আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশ্বর পাঠশালা।

প্রবাসী দৌবারিক ঈশ্বরের আগমন বার্তা ঘোষনা করিল। ইতিমধ্যে দরবার কক্ষে সমবেত উপদেস্টা, আমাত্যবর্গ, ও অভ্যাগতজনেরা ঈশ্বরকে কুর্নিশ করিলেন। ধীর পদক্ষেপে ঈশ্বর নির্ধারিত আসন গ্রহনের পর সভার দৈনন্দিন কার্য্য প্রনালী শুরু হইল। আবহ সঙ্গীতের মাধ্যমে ঈশ্বর বন্দনা শেষে বিধান অনুযায়ী সর্ব প্রথম বিগত ২৪ ঘন্টার মৃতদের তালিকা ঈশ্বর সমীপে পেশ করা হইল। পুর্বে ঈশ্বর স্বহস্তে শাস্তি বা পুরস্কার প্রদান করিতেন।

ইদানিং জন সংখ্যা বিস্ফোরনের কারনে তাহা আর সম্ভব হইতেছে না। খাতায় লেখার পাশাপাশি কম্পিউটারের সাহায্যে হিসাব রাখা হইতেছে। সেখানেও বিপদ । কতিপয় দুরাচার নাস্তিক ইশ্বরের ওয়েব সাইট হ্যাক করিয়াছিল। ফলে বিশ্বাসীদের দোযখে এবং নাস্তিকদের বেহেস্তে প্রেরন করা হইয়াছিল।

অতঃপর বিচার কাজ ২৪ ঘন্টা বিলম্বিত করা হইতেছে । হরিদাস সহস্তে বিশ্বাসী দের সনদপত্র প্রদান করিয়া থাকেন । হরিদাসের সনদ পত্র ব্যাতিরেকে কেহ যাহাতে বেহেস্তে প্রবেশ করিতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ নামা জারী করা হইয়াছে। বিগত ২৪ ঘন্টায় মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫ মিলিয়ন। অবিশ্বাসী ধর্মদ্রোহীদের সংখ্যা ৪ মিলিয়ন।

ঈশ্বর যথারীতি তাহাদের দোজখে প্রেরন করিলেন। তাহাকে কিঞ্চিত চিন্তিত মনে হইল। অকৃতজ্ঞ মনুষ্য প্রজাতি কি সৃস্টিকর্তাকে ভুলিতে বসিয়াছে? ঈশ্বর ,প্রধান উপদেস্টা হরিদাসের দৃস্টি আকর্ষন করিলেন। সর্বজ্ঞ ঈশ্বর হরিদাসকে যে পবিত্র দায়িত্ব দিয়াছিলেন তাহা ব্যার্থ হইতে বসিয়াছে। মর্ত্যলোক পুনরায় অবিশ্বাসী নাস্তিকদের দখলে চলিয়া যাইতেছে।

মুমীন বিশ্বাসীরা আজ অবিশ্বাসীদের যাতাকলে পিষ্ঠ । হরিদাস ঈশ্বরবানী প্রচার শেষে ঈশ্বর সান্নিধে ফিরিয়া আসার পর দীর্ঘকাল অতিবাহিত হইয়াছে। পুনঃপ্রচারের নিমিত্তে হরিদাসকে মর্তলোকে প্রেরন ও সম্ভব হইতেছে না কেননা হরিদাস তাহার কিতাবে বলিয়াছেন তাহার পর আর কেহ ঈশ্বর বানী প্রচার করিবেন না। পৃথিবীতে নাস্তিক ধর্মদ্রোহীদের সংখ্যা কেবল মাত্র বৃদ্ধি পাইতেছে তাহাই নহে উহারা বিপুল বিধ্বংশী মারনাস্ত্র আবিস্কার করিয়া চলিয়াছে। শোনা যাইতেছে তাহারা ইতিমধ্যে পৃথিবীর সমস্ত সৃস্টি ধ্বংশ করিবার ক্ষমতা করায়ত্ব করিয়াছে।

বারংবার ঈশ্বরকে উপেক্ষা করিতেছে যেমন অবিশ্বাসীদের শাস্তি প্রদানের জন্য ঈশ্বর বন্যার সৃস্টি করিলেন, বিজ্ঞানীরা বন্যা নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার উদ্ভাবন করিল, ঈশ্বর বিভিন্ন রোগ দিলেন বিজ্ঞানীরা ঔষধ আবিস্কার করিল, ঈশ্বর খরা দিলেন উহারা সেচ ব্যাবস্থা উদ্ভাবন করিল, ঈশ্বর দুর্ভিক্ষ দিলেন উহারা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করিল ইত্যদি। এই অবস্থা আর চলিতে দেওয়া যায় না। অতি সত্বর ব্যাবস্থা গ্রহন না করিলে যে কোন বিপর্যয় ঘটিয়া যাইতে পারে। যাহারা হরিদাসকে তুচ্ছ ভাবিতেছে তাহাদের বিরুদ্ধে সাবধান বানী উচ্চারন করিলেন হরিদাস স্বয়ং। নামের ব্যখ্যা করিলেন নিজেকে ইশ্বরের ভৃত্য হিসেবে (হরি=ইশ্বর, দাস= ভৃত্য) এবং অনুসারীদের “হরিদাসানুদাস” হিসেবে আখ্যায়িত করিলেন।

