমানা ম্যাডাম এর এই ঘটনার পর পক্ষে বিপক্ষে হাজারো মতামত। কেউ কেউ তো আবার রুমানা মঞ্জুর সম্পর্কে বলেই বসেছেন, “এক হাতে তালি বাজেনা”। অনেক পুরোনো একটি কথা। অনেকে রুমানা মঞ্জুরের সতিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। খুব ভাল কথা।

এবার একটা কথা বলি সংক্ষেপে- রুমানা মঞ্জুর যদি আপনার আত্মীয় হত তাহলেও কি আপনি রুমানা র কানের কাছে গিয়ে বলতেন-“তুমি সতি নও”-“এক হাতে তালি বাজে না” এই টাইপের কিছু একটা। নিজেকেই প্রশ্ন করুন-উত্তর পেয়ে যাবেন। নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ থাকলে তো জীবনে চলতে পারবেন না। সব থেকে বিশ্ময়কর কিছু মুহূর্তের অবতারনা করেছে ইভ-টিজিং এর ঘটনা গুলো। আসলে ইভ-টিজিং তো একটি দুইটি ঘটনা নয়।

অসংখ্য ঘটনার সমগ্র। আমাদের সমাজে সত্যিকারের পুরুষ (!!) বলে পরিচিত একটি শ্রেনী এই ইভ-টিজিং এর ঘটনার সাথে জড়িত। আসুন এর সাপেক্ষে কিছু মতবাদ শুনি। মতবাদ গুলো একটিও আমার নয়, সব গুলোই ফেসবুক আর বিভিন্ন ব্লগ সাইট থেকে নেয়া। সব থেকে বড় মতবাদ হল, “যারা মেয়েদের দিকে তাকায় না, তাকে নিয়ে একটা কথা বলে না, তারা নাকি পুরুষ নয়”।

সাধুবাদ, এই মতামতের প্রবক্তাকে নিজের পৌরুষত্ব প্রমাণ করার জন্য এবং সমাজে এর একটি সুপ্রতিষ্ঠিত মান্দন্ড দেয়ার জন্য। তাহলে এখন সব শিশু জন্মানোর পরে ডাক্তার তার পৌরুষত্ব নির্ধারন করবে এই ভাবে শিশুটি যদি নার্সের দিকে কামনার দৃষ্টি নিয়ে তাকায়(!!)। আসুন যারা এখনো পুরুষের খাতায় নাম লেখাননি তারা আজ আপনার নিজের বোন কে নিয়ে কটু কথা বলুন, কামনার দৃষ্টি নিয়ে তাকান- গ্যারান্টি সহকারে পুরুষ হয়ে যাবেন। এই মতবাদ অনুসারে আমি এখনো পুরুষ নই। আরেকটি ব্যাপারে সব থেকে তর্ক বিতর্কের অবতারনা হয়েছে আর তা হল, মেয়েদের পোশাক নিয়ে।

আজকের বাংলাদেশের মেয়েরা আধুনিক পোষাক পরতে পছন্দ করে তাই তারা নিজে জেনে-না জেনে পুরুষের চোখে পড়ছে। মেয়েদের পোষাক আগের থেকে অনেক রুচি বিবর্জিত ও পাশ্চাত্য ধাচের এব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু একবার ভাবুন, এটা কি একটা সামাজিক ব্যাধি নয় যে আমরা মেয়েদের কেবল ভোগের বস্তু বলেই মনে করছি, তাকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেইনা। আপনি একটি মেয়েকে যদি সবসময় কামনার বস্তু হিসেবেই দেখেন তাহলে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার মা,বোন, গার্লফ্রেন্ড, ভালো বন্ধু, বৌ এরাও তো মেয়ে, তাদেরকে আপনি বা অন্যরা কি দৃষ্টিতে দেখবেন? কোন স্বল্পবসনা মেয়েকে দেখে যদি ধর্ষন করতে ইচ্ছে করে তাহলে চলুন হলিঊড-বলিউড চলে যাই, ঐখানে অসংখ্য স্বল্প বসনা নারী রয়েছেন। তাদের ধর্ষন করে আসি।

একবার ভেবে দেখবেন? এবার আসি ভিকারুননিসা স্কুলের ঘটনা প্রশঙ্গে। এটি সব থেকে সাম্প্রতিক ঘটনা যা দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। স্কুলের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধর তার এক ছাত্রীকে নির্যাতন করে ধর্ষন করেছে এবং তার ছবি তুলে তাকে হুমকি দিয়েছে। শাবাশ, পরিমল! একদম পুরুষের মত কাজ করেছেন। নিজের মেয়ের বয়সী ছাত্রী কে দেখে কামনা র উদ্রেক হওয়াই তো আসল পৌরুষত্বের লক্ষন।

