আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন বাম রাজনীতিক কর্মী কতটুকু বুর্জোয়া কতটুকু সমাজতান্ত্রিক

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, যুক্তি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব। প্রতিটা মানুষের বেড়ে উঠায়, চিন্তায়-চেতনায় থাকে তার পরিবার ও সমাজের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব। পরবর্তীতে আমরা যারা বিপ্লবী ধারার বামপন্থী আন্দোলনে নিজেদের জড়িত করি তারা রাষ্ট্রের চরিত্রের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজ ও পরিবারকে বদলাতে চাই। কারণ আমরা বুঝতে পারি লুটেরা পুঁজিবাদি রাষ্ট্র বাণিজ্যিকীকরণের মধ্য দিয়ে তার প্রতিটা অঙ্গকে প্রচন্ডভাবে বিমানবিকীকরণ করেছে, মানুষকে পরিণত করেছে ভোগবাদী আত্মসর্বস্ব এক জন্তুতে। আমাদের এসকল বুঝে কোনো সমস্যা নেই, আমরা এর পরিবর্তন চাই সেটিও ঠিক আছে।

কিন্তু আমরা কি একই সাথে বামপন্থী রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে আমাদের মধ্যে জেঁকে বসা পুঁজিবাদি সমাজ কাঠামো থেকে বের হবার চেষ্টা করছি? চেষ্টা করার পূর্বে আমাদের নিশ্চয় বুঝতে হবে আমাদের মধ্যে সমস্যাটি রয়েছে। কিন্তু আমরা কজন বুঝি যে, আমাদের মাঝে পুঁজিবাদি রাষ্ট্র-সমাজ কাঠামোর প্রায় সকল মনস্তত্বই ক্রিয়াশীল রয়েছে? কারো মাঝে বেশি কারো মাঝে কম হয়তো। সেটি নির্ভর করে, পরিবারের উপর, কোন শ্রেণি হতে আগত তার উপর, কোন বয়সে আগত তার উপর, কোন সময়ে আগত তার উপর এবং কোন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আগত তার উপর। বাম রাজনীতিতে সক্রিয় হবার পর আমাদের ভাব চক্করে মনে হয় এ সমাজের সাধারণের তুলনায় আমরা অনেক অগ্রসরমান। কাজেই আমরা সাধারণ মানুষকে ও পূর্বের সকল আচারকে ও মতাদর্শকে অবমূল্যায়ন করি, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেই।

আমাদের মধ্যে সমাজের কোনো ছাপ আছে সেটি আমরা মনেই করি না। বামপন্থী রাজনীতিতে বর্তমানে মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে আগত অংশটির নিজস্ব শ্রেণি দূর্বলতা সম্পর্কে আমরা জানি। কিন্তু সেই দূর্বলতা দ্বারা আমরা যে জর্জরিত সেটি আমরা একটিবারের জন্যও মূল্যায়ন করি না। আবার মূল্যায়ন করাটাও অনেকটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কারণ তা থেকে আমরা শিক্ষা নেই না।

আমরা মধ্যবিত্ত হয়েও কৃষক শ্রমিকের জন্য কাজ করতে এসেছি সারাক্ষণ এ আত্মতৃপ্তিতে ভুগি। এটি যেনো আমরা দয়া পরবশ হয়েই করছি। অথচ এটিই যে আমাদের দায়িত্ব সেটি আমরা ভুলে যাই। ফলত, কৃষক শ্রমিকদের অন্তর দিয়ে আর বুঝা হয় না। বরং মাটি বিযুক্ত আমাদের মধ্যবিত্ত চিন্তাই কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেই।

এবং সুধী সমাজে চিৎকার করে ঘোষণা দেই এটি ছাড়া কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষের মুক্তি নেই। আমরা মার্ক্স লেনিনের শ্রেণি বুঝি কিন্তু বাঙালি কি বুঝি না। আর তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কি করে শ্রেণি সংগ্রামের অন্তর্গত সেটি আমরা মেলাতে পারি না। এরকম বিভিন্ন ত্রুটিতে জর্জরিত (অবশ্য কতটুকু ত্রুটি মুক্ত হবে সেটি নির্ভর করে বিদ্যমান রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোর উপর) আমরা বাম রাজনীতিক কর্মীরা আমাদের সংগঠনগুলোকেও বিভিন্নভাবে দূষিত করছি। সঙ্কীর্ণ ব্যক্তি স্বার্থে হেন কোনো কাজ নেই যা সংগঠনের অভ্যন্তরে প্র্যাকটিস করছি না।

আমাদেরর উপর বিদ্যমান সমাজের ও পেটি বুর্জোয়া শ্রেণিগত সকল দূর্বলতা ভর করে আছে। প্রচন্ড সুবিধাবাদ রয়েছে আমাদের চরিত্রে। অথচ আমরা কেউ সেগুলো বুঝতে চেষ্টাই করি না পাছে আবার ছোটো হতে হয় ভেবে। আমার মনে হয় আগে আমাদের উপলব্ধিতে আনতে হবে যে, আমাদের মধ্যে পুঁজিবাদি রাষ্ট্র ও সমাজের মানস কাঠামোর বিশাল প্রভাব রয়েছে। তাহলে নিশ্চয় সে প্রভাব দূর করতে আমরা সচেষ্ট হবো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.