একজন সুনাগরিক প্রথম আলো-দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক!এর স্লোগান হল-বদলে যাও,বদলে দাও!বাহ!কি চমৎকার চিন্তা ধারা!!অসম্ভব সত্যবাদি একটি পত্রিকা। কথায় নয়,কাজে বিশ্বাসী! কি ভাই??আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা??ভাবছেন কেন আমি প্রথম আলোর এত গুণগান গাইছি!আমি আসলে প্রথম আলোর “বদলে যাওয়া ও বদলে দেয়া” দেখে এতটাই মুগ্ধ,যে আমার “উচ্ছ্বাস” কে রোধ করতে পারছিনা!কি?অবাক হচ্ছেন??আসুন,আপনাকেও তার কিছু নমুনা দেখাই!!!আপনাকে দেখাই-যে পত্রিকাটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের দাবি করে,তারা ভিকারুন্নিসা-প্রসঙ্গে কিভাবে নিজেদের বদলে দিয়েছে ও সত্যকে কিভাবে বদলে দিয়েছে!!
নমুনা ১-
৭/৭/২০১১ তারিখের সম্পাদকীয়তে এই নরপশুটির নামটি ভুলভাবে পরিমল জয়ধরের পরিবর্তে পরিমল মজুমদার লেখা হয়!এবং পরবর্তীতে এর কোন সংশোধনী দেয়া হয়নি!
নমুনা ২-
১২/৭/২০১১ তারিখে ছাপা হওয়া প্রতিবেদনে আদালত প্রতিবেদক লিখেছেন “আদালতের সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে পরিমল বলেন, স্কুলের কাছে বাসা ভাড়া নিয়ে তিনি ছাত্রী পড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। গত মে মাস থেকে ধর্ষিত ছাত্রীটি তাঁর কাছে পড়তে শুরু করে। ২৮ মে মেয়েটি টি-শার্ট ও স্কার্ট পরে একা পড়তে আসে। তিনি মেয়েটিকে অপেক্ষা করতে বলে অন্য মেয়েদের চলে যেতে বলেন।
এরপর মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনার পর ১৭ জুন মেয়েটি অন্য একজন শিক্ষকের কাছে পড়তে আসে। সেদিনও তাকে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন তিনি। ”খুবই চমৎকার কিছু লাইন! লাইনগুলো পড়ে আপনি কখনোই বলতে পারবেন না, লাইনগুলো মেয়েটার বিরুদ্ধে। কিন্তু কি সুন্দর করে তারা আমাদের বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে আসলে মেয়েটির উত্তেজক পোশাক পরে আসাই ধর্ষণের মুল কারন!!!
এখানে প্রসঙ্গত বলে রাখি,ধর্ষক পরিমলের কোন ছবি কিন্তু রিপোর্টের সাথে দেয়া হয়নি!!
নমুনা ৩-
১৫/৭/২০১১ তারিখে কোনো ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে নয়, নিজস্ব প্রতিবেদক তার প্রতিবেদনে নিজেই উল্লেখ করেছেন, "এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে চাকরিচ্যুত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে কিছু ছাত্রী ও অভিভাবক ঘটনার বিচারে কালক্ষেপণের অভিযোগে কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমের পদত্যাগ দাবি করে আসছিলেন। গতকাল সকালে পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য হোসনে আরাকে অপসারণের খবর প্রকাশ করলে ছাত্রী ও শিক্ষকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। "
প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার সব ছাত্রী, হ্যা সব ছাত্রী, একজনও বাদ নয়, এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, আর এই 'মহাজ্ঞানী' রিপোর্টার লিখে দিলেন 'কিছু' ছাত্রী!
প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তে আরো লেখা হয়েছে—
“অধ্যক্ষের নামফলক সরিয়ে ফেলে আম্বিয়া খাতুনের দ্রুত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি ঐ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে দলাদলির আভাস দেয়। "আপনাদের এখানে জানিয়ে রাখি,আম্বিয়া আপার অধ্যক্ষা হিসেবে ঘোষণা হবার সাথে সাথে সব ছাত্রীরা একসাথে ছুটে গিয়ে হসনে আরার নাম ফলক খুলে ফেলে। হস্নে আরা আপার সিগনেচার আছে বলে সব ছাত্রীরা তাদের নিজ নিজ ব্যাজ ছুঁড়ে ফেলে দায়!ক্লাস ১-৫ এর বাচ্চারা তাদের পরীক্ষার রুটিন ছিরে ফেলে শুধু আপার সাইন আছে বলে!সম্পাদক সাহেব কি সুন্দর করে ভিকারুন্নিসার ছাত্রী দের উপর দলাদলির অভিযোগ লাগিয়ে দিলেন!!