সর্বোপরি একমাত্র তিনিই বেহেস্তে অনুপ্রবেশ সনদ প্রদানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তাহাও উল্ল্যেখ করিতে ভুলিলেন না। অতঃপর শিক্ষা উপদেস্টা গুরুত্বপুর্ন তারকাচিহ্নিত বিষয় উত্থাপন করিলেন। মনুষ্যকুলের শিক্ষার নিমিত্তে প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তুলিতে হইবে। শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করিবেন এবং ইহার অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব চাপানো যাইবে না এই শর্তে হরিদাস সম্মতি প্রদান করিলেন। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমুহ- প্রতিষ্ঠানের নাম- ঈশ্বর পাঠশালা।

প্রারম্ভে পাঠশালা স্থাপন করা হইলেও ভবিষ্যতে তাহা ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হইল। পাঠশালার সপক্ষে যুক্তি দেখানো হইল শিশুদের ভবিষ্যতের প্রকৃত মুমীন হিসাবে গড়িয়া তুলিতে হইলে বাল্যকালই সর্বোৎকৃস্ট সময়। বিপথগামী হইবার পুর্বেই ঈশ্বরভক্তি গড়িয়া তুলিতে হইবে, এবং শিক্ষাজীবনে তাহা অটুট রাখিবার নিমিত্তে বিনা বেতনে ভবিষ্যতের “ঈশ্বর বিশ্ববিদ্যালয়” পর্যন্ত শিক্ষগ্রহনের সুযোগ নিশ্চিত করা হইবে। পাঠশালার প্রতীক - তরবারী এবং বর্শা। পাঠশালার শিক্ষার্থী এবং সমস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীগন প্রতীক চিহ্নিত ব্যাজ ধারন করিবেন।

উপদেস্টা প্রতীকের ব্যাখ্যা করিলেন। বর্শা নিক্ষেপে যোগ্য অস্ত্র বিশেষ। অবিশ্বাসীদের দূর হইতে হত্যা করিবার নিমিত্তে বর্শার ব্যবহার। বিশ্বাসীরা কেহই আর আজকাল বর্শা ব্যাবহার করিবেন না তবে নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্র যেমন, রাইফেল, বন্দুক,ট্যাংক, কামান, মেশিনগান, মিসাইল ইত্যাদির প্রতীক হিসেবে বর্শা ব্যবহৃত হইবে। আর যদি অবিশ্বাসীকে হাতের নাগালে পাওয়া যায় তাহা হইলে, ছুরি, কাচি, লাঠি,খুর, চাপাতি ইত্যাদি ব্যাবহার করা যাইবে এবং সমস্ত কিছুর প্রতীক হইবে তরবারি।

স্থান- হরিদাসপুর, বাংলাদেশ । ডাকঘর থানা বা জেলা লেখার প্রয়োজন নাই। উপদেস্টা জানিতেন বিখ্যাত রুশ লেখক টলস্টয়কে চিঠি লিখিতে “টলস্টয়, রাশিয়া” এর অতিরিক্ত শব্দের প্রয়োজন পড়িত না। অনুরুপভাবে হরিদাসের ঈশ্বর পাঠশালার ঠিকানা হইবে “হরিদাস, ঈশ্বর পাঠশালা, হরিদাসপুর। বিষয়সমুহঃ “ঈশ্বর দর্শন”, ঈশ্বর ইতিহাস, ঈশ্বর ভুগোল, “ঈশ্বর বিজ্ঞান” ইত্যাদি।