তাই নয় কি? এ সম্পর্কে স্কুল কতৃপক্ষ ও আমাদের সাংবাদিক, কিছু মন্ত্রী কিছু বানী চিরন্তনী দিয়েছেন, ইতিহাসের পাতায় লিখে রাখবার মত। ঘটনার পরপর, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক লুতফর রহমান মেয়েটিকে হুমকি দেয় ঘটনাটি ধামা চাপা দেবার জন্য। লুতফর রহমান কে অভিনন্দন ও প্রথম দিন শোনা গিয়েছে যে লুতফর রহমান কে স্কুল কতৃপক্ষ বসুন্ধরা শাখা থেকে অপসারন করে আজিমপুর শাখায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বসুন্ধরার মেয়েদের পর এবার আজিমপুরের মেয়েদের ধর্ষন করার সুযোগ দিয়ে যে জঙ্গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এর জন্য অভিনন্দন (!!) জানাই স্কুল কমিটিকে। স্কুলের সাবেক প্রধান হুসনে আরা বেগম ঘটনার পরপর বিবৃতি দিয়েছেন-“ইট ইজ আ মিউচুয়াল সেক্স”।

জয়তু হুসনে আরা আপনার যুগান্তকারী বক্তব্যের জন্যে। তবে হুসনে আরা কে একটি প্রশ্ন-“মেয়েটি যদি আপনার নিজের মেয়ে হত, সেদিনও কি আপনি একি কথা বলতেন? ভেবে দেখবেন” এই ঘটনার পরপর স্কুলের মেয়েরা আন্দোলনে নামলে দেশের কিছু স্বনামধন্য টিভি মিডিয়া ও খবরের কাগজের রিপোর্টার ও সাংবাদিক মেয়েদেরকে হুমকি দিয়েছে বলে শোনা গিয়েছে। এনটিভি, দেশটিভি এই মেয়েদেরকে সরাসরি দেখে নেবার হুমকি দিয়েছে। এটিএন নিউজের মুন্নি সাহা ঘটনাকে রাজনৈতিক ইন্ধন বলে মন্তব্য করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রী নাহিদ সাহেব বলেছেন-“এই আন্দোলনে অবশ্যই তৃতীয় শক্তির হাত রয়েছে”।

তবে নাহিদ সাহেবকে বলব, আপনার মত শিক্ষিতরা যদি এইধরনের কথা বলেন, তাহলে তো মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। স্কুলের এডহক কমিটি তে হুসনে আরা বেগম কে রেখে আরো একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে পৌছেছে স্কুল কতৃপক্ষ। শুধু হুসনে আরা কেন? আপনারা পরিমল-লুতফর কেও তদন্ত কমিটি তে রেখে তদন্ত করুন, তাহলে তদন্ত শুষ্ঠু হবে বলে আমার বিশ্বাস। দেশের প্রধানমন্ত্রী আজকে যে আসনে বসে আছেন, এই আসনে আশার আগে বলেছিলেন-“আমি আসলে দেশের মানুষের দুঃখ দূর হয়ে যাবে। শোষনের দিন শেষ হবে”।

সেই জননেত্রী এই ঘটনার সময় স্কুলে আসেননি, এবং তিনি এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেও শোনা যায়নি। অন্যদিকে যারা বিরোধি দলে বসে “দেশ গেল-দেশ গেল” বলে এতকাল মুখে ফেনা তুলেছেন তাঁদের কেও এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কোন কথা বলতে শোনা গেল না। তারা কি হঠাৎ করেই দেখতে পেলেন যে, দেশ সঠিক পথেই যাচ্ছে!!! যাইহোক, আমি সুশীল সমাজের কাছে কিছু প্রশ্ন রাখছিঃ ১। আপনাদের কি মনে হয়, যে একটি ১৬-১৭ বছরের মেয়েকে ধর্ষন করা একটি রাজনৈতিক ঘটনা? অথবা ঐ মেয়েটি প্রতিবাদ করেছে সেটি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের ইন্ধন? ২। হুসনে আরা বেগম, লুতফর রহমান ও পরিমল জয়ধরের মত অপরাধীকে প্রশয় দেয়া কি সামনে এইরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তিকে ত্বরান্বিত করা নয় কি? ৩।

যারা দেশ রক্ষার শ্লোগান দিচ্ছেন বা দিয়েছেন-তারা নিশ্চুপ কেন? ৪। মেয়ে দেখলেই লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে?-এ ধারনা কোথা থেকে পেলেন? যেখানে পাশ্চাত্যের মত আধুনিক সমাজেও প্রাতিষ্ঠানিক নির্যাতন ও শিক্ষক কতৃক ধর্ষন কে দন্ডনীয় অপরাধ বলে গন্য করা হয়, সেখানে আমাদের দেশে একজন প্রধান কিভাবে এটাকে ‘মিউচুয়াল সেক্স’ বলে ধামা চাঁপা দেবার চেষ্টা করেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। আসুন নিজের মন মানসিকতা বদলাই। সমাজ পরিবর্তনের শ্লোগান দিলেই, কয়েকটা টক শো তে গাল ভরা কথা বললেই সমাজ পরিবর্তিত হবে না। আসুন রুখে দাড়াই নিজের ভিতরের পশুর বিরুদ্ধে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।