বি।
দ্র। তখন পর্যন্ত এই পেপারে পরিমলের কোন ছবি আসেনি!!
নমুনা ৪-
১৬/৭/২০১১ তারিখে লেখা হয় , যে পরিমল জয়ধর ভিকারুননিসার মতো একটি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তিনি নিশ্চয় নিজেও ভালো ছাত্র ছিলেন, তাঁর পরীক্ষার ফল নিশ্চয় উচ্চমানের, তিনি শিক্ষক হিসেবেও নিশ্চয় সফল ছিলেন (নতুবা ছাত্রীরা তাঁর কোচিংয়ে আকৃষ্ট হচ্ছে কেন?)।
লেখক আব্দুল মোমেন সাহেব!!এখনও আপনি বলবেন পরিমল শিক্ষক হিসেবে সফল ছিলেন!!! আপনার কি কোন কন্যা সন্তান আছে?? থাকলে প্লিজ তাকে এরকম কোন “সফল” শিক্ষকের কাছে পরতে পাঠাবেন না প্লিজ!!!
নমুনা ৫-(সর্বশেষ বদলে যাওয়া ও চরম ভাবে হঠাৎ ডিগবাজি খাওয়া )
১৭/৭/২০১১ তারিখের প্রথম পাতায় লেখা হয়েছে-ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় ৭ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১১ জুলাই তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জবানবন্দিতে তিনি দুই দফা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিমলকে চাকরিচ্যুত করে। তবে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়ায় অধ্যক্ষ হোসনে আরার অপসারণের দাবিতে ছাত্রী ও অভিভাবকেরা বিক্ষোভ করেন। তাঁদের আন্দোলনের মুখে হোসনে আরাকে তিন মাসের ছুটি দিয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মঞ্জুয়ারা বেগমকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, মামলায় বলা হয়, ঘটনার চার দিন পর গত ২১ জুন মেয়েটি এ ঘটনা বসুন্ধরার শাখাপ্রধান লুৎফর রহমানকে জানায়।
তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে কথা দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। ২৭ জুন ঘটনাটি অধ্যক্ষ হোসনে আরাকে জানানো হয়। গণমাধ্যম, পুলিশ ও মানবাধিকার সংস্থাকে না জানানোর জন্য অধ্যক্ষ হুমকি দেন। মেয়ের মাকে টেলিফোনে ও ডেকে নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। হোসনে আরা ও লুৎফর রহমান নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান।
তাঁরা মেয়েটিকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।
আমি কিছু বলবনা, আপনারাই বলুন!প্রথম ৪ দিনের কথার সাথে ১৭ তারিখের কথার কতটুকু মিল আছে!!কি সুন্দর করে জনতার চাপের মুখে পরে তারা নিজেদের বদলে দিল!!দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে প্রথম আলোর । বিকল্প মিডিয়ার চাপে এখন তারা ঠিক মত ভিকারুন্নেসার সংবাদ পরিবেশন শুরু করেছে কি সুন্দর করে!!!
এই হল আমাদের প্রিয় পত্রিকা প্রথম আলো! বস্তুনিষ্ঠ সংবাদে ভরপুর!! মেরিল-প্রথম আলো তারকা জরিপ পুরষ্কার বিষয়ক লম্বা বর্ণনা পাবেন এর ৪-৫ পাতা জুরে,কে কি পরে এসেছেন,কার সাথে এসেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি! অথবা মুম্বাই এর নায়িকা ঐশরিয়া রাই এর মা হবার খুশিতে অর্ধেক পাতা জুড়ে বিশাল কলাম দেখবেন! অথবা ধুতি সালওয়ার অথবা চিপা জিন্সের ফ্যাশনের বর্ণনা দেখবেন ২ পাতা জুড়ে। কিন্তু আমাদের ছোট বোনটার সম্পর্কে কোন খবর জানতে চাইলে সারা পেপার খুজেও কোন খবর পাবেন না। পেলেও শেষের পাতার কোন চিপায় অথবা সম্পাদকীয় তে পেলেও পেতে পারেন!! ঐ যে!! বদলে যাও,বদলে দাও!!
সুতরাং আপনারা সবাই প্রথম আলো পরুন ও ধীরে ধীরে একজন ইন্দ্রিয় সম্পন্ন মানুষ থেকে একজন মুক-বধির-অন্ধ মানুষে বদলে যান! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।