সমস্ত বিষয়ের ভিত্তি হইবে হরিদাসের কিতাব। কিতাবের সাথে সঙ্গতি পুর্ন নহে এমত শিক্ষা প্রদান করা যাইবে না। যেমন গ্রহ নক্ষত্রের পরিবর্তে “আসমানের ঝুলন্ত বাতি” পড়িতে হইবে এবং “পৃথিবী সুর্য্যের চারিদিকে ঘোরে” এর স্থলে সুর্য্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে এবং দিন শেষে তাহা কর্দমাক্ত ভুমিতে নিমজ্জিত হয়’ পড়িতে হইবে। প্রয়োজনে ব্যাখ্যার দ্বারা হরিদাসের কিতাবের সহিত সমন্ন্য় সাধন করিতে হইব। আনুমানিক নির্মান সময়ঃ- ২ বছর (ঠিকাদার এবং প্রকোশলীদের মুনাফার লক্ষ্যে তাহা ৩ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য) ঈশ্বর আপত্তির সুরে কহিলেন “ মাত্র ৬ দিনে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃস্টি করিলাম অথচ পাঠশালার জন্য দীর্ঘ ৩ বছর? হরিদাস ব্যাখ্যা করিলেন- সংসদে প্রস্তাব অনুমোদন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, অর্থ মন্ত্রনালয়,সংস্থাপন মন্ত্রনালয়, পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়(বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য), ভৌত অবকাঠামো নির্মান, প্রয়োজ়নীয় শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি কারনে বিলম্ব ঘটিবে।

শিক্ষা উপদেস্টা আমতা আমতা করিলেন “ঈশ্বর পাঠশালার নির্মানস্থলের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী উৎকোচের বিনিময়ে ২০ দিনে তাহা করা সম্ভব। ঈশ্বর ঘুষখোর সুদখোর দুর্নীতিবাজ দের মৃত্যুর পর জাহান্নামে প্রেরনের নির্দেশ দিলেন। হরিদাস আপত্তি করিলেন” হুজুর যদি বিশ্বাসী মুমিন হয় তাহা হইলেও কি নরকে যাইতে হইবে? ঈশ্বর বিধান দিলেন “বিশ্বাসী হইলে শাস্তি মওকুফ করিয়া যথা শীঘ্র বেহেস্তে পুনর্বাসন করিবে, আর নাস্তিক বা বিধর্মী হইলে শাস্তি দ্বিগুন করিয়া অনন্তকাল নরকবাস দিবে। হরিদাস শিক্ষা উপদেস্টাকে নির্দেশ দিলেন “শুধুমাত্র বিশ্বাসী মুমীন ঠিকাদার বা প্রকৌশলীরা নির্মান কাজের যোগ্য বিবেচিত হইবে”। ছাত্রছাত্রীঃ- হরিদাস বলিলেন নারীরা পুরুষদের হেফাজতে থাকিবে, নারী শিক্ষা নৈতিকতা বিরোধী সুতরাং ঈশ্বর পাঠশালায় ছাত্রীর প্রয়োজন নাই।

স্ত্রী শিক্ষা তাহাদের বেপর্দা, বেশরম, অবাধ্য করিয়া তুলিতে পারে। শিক্ষাদান পদ্ধতিঃ- মৌখিক, তাত্বিক এবং ব্যবহারিক । হরিদাসের পুস্তক ব্যাতীত অন্য পুস্তক কোন ছাত্র অধ্যয়ন করিতে পারিবে না। শিক্ষক নিয়োগঃ- বিশ্বাসী মুমীন ব্যাতিরেকে অন্য কেহ শিক্ষক পদে নিয়োগের আবেদন করিতে পারিবেন না। মহিলাদের আবেদনের প্রয়োজন নাই।

শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে হরিদাসে্র সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বিবেচিত হইবে। উচ্চ শিক্ষিত , ভিন্নমতাবলম্বীরা আবেদনের অযোগ্য। পাঠশালার গ্রন্থাগার- শুধুমাত্র হরিদাসের কিতাব বা তাহার ব্যাখ্যামুলক পুস্তকাদি গ্রন্থাগারে রাখা যাইবে। যদি অন্য কোন কিতাব পাওয়া যায় তাহা অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করিতে হইবে। পাঠশালার উদ্দেশ্যঃ- হরিদাসের কিতাবের ভিত্তিতে সত্য, শান্তি, সুন্দ্র, ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষে কর্মীবাহিনী গঠন।

বিধর্মী নাস্তিকদের ব্যাবহারিক শিক্ষা (প্রহার) প্রদান নরহত্যায় বিশ্বাসী নাস্তিক ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের হত্যা করা। অন্ধবিশ্বাস উতসাহিত করা বিজ্ঞান, মুক্তচিন্তা নিষিদ্ধ করা। অমীমাংসীত বিষয় সমুহঃ- ১) পাঠশালা নির্মানের লক্ষ্যে উৎকোচ প্রদান করা হইবে কিনা? ২) শিক্ষা দানের ভাষা কি হইবে? ইংরেজী বিধর্মীদের ভাষা। ৩)ছাত্রদের ব্যাবহারিক শিক্ষার জন্য নাস্তিক বা বিধর্মী কিভাবে যোগাড় করা যাইবে? অমিমাংসীত বিষয় সমূহ পরবর্তী সভায় আলোচনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়া ঈশ্বর সভার সমাপনী ঘোষনা করিলেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।