বেহুলার প্রতি অর্ফিয়ুস : স্থুল সফলতার গৌরব শিল্প নয় । রবীন্দ্রনাথের পর বাঙলা সাহিত্যের প্রথম সব্যসাচী লেখক বুদ্ধদেব বসু। বুদ্ধদেব বসু কবি হিশেবে আত্মপ্রকাশ ও সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করলেও লিখে গেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, অনুবাদ, গবেষণা। তাঁর উপন্যাস কবিতার মতো পাঠককে কল্পনা, রহস্য আর সৌন্দর্যের জগতে ডানা মেলে উড়তে শেখায়। কবিতার মতোই তাঁর একটি উপন্যাস নির্জন স্বাক্ষর।
নির্জন স্বাক্ষর নামে জীবনানন্দ দাশের একটি মায়াবী কবিতাও আছে। বুদ্ধদেব বসু শুধুমাত্র নামটিই নয়, উপন্যাসটির বিষয়বস্তুও জীবনানন্দের কাছ থেকে ধার করেছেন। উপন্যাসটির বিষয়বস্তু তিনি নিয়েছেন জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কবিতা থেকে।
উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র সোমেন, যিনি মূলত একজন লেখক। সোমেন প্রথমে অধ্যাপক হিশেবে কলকাতার একটি কলেজে চাকরি নেয়; কিন্তু ঐ চাকরির টাকায় সংসার চালাতে ব্যর্থ হয়ে সে একটি বেসরকারি বিজ্ঞাপন কোম্পানিতে চাকরি নেয়।
ফলে সোমেন লেখা বাদ দিয়ে প্রথাগত জীবনে ঢুকে পড়ে। এভাবেই সোমেন স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে প্রথাগত জীবন চালাতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। চারদিকের জীবন যখন সমুদ্র-স্রোতের মতো ফুলে ফুলে উঠছিলো, সোমেনের জীবন তখন ক্লান্ত হয়ে ভেঙে পড়ছিলো।
সোমেনের এক বন্ধু ঢাকায় থাকতো। সে মারা যাওয়ায়, তার স্ত্রী ও তার দুই সন্তান দেশ-ভাগের সময় ঢাকা ছেড়ে কলকাতা চলে আসে।
তারা কলকাতায় আসায় সোমেন তাদের দেখতে যায়। সোমেনের ক্লান্ত, অসহায়, ভেঙে পড়া জীবন যখন আর চলছিলো না, তখন মালতি সেনের শ্রাবস্তীর কারুকার্যময় মুখটি তাকে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিলো। সোমেন একবার নয়, কয়েকবার গিয়েছিলো দু-দন্ড শান্তি পেতে, কিন্তু প্রতিবারই সে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলো দুঃখের গাঁথা মালা এক বিশাল নদী। অবশেষে, প্রতিদিনের টুকরো টুকরো মৃত্যুর বদলে সোমেন গ্রহন করলো এক মুহূর্তের পরম দুঃখ (নাকি পরম শান্তি?)!
সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী - ফুরায় এ জীবনের লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার মালতি সেন।
এ কেমন, কেমন ভালোবাসা --তাও বাঁচতে দিলো না, বা বাঁচাতে পারলো না !
আমিও একজনকে ভালোবেসেছিলাম; যার শুভ্র আর বাঙলার বনের মতো শ্যামল মুখটি আমাকেও দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিলো।
আমারও কি সোমেন হতে ইচ্ছা করে? (জানি না)। তবে জীবনানন্দ দাশের মতো আমার বলতে ইচ্ছা করে,
আমি যদি হতাম বনহংস,
বনহংসী হতে যদি তুমি;
. . . . . . . . . . . . . . . . .
হয়তো গুলির শব্দ আবার;
আমাদের স্তব্ধতা,
আমাদের শান্তি।
আজকের জীবনের এই টুকরো টুকরো মৃত্যু থাকত না;
থাকতো না আজকের জীবনের এই সাধের ব্যর্থতা ও অন্ধকার।
আমি যদি বনহংস হতাম,
বনহংসী হতে যদি তুমি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।